<p>ঘটনাটা প্রায় ছয় বছর আগের। বাড়ির সামনে নলকূপ বসানোর কাজ শুরু করেন আব্দুর রশিদ হাওলাদার। কাজ অনেকটা এগিয়েছে। হঠাৎ তিনটি পাইপ সজোরে উঠে আসে, একই সঙ্গে প্রচণ্ড বায়ুর চাপ নিচ থেকে ওপরে উঠতে থাকে। এ অবস্থায় একটি তালগাছ কেটে পাইপের ওই গর্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিকল্প একটি পাইপও বসানো হয়; সেটি এখনো রান্নার জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করে চলেছে।</p> <p>রশিদ হাওলাদারের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের ঘুটাবাছা গ্রামে।</p> <p> তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাটি এলাকায় আলোড়ন তুললেও একসময় তা মানুষের গা-সওয়া হয়ে যায়। বিনা পয়সায় রান্নার কাজ চলে যাচ্ছে দেখে রশিদের পরিবারও এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি। তবে রশিদ হাওলাদারের দাবি, তিনি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি ওই কূপ থেকে গ্যাস পাইপের মাধ্যমে রান্নাঘর পর্যন্ত আনতে চেয়েছিলেন। তবে বিষয়টি দেখে তিনি অনুমতি দেননি।</p> <p>গত শুক্রবার একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নলকূপ বসানোর সময় ভূগর্ভ থেকে গ্যাস উঠতে শুরু করে। এতে করে রশিদ হাওলাদারের বাড়িতে ঘটা ঘটনাটি নতুন করে সামনে এসেছে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল রুহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে। তারা গ্যাসের উদগিরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নমুনাও সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে তারা।</p> <p>এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে একই বিদ্যালয়ের আরেকটি গর্ত থেকে গ্যাস উদগিরণ হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে সেখানে নলকূপ বসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।</p> <p>আব্দুর রশির হালওলাদার বলেন, গ্যাস রেব হওয়ার পথে কোনো কিছু দিয়ে চাপা দিলে ডোবা, পুকুর থেকে উদগিরণ হয়। এক দিনের বেশি সময় আটকে রাখলে ভূমিকম্পের মতো ঝাঁকুনি লাগে। এ কারণে কখনো গ্যাসের উদগিরণের পথ আটকানো হয় না বলে জানান তিনি।</p> <p>লবণাক্ততা আর মাটির নিচের পাথুরে স্তরই এই এলাকায় মিষ্টি পানির সংকটের প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ভূগর্ভস্থ পাথরের পুরু স্তরের কারণে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটির কোথাও গভীর নলকূপ বসানো যায় না। রুহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ বসানোর চেষ্টার সময় হঠাৎ করে বিস্ফোরণ ঘটে। এই নলকূপ বসানোর কাজটি করছিল ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এক হাজার ফিট পাইপ প্রবেশ করিয়ে সুপেয় পানির অনুসন্ধান চালাচ্ছে তারা। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে পানিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুসন্ধানী দল।</p> <p>পানিসম্পদ অধিদপ্তরের হাইড্রোজিওলজিস্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফুয়াদ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, তিন দিন ধরে তাঁরা মাটির নিচে এক হাজার ফুট পাইপ ঢুকিয়ে নিরাপদ পানির অনুসন্ধান চালান। কাজের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ গত শুক্রবার দুপুরের দিকে ভূগর্ভ গ্যাসের চাপে পাইপ বসানোর স্থানে বিস্ফোরণ হয়। গ্যাসের চাপে ৩০ থেকে ৪০ ফিট ওপরে মাটি উঠে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়ও এভাবে অত ওপরে মাটি উঠে যাচ্ছিল।</p> <p>গ্যাসের মুজদের ব্যাপারে তিনি বলেন, কী পরিমাণ গ্যাস মজুদ থাকতে পারে, সে ব্যাপারে বাপেক্স অনুসন্ধান করে জানাতে পারবে।</p> <p>পাথরঘাটার ইউএনও হোসাইন মুহাম্মাদ আলমুজাহিদ বলেন, নতুন করে গ্যাস উদগিরণের বিষয়টি স্থানীয়রা তাঁকে বলেছে। সম্প্রতি তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। দুটি ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তিনি পদক্ষেপ নিবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানাবেন।</p> <p> </p>