দামে দিশাহারা ক্রেতা

রোকন মাহমুদ
রোকন মাহমুদ
শেয়ার
দামে দিশাহারা ক্রেতা

নিত্যপণ্যের বাজারে জমেছে কালো মেঘ। করোনার এই দুঃসময়ে দামের ঝাঁজে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের চোখে জলকণা। মাস না ফুরাতেই অনেকেরই পকেট হচ্ছে ‘গড়ের মাঠ’। সহজ দামে যেন কোনো পণ্যই মিলছে না।

আগুনদামের কারণে অনেক পণ্যে হাত দেওয়ার সাহসই পাচ্ছে না ক্রেতারা। অতিমারিতে এমনিতেই মানুষের জীবনযাত্রা গতিহীন। কেউ কেউ হারিয়েছেন চাকরি। অনেকের চাকরি থাকলেও ঝুলে গেছে বেতন।
দীর্ঘ লকডাউনের পর ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান খুললেও এখনো পুরোপুরি ফেরেনি ছন্দ। এমন প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্যের দামের এমন আস্ফাালন মানুষকে কাঁদাচ্ছে। 

নিম্ন শ্রেণির মানুষ মোটা চালে ডাল মিশিয়ে পেট ভরাবে, নেই সেই উপায়। গরিবের মসুর ডালে চলছে খেল।

কিছুটা স্থির চালের চালবাজি, তবে জারি তেলের তেলেসমাতি। পরিবারের ছোট্ট সদস্যকে যে দুধ মুখে তুলে দেবেন বাবা, সেই প্যাকেটজাত দুধের দরটাও এখন পাগলা ঘোড়া। ডিম কিনতে রীতিমতো হিমশিম। আটা-ময়দা কিনতে বেকায়দা। ব্রয়লার মুরগিও দিচ্ছে দামে সুড়সুড়ি।
আর চিনির দামটাও এখন অচেনা। রুপালি ইলিশের এখনো ‘রুপার দর’, একাই নাচিয়ে যাচ্ছে বাজার। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে কোনো পণ্যের দাম একবার চড়লে আর সহজে নামে না।

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের বাড়তি দাম, জাহাজভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও সমন্বয় করতে হচ্ছে। দাম বাড়ার এই প্রক্রিয়ায় সরকার প্রতিনিয়ত নজর রাখছে। তাই কোনো পণ্যেরই অযৌক্তিক দাম বাড়েনি।

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস বলছে, করোনা মহামারিতে অন্তত এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে যাবে। আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যাক ও পিপিআরসি বলছে, আগে দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। এখন সেটা আরো ৫ শতাংশ বেড়ে ২৫ শতাংশে উঠেছে। একদিকে মানুষের আয় কমছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে মাঝখানে চিড়েচ্যাপটা হচ্ছে সাধারণ ক্রেতা। এর ওপর গত মঙ্গলবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার দেড় থেকে ২ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয় সরকার। এতে যাঁরা এই আয় দিয়ে সংসার চালান, তাঁরা আরো বিপদে পড়বেন।

এদিকে পণ্যের দামের এমন পরিস্থিতি এড়াতে বাজার তদারকি ও আমদানি কমিয়ে স্বনির্ভর হতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

কেমন বেড়েছে দাম : বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, গুঁড়া দুধ, সবজি, মাছ, মাংস, ডিমসহ ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের যে দাম ছিল, জুলাই-আগস্টে এর চেয়ে অনেকটাই বাড়ে। আর সেপ্টেম্বরে এসে আরেক দফা বাড়ল। অথচ এই সময়টাতে ক্রেতার আয় বাড়েনি। ফলে স্বভাবতই চাপে পড়েছে তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, এই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মোটা দানার মসুর ডালের। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের প্রধান খাবার এই ডাল। বাজারে এখন বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজি। সপ্তাহ দুয়েক আগেও ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় কেনা যেত। গত জানুয়ারিতে এই মানের ডাল ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। চিনির দাম অবশ্য সপ্তাহ দুয়েক ধরেই বাড়তি। যদিও সরকার ও ব্যবসায়ীরা মিলে সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৭৫ টাকা বেঁধে দিয়েছিলেন; কিন্তু এই দামে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। বাজারে এখন খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। আর প্যাকেটজাত চিনি বেচাকেনা হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি। দাম বেশি হওয়ায় অনেক খুচরা বিক্রেতা খোলা চিনি আনা বন্ধ করে দিয়েছেন। চিনির সঙ্গে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম তেলের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বাজারে এখন খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা কেজি। সেপ্টেম্বরের শুরুতেও খোলা সয়াবিন ছিল ১৩৭ থেকে ১৩৮ টাকা কেজি। এর আগে গেল জানুয়ারিতে ছিল ১২২ থেকে ১২৪ টাকা কেজি। বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৫৩ থেকে ১৬০ টাকা লিটার। গত আগস্ট পর্যন্ত ছিল ১৪৫ থেকে ১৪৯ টাকা লিটার। জানুয়ারিতে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। সয়াবিনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পাম তেলের দামও। পাম লুজ ও সুপার বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ থেকে ১৩৬ টাকা কেজি। গত আগস্ট পর্যন্ত ছিল ১২২ থেকে ১২৮ টাকা, এর আগে জানুয়ারিতে ছিল ১০০ থেকে ১১২ টাকা কেজি।

বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই আটা-ময়দার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এখন সেই আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। বাজারে এখন খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি, গত মাস পর্যন্ত যা ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। প্যাকেটজাত আটা বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। দুই মাস আগেও ময়দার দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।

বাজারে গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। খুচরায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফুলক্রিম গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে ৬৯০ থেকে ৭২০ টাকা কেজি। গেল মাসে দুধ কেনা যেত ৫৭০ থেকে ৬৬০ টাকা কেজি। এ বছরের শুরুতে গুঁড়া দুধের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬৩০ টাকার মধ্যে।

বাজারে মুরগির ডিমের দাম নামছেই না। এক মাস আগে ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা ডজন। এখন বেড়ে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় ঠেকেছে। গত জানুয়ারিতেও ডিমের দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা ডজন।

দীর্ঘদিন ব্রয়লার মুরগির বাজারে খামারিদের হাহাকার ছিল। ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে তা ১১৫ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে ছিল। তবে গত আগস্ট থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দাম। বাজারে এখন খুরচায় ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, গত মাসে যা ছিল ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে।

চালের দাম মাসখানেকের মধ্যে না বাড়লেও স্বস্তি আসেনি। এখনো সরু চাল কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে। বিক্রেতারা বলছেন, এই সময়টায় দাম আরো বেশি থাকত, যদি আমদানি অনুমোদন না দেওয়া হতো। ভারত থেকে কিছু কম দামের চাল আসায় দাম না কমলেও বাড়েনি। মাসখানেক আগেও সরু চালের দাম কেজিতে উঠে গিয়েছিল ৬৫ থেকে ৭২ টাকা। জানুয়ারিতে এ মানের চালের দাম ছিল ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা কেজি। এ ছাড়া মোটা চালের দাম বাজারে এখন ৪৬ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। গত মাসে ছিল ৪৮ থেকে ৫৮ টাকা কেজি, জানুয়ারিতে ছিল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা কেজি।

এ ছাড়া মাছ ও গরুর মাংস, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যই বিক্রি হচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দামে। দেশে এবার পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। ফলে দাম খুব একটা বাড়েনি এখনো। তবে কম দামে কত দিন পেঁয়াজ খেতে পারবে ভোক্তারা, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, ব্যাপারীরা এখন পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি চাইছেন। এ পেঁয়াজ বাজারে এলে খুচরায়ও দাম বাড়বে। সেটা সপ্তাহখানেকের মধ্যেই হতে পারে। গতকাল বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এটা কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়তে পারে বলে তাঁরা ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ছাড়া আদার দাম মাঝখানে কিছুটা কমলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে। চায়না আদা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। এখন কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি চাইছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

বাজারে সবজির দাম এখন গড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। গেল মাসে তা ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ছিল। গেল জানুয়ারিতে অবশ্য শীত মৌসুমের সবজি ছিল বাজারে, তাই দামও ছিল কম। ওই সময় ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে সবজি পাওয়া যেত। কাঁচা মরিচের দাম মাসখানেক আগে ডাবল সেঞ্চুরিতে বিক্রি হয়েছিল। এরপর উপায় না দেখে সরকার কাঁচা মরিচও আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এতে দাম কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো তা ১০০ টাকার ওপরেই রয়েছে।

কারওয়ান বাজারের আড়তদার মো. ইমরান মাস্টার বলেন, বর্ষা শেষে অনেক এলাকায় সবজির আবাদ হয়েছে। সেসব সবজি উঠতে যে সময় লাগবে, সে পর্যন্ত দাম কিছুটা বেশিই থাকবে।

রোকেয়ারা ভালো নেই : রোকেয়া বেগমের স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়েই চলে তাঁর সংসারের চাকা। গতকাল রাজধানীর মালিবাগ বাজারে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয়, তখন কপালে চিন্তার রেখা স্পষ্ট। এই দুশ্চিন্তা বাজারের নিত্যপণ্যের দামের বিপরীতে আয় পিছটানের। তিনি বলেন, করোনার পর থেকে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এর পরও কোনো রকমে টেনেটুনে চলছিলাম। এখন তো ব্যয়ের বিপরীতে আয় আরো কমেছে। এখন আরো হিসাবি হতে হবে। কম খেতে হবে, চাইলেই প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা যাবে না।

রোকেয়া বেগমের চেয়ে আরো বেশি ‘কষ্টপাথর’ বেসরকারি চাকরিজীবী জুবায়ের আউয়ালের হৃদয়জুড়ে। ছেলেমেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার চলে তাঁর একলার রোজগারে। করোনার এই সময়টাতে আয় বাড়েনি, উল্টো অফিসের বেতন পড়েছে বকেয়া। তিনি বলেন, ‘স্কুল খুলেছে, সন্তানদের পেছনে এখন বাড়তি খরচ লাগছে। এর ওপর চাল, ডাল, তেল, চিনি, সবজিসহ এমন কোনো পণ্য নেই, যেটির দাম বাড়েনি। এই লম্ফ এক-দুই টাকা নয়, কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকার বেশি। ফলে মাস শেষে সংসারের টানাটানি লেগেই আছে। সংসারের টানাটানির বৃত্ত থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না শুধু বাজার খরচ বাড়তে থাকায়।

বাজার তদারকিতে ঢিলেমি : সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যে বাজার অভিযান চালিয়েছে, তাতে মূলত পণ্যের গায়ে দর না থাকা, পরিবেশ ভালো না হওয়া, গায়ের দরের চেয়ে দাম বেশি রাখার অভিযোগ নিষ্পত্তি করার বিষয়গুলো তদারকি করেছে। কিন্তু পণ্য যৌক্তিক দামে বিক্রি হচ্ছে কি না, না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তদারকি একেবারেই করা হয় না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব বিষয় তদারক না করলে বাজারে যে যেমন পারে দাম রাখবে। তাই এই খাতে মনোযোগ দিতে হবে।

কে কী বলছেন : জানতে চাইলে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানো যায়, সেগুলোর দেশেই উৎপাদন বাড়াতে হবে। যেমন—চিনি, আটা, ময়দা ইত্যাদি পণ্য দেশেই উৎপাদন বাড়ানো যায়। তবে এর চেয়ে বড় বিষয় হলো, আমদানিকারক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা—এই তিন পর্যায়ে পণ্য যৌক্তিক দামে বিক্রি হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে তদারক করতে হবে। বাজার গবেষণার মাধ্যমে পণ্যের যৌক্তিক দাম ধরে রাখতে হবে। এসব বিষয়ে সরকারে নজর এখনো খুব কম।

এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের অভিযানগুলো থাকে মূলত বাজারভিত্তিক। আমরা নির্দিষ্ট বাজারে গিয়ে পণ্য বিক্রিতে ভোক্তার স্বার্থপরিপন্থী কোনো অনিয়ম পেলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে পণ্যের দাম কত হবে, এটা যৌক্তিক কি না তা দেখা আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না।

বাজারের সার্বিক বিষয়ে জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মোড়াপাড়া মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ বলেন, আমার বাবা রাতে মসজিদে এশার নামাজের পর বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে।

খবর পেয়ে আমরা ছুটে গিয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, কারো সঙ্গে বাবার শত্রুতা ছিল না।
আমার বাবার মাছের ঘেরসহ আরো অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে রাখা আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পর জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে আগামীকাল (শনিবার) থানায় মামলা হতে পারে। হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য

চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত
নূরুর রহমান

চাঁদপুর শহরে মসজিদের ভেতর দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমাম আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের প্রফেসরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে (৬৫) চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বিল্লাল হোসেন নামের একজনকে মুসল্লিরা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন মুসল্লি জানান, দুপুরে জুমার নামাজের পর মসজিদের ভেতরই মাঝবয়সী এক ব্যক্তি ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। উপস্থিত মুসল্লিরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে মসজিদের ভেতর বেঁধে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মুসল্লিরা জানান, হামলাকারী নিজেও মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া জানান, আটক ব্যক্তির নাম বিল্লাল হোসেন (৫০)। কী কারণে তিনি ইমাম সাহেবের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। আটক ব্যক্তি একেক সময় একেক কথা বলছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ কাজল জানান, ওই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত বলেও জানান তিনি।

মসজিদের ইমামের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব রাত সাড়ে ১১টায় এই প্রতিবেদককে জানান, আহত ইমামকে দেখতে রাত ১১টার দিকে তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে যান এবং তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন।

ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের কানের পাশে যেখানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে, সেখানে বেশ কিছু সেলাই দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, ইমাম সাহেবের মাথার সিটি স্ক্যান করা হবে। আঘাত গুরুতর হলে প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

মন্তব্য

ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংসভাবে পুরান ঢাকার এক সাধারণ ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। গত বুধবার সংঘটিত এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, এনসিপি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

তাঁরা রাত ১১টার পর পর্যন্ত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে তিন সদস্যের একটি কমিটি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে নিহতের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যায়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা এ ঘটনাকে বর্বরোচিত, নিষ্ঠুর ও মর্মান্তিক অভিহিত করেছেন।
একই সঙ্গে এর পেছনে তৃতীয় কোনো শক্তি কাজ করছে কি না সেই প্রশ্নও তোলেন। ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য আসামিদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

এরপর মরদেহের ওপর চলে এই বর্বরতা। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে অনেক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। এ সময় উত্সুক লোকজন এই নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করেছে। কেউ এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের ক্যাম্প পাশে থাকলেও তারাও এগিয়ে আসেনি।
ভিডিওতে হত্যা ও বীভৎসতায় জড়িতদের হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে কিছু বলতে শোনা যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার পর এই বর্বরতার বিষয়টি সামনে আসে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/07.july/12-07-2025/kalerkantho-lt-9a.jpgছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল : গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে একটি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে জড়িত সন্দেহে যাদের নাম এসেছে তাদের দ্রুত বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এর পরই সংগঠনের পক্ষ থেকে চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ভিডিও ফুটেজে কোনো একজন সোহাগকে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা গেলেও তার বিরুদ্ধে মামলা কিংবা গ্রেপ্তার হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে যে এ ঘটনার পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষও জড়িত থাকতে পারে।

আজীবন বহিষ্কৃত পাঁচ নেতা : এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুরান ঢাকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে। তাঁরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস, মাহমুদুল হাসান মহিন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।

জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যস্থা নেওয়ার আহবান জানান।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতা অপু দাসের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : সোহাগকে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বরে এসে সমাবেশ করে এবং রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।

বুয়েটে বিক্ষোভ : এদিকে রাত ১১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন। এ সময় তাঁরা লিখিত বক্তব্যে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ দফা দাবি জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো : সোহাগ হত্যার ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অভিযুক্ত মহিন, রবিনসহ সব খুনিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোক বিবৃতি : বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে শোক জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধী যে-ই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় সিরিয়াস ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি, এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন কোনো অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, কোনো দিন দেবেও না। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান জিরো টলারেন্স

জামায়াতের গভীর উদ্বেগ ও শোক : সোহাগ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক এবং নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।

তিনি বলেন, নিহত সোহাগের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি এনসিপির : সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।

জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চকবাজারের (মিটফোর্ডের সামনে) নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে শোকাহত। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে জাতীয় যুবশক্তি।

অন্যদিকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শুক্রবার রাতে টিএসসি চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা এবং সম্প্রতি ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

এদিকে সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় আসামি তারেক রহমান রবিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন। গতকাল আদালতের কোতোয়ালি থানার প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নাসির উদ্দিন। আর অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন একই থানার উপপরিদর্শক মো. মনির। আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) ও হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তায় একদল লোক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম।  আর পুলিশ অস্ত্র মামলা করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার সব আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে পুরান ঢাকার কয়েক যুবক সোহাগকে বুধবার দুপুরে ডেকে নেন। সন্ধ্যায় তাঁকে হত্যা করা হয়। সোহাগ পুরনো তামার তার, অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙ্গারি জিনিসের ব্যবসা করতেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোহাগকে হত্যা করে তাঁর পূর্বপরিচিতরা। নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।

নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে ভাঙ্গারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে তিনি পলাশ নামের একজনের অধীনে কাজ করতেন। তিনি ভাঙ্গারি এনে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। চার-পাঁচ বছর আগে সোহাগ আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন তাঁর গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সোহানা মেটাল।

আসামিদের মধ্যে মহিন ও রবিন ছাড়াও রয়েছে সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

মন্তব্য

খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা
মাহবুবুর রহমান

খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী খুন হন। গতকাল আরো তিন জেলায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

খুলনা অফিস জানায়, খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মাহবুবুর রহমানকে খুব কাছ থেকে প্রথমে গুলি করা হয়। পরে পায়ের রগ কেটে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক মাহবুবুরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর লাশ খুমেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। আজ শনিবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। নিহত মাহবুবুর রহমান মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার মো. আব্দুল করিম মোল্লার ছেলে।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, দুপুরে বাসার সামনে নিজের প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুবুর। ওই সময় হেলমেট পরা তিনজন একটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পরে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে দেয়।

তিনি আরো জানান, মাদক বিক্রি নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে মাহাবুবুুরের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।

ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত মাহবুবুরের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।

এদিকে মাহবুবুরের হত্যার খবর পেয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাসহ বিএনপি, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায়। উপজেলার মোড়াপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ জানান, আমার বাবা রাতে এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় একটি করে তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামালপুর শহরের দাপুনিয়ার ধানক্ষেতে কচুরিপানার ভেতর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জামালপুর সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গতকাল রোজা মনি (৬) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ির পেছনে একটি পাটক্ষেত থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রোজা মনি সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের চরমারিয়া গ্রামের মোহাম্মদ সুমন মিয়ার মেয়ে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান,  গত বৃহস্পতিবার রাতে নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের ইজি বাইকচালকের ঝুলন্ত লাশ গতকাল শুক্রবার সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়ার একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল ইসলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার  মোল্লাতেঘরিয়ার আদর্শপাড়ার মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ