একদিকে চলছে বেড়িবাঁধের কাজ, আরেকদিকে চলছে প্রভাবশালীদের দখলের প্রতিযোগিতা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিগ্রহণ করা জমি, ব্লক ও বাঁধ দখল করে যে যার মতো করে ঘর তুলছে। এমনটা দেখা যাচ্ছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উপকূলীয় টেকসই বাঁধে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়েন্দা ইউনিয়নের রসুলপুর দাসের ভারাণী বাঁধের দুই পাশে পাঁচটি দোকান, কদমতলা এলাকার দুটি ওয়ার্কশপ, রায়েন্দা বাজারের অংশে বাঁধের ওপর মাছের বাজার, চালরায়েন্দা বলেশ্বর পারে ব্লকের ওপর চারটি দোকান, সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলায় ব্লকের ওপর আটটি দোকান, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর এলাকায় তিনটি দোকান তোলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, ৬২ কিলোমিটার বাঁধের বিভিন্ন অংশ দখল করে কমপক্ষে অর্ধশত ঘর তোলা হয়েছে।
স্থানীয় সেকান্দার আলী বাদশা, আফজাল চাপরাসি ও ডালিম হাওলাদার জানান, দাসের ভারাণী পাতার মাথায় বাঁধের ওপর দোকান ঘর তুলেছেন পলাশ চাপরাসি, ফরিদ চাপরাসি, হেলাল চাপরাসি, আ. রাজ্জাকসহ কয়েকজন। এ ছাড়া রসুলপুর বাজারসংলগ্ন জলকপাটের পাশে দাসের ভারাণী চরবাসীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দোকান ঘর তুলেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আ. রহমান হাওলাদার। এ কারণে চরে বসবাসকারী প্রায় দুই শতাধিক মানুষের চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।
এ নিয়ে চরবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।
উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) সুপারভাইজার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধের কাজ চলমান। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তা দখল করে ঘর তুলে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছেন। বাধা দিতে গেছে তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়।
পানি ব্যবস্থাপনা দলের (ডাব্লিউএমজি) নেতারা টাকা খেয়ে এসব অবৈধ ঘর তোলার সুযোগ করে দিচ্ছেন।’
৩৫/১ পোল্ডারের (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) পানি ব্যবস্থাপনা দলের সভাপতি মো. আবুল কাশেম টাকার বিনিময়ে ঘর তোলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রভাবশালীদের কাছে আমরা অসহায়। ঘর তোলায় বাধা দিলে উল্টো আমরাই দখলবাজদের হাতে নাজেহাল হই।’
উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দখলের বিষয়টি শুনেছি। এসব দখল উচ্ছেদে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সরকার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বাঁধের কাজ শুরু হয়। আগামী জুনে কাজ শেষ হবে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএইচডাব্লিউই এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।