প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে সংস্থার পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। এরপর মহিলা সংস্থার তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক সাকিউন নাহার বেগম এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেন। প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম মহিলা সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিসহ প্রকল্পের অনুমোদিত পদ, কর্মরত জনবল ও মালপত্র রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এ প্রকল্পের সারসংক্ষেপ পাঠাতে বলেন। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এর মধ্যে গত ১৭ মে জাতীয় মহিলা সংস্থার বর্তমান নির্বাহী পরিচালক আবেদা আকতার প্রকল্পের ২৬৬ জনবলকে চাকরিচ্যুত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। জুন মাসের মধ্যে তাঁদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
এ ব্যাপারে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবেদা আকতার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে, জনবল নয়। তাই প্রকল্পের সব জনবলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। বিষয়টি তাঁদের জানাতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এসব কর্মীর জন্য বিকল্প কোনো চাকরি বা আয়ের সুযোগ রাখা হয়েছি কি না, জানতে চাইলে আবেদা আকতার বলেন, এসব সুযোগ রাখা হয়নি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, চিঠির বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আগামী ৩০ জুন শেষ হবে প্রকল্পের মেয়াদ। এর মধ্যে রাজস্ব বাজেটের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পদ সৃষ্টির প্রস্তাব গত ৫ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে পদ সৃষ্টি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এটি সম্পন্ন করে আগামী ১ জুলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। এ জন্য প্রকল্পের ২০ বছরের দক্ষ জনবলকে চাকরিচ্যুত করে বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষক আনা হবে।
এ বিষয়ে জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ (৬৪ জেলা) প্রকল্পের পরিচালক লোকমান হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই প্রকল্পে আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। তাই প্রকল্পের সব বিষয়ে আমার ভালো জানা নেই। তবে জাতীয় মহিলা সংস্থা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় নিজস্ব আয় থেকে জনবলবিষয়ক ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা করতে পারে।’
প্রকল্পের ঢাকা জেলার সহকারী প্রগ্রামার জিনিয়া মাহমুদা বলেন, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি মহিলা সংস্থার নিয়মিত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু যাঁদের কারণে (কর্মরত জনবল) এই প্রকল্প সফল হলো, তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘তারুণ্যের সেরা সময় এই প্রকল্পে দিয়েছি। সরকার অর্থ দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের আরো দক্ষ প্রশিক্ষক করে তুলেছে। কিন্তু আমাদের বাদ দিলে এই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কোনো কাজে আসবে না। আমাদের নতুন কোনো চাকরিতে আবেদনের বয়সও নেই। প্রকল্পের ২৬৬ জনবল চাকরিচ্যুত হলে তাঁরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ভীষণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন।’
এই প্রকল্পের জনবল যেন চাকরিচ্যুত না হয়, এ জন্য দেশের সব জেলা থেকে চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পের জনবলকে আত্তীকরণে তাঁরা অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রকল্পের ভোলা জেলার সহকারী প্রগ্রামার ফায়েজুল হক বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লক্ষাধিক শিক্ষকসহ প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি বাড়ি একটি খামারসহ অনেক প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ করেছেন। আশা করি, তিনি আমাদের হতাশ করবেন না।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে এ ব্যাপারে তাঁরা সম্মিলিতভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কমিশনকে জরুরি ভিত্তিতে পুরো বিষয় জানানোর জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত না মেনে প্রশিক্ষণ প্রকল্প : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০২১ সালের ২৮ জুলাই একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অধিদপ্তর/সংস্থার নিয়মিত কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। পরিচালন বাজেটের আওতায় অধিদপ্তর/সংস্থার নিয়মিত কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। এর পরও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শুধু নাম বদলে অনুরূপ প্রকল্প নিয়েছে জাতীয় মহিলা সংস্থা।
প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের নাম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নারীদের তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ প্রকল্প’। শিক্ষিত বেকার ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ (৬৪ জেলা) প্রকল্পেরও একই উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবেদা আকতার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।