আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে না থেকেও দলটির সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে চাচ্ছে জাতীয় পার্টি। এ জন্য গত বুধবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে জাপা কমবেশি ৭০টি আসনে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ আসনে সমঝোতা হলেই সন্তুষ্ট থাকবে দলটি। জাতীয় পার্টির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় রাখঢাক
নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, ২০টির বেশি আসনে ছাড় নয়—এমন প্রস্তুতি নিয়েই আলোচনায় বসেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে দুই দলের মধ্যে।
দুই দলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ভোটের সমীকরণ মেলাতে আজ অথবা আগামীকাল আবারও বৈঠকে বসার সম্ভাবনা আছে। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও ১৪-দলীয় জোটের আসন বণ্টনসংক্রান্ত কমিটির সদস্য ওবায়দুল কাদের নেতৃত্ব দিতে পারেন। তবে গত রাত ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বৈঠকটি কোথায়, কখন অনুষ্ঠিত হবে তা জানা যায়নি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) আবার বৈঠক হতে পারে।
পরবর্তী বৈঠকে মূলত আসন আরো বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ২৫টির বেশি আসন ছাড়ার পক্ষে নয় বলে সূত্র জানায়। কিন্তু আসন যা-ই হোক, জাতীয় পার্টি ছাড় পাওয়া আসনগুলোয় নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে কি না, সেটা বড় বিষয় হবে আলোচনার। জাতীয় পার্টির চাওয়া লাঙলের আসনে যেন নৌকা ভোট না করে।
কিভাবে এই আসন সমঝোতা হবে সে বিষয়ে এখনো দুই দলের ঐকমত্য হয়নি। বুধবারের বৈঠকে আওয়ামী লীগ আসন সমঝোতার কৌশলের বিষয়ে কিছু ধারণা দিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে ক্ষমতাসীন দল। তবে তাতে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা সবাই সন্তুষ্ট হননি। আওয়ামী লীগের মনোভাব নিয়ে তারা কিছুটা বিভ্রান্তও।
গতকাল দুপুরে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরীর গুলশানের বাসভবনে বৈঠক করেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু ও দলের পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
জাপার আজকের দলীয় বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগকে দেওয়া তালিকায় কোন কোন আসন আছে তা তাদের জানানো হয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তুও কিছুটা গোপন রাখা হয়েছে বলে তাঁর মনে হয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোট অথবা সমঝোতা করে ভোটে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন ছিল জোটবদ্ধ। এই দুইবার আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া আসনে জিতেছে জাতীয় পার্টি। এবারও তারা এমনটাই চায়। কিন্তু ওই আসনগুলোতে এবার নৌকার প্রার্থী রয়েছে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি তাদের বিজয়ী হওয়া ২৩ আসনে কোনো ছাড় দিতে চায় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৭ আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছিল। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি বেশি আসন চাইছে।
জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারা ভোট বর্জন করলে নির্বাচন একেবারে একপেশে হয়ে যাবে। এ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও উদ্বেগ আছে। জাতীয় পার্টি এই উদ্বেগকে পুঁজি করে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দর-কষাকষি করার সুযোগ নিয়েছে।
তবে আসন সমঝোতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাড়া দেখা যায়নি বলে জানান জাপা নেতারা। এখন এসব বিষয় নিয়ে আজ-কালের মধ্যে আবার বৈঠক হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, বৈঠকে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কথা বলেছে। জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে থাকার অনুরোধ করেছে। জাতীয় পার্টি চাচ্ছে আসন সমঝোতা। সেখানে আওয়ামী লীগের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়।
গতকালের দলীয় বৈঠকে নেতারা বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন, সে বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে হবে। নইলে শুধু মৌখিক আশ্বাসে ভোটে গিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারবেন না।
আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হয়নি : কাদের
আওয়ামী লীগের জোটের বাইরে থাকা জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হলেও নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকাল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মূল বিষয় ছিল নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করা। যারা নির্বাচনমুখী শক্তি, তাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে গুপ্তহত্যা, নাশকতা ও নির্বাচনবিরোধী অপকর্মকে প্রতিহত করা হবে। এটাই আলাপ-আলোচনার মূল বিষয় ছিল।
জাতীয় পার্টি দল হিসেবে অনেক কথাই বলতে পারে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক দলের হিসেবে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করা, এটা তো তারা চাইবে। বাস্তবে কী হবে, সেটা পরে দেখা যাবে। চাইতে তো কোনো দোষ নেই, আশাটা বড় থাকাই ভালো।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপে ‘এত লুকোচুরি কেন’, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘লুকোচুরির বিষয় না। এটা নিয়ে এত ঢাকঢোল পেটোনোর কী আছে? নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। কারণ নির্বাচনবিরোধী শক্তি যে অপরাজনীতি করছে, সেটা মোকাবেলার জন্য আমাদের মধ্যে একটা সমন্বয় করা দরকার। এখানে লুকোচুরির কোনো ব্যাপার নয়।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এর আগে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। একসময়ে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।
একই কথা বললেন জাপা মহাসচিবও
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘আমরা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলিনি, প্রয়োজনও নেই। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চেয়েছি। আওয়ামী লীগ আশ্বস্ত করেছে।’
গতকাল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে জাপার কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাপা মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভালো মনোভাব আছে। তবে এখনো সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভয় আছে। সারা দেশের মানুষ ভোট দিতে পারলে ১৯৯১ সালের মতো নীরব বিপ্লব হয়ে যেতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি এবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’
দেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট বেশি দাবি করে চুন্নু বলেন, নির্বাচনে যদি ভোটাররা আসতে পারে, নীরব ভোটবিপ্লব হবে। আওয়ামী লীগ যদি গণতান্ত্রিক দল হয়, তাহলে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে।
নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টি সরে যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জন করার ইতিহাস কম। আমরা বুঝি গণতান্ত্রিক ধারাকে বজায় রাখতে হলে নির্বাচন জরুরি।’
(সংশোধনী : গত বুধবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার বৈঠকে আমির হোসেন আমু উপস্থিত ছিলেন না। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।)
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।