পুলিশ লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গতকাল সন্ধ্যায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনের ফটকে। ছবি : কালের কণ্ঠ
তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনার পর সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আজ সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ কথা জানান।
এর আগে গতকাল টানা তিন ঘণ্টা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা ও বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করায় উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনে যান শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানান। তাঁরা উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তারা এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের সামনে জড়ো হন। এ সময় কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। তার পরও তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে সোয়া ৫টার দিকে অবরুদ্ধ উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান। কোষাধ্যক্ষ ভেতরে প্রবেশ করতে আন্দোলনকারীরা তালা খুলতে গেলে পেছন দিক থেকে তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করলে তাঁরাও পুলিশকে পাল্টাধাওয়া করেন। এ সময় পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড, ২৭ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে বলে জানা যায়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তাকিয়া রাবার বুলেটবিদ্ধ হন। এ ছাড়া সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সুমাইয়া আক্তার, স্থাপত্য বিভাগের আল ইমরান, ইংরেজি বিভাগের তানহা তাহসীন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মিত্রা সংঘ, সজল কুণ্ডুসহ, মেহজাবিন পর্ণা, সজল, সাজেদুল ইসলাম সিজন, তাকিয়া ইসলাম, জুনায়েদ ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, মসিউর ইসলাম, ইরফান, রায়হান আহমেদ, মুনির হোসেন তালুকদার, সেলিম, তমাল, সিফাত আকাশ, জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব, হুমায়ুন কবির অপূর্বসহ আরো অনেকে আহত হয়েছেন।
আহত শিক্ষার্থীদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, মাউন্ড এডোরা হসপিটাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদসহ ছয়-সাতজন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
আন্দোলন চলাকালে শিক্ষকদের পেছনে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পুলিশ তাঁদেরও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১২ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
৫টা ৫০ মিনিটের দিকে তালা ভেঙে উপাচার্যকে উদ্ধার করেন পুলিশ সদস্যরা। রাত সাড়ে ১০টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছিলেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজা। এরপর নতুন প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী। এদিকে গতকাল রাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রলীগের একাংশ।
জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ : শাবিপ্রবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।