<p>চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডকে বলা হয় শিমরাজ্য। শীত মৌসুমে এখানে দেশের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ শিম চাষ হয়। গ্রীষ্মকালেও এখন আবাদ বেড়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রতিবছর গড়ে ১১৫ কোটি টাকারও বেশি শিম উৎপাদিত হয়, যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সীতাকুণ্ডের শিম ও শিমের বিচি যাচ্ছে বিশ্বের ১২ দেশে। কৃষি অফিস ও কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।</p> <p>উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে শীত ও গ্রীষ্ম দুই মৌসুমেই শিম চাষ করেন স্থানীয় চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবীবুল্লাহ বলেন, ‘এবার সীতাকুণ্ডে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ২৩০ জন কৃষক শিম চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিক টন হিসাবে এ বছর ৪৫ হাজার মেট্রিক টন শিম উৎপাদিত হয়েছে। যার বাজারমূল্য ১১২ কোটি টাকারও বেশি। এই শিম ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি রপ্তানি হয়েছে বিদেশেও।’ কর্মকর্তারা জানান, আমেরিকা, সৌদি আরব, কুয়েত এবং ইউরোপ মিলে ১২ দেশে রপ্তানি হচ্ছে শিম ও বিচি।</p> <p>এলাকার কৃষকরা জানান, এ উপজেলার সর্বত্রই ব্যাপক পরিমাণে শিম চাষ হয়ে থাকে। পৌর সদরের নুনাছড়া এলাকার কৃষক মো. হামিদ উল্লাহ বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে পাহাড় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত সবখানেই ব্যাপক হারে শিমের চাষ হয়। এ এলাকায় শিম চাষের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে জমির প্রতিটি আইলেও শিম চাষ করেন কৃষকরা। এ ছাড়া হাজার হাজার একর জমি, সাগরপারের বেড়িবাঁধ, বাড়ির উঠানসহ সবখানেই শিম চাষ হয়ে থাকে। চাষযোগ্য কোনো জমিই পরিত্যক্ত রাখেন না কৃষকরা। এর ফলে এখানে প্রচুর শিম উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রত্যেক কৃষক লাখ লাখ টাকা আয় করেন।’</p> <p>উপজেলার মুরাদপুরের কৃষক মো. আবুল হাসনাত বলেন, ‘শিমের মৌসুমে এখানে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের পাইকারদের ভিড় লেগে থাকে। এসব পাইকারের হাত ধরে স্থানীয় শিম চলে যায় বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। এখানে মৌসুমের প্রথম দিকে প্রতি কেজি শিম যেমন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হয়। মৌসুমের শেষ দিকেও এই শিম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর এই শিমের বিচি বিক্রি হয় অনেক উচ্চমূল্যে। প্রতি কেজি শিমের বিচি সর্বোচ্চ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।’ এ কারণে অনেক কৃষকই শিম বিক্রি করেন এবং তাঁদের কাছ থেকে শিমের বিচি কিনে তা রপ্তানি করেন বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ী। এখানে শিমের বিপণন ও কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম করে উন্নয়ন সংগঠন ইপসাও। এ বিষয়ে ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে বাণিজ্যিকভাবে শিমের বিচি বাজারজাতকরণের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। মৌসুমে কাঁচা শিমের বিচি সংগ্রহ করে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের দ্বারা বিচি শুকিয়ে মোড়কজাত ও রপ্তানি করা যায়। এ পদ্ধতিতে আমরা উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বাজারে নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিমানসমৃদ্ধ শিমের শুকনো বিচির চাহিদা পূরণ করতে সচেষ্ট আছি।’</p> <p>এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের মতো শিম চাষ দেশের আর কোথাও নেই।’</p>