ইভ্যালিসহ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এই তালিকায় নতুন নতুন কম্পানির নাম যোগ হচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার
ই-কমার্স প্রতারণা দমনে ব্যর্থতা আইনের নয়, প্রয়োগের
- ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
অন্যান্য

কালের কণ্ঠ : ই-কমার্স খাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
তানজীব উল আলম : সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা থেকে উত্তরণের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে দেশের ই-কমার্স খাত। এই অবস্থায় আইন নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : উদীয়মান ই-কমার্স খাত কেন বারবার হোঁচট খাচ্ছে? এর কারণ কি রেগুলেটরি ব্যর্থতা?
তানজীব উল আলম : অবশ্যই রেগুলেটরি ব্যর্থতা আছে। শুধু ই-কমার্স নয়, যেকোনো ধরনের ব্যাবসায়িক কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন ধরনের লেনদেনের ইস্যু থাকে। দেশে লেনদেন সম্পর্কিত আইন আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, কিংবা লেনদেন সম্পর্কিত তদারকি সংস্থা, তাদের উভয় পক্ষেরই ব্যর্থতা আছে।
কালের কণ্ঠ : বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেল ই-কমার্স খাত তদারকি করছে। একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের কথাও বলা হচ্ছে। আসলে কী করা উচিত?
তানজীব উল আলম : দায়িত্বশীল যেসব সংস্থা আছে তারা যদি তাদের দায়িত্বটা সময়মতো এবং যথাযথভাবে পালন করে তাহলে কোনো নতুন অথরিটির দরকার নেই। নতুন অথরিটি তৈরি করতে গেলে বাকি রেগুলেটরি অথরিটিগুলোর কর্তৃত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তদারকির কর্তৃত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে। আমরা যদি আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ করে দিই তাহলে তার দায়িত্ব হবে ওই ব্যাংকিং লেনদেনগুলো মনিটর করা। একই জিনিস মনিটরিংয়ের দায়িত্ব কেন আমরা আরেকটি সংস্থাকে দেব? যখন আমরা আরেকটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের দাবি করি, তখন সেই সংস্থার কাজ কী হবে, সে সম্পর্কে ধারণা দিয়ে তারপর বলা উচিত। তার চেয়ে বিদ্যমান সংস্থাগুলোকে আমরা লোকবল, দক্ষতা ও প্রযুক্তি দিয়ে আরো ক্ষমতায়িত করতে পারি। পৃথক সংস্থাতেই যদি সমাধান সূত্র থাকত তাহলে অনেক দেশ তাই করত। অন্য দেশগুলো যদি বিদ্যমান অবকাঠামোর মাধ্যমে সফলভাবে পরিচালনা করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না?
কালের কণ্ঠ : সরকারি সংস্থাগুলোর শিথিলতা ও সমন্বয়হীনতা রোধের পথ কী?
তানজীব উল আলম : ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা—এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে একই গতি দেখা যায়নি। ইভ্যালির বিরুদ্ধে পঞ্জি স্কিমের অভিযোগ সবার আগে উঠেছিল, কিন্তু সবার পরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তারা বিভিন্নজনকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছে। সেটি বিজ্ঞাপন দিয়ে কিংবা ডোনেশন, স্পন্সরশিপ দিয়ে। তারা প্রভাবশালীদের পক্ষে রেখে কর্মকাণ্ড আরো বিস্তৃত করেছে। এতে সাধারণ ভোক্তা প্রলুব্ধ হয়ে সর্বস্ব সঁপে দিয়েছে।
কালের কণ্ঠ : ক্রেতারাও তো লোভে পড়ে ঝুঁকি নিয়েছে।
তানজীব উল আলম : সব পক্ষ এখানে সমানভাবে দায়ী। এর মধ্যে কাউকে আগে রাখতে হলে সেটা অবশ্যই গ্রাহক। পকেটের টাকাটা তো সেই স্বেচ্ছায় দিয়ে দিয়েছে। তাই গ্রাহকই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।
কালের কণ্ঠ : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তানজীব উল আলম : বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্য নিয়ে দেখাশোনা করার যে দায় সেটা তাদের আছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্সের কোনো রেগুলেটরি বডি নয়। তাদের ডিজিটাল কমার্স সেলের তাই আইনগত কর্তৃত্ব নেই। কোনো ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। কেউ কেউ মনে করছে, সরকারি ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ধরনভেদে বিভিন্ন ধরনের রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন আইনের অধীনে আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা আইনগত দিক থেকে এখানে খুবই সীমিত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মহীরুহ হয়ে ওঠার আগে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিআইএফইউকে (বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট) আরো আগেই তৎপর হওয়া উচিত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক যে তদন্তটি করেছে, সেটা তারা নিজস্ব উদ্যোগে করেনি। তারা এটি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকেরই এএমএল গাইডলাইন জারি করা আছে। ওই গাইডলাইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংক যখন কোনো একটি হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন দেখবে তখন তাদের দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে রিপোর্ট করা। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন ওই হিসাবটি মনিটর করবে কোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে কি না। পুলিশসহ আরো কয়েকটি সংস্থাও অভিযুক্ত ই-কমার্স নিয়ে তদন্ত করেছে। কিন্তু সবাই ঘটনা জানার পরও অন্যের জন্য অপেক্ষা করেছে। পদক্ষেপ না নেওয়ার ক্ষেত্রে সবাই হয়তো ওপরের নির্দেশের জন্য বসে ছিল। তারা নিজস্ব বিবেচনায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ওপর থেকেও কোনো নির্দেশনা আসেনি।
কালের কণ্ঠ : আপনি তথ্য-প্রযুক্তি খাতসহ বিভিন্ন আইন প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন। তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ই-কমার্স খাত কতটা গুরুত্ব পেয়েছে?
তানজীব উল আলম : অনলাইনে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডকে দমন করার জন্য তথ্য-প্রযুক্তি আইন ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনই যথেষ্ট। আমাদের পেনাল কোডেও যথেষ্ট বিধান আছে। ই-কমার্স খাতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন ধরনের আইনের প্রয়োগ হয়। কেউ যদি এমন একটি অফার কিংবা বিজ্ঞাপন দেয়, যেটি প্রতিযোগিতাবিরোধী, তাহলে প্রতিযোগিতা আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সেখানে যদি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকে তাহলে ই-কমার্সের অধীনে আলাদা আইন করে আপনি তো একই ব্যবস্থা নেবেন। এর চেয়ে প্রতিযোগিতা আইনটিই প্রয়োগ করেন। যদি সে অনলাইনে প্রতারণা করে তাহলে ৪২০, ৪০৬ ধারা তো আছেই। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনেও প্রতারণার বিধান আছে, সেটাও আপনি প্রয়োগ করছেন না।
কালের কণ্ঠ : খাতটিতে শৃঙ্খলা আনতে স্বল্প মেয়াদে ও দীর্ঘ মেয়াদে কী করা দরকার?
তানজীব উল আলম : এখানে মূল সমাধান হলো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো। প্রতিটি সংস্থা দুর্বল। তাদের কারো লোকবল নেই, কারোর জ্ঞান, দক্ষতাও খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের। তাদের আরো বেশি প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই ধরনের ব্যবসার অপারেশনস সম্পর্কে ভালো প্রায়োগিক জ্ঞান থাকতে হবে, যাতে তারা বিজনেস মডেল দেখেই বুঝতে পারে, এটার উদ্দেশ্যটা কী। প্রতিটি ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটে গেছে, কিন্তু এর গভীরতা আমরা বুঝতে পারিনি, কিংবা বুঝলেও বিভিন্ন কারণে পদক্ষেপ নিতে পারিনি। ইভ্যালির মডেলে আরো অনেকে আসছে, কিন্তু বর্তমান আইনে তাদের তো ক্যাশ অন ডেলিভারি এবং এক্সকোর মাধ্যমে ব্যবসা করার কথা। তার মানে তারা আইন মানছে না। আইন থাকার পরও তা প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। যদি কোনো সংস্থা করতেই হয়, তাহলে উন্নত দেশের আদলে ‘সিরিয়াস ফ্রড অফিস’-এর মতো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে একটি সংস্থা গঠন করা যেতে পারে।
সম্পর্কিত খবর

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য
শিশুদের আর্তচিৎকারে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি
রেজোয়ান বিশ্বাস ও শরীফ শাওন

দুপুরে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছাত্রাবাসে ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আগুনের কুণ্ডলী। দৌড়ে এসে দেখতে পাই বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। শিশুরা পুড়ে অঙ্গার।
এভাবেই বলছিলেন রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান।
ঘটনাস্থল থেকে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে ফিরেছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান রাফি। প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলে, প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি একটি তিনতলা ভবনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। আমাদের ক্লাস মাত্র শেষ হয়। আমরা গাড়িতে গিয়ে উঠি। কিছু শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে গিয়েছিল। আর কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে কোচিংয়ের জন্য অবস্থান করছিল। এমন সময় বিকট একটি শব্দ হয়ে বিস্ফোরণ হয়। একটি বিমান ভবনটির সামনে আছড়ে পড়ে এবং ভবনটিতে আঘাত করে।’
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী জারাফ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলে, ‘চোখের সামনে বিস্ফোরণ দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাই। মুহূর্তেই চোখের সামনে থাকা অন্তত চারজনের মৃত্যু দেখেছি। তাদের মধ্যে একজনের পুরো শরীর পুড়ে বীভৎস অবস্থায় ছিল। তাকে শনাক্ত করা কঠিন। এ ছাড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অন্তত ৫০ জনকে গুরুতর অবস্থায় দেখতে পাই। তারাও বাঁচবে বলে মনে হয় না।’
প্রত্যক্ষদর্শী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজটির নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে ছিলাম। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কেবল বের হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দের পর তিনতলা ভবনের সামনের নারিকেলগাছ ভেঙে ভবনে ধাক্কা দিলে বিমানটিতে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।’ আকবর হোসেনের বর্ণনা অনুযায়ী তিনতলা ভবনের নিচতলা মাটির নিচে, সেখানে ক্লাস হয় না। বিমানটি সেখানে ঢুকে পড়ে। পরে বিকট শব্দে বিমানটি বিস্ফোরিত হয়।
শিশুদের খোঁজে দিশাহারা প্রত্যক্ষদর্শী অভিভাবকরা : ঘটনার সময় অনেক অভিভাবক স্কলের আশপাশেই ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে তাঁরা ব্যাপক আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। স্কুলে আগুন দেখে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাসপিয়া আক্তার বিলাপ করে কান্নার সুরে বলছিলেন, ‘আমার নিষ্পাপ শিশুকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও খোদা। আমার একটি মাত্র মেয়ে, তাকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচব? কেউ আমাকে তার খোঁজ এনে দাও।’
দুপুর সোয়া ২টায় কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধার মুখে পড়ে ফিরে যাওয়ার সময় এমন বিলাপ দিতে থাকেন তিনি। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এলোমেলো হাঁটছিলেন তিনি, কখনো আবার পড়ে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে থাকা দুজন নারী তাঁকে ধরে রাস্তা পার করছিলেন।
দুপুর সোয়া ১টায় বিমান বিধ্বংসের পর থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ অভিভাবকদের এমন আহাজারি দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। তবে উদ্ধারকাজ নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য কলেজ ক্যাম্পসে প্রবেশে বাধা দেন উদ্ধারকর্মীসহ ভলান্টিয়াররা। শুধু তাই নয়, উদ্ধারকর্মীসহ উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত গাড়ি অবাধে চলাচলের লক্ষ্যে সড়ক থেকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল সবাইকে।
তবে পথে পথে বাধা উপেক্ষা করেই অনেক অভিভাবককে ক্যাম্পাসের মূল গেটের কাছ পর্যন্ত চলে যেতে দেখা যায়। ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককে বিতর্কেও জড়াতে দেখা গেছে। অভিভাবকদের অনেকে নিজেদের বিভিন্ন পরিচয় উপস্থান করেও ভেতরে প্রবেশে ব্যর্থ হয়েছেন।
বোরহান কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার সন্তান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি। বিষয়টি জানার পরও আমাকে ভেতরে যেতে দেয়নি।’
পাশে থাকা একজন ভলান্টিয়ার বলেন, ‘ভেতরে দুর্ঘটনায় যারা পড়েছে, তারা সবাই কারো না কারো সন্তান, আত্মীয়। তবে এভাবে সবাই ভেতরে প্রবেশ করলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হবে। এতে তাদের জীবনে ঝুঁকি আরো বাড়বে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা হতাহতদের উদ্ধারে চেষ্টা করছি। দ্রুততার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের খোঁজ নিতে পারবেন।’
ঘটনাস্থলে আরো অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ বিমান বিধ্বস্তের পর আগুন ও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে যেতে থাকে তাঁদের। তাঁরা স্কুলে থাকা সন্তানদের খুঁজতে থাকেন। এতটুকু শরীর নিয়ে ভয়ংকর আগুনের সামনে অভিভাবকদের আর কিছুই করার ছিল না। তাঁদের চোখের সামনে শরীরে আগুন নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ছিল একের পর এক সন্তানরা। আগুনে কারো শরীর, কারো কপাল পুড়ে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।
প্রসঙ্গত, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আহত হয়েছে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ। হতাহতদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু শিক্ষার্থী।

৫৩ বছরে বিমান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ১০৫
- নিহতদের মধ্যে পাইলট কো-পাইলট ৩০ জন
কাজী হাফিজ

গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০৫ জন। তাঁদের মধ্যে বিমান বা হেলিকপ্টারের সাধারণ যাত্রী ও ক্রু ছাড়া পাইলট ও কো-পাইলট রয়েছেন ৩০ জন। বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাশার, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতিমা ও দেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কন্যা ফারিয়া লারাও রয়েছেন এই তালিকায়। দেশের ভেতরে এসব দুর্ঘটনা ছাড়াও বিদেশে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় যেসব বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা এই ১০৫ জনের বাইরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের একটি ফকার এফ-২৭ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে বিধ্বস্ত হলে দেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতিমাসহ বিমানের কো-পাইলট, ক্রু ও যাত্রীরা সবাই নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় মোট ৪৯ জন নিহত হন।
১৯৯৩ সালে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান এফটি-৫ বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কুদ্দুস নিহত হন। ১৯৯৬ সালে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে বিমানবাহিনীর দুটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে উইং কমান্ডার হক, স্কোয়াড্রন লিডার ইসলাম ও ফ্লাইং অফিসার মাসুদ নিহত হন। ১৯৯৮ সালের ২৬ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিমানবাহিনীর মিগ-২১ বিধ্বস্ত হলে পাইলট নিহত হন। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০২ সালের ৭ জুন পর্যন্ত পারাবত ফ্লাইং একাডেমির বিমান দুর্ঘটনায় তিনজন পাইলটের মৃত্যু হয়। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় এয়ার পারাবতের একটি বিমানে আগুন ধরে গিয়ে ঢাকার পোস্তগোলায় বিধ্বস্ত হলে নিহত হন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কন্যা পাইলট ফারিয়া লারা (২৬) ও কো-পাইলট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এর আগে ওই বছরের ২৭ জুন এয়ার পারাবতের আরেকটি বিমান সাভারের কাছে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে। এতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ২০০২ সালের ৭ জুন এয়ার পারাবতের আরেকটি সেসনা-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন পাইলট মুখলেছুর রহমান সাকিব। এসব দুর্ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি এয়ারলাইনস এয়ার পারাবত।
এর আগে ২০০১ সালে ৭ জানুয়ারি একটি এফটি-৭ যুদ্ধবিমান ঢাকা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মহাসীন নিহত হন। ২০০২ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে নিহত হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আদনান মুকিত। ২০০২ সালের ১৯ অক্টোবর বিমানবাহিনীর একটি এম-১ হেলিকপ্টার চট্টগ্রামে সার্জেন্ট জহুরুল হক বিমানঘাঁটির কাছে একটি টেলিভিশন টাওয়ারে ধাক্কা লেগে বিধ্বস্ত হলে নিহত হন উইং কমান্ডার কাজী কামরুল নেওয়াজ, ফ্লাইং অফিসার সাব্বির আহমেদ, ওয়ারেন্ট অফিসার জহির হোসেন ও সার্জেন্ট আবদুস সামাদ।
২০০৫ সালের ৭ জুন ঢাকার উত্তরায় একটি ভবনে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান। এ ঘটনায় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আহসানুল কবীর প্যারান্ডাটের মাধ্যমে অবতরণ করে নিজের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হলেও দুই শিশুসহ ছয় বেসামরিক নাগরিক আহত হন। ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ফ্লাইট ক্যাডেট তানিউল ইসলাম নিহত হন।
২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন বিমানটির পাইলট ফ্লাইট ক্যাডেট ফয়সল মাহমুদ। ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল আরেকটি এফ-৭ এমবি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িপাড়া গ্রামে। বিমানটির পাইলট স্কোয়াড্রন লিভার মোরশেদ হাসান বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণের চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
২০০৯ সালের ৯ মার্চ যশোর থেকে ঢাকায় আসার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম ও হেলিকপ্টারের পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহীদ ইসলাম। ২০০৯ সালের ১৬ জুন এফটি-৬ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির পাইলট সে সময় প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণ করে জীবনরক্ষায় সক্ষম হন। একই বছরের ২২ অক্টোবর বগুড়ার কাহালুর কাছে এরোলিয়ায় রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর এফ-৭ এমবি মডেলের একটি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায়ও পাইলট তাঁর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হন। ওই বিমানটিসহ আগের পাঁচ বছরে বিমানবাহিনীর তিনটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।
২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার কাছে যমুনা নদীতে বিধ্বস্ত হয় ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এতে পাইলট কামরুল হাসানের মৃত্যু হয়। আরেকটি বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর। এদিন বরিশালের কাছে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিমানবাহিনীর দুজন বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফ ইবনে আহমেদ ও স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক নিহত হন।
২০১১ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ বিমানে আগুন লেগে গেলে দুজন পাইলট আহত হন।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মধুপুরে মুরইল ইউনিয়নের বড়মহর গ্রামে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শরিফ রেজা নিহত হন।
২০১৩ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ার তৈরি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান এ-ফাইভ পটিয়া উপজেলার একটি বিলে পড়ে। তার আগে প্যারাশুটের সাহায্যে নিরাপদে অবতরণ করেন পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবু জাহের আরাফাত। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যশোরের সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের ধানক্ষেতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায় অক্ষত থাকেন বিমানের দুই পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার ফারুক ও পাইলট অফিসার জামি। একই বছরের ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।
২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির একটি ১৫২ মডেলের সেনা প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট তামান্না রহমান (২২) ঘটনাস্থলে নিহত হন। তাঁর প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাঈদ কামালও পরে মারা যান। একই বছরের ২৮ জুন চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলাকালে সাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ যুদ্ধবিমান। এতে বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিখোঁজ হন। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার সোনারপাড়া সমুদ্রসৈকতে মেঘনা এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে একজন নিহত ও চারজন আহত হন।
২০১৬ সালের ৯ মার্চ ট্রু এভিয়েশনের একটি কার্গো বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর বঙ্গোপসাগরের নাজিরারটেক পয়েন্টে বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলটসহ তিন ক্রু নিহত হন। আহত হন আরো এক বিদেশি। বিমানটি চিংড়ি পোনা নিয়ে কক্সবাজার থেকে যশোর যাচ্ছিল। নিহতরা হলেন বিমানটির পাইলট মুরাদ কাপারত, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কুলিশ আন্ত্রে ও কো-পাইলট ইভান ডেমান।
২০১৭ সালে মহেশখালীতে বিমানবাহিনীর দুই প্রশিক্ষণ বিমানের মধ্যে সংঘর্ষে দুটি বিমানই বিধ্বস্ত হয়। তবে পাইলটরা অক্ষত ছিলেন।
২০২১ সালের ১৬ মার্চ রাজশাহীর তানোরে আলুক্ষেতে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ে।
২০২২ সালের ২৭ জুলাই আর্মি এভিয়েশনের একটি বেল-২০৬ হেলিকপ্টার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার একটি ধানক্ষেতে পড়ে। হেলিকপ্টারটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার অংশ হিসেবে ‘ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং প্রসিডিউর’ অনুশীলন করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অবতরণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। হেলিকপ্টারের উভয় পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইসমাইল ও মেজর শামসকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচে আনা হয়।
২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ নিহত হন।
গত ১৩ মার্চ যশোর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় বিমানের দুই পাইলট গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোল্লা মোহাম্মদ তহিদুল হাসান ও স্কোয়াড্রন লিডার আহমদ মুসা সুস্থ ছিলেন।
সর্বশেষ গতকাল ২১ জুলাই সোমবার বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে একটি শোকের দিন হিসেবে স্থান পায়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার উত্তরায় দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। নিহত হন বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম সাগরসহ অনেকে। আইএসপিআর জানায়, গতকাল বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০ জনে। আহতের সংখ্যা ১৭১। এদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।

ফেসবুকজুড়ে নিখোঁজ শিশুদের মুখ
- সন্তানদের না পেয়ে কাঁদছেন অভিভাবকরা
কেয়া আক্তার

হলুদ জামা পরা ছোট্ট একটি মেয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। নাম সায়মা। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের ক্লাউড সেকশনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। তার ভাই সুমন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘উত্তরার মাইলস্টোন ক্যাম্পাসের বিমান বিধ্বস্তের স্থান থেকে আমার বোন নিখোঁজ।
এমন অসংখ্য শিশু-কিশোরের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন ফেসবুকে। কেউ নিজ সন্তানকে খুঁজছেন, কেউ হয়তো অন্যের সন্ধান জানাতে পোস্ট করছেন। অনেকে আবার উদ্ধার হওয়া শিশুদের নাম-পরিচয় না জানায় অভিভাবকের খোঁজ করছেন।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জুনায়েত হাসানের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
ধচতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফসি আক্তার রাফিয়া উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছবি দেখে পরিবার তাকে শনাক্ত করে হাসপাতালে পৌঁছেছে।
আরেক শিক্ষার্থী সাবিহা জাহানের সন্ধানেও ফেসবুকে অনুরোধ করা হচ্ছে উত্তরার আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য।
তৃতীয় শ্রেণির আফিয়া উম্মে মরিয়ম, সাদ সালাউদ্দীন ও রাইসা মনিকেও খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। কারো খবর মিলেছে, কেউ এখনো নিখোঁজ।
প্রথম আলোর সাংবাদিক সেলিম জাহিদ নিজের ছেলে সায়ের মাহবুবের সন্ধান চেয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দেন। সায়ের মাইলস্টোন মেইন ক্যাম্পাসের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরে তাকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।
নুসরাত জাহান আনিকা (তৃতীয় শ্রেণি) ও মেহনাজ আফরিন হুমায়রা (দ্বিতীয় শ্রেণি)—এই দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ রয়েছে সিএমএইচের মর্গে, এমন খবর ছড়িয়েছে ফেসবুকে। তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে।
অভিনেত্রী তমা মির্জার ফেসবুক প্রোফাইলে মোছা. আসমাউল হুসনা জায়রা নামের এক শিশুর আইডি কার্ড পোস্ট করে তিনি জানান, বাচ্চাটি তাঁর স্কুল ফ্রেন্ডের ভাইয়ের অফিসে আছে, সেফ আছে, তবে নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারছে না।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভির আহমেদের মৃত্যুর খবর আসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। তার পরিচয় মিললেও পরিবারের সন্ধানে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী আরিয়ান নাফিসের অভিভাবকদেরও খোঁজা হচ্ছে ফেসবুকে।
ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি, তাসফিয়া সুলতানা, রাইসা মনি—তাদের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি।
২১ বছর বয়সী ইয়াসীন মাইলস্টোন পার্মানেন্ট ক্যাম্পাসের পরিবহন বিভাগের কর্মী। বাড়ি নোয়াখালী। বর্তমানে উত্তরার মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ ছাড়া মাইলস্টোন হোস্টেলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফুয়াদ এখনো নিখোঁজ।
প্রতিটি নামই এখন পরিবারের কাছে একেকটি আশার আলো। আর প্রতিটি ছবি যেন ফেসবুকে চোখ আটকে রাখা কান্নার দলিল।

হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে দাউদাউ
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর গতকাল সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিল স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা বিস্মিত হয়। তারা গণমাধ্যমকে বলে, দুর্ঘটনার পর স্কুলের মাঠে একজন প্যারাশুট দিয়ে নামেন। আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যাপক আকারে।
দুর্ঘটনার সময় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমাইন ক্লাসে ছিল। বিকট শব্দ শুনে নিচে নেমে সে দেখে আগুন জ্বলছে। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলে, ‘আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের শব্দ হয়। প্রথমে কেউ বুঝতে পারিনি বিষয়টি।