<p>বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ঢাকা সফর করছে বড় শক্তিগুলো। নির্বাচন প্রশ্নে ভারতের সঙ্গে পশ্চিমা কিছু দেশের অবস্থানগত পার্থক্য থাকলেও সেটি ছাপিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোই এখন সম্পর্ক জোরদারে দৃষ্টি দিচ্ছে।</p> <p><img alt="সম্পর্ক আরো জোরদারের উদ্যোগ বড় শক্তিগুলোর" height="285" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/05.May/09-05-2024/890.jpg" style="float:left" width="346" />সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন যুক্তরাজ্যের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান। গতকাল তাঁর ওই সফর শেষ হয়েছে। একই উদ্দেশ্যে আগামী ১৪ মে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।</p> <p>এরই মধ্যে গতকাল বুধবার ঢাকায় পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের অংশ হিসেবেই ঢাকা সফর করছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের আগে ওই দেশটির পররাষ্ট্রসচিবের বাংলাদেশ সফরকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে উভয় পক্ষই। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সফরের সময় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের প্রসঙ্গ আসবে।</p> <p>বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল গত বছর নভেম্বরে। নয়াদিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক (২+২ বৈঠক) শেষে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়ে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। তৃতীয় কোনো দেশের নীতির বিষয়ে কথা বলা আমাদের কাজ নয়।’</p> <p>বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে সেদিন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের (বাংলাদেশের) অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যত্ ঠিক করবে।’</p> <p>কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারতের ওই অবস্থান প্রকাশ করার ঘটনা বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে পুরো প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন তার পররাষ্ট্রনীতিতে গণতন্ত্রকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সংঘাতমুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উত্সাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসা বিধি-নিষেধ ব্যবস্থা চালু করেছে। এর ফলে সংঘাতে যুক্ত এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেওয়া ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ওই দেশে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ওই ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ্যে ঘোষণার সুযোগ নেই।</p> <p>ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলসহ ভূ-রাজনৈতিক নানা কারণে বাংলাদেশকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, অনেকে বাংলাদেশের নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে পারে। বড় শক্তিগুলো তাদের স্বার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাইবে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ নিয়ে বড় শক্তিগুলোর যে প্রতিযোগিতা ছিল তা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। ওই কৌশলের অন্যতম লক্ষ্য এক দেশের ওপর অন্য দেশের আধিপত্য বিস্তার না করা। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা এবং মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বিশেষজ্ঞ মাক্সওয়েল মার্টিন সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের কোনো দেশের ওপর অন্য কোনো দেশের আধিপত্য চায় না। ভারত বা অন্য কোনো দেশের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েও বাংলাদেশকে দেখে না যুক্তরাষ্ট্র।</p> <p>মাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার ও নতুন করে এগিয়ে নেওয়া অবশ্যই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও উন্মুক্ত অঞ্চল নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া, সংযোগ সৃষ্টি, নিরাপত্তা জোরদার এবং নির্ভরতা জোরদার করতে চায়।</p> <p>গত জানুয়ারিতে নতুন করে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সফর ভারত না চীনে এ নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা ছিল বিভিন্ন মহলে। সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। কিন্তু সময়সূচি না মেলায় সেই সফর এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। তবে ভারত সফরের পরপরই প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যেতে পারেন।</p> <p>পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে নয়াদিল্লি সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতে এখন জাতীয় নির্বাচন চলছে। ওই নির্বাচনের পর সফরটি আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। আগামী জুন বা জুলাইয়ে এ সফর হতে পারে। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে আলোচনা চলছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করতে পারেন।</p> <p>আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। এসব আলোচনায় এর আগে শীর্ষ নেতাদের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।</p> <p> </p>