ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭
সাক্ষাৎকার

মোদি-বাইডেন বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা

  • যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুদাবেহ শহীদ। ওয়াশিংটনে মোদি-বাইডেন বৈঠক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান
শেয়ার
মোদি-বাইডেন বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা
রুদাবেহ শহীদ

কালের কণ্ঠ : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর কেমন হলো?

রুদাবেহ শহীদ : চীনের উত্থানের পটভূমিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকটি হলো। মোদির সঙ্গে বাইডেনের বৈঠকটিকে যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে বাণিজ্য, চীনের উত্থান, নিরাপত্তা ও কোয়াডের দৃষ্টিকোণ থেকে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে চার দেশীয় নিরাপত্তা জোট কোয়াডের তৎপরতা বেড়েছে। আমার মনে হয়, এই বৈঠকে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা গুরুত্ব পেয়েছে।

ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনবে। আর এ ক্ষেত্রে মোদির সফর সফল হয়েছে।

মোদি-বাইডেন বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে বাণিজ্য ও নিরাপত্তাএর বাইরেও আরো বিষয় আছে। যেমন, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছরের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ছিল।

জাতীয় স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসে তাঁকে ‘গান স্যালুট’ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ কংগ্রেসে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ভাষণ দিয়েছেন।

মার্কিন কিছু প্রতিষ্ঠান, বিশ্লেষক ও কর্মী মোদিকে এত সম্মান দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন।

তাঁদের অভিযোগ, ভারত গণতান্ত্রিক মানের বিচারে পেছনের দিকে হাঁটছে। সফরে এগুলো নিয়ে কথা হলেও তা প্রকাশ্যে খুব একটা আসেনি।

কালের কণ্ঠ : বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথা বলেছে। এ নিয়ে তো সংবাদ সম্মেলনেও প্রশ্ন উঠেছিল।

রুদাবেহ শহীদ : মোদির এই সফর ঘিরে নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় পত্রিকাগুলো ভারতের গণতন্ত্র, সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে।

বলা হয়ে থাকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজ দেশে প্রেস কনফারেন্স করেন না। যুক্তরাষ্ট্রে যখন তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন, তখন এ বিষয়টি উঠল। তবে তিনি ভালোভাবেই উত্তর দিলেন। তিনি বলেছেন, ভারতে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য আছে। সবাই সমান। ওখানে এ রকম হয় না।

নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতি মোদির আচরণের ইতিহাস নিয়েও ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিবাদ হয়েছে। মোদি বা বিজেপির বিরুদ্ধে রানা আইয়ুবের মতো ব্যক্তিরা সরব। তাঁদের কথা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্থান পায়। যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক প্রতিবেদনে ভারতকে খুব ভালো স্থানে রাখা হয়নি। বাইডেন-মোদি বৈঠকে হয়তো এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্র বলে, ভারত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র।

কালের কণ্ঠ : অনেক বিশ্লেষক বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর নীতিগত অবস্থানের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এ কারণে কোনো বিষয়ে উদ্বেগ থাকলেও প্রকাশ্যে বলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের এই বিশেষ গুরুত্বের কারণ কী?

রুদাবেহ শহীদ : ভারত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আসলে কতটা উদ্বেগ আছে সেটিও বিবেচ্য বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র এসব বিষয় দেখছে নিরাপত্তা, বাণিজ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে। ভারত একটি বড় বাজার। আবার নিরাপত্তা ইস্যুতে নিঃসন্দেহে চীনের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উদ্বেগের। চীন পারলে দক্ষিণ চীন সাগরের ৯০ শতাংশ জায়গা দাবি করে বসে। ভারত ও জাপানের সঙ্গে চীনের সীমান্ত বিরোধ আছে। আবার রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের খুব ভালো সম্পর্ক। সার্বিকভাবে সব কিছু মিলিয়ে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের আরেকটি বড় শক্তি হলো ভারতীয় ডায়াসপোরা (প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়)। ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান—দুই দলেই তাদের বড় প্রভাব আছে। শুধু ভোটার নয়, দলের তহবিলে অর্থায়নের ক্ষেত্রেও তারা বড় ভূমিকা রাখে। অবশ্যই ভারতীয় লবিস্ট গ্রুপ বড়। মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যান সত্য নাদেলা, গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইয়ের মতো অনেক ভারতীয় আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ নির্বাহী পদে আছেন। বর্তমান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।

কালের কণ্ঠ : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বা হোয়াইট হাউসের ব্রিফিং বা দৃশ্যমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ আলোচনায় আসছে। এক দশক আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণ কী?

রুদাবেহ শহীদ : বড় কারণ নিরাপত্তা ইস্যু ও কোয়াড। দক্ষিণ এশিয়ার মতো এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে কোনো দেশের একক আধিপত্য আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভূখণ্ডের ৭৫ শতাংশ ভারতের। ৮০ শতাংশ জিডিপি ভারতের। হয়তো পাকিস্তান বা সার্ক সদস্য আফগানিস্তান আকারে বড়। কিন্তু বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ—এগুলো তো অবশ্যই আয়তনে অনেক ছোট। তবে বৈশ্বিকভাবে বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ মোটেও ছোট দেশ নয়। জনসংখ্যায় বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম। জিডিপিতে বিশ্বের বৃহত্তম দেশের তালিকায় ৩৫তম।

গত ১০ বছরে যখন মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধের সমাধান হয়েছে, তখন কিন্তু বাংলাদেশ আর স্থলভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। সার্কের জন্য বাংলাদেশই উদ্যোগ নিয়েছিল। ভারত, পাকিস্তান ভূ-রাজনৈতিক কারণসহ অনেক কারণে সার্ক ব্যর্থ হয়েছে। সমুদ্রসীমা বিরোধ নিয়ে আদালতের আদেশ বাংলাদেশের পক্ষে আসার পর পররাষ্ট্রনীতিতে মেরিটাইম গুরুত্ব পাচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : চীনের ভূমিকার কারণে কি যুক্তরাষ্ট্র এখানে আরো সক্রিয় হয়ে উঠছে?

রুদাবেহ শহীদ : চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের পুরনো সাবমেরিন কেনা নিয়ে প্রথমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু পরে যখন দেখা গেল, সাবমেরিনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞরাও আসছেন, তখন পশ্চিমারা ভয় তো পেলই, প্রতিবেশী ভারতের গণমাধ্যমেও নানা প্রশ্ন উঠল।

বাংলাদেশের অনেক অবকাঠামো প্রকল্পে চীনারা সম্পৃক্ত। পশ্চিমাদের ভয় হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা যেন বাংলাদেশের না হয়। শ্রীলঙ্কার অবস্থা যদি দেখেন, ওরা সবার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। চীনের কাছ থেকে ঋণ দিয়েছে ১০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে জাপান ও প্যারিস ক্লাব থেকে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সও আছে।

আরেকটা ভয় হচ্ছে, মালদ্বীপের মতো যেন না হয় বাংলাদেশের। মালদ্বীপের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ঋণ চীনের। যখন ওই দেশটি বিপদে পড়েছে তখন ভারত সহজ শর্তে অনেক ঋণ দিয়েছে। মালদ্বীপের সোলিহর সরকার ভারতপন্থী।

যুক্তরাষ্ট্রের ভয়, এখানে কি চীনের প্রভাব বাড়ছে? হতে পারে, এ কারণে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ইস্যু ওঠানো হচ্ছে। তা না হলে দুনিয়ার অনেক জায়গায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। ওগুলো নিয়ে কেন বলা হয় না!

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা রাখছে সেখানে ভারতও কি একই অবস্থানে আছে?

রুদাবেহ শহীদ : না। এটি এখনো বলা যাচ্ছে না। কারণ ভারত এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যসহ অনেক ধরনের সম্পর্ক আছে। ভারতেরও এখানে জাতীয় স্বার্থ আছে। কোন সরকারের আমলে তাদের জাতীয় স্বার্থ কতটা রক্ষা হয় নিশ্চয় তারাও তা চিন্তা করবে।

কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের আগেও তো কিছু দেশের ক্ষেত্রে ভিসানীতি নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে  যুক্তরাষ্ট্রের কী সাফল্য এসেছে?

রুদাবেহ শহীদ : অনেক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে ওই সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের ভূমিকা যাতে সংযত থাকে সে জন্য এই নীতি করা হয়েছে। নাইজেরিয়ার ক্ষেত্রে এর সাফল্য সীমিত।

তবে এ ধরনের ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কতটা পড়বে তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে, আপনি ওই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের সঙ্গে আপনার অন্য অংশীদারকে কতটা পাশে পাচ্ছেন তাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

মিয়ানমারের দিকেই দৃষ্টি দেওয়া যাক। মিয়ানমারের ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞা এসেছে। অনেক কম্পানি মিয়ানমার ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু চীন মিয়ানমারকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। ভারত, ইসরায়েল, রাশিয়াও ওই দেশটির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে।

কালের কণ্ঠ : প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী মোদি মিয়ানমার ও আফগানিস্তান প্রসঙ্গে কথা বলেছেন।

রুদাবেহ শহীদ : মিয়ানমার ও আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হওয়াটা ভালো। যুক্তরাষ্ট্র গত বছরই বলেছে, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা জেনোসাইড। আফগানিস্তানেও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আছে। তালেবানরা এবার আরও প্রশিক্ষিত। তারা কাতারে কূটনীতি শিখেছে। কিন্তু এর পরও আমার সন্দেহ আছে সরকার চালানোর মতো দক্ষতা তাদের আছে কি না। এর আগে আশরাফ ঘানীর সরকার ছিল দুর্নীতিবাজ। এখন তো পরিস্থিতি অন্যরকম।

আফগানিস্তানের অনেক সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ আছে। মিয়ানমারে অনেক রাজনৈতিক বন্দি আছে। মিয়ানমারের অনেক জায়গায় পুরোদমে গৃহযুদ্ধ চলছে।

যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য যা করতে পারছে করছে। কিন্তু সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা একমাত্র সমাধান নয়। মিয়ানমারে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বেশি। রাখাইন রাজ্যে চীন ও ভারতের স্বার্থ আছে। এখানে যদি যুক্তরাষ্ট্র সবাইকে পাশে না পায় তাহলে মিয়ানমারে তার গণতন্ত্র দেখা অনেক কষ্টকর হবে।

কালের কণ্ঠ : আমরা আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ দেখেছি, আবার মিয়ানমারে সু চির সরকারকে শক্তিশালী করতে মার্কিন উদ্যোগ দেখেছি। দুই দেশেই কি যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলো?

রুদাবেহ শহীদ : আপনি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলোকে দেখছেন তার ওপর সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ নির্ভর করছে। বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় বলেছে, রাষ্ট্র গড়া তাদের লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু তার আগের মার্কিন প্রশাসনগুলোর বক্তব্য ভিন্ন ছিল।

বাইডেন প্রশাসন বলেছে, ওসামা বিন লাদেন ও আল-কায়েদাকে নিষ্ক্রিয় করাই লক্ষ্য ছিল। ওই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হবে, তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে।

আবার মিয়ানমারে প্রায় ১০ বছর গণতন্ত্রের চেষ্টা হয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ ছিল। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারে গেছেন। অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সু চি রোহিঙ্গা নিপীড়নের সময় চুপ থাকার পথ বেছে নিয়েছিলেন। পরে এ সংকট আরো অনেক বড় হলো। সেখানেও যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করেছে। মিয়ানমারে বড় ধরনের অবকাঠামো উন্নতি হয়েছে।

তাই যুক্তরাষ্ট্র ওই দুই দেশে পুরোপুরি সফল বা পুরোপুরি ব্যর্থ—এমনটি বলা যাবে না।

কালের কণ্ঠ : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

রুদাবেহ শহীদ : কালের কণ্ঠকেও অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।

এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।

তবে আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে দুপুর ২টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।

 

যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট  http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

মন্তব্য
ভারতীয় জেনারেলের দাবি

চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।

জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

ঋণ-কূটনীতির সাহায্যে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে তারা ভারতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে তাদের আদর্শচ্যুতি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।

তিনটি দেশই নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের কাছাকাছি আসছে। এই নৈকট্য ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের কাছাকাছি আসা জেনারেল চৌহানকে সন্দিহান করে তুলেছে। তিনি মনে করছেন, এই তিন দেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের চিন্তা বাড়াতে পারে। স্থিতিশীলতার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।

ওই সংঘাতের সময় উত্তর সীমান্তে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।

অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।

ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

 

 

মন্তব্য
গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।

গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ গুরুতর ও স্থায়ীভাবে আহত হয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

 

 

মন্তব্য

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

    দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

তবে এবারের উদ্যোগকে বিএনপি বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মনে করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত একটি ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।

ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির দ্বিমত আছে।

ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।

সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।

সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ। 

সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে। 

এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়। 

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।

খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ