আর বাংলাদেশে নির্বাচনে ৭০ শতাংশের কম ভোট সাধারণত হয় না।
রাজনৈতিক দল হিসেবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শত শত রাজনৈতিক দল আছে। এখানে এক-দুটি নির্বাচনে না এলেও বেশির ভাগই অংশগ্রহণ করে। বাকিদেরও আমরা বলব, তাদেরও অংশ নেওয়া উচিত।’
সরকারও চায় মডেল নির্বাচন : মোমেন বলেন, ‘বিদেশিরা আসছেন। তাঁদের দেশের দিকে তাকান। তাদের কী অবস্থা। আমেরিকা—আড়াই শ বছরের গণতন্ত্র। সেখানেও অনেক দুর্বলতা। তাঁদের দেশের লোকজনই দুর্বলতা, ভুলত্রুটির কথা বলে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আমাদের নির্বাচনটা বিশ্বে মডেল হবে।’ তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি আসছেন। তাঁরা বাংলাদেশের নির্বাচনকে মডেল নির্বাচন হিসেবে সার্টিফিকেট দেবেন।
মোমেন বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের ওপর বিদেশিদের কোনো চাপ নেই। সরকার নিজের তাগিদে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করতে চায়।
বিএনপিকে নির্বাচনে চায়, তবে না এলেও সমস্যা নেই : বিএনপির নাম উল্লেখ না করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার বড় কোনো দলকে ছাড়া নির্বাচন চায় না। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো দল না এলে সেটি তাদের বিষয়।
বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী’ ইঙ্গিত করে মোমেন বলেন, ‘এ দেশে সন্ত্রাসী দলটল থাকতে পারে। তারা যদি না আসে তবে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সমস্যা হবে না। সন্ত্রাসী দলটল না এলে কোনো অসুবিধা নেই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দল ভারতবর্ষে সন্ত্রাসী দল, নির্বাচনে আসে না। যুক্তরাষ্ট্রে নািস দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।’
পর্যবেক্ষকদের নিয়ে শঙ্কা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকান—যে-ই আসেন তাঁদের আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বাগত জানাব। আমাদের লুকানোর কিছু নেই। তাঁদের ভালো সাজেশন যদি থাকে, আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের ভয়টা হলো, অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের (পর্যবেক্ষকদের) কেউ কেউ হয়তো নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করতে পারেন। সেটা যদি করেন তাহলে দেশের অমঙ্গল ডেকে আনবে। আপনাদের, আমাদের সবার জন্য অমঙ্গল ডেকে আনবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া যেন ধ্বংস করা না হয়। এটি করা মানে দেশের ভবিষ্যৎ খুব খারাপ করা।’
কার সঙ্গে সংলাপ : সংলাপের জন্য বিদেশির চাপ আছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সংলাপ? কার সঙ্গে সংলাপ? আমেরিকায় সংলাপ করে? আমেরিকার ডেমোক্র্যাট পার্টি কি সংলাপ করে? ওখানে প্রেসিডেন্ট কি নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করেন? ইংল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী কি নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করেন?’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুনিয়ার আর কোথাও এ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক আছে? পাকিস্তান ছাড়া?’
সংলাপ ও আলোচনাকে অবান্তর হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এগুলো অতীতেও কোনো ফল দেয়নি।
চীনের দিকে ঝুঁকছে না বাংলাদেশ : চীনা ঋণ নিয়ে মোমেন বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার ঘটনার সময় অনেকেই বলেছিলেন যে বাংলাদেশ চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ল। তবে আমাদের চীনা ঋণ মোট ঋণের সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। আর জাপানের ঋণ ১৭ বিলিয়ন ডলার। আমরা কখনো খামাখা ঋণ নিই না।’
বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে না উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারো লেজুড় না, চীনের লেজুড় না। আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে।’
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া ও চীনের বিবৃতি প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘তারা কেন বিবৃতি দিয়েছে, তারাই জানে। তাদের জিজ্ঞেস করলে ভালো হবে।’
দেশ নিয়ে বিদেশিদের কাছে প্রশ্ন বেখাপ্পা : মোমেন বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা দেশে আসেন দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে। কিন্তু অনেক সময় তাঁরা এমন সব কথা বলেন, যা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল। বিদেশিদের কাছে গিয়ে দেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা বেখাপ্পা দেখায়।
সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ‘সাইফার’ (গোপনীয়) বার্তা ফাঁস হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাইফার বার্তা ফাঁসের ঘটনা দুঃখজনক। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গুমের অভিযোগ ভাঁওতাবাজি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মানবাধিকার, গণতন্ত্র, গুম—এগুলো সব ভাঁওতাবাজি। বিভিন্ন দেশেই মানুষ হারিয়ে যায়, আবার ফিরেও আসে। আমাদের দেশে গত ছয় মাসে মাত্র একজন নিখোঁজ হয়েছে। অথচ অন্য একটি দেশে এক হাজার ৩০০ লোক নিখোঁজ হয়েছে। তারা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখে না।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুদ্ধ ছাড়া সবই করেছে বাংলাদেশ : এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুদ্ধ ছাড়া আর সব কিছু করেছি। তবে এখনো প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া সফল হয়নি।