তাঁরা মোট ছয়জন। দুজন নারী, চারজন পুরুষ। সবার বয়স ষাটের বেশি। থাকেন বান্দরবানে।
ছয়জনের ভাষা বাঁচাতে এক তরুণের লড়াই
পিন্টু রঞ্জন অর্ক, আলীকদম (বান্দরবান) থেকে ফিরে

ওই ছয়জন হলেন আলীকদমের দুর্গম ক্রাংসিপাড়ার বাসিন্দা মাংপুন ম্রো, কুনরাও ম্রো ও আরেক কুনরাও ম্রো এবং নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মেনসিংপাড়ার বাসিন্দা থোয়াং লক ম্রো। অন্য দুজন নাইক্ষ্যংছড়ির ওয়াইবটপাড়ার রেংপুন ম্রো ও কাইংওয়াইপাড়ার মাংওয়াই ম্রো।
ভাষাবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই মানুষগুলো মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে রেংমিটচ্য ভাষা! তবে সুড়ঙ্গের শেষে আলোর দেখা মিলেছে। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শ্রুতির আড়ালে থাকা ভাষাটিকে বাঁচাতে শুরু হয়েছে রেংমিটচ্য ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম। ম্রো জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের নিয়ে গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে চলছে এই কার্যক্রম।
আলীকদম উপজেলার তৈন মৌজায় দুর্গম ক্রাংসিপাড়ায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছেলে-বুড়ো শিখছেন নিজেদের পূর্বপুরুষদের ভাষাটি।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ডর্টমুন্ড কলেজের অধ্যাপক ডেডিভ এ কে পিটারসন ১৯৯৯ সালে খুমি, ম্রো ভাষা নিয়ে গবেষণা করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৭০ সালের দিকে লেখা লরেন্স জি লোফলার নামের এক জার্মান ভাষাবিদের বই থেকে রেংমিটচ্যর কথা জেনেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে ডেভিডের গবেষণা সহযোগী ছিলেন ইয়াংঙান ম্রো। এ সময় ডেভিড ও ইয়াংঙান রেংমিটচ্য ভাষা বলতে পারা ২২ জনকে খুঁজে বের করেন। ডেভিড চলে যাওয়ার পরও কাজটি চালিয়ে যান ইয়াংঙান ম্রো। পরে আরো ১০ জনকে খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। তবে ওই ৩২ জনের মধ্যে বিভিন্ন সময় মারা যাওয়ার পর রেংমিটচ্যভাষী এখন মাত্র ছয়জন জীবিত রয়েছেন।
হারিয়ে যেতে দেব না
সিংরা ম্রো বলেন, ‘রেংমিটচ্য আমাদের পূর্বপুরুষদের ভাষা। কিন্তু এখন বাবা ছাড়া মাত্র পাঁচজন ভাষাটি বলতে পারেন। তাই তাঁরা জীবিত থাকতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে বয়স্করা মারা গেলেও ভাষাটি না হারায়।’
শুরু থেকেই সিংরার এই উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন লেখক ও গবেষক ইয়াংঙান ম্রো। গত বছর রেংমিটচ্য ভাষার প্রথম অভিধান লিখেছিলেন তিনি। মূলত ‘মিটচ্যতখক’ নামের ৩৪০০ শব্দের সেই অভিধানকে ভিত্তি ধরে এখন ভাষাটা শেখানো হচ্ছে।
ইয়াংঙান ম্রো বললেন, “চোখের সামনে একটা ভাষা চিরতরে হারিয়ে যাবে এটা মানতে পারিনি। তাই ভাষাটাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ‘মিটচ্যতখক’ এ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে গাছপালা, পশুপাখি, কীতপতঙ্গ, খাদ্য, খেলাধুলা, সংখ্যা, দিন ও মাসের নাম রাখা হয়েছে। রেংমিটচ্য ভাষার বাক্যও আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সবাইকে এগুলো শেখানো হচ্ছে।”
তাঁর মন পুড়েছিল
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় সিংরা। মা-বাবা দুজনই জুম চাষি। সংসারে অভাব লেগেই থাকত। কষ্টেসৃষ্টে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। পরে জুম চাষি হয়েছেন। বাবা মাংপুন ম্রো রেংমিটচ্য ভাষী হলেও সিংরা ভাষাটি ভালো জানতেন না। বছর পাঁচেক আগের কথা। বর্ষাকাল। জুমে কাজ করে ফেরার সময় পা পিছলে পাহাড় থেকে পড়ে যান মাংপুন ম্রো। সিংরা কাঁধে করে তাঁকে বাড়ি নিয়ে এলেন। কিছুদিন পর কিছুটা সুস্থ হলে তিনি সিংরাকে ডেকে বললেন, ‘আমি আর কদিন আছি। মরার আগে একটা আফসোস রয়েই গেল। তোরা রেংমিটচ্য ভাষাটা শিখলি না। আমি না থাকলে আমার ভাষাটাও নাই হয়ে যাবে!’
শয্যাশায়ী বাবার এই আফসোসে খুব করে পুড়ে ছিল সিংরার মন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি বাবার কাছ থেকে রেংমিটচ্য ভাষাটা রপ্ত করলেন। পরে ভাবলেন, পাড়ার শিশুদেরও ভাষাটি শেখাবেন। মাস দুয়েক আগে এক সন্ধ্যায় পাড়ার সবাইকে ডাকলেন। তত দিনে রেংমিটচ্য ভাষার প্রথম অভিধানও প্রকাশিত হয়ে গেছে। সিংরা বললেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ভাষাটি যতটুকু পারি সবাইকে সহজ করে শেখাতে চাই। তোমরা শিখতে চাও কি না?’ শুধু ছোটরা নয়, সেখানে উপস্থিত বড়রাও বললেন, ‘আমরা আসব।’
এরপর তিনি পরামর্শ করলেন ইয়াংঙান ম্রোর সঙ্গে। তিনিও উৎসাহ দিলেন। শিশুদের খাওয়ানোর জন্য দিলেন দুই হাজার টাকা। ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সিংরার মাচাং ঘরের পাটাতনে শুরু হলো রেংমিটচ্য ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম। প্রথম দিন এসেছিল ১৫ জন শিশু। এখন রেংমিটচ্য ভাষার পাঠ নিতে আসে ৩৫ জন। শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও শামিল হন।
সরেজমিনে এক দিন
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম ক্রাংসিপাড়ার বাসিন্দা সিংরা ম্রো। সড়কপথে গ্রামটিতে যাওয়ার উপায় নেই। আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়ন থেকে তৈনখালের উজানের দিকে মিনিট চল্লিশের মতো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে হয়। তারপর সেখান থেকে বাঁশফুল ঝিরি হয়ে ঘণ্টা দুয়েকের মতো হেঁটে গেলে ক্রাংসিপাড়া।
বনপাহাড়ে ঘেরা গ্রামটিতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা নেমে এলো। দূর থেকেই কানে ভেসে আসছিল, শিশুদের সমবেত কণ্ঠস্বর। পাহাড়চূড়ায় থাকা একটা ঘর থেকে সেই আওয়াজ আসছে। কাছাকাছি গিয়ে দেখা গেল, মাঝ বয়সী একজনকে কেন্দ্র করে ওপর গোল হয়ে বসেছে শিক্ষার্থীরা। এই দলে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সীরা আছে। সংখ্যাটা ৩০ জনের মতো হবে। পরিচয় দিয়ে কাছে ভিড়লাম। সবার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা ভদ্রলোকই সিংরা ম্রো। এখন রেংমিটচ্য, ম্রো এবং বাংলা—এই তিনটি ভাষা জানেন। বাংলাতেই বললেন, ‘আমাদের পাড়ার সবাই দিনভর চাষবাস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাই সন্ধ্যার পর পড়াই। প্রাথমিকভাবে নিজেদের নাম, মা-বাবার নাম, ফুল, ফল, প্রাণী ইত্যাদির নাম এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ছোট ছোট বাক্য শেখাচ্ছি।’
এখানেই দেখা মিলল কুনরাও ম্রোর সঙ্গে। বয়স তাঁর ষাটের ঘরে। মা-বাবার কাছ থেকে রেংমিটচ্য ভাষা শিখেছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর এই ভাষায় খুব একটা কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ যাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল, তিনি রেংমিটচ্য জানেন না। বললেন, ‘সিংরা ম্রোর এই উদ্যোগে খুব খুশি হয়েছি।’
তাঁর নাতি কাইংয়োই ম্রো এসেছে পাঠশালায়। সে বলল, ‘রেংমিটচ্য ভাষায় এখন মা-বাবা এবং আমার নাম বলতে পারি।’
রেংমিটচ্যভাষী মাংপুন ম্রোর বয়স সত্তরের কাছাকাছি। তিনি বললেন, ‘আমাদের তো চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমরা মারা গেলে ভাষাটা হারিয়ে যাবে—এ নিয়ে এত দিন চিন্তায় ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, বংশপরম্পরায় ভাষাটা টিকে থাকবে।’
এখন দরকার সরকারি সহায়তা
পাঠশালা চালুর পর থেকে শিশুরা ধীরে ধীরে রেংমিটচ্য ভাষায় আগ্রহী হচ্ছে বলে জানালেন সিংরা ম্রো। যত দিন বেঁচে আছেন কাজটি চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, শুরুতে পাড়ার ছেলেমেয়েদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা শব্দগুলো শেখাচ্ছি। উচ্চারণে কোনো ভুল হলে ঠিক করে দেওয়ার জন্য আমাদের বাবারা রয়েছেন। আমাদের পাড়ার বাইরে যে তিনজন রেংমিটচ্যভাষী রয়েছেন তাঁদেরও নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে। একসঙ্গে থেকে তাঁরা যাতে নিয়মিত কথোপথন চালিয়ে যেতে পারেন।’
ইয়াংঙান ম্রো বললেন, ‘সিংরার সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবু তিনি ভাষা বাঁচানোর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এখন দরকার সরকারি সহায়তা। পাড়ায় একটি স্কুল করে রেংমিটচ্য ভাষার চর্চাটা স্থায়ী রূপ দেওয়া দরকার। না হলে ব্যক্তি উদ্যোগ একসময় মুখ থুবড়ে পড়বে। বাংলাদেশ তথা পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে আরো একটি ভাষা!’
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।