<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সারা দেশে শিল্প-কারখানার ছাদ থেকে প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ (রুফটপ সোলার) উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে ছোট-বড় বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে ১২০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান (পিএসএমপি) ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কম্পানি লিমিটেড (ইডকল) এ তথ্য জানিয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাম্প্রতিক সময়ে তিন দফায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। সামনে আরো বাড়তে পারে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভুগছে শিল্প-কারখানাসহ আবাসিকের গ্রাহকরা। এ অবস্থায় স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম পথ সৌরবিদ্যুতের দিকে নজর বাড়ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="" height="77" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/04. April/02-04-2023/123456789/kalerkantho-1-2023-04-02-01a.jpg" style="float:left" width="450" />বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মাঝামাঝিতে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাশ টানতে হয়। রেশনিং করতে হয় শিল্পাঞ্চলে। তাতে শিল্পে উৎপাদন কমে গিয়ে অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শিল্প-কারখানার মালিকরা অব্যবহৃত ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন। সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ গ্রিড ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতের প্রায় অর্ধেক। আর এ ধরনের বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগের ৮০ শতাংশ অর্থ ঋণ সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইডকল ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করতে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিচ্ছে। এরই মধ্যে ৩২টি প্রকল্পে তারা ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে ৪৬.৪২ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। নতুন প্রকল্প থেকে আরো ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইডকল সূত্র জানায়, ছাদ প্রকল্পে ৮০ শতাংশ অর্থায়ন করা হয় ১০ বছরের জন্য। প্রথম বছর ঋণের টাকা দিতে হয় না। শুধু সুদের অংশটুকু দিতে হয়। দ্বিতীয় বছর থেকে সুদ ও ঋণের টাকা দিতে হয়। সুদহার ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে শিল্প-কারখানার জন্য গ্রিডের বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিটে খরচ প্রায় ১০ টাকা, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ১১ টাকা। আর ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ পড়ছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সমিতির প্রধান উপদেষ্টা দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতি মাসেই ছাদ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে। বর্তমানে দেশে চার হাজার ৬২১টি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। এর মধ্যে খুব শিগগির ৫০০টি গার্মেন্ট রুফটপ সোলারের আওতায় চলে আসবে। রুফটপ সোলার বা ক্লিন এনার্জি ব্যবহার করলে গ্রিন ফ্যাক্টরির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খরচ কমাতে অনেকে রুফটপ সোলারে যাচ্ছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইডকলের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (রিনিউয়েবল এনার্জি) রাসেল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রুফটপ সোলার থেকে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে জায়গা লাগে ৭০ থেকে ৮০ হাজার বর্গফুট। এক মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম একটি প্রকল্পে খরচ হয় প্রায় ছয় কোটি টাকা। এ খরচ মূলত সোলার প্যানেল ও ইনভার্টারে হয়ে থাকে। সোলার প্যানেলের মেয়াদ ১৫ বছর আর ইনভার্টারের মেয়াদ থাকে ১০ বছর। সব মিলিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০ বছর।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাসেল আহমেদ বলেন, একটি কারখানা যদি প্রতি মাসে এক মেগাওয়াট (এক লাখ ইউনিট) বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলোর কাছ থেকে কিনে ব্যবহার করে, তাহলে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল বাবদ খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা। আর রুফটপ প্রকল্পের ঋণ পরিশোধসহ সব মিলিয়ে এক মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য মাসে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় লাখ টাকা। প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। ১০ বছরের প্রকল্পে প্রতিবছর সাশ্রয় হবে ৩৬ লাখ টাকা। প্রকল্প করার পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় উঠে আসে বলে জানান তিনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কারখানার অভিজ্ঞতা : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জনতা জুট মিলস লিমিটেড তাদের কারখানার ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তাতে মাসে ২.৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছে ইডকল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে জনতা জুট মিলস লিমিটেডের ম্যানেজার আল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কারখানা এখন ছাদের বিদ্যুতে চলছে। চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেট-মিটারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে মাসে ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আবার জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আয়ের আরেকটি পথ তৈরি হয়েছে।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রবিনটেক্স গ্রুপের কম্পটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেডের ছাদে ৩.২৩ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে জুলস পাওয়ার লিমিটেড। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইডকল রেয়াতি ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জুলস পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুহের লতিফ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, কম্পটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড এক বছর ধরে রুফটপ সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। গ্রিডের বিদ্যুতের চেয়ে ৪০ শতাংশ সাশ্রয় হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শিল্প-কারখানাগুলো যত দ্রুত রুফটপ প্রকল্পে যেতে পারবে তত তাদের জন্য লাভ। কারণ আগামী দিনে গ্রিডের বিদ্যুতের দাম কমার কোনো সুযোগ দেখছি না।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কপ২৬-এ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৪০ শতাংশ মেটানো হবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে রুফটপ সোলার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রামে দেশের সবচেয়ে বড় রুফটপ সোলার প্রকল্প : দেশের বৃহত্তম রুফটপ সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড)। এই প্রকল্প থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানটির। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত প্রকল্পটি থেকে এখন ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ তারা জাতীয় গ্রিডে দিচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসছে ৯৬৬ মেগাওয়াট : টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ৯৬৬.৪৮ মেগাওয়াট, যা দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪ শতাংশের মতো। এর মধ্যে শুধু সৌরশক্তি থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে ৭৩২.৪৯ মেগাওয়াট। এ ছাড়া পানি থেকে ২৩০ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে আসছে ২.৯ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে আসছে দশমিক ৬৯ মেগাওয়াট ও বায়োম্যাস থেকে আসছে দশমিক ৪ মেগাওয়াট।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ন্যাশনাল ব্যুরো অব এশিয়ান রিসার্চের ক্লিন এনার্জি ফেলো শফিকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, রুফটপ সিস্টেম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে খরচ দাঁড়ায় প্রতি ইউনিটে পাঁচ টাকা ২৫ পয়সা। সুতরাং শিল্পগুলো দিনের বেলায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ গ্রিড বিদ্যুতের চেয়ে ৪০ শতাংশ কমাতে পারে। তিনি বলেন, ‘কৃষিজমির ওপর চাপ না ফেলে দেশে ১২ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুত্শক্তির সক্ষমতা তৈরি করা সম্ভব।’</span></span></span></span></p>