তৌহিদ হোসেন
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর আমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আমাদের সরকার সব সময় বলে, এটি অতিরঞ্জিত বা ভুল তথ্য আছে কিংবা সঠিক নয়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুব বিচলিত বলে কখনো মনে হয়নি।
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের, বিশেষ করে, বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান খুব স্পষ্ট। মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি মানবাধিকার। যাদের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে, তারা খুশি হোক বা বেজার হোক, তারা তোয়াক্কা করবে না।
গত তিন বছরের প্রতিবেদন যদি আমরা দেখি, তাহলে প্রতিটিতেই আমাদের বিচারবহির্ভূত হত্যা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি—এগুলো নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশে তাদের বিশাল এক দূতাবাস আছে। দূতাবাস তথ্য সংগ্রহ করে। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আমাদের এখানে আছে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর বক্তব্য এ দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের খুব অমিল নেই।
তবে আমাদের প্রতিক্রিয়াটা আরো একটু নরম বা কৌশলী ভাষায় হলেই ভালো হতো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য তো সরকারেরই অবস্থান। আমরা ধরে নেব, সরকার এটিই বলতে চায়। সরকারের নিশ্চয়ই নিজস্ব হিসাব আছে। এ কারণেই এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর হয়তো দেশে বিরোধীরাও একটু সমালোচনা করে। কিন্তু তাতে কি সরকারের কিছু আসে যায়? বিরোধী পক্ষ, ১২ বছর ধরে যারা আছে, তারা বিভিন্ন অভিযোগ করেই যাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। তাতে তো সরকার বিচলিত হয়নি বা অভিযোগগুলোর বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে ব্যবস্থা নেবে, সেটিও করেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিবেদনে যতটুকু বলল ততটুকুই চাপ।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের মানবাধিকার প্রতিবেদনকে আমি গতানুগতিক বলতে চাই না। তারা যে তথ্য পায় সেটির ভিত্তিতেই তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবছর তারা মোটামুটি একটি ধারাবাহিকতা রেখে চলে। আমাদের যে প্রতিক্রিয়া সেটিই বরং গতানুগতিক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে হয়তো দু-একটি বিষয় (টার্ম) বেশি ব্যবহার করা হয়েছে এবার। কিন্তু মূল সুর তো একই।
মো. তৌহিদ হোসেন : সাবেক পররাষ্ট্রসচিব