২৫ মার্চ মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সংঘটিত হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নারকীয় গণহত্যা। তাদের এ সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন সার্চলাইট। পূর্বপরিকল্পিত এই সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল রাত সাড়ে ১১টার পর। গোপনে ঢাকা ত্যাগ করা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিমান নিরাপদে করাচি ও কলম্বোর মাঝামাঝি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে।
বড় টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- এম এ হাসান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের বিশেষ টার্গেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর সংলগ্ন এলাকায় নামানো হয় ১৮ ও ৩২ পাঞ্জাব এবং ২২ বালুচের একটি করে তিন কম্পানি (চার শতাধিক) সেনা, যাদের দায়িত্ব ছিল জহুরুল হক হল (তখনকার ইকবাল হল), জগন্নাথ হলসহ অন্যান্য টার্গেট সম্পূর্ণ ধ্বংস করা। সেখানে অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন ৩২ পাঞ্জাবের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল তাজ।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তখনকার জনসংযোগ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিকের বক্তব্য অনুযায়ী, সেনা গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল ওই দুটি হল হলো আওয়ামী লীগ সমর্থক আর মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি। এই ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এক সেনা কমান্ডার হল দুটিকে রকেট লঞ্চার, স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র আর মর্টার মেরে একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নারকীয় গণহত্যার প্রধান শিকার ছিল জগন্নাথ ও জহুরুল হক হল। তবে ঘটনা বেশি মারাত্মক ছিল জগন্নাথ হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে জগন্নাথ হল ও ঢাকা হল (বর্তমান ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল) ছিল হিন্দু ছাত্রদের আবাসিক হল। পরবর্তী সময়ে ঘটনার পরম্পরায় ১৯৫৭ সাল থেকে জগন্নাথ হল হয় হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ছাত্রদের আবাসিক স্থল।
২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্যাংক নিয়ে বিএনসিসির (তখনকার নাম ইউওটিসি) দিক থেকে জগন্নাথ হলের দেয়াল ভেঙে ফেলে এবং সেখান থেকে উত্তর বাড়ির দিকে মর্টারের গোলা ছোড়ে। এর পরপরই শুরু হয় নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। এরই মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাংক জগন্নাথ হলের মাঠের মধ্যে চলে আসে। এভাবেই সূচনা হয় জগন্নাথ হল আক্রমণের প্রথম পর্বের। হানাদার বাহিনী লাউড স্পিকারের মাধ্যমে উর্দু ও ইংরেজি মিশ্রিত ভাষায় সবাইকে আত্মসমর্পণ করে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেয়। জগন্নাথ হলের প্রায় সব ছাত্রই তখন ঘুমিয়ে। আকস্মিকভাবে নির্বিচার গুলিবর্ষণে তারা জেগে উঠে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যে যেভাবে পারে পালানোর চেষ্টা করে। ছাত্রদের একাংশ উত্তর বাড়ির ছাদে পানির ট্যাংকের নিচে, কেউবা শৌচাগারে, কেউ নিজের চৌকির নিচে, কেউ পানির পাইপ বেয়ে নিচে নেমে ম্যানহোল অথবা কর্মচারীদের বাসায় আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। হানাদার সেনারা এরই মধ্যে উত্তর বাড়ির কাছের টিনশেডের ওয়েস্ট হাউস ও বর্তমান পূর্ব বাড়ির জায়গায় ক্যান্টিন ও সংলগ্ন টিনশেডের ছাত্রাবাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারা শূন্যে ট্রেসার বুলেট ও বেরি লাইট ছুড়ে চারপাশ আলোকিত করে পলায়নরত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করতে থাকে। সেখানে বসবাসকারী ছাত্রদের একজন কাছের একটি পরিত্যক্ত শৌচাগারে আশ্রয় নেয়। এভাবে সে বেঁচে যায়। ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী জগন্নাথ হলের কোনো ভবনেই প্রবেশ করেনি। জগন্নাথ হলের অভ্যন্তরে অবস্থান করে বিভিন্ন ভবনের দিকে টানা গুলি করতে থাকে। এর মধ্যে সকাল হয়ে যায়, ভেসে আসে আজানের ধ্বনি।
সকালবেলা হলের তালা ভেঙে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভেতরে প্রবেশ করে প্রথমেই হত্যা করে দারোয়ানদের। চতুর্দিকে ভারী বুটের শব্দ, গ্রেনেডের বিস্ফোরণ এবং অবিশ্রান্ত গুলির আওয়াজ। এরপর হানাদার সেনারা জগন্নাথ হলের উত্তর ও দক্ষিণ বাড়ির প্রতিটি কক্ষে ছাত্রদের খোঁজ করে। তারা কক্ষের অভ্যন্তরে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে, শৌচাগার ও স্নানাগার ইত্যাদি স্থানে তল্লাশি চালায়। তারা যাকে যেখানে পায় সেখানেই গুলি ও বেয়নেটের আঘাতে হত্যা করে। একই সঙ্গে চলে বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান সম্পর্কে অশ্লীল গালাগাল।
হলের বিভিন্ন তলায় পড়ে থাকে ছাত্রদের মরদেহ। জল্লাদ পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকজন ছাদে উঠে যায়। মার্চ মাসের প্রথম থেকেই জগন্নাথ হলের উত্তর বাড়ির ছাদে উত্তোলন করা ছিল কালো পতাকা ও বাংলাদেশের পতাকাখচিত প্রস্তাবিত পতাকা। সেনারা ঘৃণাভরে পতাকা দুটি টুকরা টুকরা করে ফেলে দেয়। উপেন্দ্রচন্দ্র রায়, সত্য দাস, রবীন, সুরেশ দাসসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র হলের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে হায়েনার দল। এ পরিস্থিতিতে উপেন্দ্রচন্দ্র রায় ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ডাইনিং হলের দিকে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গুলি করা হয়। মৃত অবস্থায় তাঁর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অশ্লীল গালাগাল করে অন্যদের ছাদের ওপর লাইন করে দাঁড় করায় সেনারা। তারপর গুলি চালায়। শহীদ ছাত্রদের মরদেহ ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয় তারা।
২৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ হলে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী ও বাইরে থেকে আসা অতিথি মিলে প্রায় ৭০ জনকে হত্যা করে গণকবরে মাটিচাপা দেয় পাকিস্তানি সেনারা। ওই ৭০ জনের মধ্যে ছিলেন ////তিনজন শিক্ষক, ৩৬ জন ছাত্র ও চারজন হলের কর্মচারী। শহীদ তিনজন শিক্ষক হলেন—ড. এ এন এম মুনীরুজ্জামান (পরিসংখ্যান), ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব (জি সি দেব, দর্শন) ও অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিজ্ঞান)। ড. মুনীরুজ্জামানের পুত্র ও কয়েকজন আত্মীয়কেও হত্যা করা হয়।
২৭ মার্চ নিজ বাসভবনের বাইরে গুলিবিদ্ধ হন অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি)। তাঁকে ধরাধরি করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন এ নিবন্ধের লেখক তাঁকে হাসপাতালের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখেছিলেন। ৩০ মার্চ ড. গুহঠাকুরতা হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিনের পরিচালক মধুসূদন দের (মধুদা) বাড়ি আক্রমণ করে তাঁকেও হত্যা করে। প্রাণ দেন মধুদার স্ত্রী, পুত্র আর পুত্রবধূও। শিববাড়ীর পাঁচজন সাধুকেও বর্বর পাকিস্তানি সেনারা অন্যদের সঙ্গে লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে জগন্নাথ হলের মাঠে।
লেখক : চেয়ারপারসন, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি

স্থায়ী কমিটির বৈঠক
ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি। এটিকে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়ে মত দিয়েছে দলটি। গত বুধবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে ঘোষণাপত্রের ওপর বিএনপির মতামতে এই দলিলকে আর্কাইভে (সংরক্ষণ) রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বিএনপির কাছে পাঠানো জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে দলীয় মতামত চূড়ান্ত করতে বুধবার রাতে স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়। ওই রাতেই খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এনে তাতে চূড়ান্ত মতামত দিয়েছে বিএনপি। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংবিধানে স্থান দেওয়া হলে তাতে ভবিষ্যতে জটিলতা বাড়তে পারে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার দাবি তোলে।
স্থায়ী কমিটি বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, খসড়া ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলা হলেও বিএনপি তাতে দ্বিমত জানিয়েছে।
দলটির নেতারা বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই স্বাধীনতাযুদ্ধকেই প্রধান অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে ঘোষণাপত্র শুরু হওয়া উচিত।
খসড়া ঘোষণাপত্রে আছে, ‘যেহেতু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শাসনামলের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনির্মাণের ব্যর্থতা ও অপর্যাপ্ত ছিল এবং এ কারণে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও শাসকগোষ্ঠীর জবাদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি’—বিএনপি এ ক্ষেত্রে ‘বিভিন্ন শাসনামলের জায়গায়’ ‘আওয়ামী শাসনামলের’ কথা উল্লেখ করেছে।
এ ছাড়া দলটি ১৯৭২ সালের ‘সংবিধান পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায়’ বাদ দিয়ে ‘সংবিধানের বিদ্যমান সংস্কার উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন’ করার পক্ষে মত দিয়েছে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের খসড়া থেকে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রসঙ্গটি বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রের খসড়ার শেষ অংশে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ কথাটি উল্লেখ ছিল। জানা গেছে, এর বাইরেও খসড়ায় আরো কিছু শব্দগত সংযোজন-বিয়োজন করেছে বিএনপি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল। অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তখন ওই খসড়ার ওপর তাদের মতামত দেয়। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে। এনসিপি সম্প্রতি সরকারকে আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় তাদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়।
সরকার ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আর এটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমরা তার ওপর মতামত গতকাল (বুধবার) দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকার একটা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সব কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু ’৭২-এর সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ’২৪-এর মহত্ত্ব ও গুরুত্বের প্রতি বিএনপি যথাযথ মর্যাদা দেয়। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের খসড়া অনুমোদন
বিশেষ প্রতিনিধি

ঢাকায় তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের একটি মিশন স্থাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়’-এর মিশন স্থাপনসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ জুন ওই খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মুসাপুর রেগুলেটর ও বামনি ক্লোজারের নকশা চূড়ান্তকরণ, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্তকরণ এবং নোয়াখালীর খাল ও ড্রেনেজ অবমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও মহেশখালী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পাস হয়।
বৈঠকে ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়, যা লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিংয়ের পর কার্যকর হবে।
আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘অপশনাল প্রোটোকল টু দ্য কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারে (ওপি-ক্যাট)’ পক্ষভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
মালয়েশিয়ার জোহর বাহরুতে বাংলাদেশের একটি নতুন কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
বৈঠকে মহেশখালীকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের আওতায় আনতে ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

মির্জা ফখরুল
দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, তাহলে কেন হবে না?
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে কেন নির্বাচন হবে না? দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। নির্বাচিত প্রতিনিধি চায়। এ জন্য তারা জীবন দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনাসভাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
অনুষ্ঠানে গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক। বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
তাঁর এই বক্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী মানুষ। অনেকে বলেছেন যে, হবে না। কেন হবে না? নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে ফেলতে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নির্দেশ দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি, যেন এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আপনাদের কি মনে হয় দেশে নির্বাচন হবে? অনেক মানুষ জিজ্ঞেস করে, নির্বাচন কি হবে? গতকাল প্রেস সেক্রেটারি যে বক্তব্য রাখলেন, তাতে কি মনে হয় নির্বাচন হবে? বেশির ভাগ মানুষ মনে করে নির্বাচন হবে না। তাহলে কী হবে? আমাদের ভাবনার দরকার আছে।’
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো নেই, দুঃশাসন কি বিদায় নিয়েছে? না। আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আমাদের সামনে এখনো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিরাজমান। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা, দিল্লির আধিপত্যের কালো থাবা চতুর্দিকে ছেয়ে বসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-আন্তর্জাতিক নীতি-কূটনীতি ইভেন সামনের নির্বাচনে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কিভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া যায় তার চক্রান্ত এখনো বিদ্যমান।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচার পালিয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারী মানসিকতা বিরাজমান। আজকেও যদি দেখেন, এটা যদি না হতে পারে, ওটা হতে পারবে না। এ রকম বক্তব্য দিচ্ছেন আমাদের তরুণ নেতৃত্বের কতিপয় নেতা। আপনি আপনার চাহিদা বলতেই পারেন, এটা আপনার স্বাধীনতা। কিন্তু আপনি এটা বলতে পারেন না যে, এটা না হলে, ওইটাও হবে না। এই অধিকার আপনার নেই। এই মানসিকতা আর স্বৈরাচারের মানসিকতা একই।’
তিনি বলেন, ‘৬৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা নিগৃহীত হয়েছেন। সংগ্রামের সম্পাদক আসাদ ভাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু লেখনীর কারণে। এখনো তো আপনাদের কণ্ঠে একই ধরনের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এটি কি ঠিক?’
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৭ বছরে সাংবাদিকদের ভূমিকা বর্তমান সরকার স্বীকার করতে চায় না। এই সরকারের যারা সুবিধাভোগী, তারা এক-দেড় মাস লড়াই করেছেন। আমরা সাংবাদিকরা ১৭টি বছর ঢাকার রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, অনেকে খুন হয়েছেন। তারপর স্বৈরাচারী সরকারের চূড়ান্ত পতনের জুলাই বিপ্লব এসেছে। সেখানে শুধু পেশাজীবী নয়, সাংবাদিকদেরও অবদান রয়েছে। আজকে মাঝে মাঝে কিছু শিশুকে দেখি সাংবাদিকদের হুমকি দিতে। তোমরা দেড় মাসের নেতা। আমরা ১৭ বছর লড়াই করে ফ্যাসিবাদের তক্ততাউস কাঁপিয়ে তুলেছিলাম। দেড় মাস নেতৃত্ব দিয়ে, ১৭ বছরের সংগ্রামকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তোমরা সাংবাদিকদের হুমকি দাও, এটা মেনে নেব না।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘একটা ফ্যাসিবাদের ভাষা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটার নিন্দা করছি। মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ, হুমকি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করছি, সেটা খুবই অমঙ্গলসূচক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনোভাবে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, হুমকি দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা যায় না।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, এ কে এম মহসিন, ইরফানুল হক জাহিদ, সাঈদ খান, দিদারুল আলম, খন্দকার আলমগীর হোসেন ও প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ।

‘ক্ষমা’ পেতে পারেন সাবেক আইজিপি
মেহেদী হাসান পিয়াস

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিচার শুরু হয়েছে। এ মামলায় অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হতে আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
গতকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আবেদনটি মঞ্জুর করে তাঁকে সাক্ষী হিসেবে গণ্য করে সাক্ষ্য উপস্থাপনের অনুমতি দেন। এর পরই প্রশ্ন উঠেছে, মামুন কি রাজসাক্ষী হয়েছেন? হয়ে থাকলে তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে কী প্রতিকার পাবেন বা পেতে পারেন?
মামুনের দোষ স্বীকার
রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ‘প্রধানমন্ত্রী’ পদে থেকে অপরাধ করায় শেখ হাসিনাকে এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।
রাজসাক্ষী নিয়ে যা বলা আছে ট্রাইব্যুনাল আইনে?
এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ব্যাপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এসব অপরাধের বিচার হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে। আইনটির ১৫ ধারায় ‘একজন রাজসাক্ষীর ক্ষমা’ বিষয়ে বলা আছে। ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘বিচারের যেকোনো পর্যায়ে, ধারা ৩-এ উল্লিখিত যেকোনো অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা গোপনে জড়িত বলে মনে করা হয় এমন যেকোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল, অপরাধের সাথে সম্পর্কিত তার জ্ঞানের মধ্যে থাকা সম্পূর্ণ পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সকল ব্যক্তির কাছে, প্রধান বা সহায়তাকারী হিসেবে সম্পূর্ণ এবং সত্য প্রকাশ করার শর্তে, এই ক্ষমা প্রদান করতে পারে।’
২ উপধারায় বলা আছে, ‘এই ধারার অধীনে অভিযোগ গ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিচারে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ আর ৩ উপধারায় ‘বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যক্তিকে হেফাজতে আটক রাখা হবে’ বলা আছে।
রাজসাক্ষী হলে আইনের শর্ত পূরণ করতে হবে : রাজসাক্ষী হতে চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মামলায় আদালত তাঁকে সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সাক্ষ্য-জেরার পর আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে তিনি সব সত্যি বলেছেন, কোনো কিছু গোপন করেননি বা তাঁর সাক্ষ্যের পর প্রকৃত সত্য উদঘাটন হয়েছে, তখন আদালত তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৫ ধারায় যেসব শর্তের কথা বলা আছে, সেই সব শর্ত তাঁকে পূরণ করতে হবে। শর্ত পূরণ করতে পারলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করবেন। রাজসাক্ষী হতে পারলে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার আছে তাঁর অপরাধ ক্ষমা করার।’
প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, ‘আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দোষ স্বীকার করেছেন ট্রাইব্যুনালের কাছে। তিনি বলেছেন, এই মামলার সম্পূর্ণ সত্যি এবং সব পরিস্থিতি তুলে ধরতে চান। এই মর্মে একটি আবেদনও দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন এবং মামলার সাক্ষী হিসেবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন।’
ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হওয়ার এটিই প্রথম নজির : প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, ফৌজদারি অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে আর কোনো আসামি রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেননি। মামুনকে কারাগারে আলাদা সেলে রাখা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে রাজসাক্ষী হতে চেয়েছেন এবং যেসব আসামির বিরুদ্ধে তিনি বলতে পারেন বা তাঁর বক্তব্যে যেসব আসামির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, সেসব আসামি তাঁকে বায়াস (পক্ষে আনার) করার চেষ্টা করতে পারেন, তাঁর নিরাপত্তার ঘাটতি হতে পারে, এই জন্য কারাগারে তিনি যেন আইসোলেটেড (বিচ্ছিন্ন) থাকেন অর্থাৎ আলাদা সেলে রাখা হয়, সেই আবেদন করেছেন। আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে।’ কারাগারে আলাদা সেলে থাকলেও সাবেক আইজিপি হিসেবে মামুন যে ডিভিশন সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, তার বাইরে বাড়তি কোনো সুবিধা তিনি পাবেন না বলেও জানান প্রসিকিউটর তামিম।