ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান ১৪টি রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলের নেতৃত্বে ‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (ওইসিডি) ভুক্ত ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে এক বৈঠকে তাঁদের এ মনোভাবের কথা জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এই কূটনীতিকদের জানিয়েছেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইসির পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বৈঠক শেষে ওইসিডি প্রতিনিধিদলের পক্ষে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে চান। এ জন্য তাঁরা নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত, দেশের গণতন্ত্র আরো কার্যকর এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে যেকোনো প্রকার সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। ওইসিডি সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা আরো শাণিত করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সহায়তা করতে চায়। নির্বাচনে গণমাধ্যম ও সুধীসমাজের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বলে জানান এই কূটনীতিক।
বৈঠকের বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনারা এসেছেন; এটা একটা ট্র্যাডিশন (ঐতিহ্য)। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইন-কানুন ও আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা জানিয়েছি। উনারা সাধারণত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর জোর দিয়ে থাকেন। সে জন্যই ইলেকশনটা যদি ইনক্লুসিভ (অংশগ্রহণমূলক), অ্যাকসেপ্টেবল (গ্রহণযোগ্য), ফ্রি এবং ফেয়ার (অবাধ ও স্বচ্ছ) হয়, তাহলে উনারা খুশি হবেন এবং পুরো দেশবাসী খুশি হবে—এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আমরা জানিয়েছি, আমাদের দিক থেকে যা যা করণীয় আমরা করব। উনারা প্লিজড (সন্তুষ্ট)। বলেছি, ভবিষ্যতেও যখন প্রয়োজন হয়, আসবেন। ’
সিইসি বলেন, ‘তাঁরা সহযোগিতা করার কথা বলেছেন। আমরা চট করে কিছু বলিনি। তাঁদের বলেছি, আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেখব। কোনো টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা জানাব। ’ তাঁরা কী ধরনের সহায়তা দিতে চেয়েছেন—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা ইলেকশন রিলেটেড; যেটা হতে পারে ভোটার এডুকেশন ও ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধিবিষয়ক।
সিইসি বলেন, ‘উনারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, আমাদের (ইসির) এদিক থেকে কোনো বাধা নেই। ’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্বের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘এ বিষয়ে উনারা তেমন কিছু বলেননি। উনারাও খুব ভালো করেই জানেন, এখনো কিছু কিছু দল ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। উনারাও বিশ্বাস করেন, আমরাও চেষ্টা করে যাব, যেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ’
ওইসিডির ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস, কানাডার হাইকমিশনার লিলিও নিকলস, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইননি এস্ট্রপ পিটারসেন ও ফ্রান্সের সহকারী রাষ্ট্রদূত গুইলাম অড্রেন ডি কেরড্রেল। আরো ছিলেন জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম স্ট্রোস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন, স্পেনের ফ্রান্সিসকো ডি এস-এস বেন-তেজ সালাস, জাপানের হেড অব মিশন ইয়ামায়া হিরোয়ুকি এবং তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান।