<p>দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হবে। শুরুতে ৩০ লাখ শিশু ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা পাবে। জন্ম নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে শিশুরা টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবে। দু-এক দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করে দিনক্ষণ জানানো হবে। গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা বলেছেন।</p> <p>রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকাদান কর্মসূচির নতুন রূপরেখা ঘোষণা করেন। চলতি অক্টোবর থেকে আগামী মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে টিকাপ্রাপ্তি ও দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের আশ্বাসের বরাত দিয়ে মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন যে আগের তুলনায় এখন টিকা পাওয়া অনেক বেশি নিশ্চিত।</p> <p>শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে সম্মতি মিলেছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, শিশুরা ফাইজার ও মডার্নার টিকা পাবে। এখন হাতে আছে ফাইজারের ৬০ লাখ ডোজ টিকা, যা দেওয়া যাবে ৩০ লাখ শিশুকে। পর্যায়ক্রমে আরো টিকা পাওয়া সাপেক্ষে এই টিকা চলতে থাকবে।</p> <p>গত মাসের শুরুর দিকে ১২ বছর ও তার বেশি বয়সী শিশুদের করোনার টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানায় সরকার। তখন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি আর এগোয়নি। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড দিয়ে প্রথম টিকা দেওয়া শুরু হয়। এখন ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে।</p> <p>জাহিদ মালেক জানান, টিকাদান কর্মসূচির মাসওয়ারি নতুন যে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে, সে অনুসারে ডিসেম্বর পর্যন্ত আট কোটি মানুষের টিকার দুই ডোজ পূর্ণ হবে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ। আর আগামী বছর মার্চের মধ্যে আরো চার কোটি মানুষের দুই ডোজ পূর্ণ হবে। অর্থাৎ আগামী মার্চ পর্যন্ত দেশে দুই ডোজ পূর্ণ হওয়া মানুষের সংখ্যা হবে ১২ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ।</p> <p>একই সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত দেশে মোট টিকা এসেছে সাত কোটি ২২ লাখ ডোজ। হাতে আছে এক কোটি ৭৭ লাখ ডোজ। চলতি মাসে আসবে তিন কোটির বেশি। আগামী মাসে অর্থাৎ নভেম্বরে আসবে তিন কোটি ৭৫ লাখ ডোজ। ডিসেম্বরে আসবে পাঁচ কোটি ডোজ। জানুয়ারিতে আসবে তিন কোটি ৭৫ লাখ ডোজ। চীন ও বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সসহ বিভিন্ন দেশ ও মাধ্যম থেকে কেনা ও বিনা মূল্যের মিলে এই পরিমাণ টিকা পাওয়ার কথা জানান মন্ত্রী। এ ছাড়া একইভাবে আরো টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।</p> <p>স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈঠকে সংস্থাটির মহাপরিচালকের আশ্বাসের বরাত দিয়ে বলেন, ‘কোভ্যাক্স থেকে আমরা বিনা মূল্যে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের টিকা পেতে পারি। এর বাইরে আমরা আরো টিকা কিনব।’</p> <p>টিকাদানে গতি আনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন দিনে চার থেকে ছয় লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি, আমাদের সক্ষমতা অনেক বেশি আছে। ফলে আমরা এখন থেকে নিয়মিতভাবেই দিনে ১০ থেকে ১৫ লাখ ডোজ টিকা দিব। আর প্রতি মাসে একবার এক-দুই দিনের ক্যাম্পেইন করে ৮০ লাখ বা তারও বেশি টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’</p> <p>মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন তিন কোটি ৬৫ লাখ মানুষকে। আর এক কোটি ৮২ লাখ মানুষের দুই ডোজ পূর্ণ হয়েছে। অন্যদিকে নিবন্ধন করেছে পাঁচ কোটি ২৯ লাখ মানুষ।</p> <p>জাপানের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে জাহিদ মালেক জানান, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে বিশ্বের ২২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থানে। বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ।</p> <p>করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতার দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা স্বস্তিতে আছি। কিন্তু যেকোনো সময় সংক্রমণ আবার বেড়ে যেতে পারে। সবাইকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে।’</p> <p>টিকা উৎপাদনের অগ্রগতির বিষয়ে এক প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বশেষ অবস্থা এখন আমার জানা নেই। জেনে নিতে হবে। তবে ইনসেপ্টার সঙ্গে চীনের সিনোফার্মের বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে। এখন হয়তো পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক আমাকে আশ্বস্ত করেছেন দেশে টিকা উৎপাদনে তাঁরা কারিগরি সহায়তা দেবেন। এ ছাড়া আমরা এরই মধ্যে গোপালগঞ্জে টিকা উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করেছি। অন্যান্য প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে।’</p> <p>গ্লোব বায়োটেকের টিকা বঙ্গভ্যাক্স নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা সরকারের জায়গা থেকে এসব বিষয়ে উৎসাহ দিই, নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। সে অনুসারে এগুলোতে আমাদের আপত্তি থাকবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও অনুমোদনের বিষয় রয়েছে।’</p> <p> </p>