পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান আরো জানান, রহিমা বেগমের দাবি, তিনি কিছুই চিনতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা হয়ে পূর্বপরিচিত ভাড়াটিয়া বোয়ালখালীর সৈয়দপুর গ্রামে যান; কিন্তু তাঁর কাছে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকা ও কোনো নম্বর মনে না থাকায় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। আর ভয়ে তিনি খুলনায় ফিরে আসেননি।
পিবিআইর পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা রহিমা বেগমের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করছি। তাঁর স্বামী ও অভিযুক্তদের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হবে। তাঁর স্বামী এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন, দুই ঘণ্টা পর তাঁর স্ত্রীর খোঁজ না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করেন বলে জানিয়েছিলেন। রহিমা বেগমের বক্তব্য অনুযায়ী অন্যদের অবস্থান কখন কোথায় ছিল, তা-ও দেখা হবে। প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হবে।’
এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা ও মেয়েরা মিলে অপহরণ-গুমের নাটক সাজিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়ার পর প্রায় ১৬ ঘণ্টা কোনো কথা বলেননি গৃহবধূ রহিমা বেগম। দুপুরের পর মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি অপহরণের কথা বলেছেন। এর আগে সকালেও তিনি (রহিমা বেগম) তাঁর সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে চাননি।
রহিমা বেগমকে গতকাল সকাল ১১টার দিকে সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে পিবিআই কার্যালয়ে আনা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়।
তাঁকে উদ্ধারের পর আরেক মেয়ে আদুরী খাতুনের জিম্মায় হস্তান্তর করেছেন আদালত। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক আল আমিনের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পর রহিমা বেগমকে হস্তান্তর করা হয়।
বোয়ালমারীতে জন্ম নিবন্ধনচেষ্টা
রহিমা বেগম ফরিদপুরের বোয়ালমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়েছিলেন জন্ম নিবন্ধন করার জন্য। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, ‘রহিমা বেগম আমার অফিসে এসেছিলেন জন্ম নিবন্ধন করার জন্য। তাঁকে না চিনতে পেরে ইউপি সদস্যের কাছে পাঠানো হয়। তিনি আর পরিষদে আসেননি।’
বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুস মোল্যার বাড়িতে ছিলেন রহিমা। কুদ্দুস মোল্যা বর্তমানে বোয়ালমারী উপজেলা ডোবরা জনতা জুট মিলের কর্মচারী। গতকাল বিকেলে কুদ্দুস মোল্যার মেয়ে সুমাইয়া বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বাবা চাকরির সুবাদে এক সময় খুলনা নগরের মহেশ্বরপাশা এলাকায় রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রহিমা বেগম আমাদের বাড়িতে আসেন। তবে আমরা শুরুতে তাঁর নিখোঁজের বিষয়টি জানতাম না।’
অনলাইনে ছবি দেখে শনাক্ত
কুদ্দুস মোল্যার মেয়ে সুমাইয়া দাবি করেন, রহিমার নিখোঁজের বিষয়টি তাঁর ভাই আলামিন ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে মরিয়ম মান্নানের স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারেন। গত শুক্রবার ওই পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয় জানিয়ে সুমাইয়া আরো বলেন, “বিষয়টি জানতে পেরে ওই ছবিটি রহিমা বেগমকে দেখাই। তিনি (রহিমা) বলেন, ‘আমার ছবির মতোই তো লাগতেছে।’ মরিয়ম মান্নানের স্ট্যাটাসে দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। ওই নম্বরে একজন ফোন ধরে রহিমা বেগমের বিষয়ে আর ফোন দিতে নিষেধ করেন।”
পরে সুমাইয়ার ভাই আল আমিন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানান। তিনি খুলনা মহানগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন নিখোঁজ হওয়া রহিমা বেগমই ওই নারী। এরপর গত শনিবার রাতে পুলিশ এসে রহিমা বেগমকে নিয়ে যায়।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুদ্দুস মোল্যার স্ত্রী হিরা বেগম (৫০), ছেলে আলামিন বিশ্বাস (২৫) ও কুদ্দুস মোল্যার ছোট ভাই আবুল কালামের স্ত্রী রাহেলা বেগমকে (৪৫) খুলনা পুলিশের জিম্মায় নেওয়া হয়েছে।
বোয়াালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিচার চায় মামলা ও হয়রানির শিকার পরিবারগুলো
নিখোঁজ হওয়ার পর প্রতিবেশী হেলাল শরীফের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে ঝামেলার কথা উল্লেখ করে মামলা হয়েছিল। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় হেলাল শরীফ এখনো জেলহাজতে। তাঁর মেয়ে অন্তরা ফাহমিদা বলেন, ‘আমরা এখন চূড়ান্ত সত্য দেখার অপেক্ষায়।’
রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতেই দৌলতপুর থানায় উপস্থিত হন অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ছোট ছেলে পলাশ চাকরি করে ও বড় ছেলে জুয়েল মুদি দোকানি। রহিমাকে কথিত অপহরণের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। হয়রানির শিকার হয়েছি, মান-সম্মান বলতে তো কিছু থাকল না। আমি বিচার চাই।’