রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬ সালে আট কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় করা সেই মামলা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক আদালত। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট উল্লিখিত রায় দেন।
ফিলিপাইনের স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করা এক পত্রে আরসিবিসি বলেছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তারা আদালতের এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরেছে। গতকাল শনিবার ফিলিপাইনের গণমাধ্যম এনকোয়ারার ডট নেট এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলায় সারবস্তু আছে বলেই মনে করছেন নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। এই পরিস্থিতিতে আরসিবিসি তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে।
রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ২০২০ সালের ২৭ মে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের মধ্য থেকে ব্লুমবেরি ও ইস্টার্ন হাওয়াই নামের দুটি ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু মামলা খারিজ হয়নি।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কের আদালত জানিয়েছেন, ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক (আরসিবিসি) ও অন্যান্য বিবাদীর বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগে মামলা চলতে পারে, যেমন যে অর্থ আরসিবিসিতে গেছে তা ফেরত দেওয়া।
আরসিবিসি জানিয়েছে, আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
তবে রায়ে নিউ ইয়র্কের সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, তিনটি ‘কজ অব অ্যাকশনের’ আইনি ভিত্তি নেই। আরসিবিসি ব্যাংক ও সব বিবাদীর বিরুদ্ধে অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাৎ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সহায়তা বা প্ররোচনা, জালিয়াতি (আরসিবিসির বিরুদ্ধে), জালিয়াতিতে সহায়তা বা প্ররোচনা এসব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় আরো চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন ইসমায়েল রেয়েস, ব্রিজিত ক্যাপিনা, রোমুয়ালদো আগারাদো ও নেস্তর পিনেদা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়া হয়। এর পর ২০১৯ সালে ফিলিপাইনের আরসিবিসি, দেশটির ক্যাসিনোসহ ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং তিন চীনা নাগরিককে আসামি করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ। অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘ পরিকল্পনার মাধ্যমে আসামিরা অর্থ চুরি করেছে।
২০২০ সালের ২০ মার্চ দেওয়া এক রায়ে বলা হয়, মামলাটি টেকনিক্যাল হওয়ায় তা বিচারের জন্য গ্রহণ করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়েরের সুযোগ আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে নিউ ইয়র্কের কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টে আরেকটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুইফট ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ৩৫টি ভুয়া বার্তার মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভের নিউ ইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টা চালায় অপরাধীরা। এর মধ্যে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট করতে সক্ষম হয় তারা। অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যায় দুই কোটি ডলার, যা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাকি আট কোটি ১০ লাখ ডলার আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে ফিলিপাইনের বিভিন্ন ক্যাসিনোয় ঢুকে যায়। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে তিন কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার করা হয়েছে।