আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বই ছাপানোর দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই বই ছাপানোর কাজ করবে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণের জন্য সরকার চার কোটি চার লাখ ৪২ হাজার ৪৯১ কপি পাঠ্যবই এনসিটিবির কাছ থেকে সংগ্রহ করবে। বইগুলোর মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহে ব্যয় হবে প্রায় ২০০ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সভায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি জাহাজ ও সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯৮টি লটের মধ্যে ৯৬টি লটের বই ছাপা, বাঁধাই ও সরবরাহের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবে মোট চার কোটি চার লাখ ৪২ হাজার ৪৯১ কপি বই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
এই কাজে প্রতিটি বইয়ের গড় খরচ ধরা হয়েছে ৪৯ টাকা ৬৮ পয়সা। এতে মোট ব্যয় হবে ২০০ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮০ টাকা।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী নতুন বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর কাছে তাদের প্রত্যাশিত পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করবে সরকার। এ জন্য প্রাথমিক স্তরের (প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৯৮টি লটে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানে ১৮২টি দরপত্র পড়েছে।
এর মধ্যে ১৭৬টি দরপত্র কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। তবে মূলত এই বই ছাপার কাজ করবে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে এক প্রতিষ্ঠান একাধিক কাজ পেয়েছে।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষ। টিইসি ৯৮টি লটের বিপরীতে ৯৬টি লটে সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা ৫৬টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০০ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮০ টাকায় চার কোটি চার লাখ ৪২ হাজার ৪৯১টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হচ্ছে দুই জাহাজ : যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৫-৬৬ হাজার ডিডব্লিউটিসম্পন্ন দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে এই জাহাজ দুটি কিনতে ব্যয় হবে ৯৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই জাহাজ কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ৫৫-৬৬ হাজার ডিডব্লিউটিসম্পন্ন বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ অর্জন প্রকল্পের আওতায় দুটি জাহাজ ও আনুষঙ্গিক সেবা ক্রয়ের জন্য একধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করা হলে তিনটি প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব জমা দেয়। এর মধ্যে দুটি প্রস্তাবই বিবেচিত হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে ৭৬.৬৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে জাহাজ দুটি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৩৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। জাহাজ দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে কেনা হবে।
৯৮৭ কোটি টাকায় কেনা হবে দুই কার্গো এলএনজি : দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিঙ্গাপুর থেকে এই দুই কার্গো এলএনজি আনতে ব্যয় হবে ৯৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৮ হাজার ৯২ টাকা। ক্রয় কমিটিতে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। সিঙ্গাপুরের আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এই জ্বালানি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের দাম ধরা হয়েছে ১১.৯৭ মার্কিন ডলার। এতে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি ব্যয় ৫০২ কোটি ৯৪ লাখ ৯১ হাজার ৩৯৮ টাকা।
বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আরেক প্রস্তাবে একই প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে আরো এক কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এই এলএনজি সরবরাহ করবে সিঙ্গাপুরের পেট্রোকেমিক্যাল ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতি এমএমবিটিইউয়ের দাম ধরা হয়েছে ১১.৯০ মার্কিন ডলার। এতে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৪৮৪ কোটি ৩৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৯৪ টাকা।