ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

একতার সর্বজনীন ভাবনার প্রসারই ভারতের লক্ষ্য

  • ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার ও এক ভবিষ্যৎ’—এই স্বপ্ন নিয়ে ভারত আজ বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি২০-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করছে। আগামী বছর সেপ্টেম্বরে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে বাংলাদেশকেও আমন্ত্রণ জানানোর ঘোষণা দিয়েছে ভারত। জি২০ নিয়ে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য আজ তা প্রকাশিত হলো
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার

একতার সর্বজনীন ভাবনার প্রসারই ভারতের লক্ষ্য

সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক করব্যবস্থার যৌক্তিকীকরণ এবং দেশগুলোর ওপর থেকে করের বোঝা কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতীতে উল্লেখযোগ্য ফল এনেছিল জি২০। সংস্থাটির এমন ১৭টি সভাপতিত্বের মাধ্যমে সেসব অর্জন থেকে আমরা লাভবান হব এবং এগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে নিজেদের আরো সফলভাবে গড়ে তুলব।

ভারত যেহেতু এবার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে, আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছি, জি২০ কি আরো এগিয়ে যেতে পারে? সামগ্রিকভাবে মানবসভ্যতার উপকারের জন্য আমরা কি মৌলিক মানসিকতার পরিবর্তনকে অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করতে পারি? আমি বিশ্বাস করি, আমরা পারি।

আমাদের পরিস্থিতি দ্বারা আমাদের মানসিকতা তৈরি হয়।

ইতিহাসজুড়ে মানবসভ্যতা অভাবের মধ্যে বাস করেছিল। আমরা সীমিত সংস্থানের জন্য লড়াই করেছিলাম। আমাদের বেঁচে থাকা নির্ভর করত অন্যদের সংস্থানের অধিকারকে অস্বীকার করার মাধ্যমে। ভাবনা, আদর্শ এবং ব্যক্তি পরিচয়ের মধ্যে সংঘাত ও প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল।

দুর্ভাগ্যবশত আজও আমরা সেই একই সারশূন্য মানসিকতার ফাঁদে আটকে আছি। দেশগুলো যখন ভূখণ্ড ও সম্পদ নিয়ে লড়াই করে তখন আমরা এটি দেখতে পাই। যখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন আমরা এটি লক্ষ করি। কোটি কোটি মানুষ ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও যখন মুষ্টিমেয় কয়েকজন প্রতিষেধক মজুদদারি করে তখনো আমরা এটি দেখতে পাই।

কেউ কেউ এর বিরোধিতা করে বলেত পারে, সংঘাত ও লোভই মানুষের বৈশিষ্ট্য। আমি এর সঙ্গে একমত নই। মানুষ যদি সহজাতভাবেই স্বার্থপর হতো, তাহলে আমাদের মৌলিক একতার প্রচারে এই বিপুলসংখ্যক আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের যে দীর্ঘস্থায়ী আবেদন, তার ব্যাখ্যা কী?

পঞ্চতত্ত্ব—ভারতে জনপ্রিয় এমনই একটি মতবাদ। এখানে বিশ্বাস করা হয় যে জীবিত সব সত্তা এমনকি সব নির্জীব পদার্থও মৃত্তিকা (পৃথিবী), জল, আগুন, বায়ু ও স্থান (স্পেস)—এই পাঁচটি মৌলিক উপাদানে নির্মিত। আমাদের শারীরিক, সামাজিক ও পরিবেশগত মঙ্গলের জন্য আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে ও সবার মধ্যে এই উপাদানগুলোর সমন্বয় অপরিহার্য।

জি২০-এ ভারতের সভাপতিত্ব বিশ্বে একতার ভাবনা প্রচারে কাজ করবে। এ কারণে আমাদের প্রতিপাদ্য হলো—‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। এটি শুধু স্লোগান নয়। এর মধ্যে মানব পরিস্থিতির সাম্প্রতিক পরিবর্তন বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, যা আমরা সামগ্রিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি।

আজ আমাদের কাছে বিশ্বের সব মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদন করার সংস্থান রয়েছে। আজ আমাদের টিকে থাকার জন্য লড়াই করার দরকার নেই। আমাদের যুগে যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। অবশ্যই কোনো যুদ্ধের প্রয়োজন নেই।

আজ আমরা সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি সেগুলো হলো জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস ও মহামারি। একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করে এগুলোর সমাধান সম্ভব নয়, বরং একসঙ্গে উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে সম্ভব।

সৌভাগ্যবশত আজকের প্রযুক্তি আমাদের বিস্তৃত আকারে মানবজাতির সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার পথও দেখায়। আজ আমরা যে বিশাল ভার্চুয়াল বিশ্বে বসবাস করি তা ডিজিটাল প্রযুক্তির বিন্যাসকে প্রদর্শন করে। মানবতার ছয় ভাগের এক ভাগের বসতি এবং ভাষাগত, ধর্মগত, প্রথা এবং বিশ্বাসগতভাবে প্রচুর বৈচিত্র্যসহ ভারত হলো বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ।

সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাচীনতম প্রথাসহ গণতন্ত্রের ভিত্তিগত ডিএনএ প্রদানে ভারতের অবদান রয়েছে। গণতন্ত্রের জননী হিসেবে ভারতের জাতীয় সচেতনতা কঠোর নির্দেশ দ্বারা চালিত নয়, বরং একই সুরে লাখ লাখ স্বাধীন কণ্ঠের সমন্বয়ের দ্বারা চালিত।

আজ ভারত একটি দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশ। আমাদের নাগরিককেন্দ্রিক শাসনের রূপকল্প আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্যের সৃজনশীল প্রতিভাকে লালন করার পাশাপাশি আমাদের সর্বাধিক প্রান্তিক নাগরিকদেরও খেয়াল রাখে।

আমরা চেষ্টা করেছি, আমাদের জাতীয় বিকাশকে একটি আপাদমস্তক শাসন পরিচালনার অনুশীলন না করে বরং নাগরিক নেতৃত্বাধীন ‘গণ-আন্দোলন’ রূপে গড়ে তুলতে।

সর্বজনীন ডিজিটাল পণ্য তৈরি করার জন্য আমাদের শক্তিশালী প্রযুক্তি উন্মুক্ত, ব্যাপক এবং আন্ত চালিত। এগুলো সুরক্ষা, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এবং ইলেকট্রনিক পেমেন্টের মতো ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নতি করেছে। এসব কারণে সম্ভাব্য বৈশ্বিক সমাধানে ভারতের অভিজ্ঞতা অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে।

আমাদের জি২০ সভাপতিত্বে, আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও মডেলগুলোকে অন্যদের জন্য বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য সম্ভাব্য ‘টেমপ্লেট’ হিসেবে উপস্থাপন করব।

আমাদের জি২০ অগ্রাধিকারগুলো কেবল আমাদের জি২০ শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ হবে তা নয়, বিশ্বের দক্ষিণ দিকের আমাদের সহযাত্রীদের, যাদের কণ্ঠস্বর প্রয়ই অশ্রুত থাকে, তাদের সঙ্গেও আলোচনা করে নির্ধারিত হবে।

আমাদের অগ্রাধিকারগুলোর নজর কেন্দ্রীভূত থাকবে ‘এক পৃথিবী’র নিরাময় সাধন, ‘এক পরিবার’-এর মধ্যে সম্প্রীতি আনা ও ‘এক ভবিষ্যৎ’-এর আশা দেখানোর দিকে।

আমাদের গ্রহের নিরাময়ের জন্য আমরা প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ততার বিষয়ে ভারতের ঐতিহ্যর ওপর ভিত্তি করে স্থিতিশীল এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রাকে উৎসাহ জোগাব।

ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ যাতে মানবিক সংকটে পরিণত না হয় সে জন্য আমাদের মানব পরিবারের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচারের জন্য আমরা খাদ্য, সার এবং ওষুধ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহকে রাজনীতিমুক্ত করতে চাইব। আমাদের নিজেদের পরিবারের মতোই যাদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তারা অবশ্যই সব সময় আমাদের চিন্তায় প্রথমে থাকবে।

আমাদের আগামী প্রজন্মের আশাকে অনুপ্রাণিত করতে আমরা সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে সৎ আলোচনার জন্য উৎসাহ জোগাব। আমরা এটা করব গণধ্বংসের জন্য অস্ত্রের হুমকিকে প্রশমিত করতে এবং বৈশ্বিক শান্তিকে সুদৃঢ় করার জন্য।

ভারতের জি২০ এজেন্ডা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কর্মভিত্তিক এবং সিদ্ধান্তমূলক।

আসুন আমরা ভারতের জি২০ সভাপতিত্বকে একযোগে নিরাময়, সমন্বয় এবং আশার সভাপতিত্ব হিসেবে গ্রহণ করি।

আসুন আমরা মানবকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে একযোগে কাজ করি।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিবিসি বাংলার দাবি

শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনার অডিও ফাঁস কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ গঠনযত যাই হোক, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ভারতের অবস্থানে এখনো কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের অনুরোধ মেনে তাঁকে বিচারের জন্য প্রত্যর্পণ করার যে কোনো সম্ভাবনা নেই, দিল্লিতে ওয়াকিবহাল মহল সেটাও এখনো জোর দিয়েই বলছে। শেখ হাসিনা নিজেও এই দুটি বিষয়ের কোনোটি নিয়েই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

গত এগারো মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের আশ্রয়ে থাকাকালে তিনি নিয়মিতই দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাষণ দিচ্ছেন বা নানাভাবে ইন্টার‌্যাক্ট করছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ও ইউটিউব চ্যানেলে তিনি শেষ লাইভ ইন্টারঅ্যাকশন করেছেন গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায়। কিন্তু সেখানে এই প্রসঙ্গগুলোর কোনোটিই আসেনি।

তবে বিবিসির যে তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশের অডিও ফাঁস করা হয়েছে, তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক পোস্টে সেটিকে অপসাংবাদিকতার নির্লজ্জ নজির বলে দাবি করেছেন।

এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের যে শত শত নেতাকর্মী ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁদেরও অনেকেই তাঁদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খণ্ডন করার চেষ্টায় সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এরই মধ্যে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, সেটা বিবিসির তদন্তে প্রমাণিত। এই পরিস্থিতিতে ভারতের যে আর টালবাহানা না করে এবং শেখ হাসিনাকে আড়াল না করে তাঁকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া উচিতশফিকুল আলম সেই দাবিও জানিয়েছেন।

তবে ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক ও শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় পরিষ্কার বলছেন, এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ শেখ হাসিনাকে যে পরিস্থিতিতে ও ভারতের যে নীতির ভিত্তিতে এ দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি।

তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর যদি কোনো অডিও কেউ গোপনে রেকর্ড করে সেটা ফাঁসও করে দেয়; ভারতের সেটা দেখার বিষয় নয়, আর তাঁকে এ দেশে আতিথেয়তা বা রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সেই অডিওর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।  

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্য অভিযুক্তদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটা আদৌ কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে, তা নিয়েও ভারত সন্দিহান। এই পরিস্থিতিতে সেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হলেও ভারত যে সেটাকে গুরুত্ব দেবে না, সে ইঙ্গিতও পরিষ্কার।

অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি, বা মন্তব্যও করেনি।

প্রত্যর্পণের অনুরোধে যে কারণে সাড়া নেই : বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যাতে বিচারের জন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ জানিয়ে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে একটি নোট ভার্বাল পাঠিয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসেই।

ভারত সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, কিন্তু তার পর প্রায় সাত মাস হতে চললেও সে ব্যাপারে আর কোনো সাড়াশব্দ করেনি। বাংলাদেশের ওই প্রত্যর্পণের অনুরোধকে ভারত যে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেটাও আকারে ইঙ্গিতে একাধিকবার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারত সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছিলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে ঠিকই, কিন্তু কোনো দেশ যদি মনে করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন, তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার অধিকারও তাদের আছে।

তাঁর যুক্তি ছিল, বাংলাদেশে যেভাবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা আনা হচ্ছে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা পর্যন্ত আদালতে হাজির হতে পারছেন না কিংবা সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক বা দীপু মনির মতো সাবেক নেতা-মন্ত্রীদের আদালত প্রাঙ্গণেই শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, তাতে এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন সম্পন্ন হলেও তাতে বিচারপ্রক্রিয়ার গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন হয়েছেএমনটা ভারত মনে করছে না। আর সে কারণেই চার্জ গঠন হলেও শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ভারত বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবেএই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে এগুলো সবই মূলত ঘোষিত যুক্তি। ভারতের একাধিক সাবেক কূটনীতিবিদ বিবিসিকে বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার আসল কারণটা হলো রাজনৈতিক। তাঁদের বক্তব্য হলো, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে যিনি ভারতের আস্থাভাজন ও পরীক্ষিত বন্ধুর ভূমিকায় ছিলেন, তিনি শেখ হাসিনা। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের এক সাবেক হাইকমিশনার বিবিসিকে বলেছেন, আজ সংকটের মুহূর্তে ভারত যদি তাঁর পাশে না দাঁড়ায়, ভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশের কোনো নেতা-নেত্রীই ভারতকে আর কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না। আর এটাই সেই প্রকৃত কারণচার্জশিট পেশ হোক বা না হোক, অডিও লিক হোক বা না হোকভারত যে জন্য কখনোই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না।

শেখ হাসিনা নিজেই যা বলার বলবেন : গত বাহাত্তর ঘণ্টায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার যেসব অভিযোগ উঠেছে বা আদালতে যে চার্জশিট পেশ হয়েছে, তা নিয়ে ভারত অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, আমরা শেখ হাসিনার মুখপাত্র নই। তিনি যেসব বক্তব্য দেন তার সঙ্গে ভারত সরকারের যে কোনো সম্পর্ক নেই, সেটা অনেক আগেই আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি।

ওই কর্মকর্তার বক্তব্য ছিল, শেখ হাসিনা ভারতের একজন অতিথি, কোনো রাজনৈতিক বন্দি নন। কাজেই ভারত তাঁর মুখে লাগাম পরানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি কখনোই! সূত্র : বিবিসি বাংলা

মন্তব্য

শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি

    এক বছরে পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি। এমনকি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা।

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার আসামি পাঁচজনকে এরই মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন বলেছে, গত এক বছরে অপকর্মের অভিযোগে এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গত শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত সব ইউনিটকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের জেলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে একটি শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কী প্রক্রিয়ায় এই অভিযান চালানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো দাগি অপরাধী কোনোভাবে দলের সঙ্গে যুক্ত কি না, দলে নতুন করে কেউ অনুপ্রবেশ করেছে কি না, বিএনপির নতুন সদস্য যাঁরা হয়েছেন তাঁদের আগের ইতিহাস কী তা পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দল থেকে ইউনিট কমিটিগুলোকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সম্প্রতি বলেছেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রিজভী গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় বিএনপি বা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নামে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের রাতেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার।

কোনো ছিদ্রপথে দু-একজন দুষ্কৃতকারী ঢুকে পড়লে সেটা সব সময় হয়তো খোঁজ রাখা যায় না। এত বড় একটি পরিবার। কিন্তু কোনোভাবে যদি দুষ্কৃতকারীকে চিহ্নিত করা যায়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দল কখনো কার্পণ্য করেনি।

মূল আসামিদের এজাহার থেকে বাদ দেওয়া রহস্যজনক : পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূল আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার না করা এবং মামলার এজাহার থেকে তাদের বাদ দেওয়া রহস্যজনক বলে দাবি করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে।

তিন সংগঠনের পক্ষে যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট, ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরায় যাদের দেখা গেছে, আশ্চর্যজনকভাবে তাদের মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে, তারা অদ্যাবধি গ্রেপ্তারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। বাদীর মেয়ে বলেছেন, মামলার এজাহারে খুনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজন খুনিকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। ঘটনার ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল না! এটি একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।

মোনায়েম মুন্না বলেন, কারা কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্যজনকে আসামি করল, এটি আমরা জানতে চাই। আর ঘটনাটি বুধবারের। শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগের ঘটনা কেন দুই দিন পর প্রচার করা হলো? এর পেছনে কারা জড়িত, সেটিও খুঁজে দেখা উচিত। আপনাদের মাধ্যমে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এই প্রশ্নটি রেখে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা এক তীব্র মানসিক যাতনা নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করছি। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে পুরো জাতি স্তম্ভিত। আমি এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সভ্যতার এই সময়ে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইন্ধনদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তার মধ্যে আমাদের তিন সংগঠনের পাঁচজনকে গতকাল আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছি অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির জায়গা থেকে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি। অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।

তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর হতেই হবে। আপনারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। এখানে আমাদের যদি কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করীম পল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ।

মন্তব্য

খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা শনাক্ত

    ১১ মাসে ২৭ হত্যা
খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডে  জড়িতরা শনাক্ত

খুলনা মহানগরে ১১ মাসে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি, ছিনতাই, হামলার মতো ঘটনা। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনার বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে এবং পরে রগ কেটে নিজ বাড়ির সামনে হত্যা করে যুবদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে।

তাঁর হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। তবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

খুলনার পুলিশ দাবি করছে, ১১ মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশির ভাগের কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জড়িতদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

পুলিশ চেষ্টা করছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে। খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত খুলনা মহানগরীতে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই সময়ে মামলা করা হয় ২০টি।

খুলনা মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা বিএনপির নেতারা।

মহানগর বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুসহ পদস্থ নেতারা গত শুক্রবার রাতে যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, খুন, অস্ত্রের মহড়া, চুরি, ডাকাতি ও লুটপাটের মতো ঘটনা খুলনায় নিত্যদিন ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলি, খুনসহ সন্ত্রাসী ঘটনা। তাঁরা বলেন, মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায়ভার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তাই দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

খুলনার নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সন্ধ্যা নামলেই খুলনাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।

এখন আবার শুরু হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের ঘটনা। খুলনার পুলিশ প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। যার ফলে অপরাধগুলো ঘটছে। খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

নিহত মাহবুবুরের বাবা মো. আ. করিম মোল্লা বাদী হয়ে গতকাল দুপুরে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের সবাই অজ্ঞাতপরিচয়। মামলা তদন্ত করছেন দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত হত্যার কারণ বলা যাচ্ছে না। পুলিশের দুটি এবং ডিবির একটি মিলে মোট তিনটি দল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট-পরবর্তী দুটি মামলার জের, দলীয় কোন্দল, স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি, মাদক ও চরমপন্থী সংযোগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলাসহ সাতটি বিষয় সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত করছে।

গত শুক্রবার দুপুর দেড়টায় দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলযোগে আসা তিন অস্ত্রধারী মাহবুবুরকে (৪০) প্রথমে গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। ওই দিন বিকেলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

গতকাল সকালে নিহতের বাড়িতে গেলে মাহবুবুরের স্ত্রী এ্যারিন সুলতানা বলেন, আমার স্বামী সবাইকে বিশ্বাস করতেন। ঘটনার কিছুদিন আগে থেকেই তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সম্প্রতি বাড়ি এসেও একটা গ্রুপ হুমকি দিয়ে গেছে। নিহত মাহবুবুরের দুটি মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে জান্নাতুল (১১) চতুর্থ শ্রেণির এবং ছোট মেয়ে মাওয়া (৯) দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

নিহত মাহবুবুরের এক আত্মীয় বলেন, মূলত দুটি মামলাকে কেন্দ্র করেই তার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধ হয়। একটি মামলার বাদী মাহবুব নিজে এবং অন্যটির বাদী মো. জাকির হোসেন। ওই দুটি মামলার আসামিরা মাহবুবকে কয়েকবার হুমকি দিয়েছিল।

মন্তব্য
আইন উপদেষ্টা

সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে করা হবে।

গতকাল শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।

স্ট্যাটাসে ড. আসিফ নজরুল লেখেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

তিনি জানান, পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২-এর ধারা ১০ অনুযায়ী এই মামলাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ