ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫
১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ মহররম ১৪৪৭

বরিশালে অবশেষে দুই পক্ষের সমঝোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
শেয়ার
বরিশালে অবশেষে দুই পক্ষের সমঝোতা
বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের বিষয়টি গতকাল রাতে সমঝোতা হয়। বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে জেলা প্রশাসক, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সরকারি কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এ সমঝোতা বৈঠক হয়। ছবি : কালের কণ্ঠ

বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। গতকাল রবিবার রাত সোয়া ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে এক বৈঠকে এই সমঝোতা হয়। তবে কোন শর্তে সমঝোতা হয়েছে, সে বিষয়ে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

বৈঠকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ,  বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে তাঁরা একসঙ্গে একটি ছবিও তোলেন, যা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বৈঠকে ইউএনও মুনিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না।

তবে মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, মেয়রের আহ্বানে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে।

মামলা প্রত্যাহারসহ দুই পক্ষই সমঝোতায় একমত হয়েছে।

এর আগে গতকাল বরিশালের অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মাসুম বিল্লাহর আদালতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামসহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুটি মামলার আবেদন করে সিটি করপোরেশন। আদালত অভিযোগ দুটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা দুটির মধ্যে একটির আবেদন করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার এবং অন্যটি সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন।

দুটি মামলায়ই ইউএনওকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউএনওর বাসভবনে হামলার অভিযোগে পুলিশের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ইউএনও ও পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। সেই দুই মামলায়ই বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়। একই ঘটনায় সিটি করপোরেশন ও আওয়ামী লীগের নেতারাও থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তখন ওসি তাঁদের মামলা নেননি।

গতকাল সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেয়রের সঙ্গে প্রশাসনের বিরোধ ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থেকে হয়েছে, এটা অচিরেই মিটে যাবে।

আদালত সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলাম খোকনের মামলায় ইউএনও মুনিবুর রহমান, ওসি নুরুল ইসলাম ও এসআই শাহজালাল মল্লিককে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে পাঁচ আনসার সদস্যকেও আসামি করা হলেও তাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৪০-৫০ জনকেও আসামি করা হয়। অন্যদিকে বাবুল হালদারের অভিযোগে ইউএনও মুনিবুর রহমানসহ পাঁচ আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় ইউএনও মুনিবুরের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধন করা এবং দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করার অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি আসামিদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সম্মান ক্ষুণ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করার অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে সভার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন এলাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে টানানো ব্যানার-ফেস্টুন নামিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শুরু করেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা। গত ১৮ আগস্ট রাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণকালে ইউএনওর নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা বাধা দেন। বিষয়টি মামলার এক নম্বর সাক্ষী বিসিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন সিটি মেয়র। পরে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় মেয়র নিজের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও ইউএনও উত্তেজিত হন। এমনকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়রসহ তাঁর সঙ্গে থাকা সবার ওপর গুলি করার জন্য এগিয়ে যান। এ সময় ইউএনওর হুকুমে আনসার সদস্যরা মেয়রকে খুন করার উদ্দেশ্যে তাঁকে লক্ষ্য করে শটগান দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। পরে ঘটনাস্থলে থাকা লোকজন মানবপ্রাচীর তৈরি করে মেয়রকে রক্ষা করে গাড়িতে উঠিয়ে দেন।

মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সিটি করপোরেশনের স্টাফসহ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হন। তখনো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার সদস্যদের তাদের ওপরও গুলি বর্ষণের নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ এসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গুলিবর্ষণ ও পুলিশের লাঠিচার্জে ৫০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ১০০টি মোটরসাইকেল গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে এক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে। ইউএনও দীর্ঘদিন ধরে শত্রুপক্ষের অবৈধ অর্থে প্রভাবিত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেয়রকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে গুরুতর অপরাধ করেছেন। থানায় মামলা করতে গেলে সেখানে অভিযোগ না নেওয়ায় আদালতে অভিযোগ দাখিলে বিলম্ব হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার ইউনুস বলেন, বরিশাল সদরের ইউএনও মুনিবুর রহমানকে প্রধান অভিযুক্ত করে দুটি অভিযোগ আদালতে দায়ের করা হয়েছে। সেখানে আনসার বাহিনীর সদস্যসহ অন্যরা আসামি রয়েছেন। মামলা দুটির বাদীর জবানবন্দি নিয়েছেন আদালত।

মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সিটি মেয়রসহ দলীয় নেতাকর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন। দুই কর্মী গুলিতে চোখ হারাচ্ছেন। তাঁদের আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মূলত সে কারণেই আমরা আদালতে যেতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের বিশ্বাস নেতাকর্মীরা ন্যায় বিচার পাবেন।’

মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, ‘মামলার সঙ্গে সমঝোতা সাংঘর্ষিক নয়। শোকের মাসে আমরা ওই ঘটনার ব্যাপারে রাস্তায় নামিনি। কোনো কর্মসূচি দিইনি। যদি কর্মসূচি দিতাম তবেই সমঝোতায় দূরত্ব সৃষ্টি হতো।’

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। এর একটির বাদী হন ইউএনও নিজে এবং অন্যটির বাদী এসআই শাহজালাল মল্লিক। পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার ২১ আসামির মধ্যে ১৮ জনকে গতকাল সকালে আদালতে হাজির করে তাঁদের জামিন আবেদন করা হয়। অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের জেলা কারাগারে পাঠান। একই সঙ্গে তাঁদের সুচিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১৮ আগস্ট রাতে নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে শোক দিবস উপলক্ষে টানানো রাজনৈতিক ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইউএনওর সরকারি বাসভবনেও হামলার অভিযোগ করা হয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি : অকালে ঝরা ফুল

যাঁদের হারালাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
যাঁদের হারালাম

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে স্কুলটির তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার (৯), সপ্তম শ্রেণির মাহতাব রহমান ভূঁইয়া (১৪), চতুর্থ শ্রেণির আয়মান (১০),  সপ্তম শ্রেণির আব্দুল মুসাব্বির মার্কিন (১৪), সপ্তম শ্রেণির মেহনাজ আফরিন হুমাইয়রা (১৪), তৃতীয় শ্রেণির ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি (৯), তৃতীয় শ্রেণির নুসরাত জাহান আনিকা (১০), অভিভাবক রজনী ইসলাম (৩৭) ও লামিয়া আক্তার সোনিয়া; তৃতীয় শ্রেণির সাদ সালাউদ্দিন (৮), সপ্তম শ্রেণির সামিউল করিম (১৩), সপ্তম শ্রেণির সায়ান ইউসুফ (১৪), তৃতীয় শ্রেণির সায়মা আক্তার (৯), তৃতীয় শ্রেণির রাইসা মণি (৯), অষ্টম শ্রেণির তানভীর (১৩), অষ্টম শ্রেণির মাহিয়া তাসনিম (১৪), পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর (২৭), ষষ্ঠ শ্রেণির আব্দুল্লাহ শামীম (১৩), নাদিয়া তাব্বাসুম নিঝুম (১৩) ও তার ছোট ভাই দ্বিতীয় শ্রেণির আরিয়ান আশরাফ নাফি (৯), শিক্ষক মেহরিন চৌধুরী (৪৬) ও মাসুকা বেগম (৩৭), অভিভাবক আফসানা আক্তার (২৮), তৃতীয় শ্রেণির শারিয়া আক্তার (৯), দ্বিতীয় শ্রেণির বোরহান উদ্দিন বাপ্পী (৮), শিক্ষক জোবায়ের (৩০), শিক্ষার্থী জোনায়েত (৯), শিক্ষার্থী আফনান ফাইয়াজ (১৪), শিক্ষার্থী এরিকসন (১৩), শিক্ষার্থী ওমর নূর আশিক (১১), আসিফ, মারিয়াম উম্মে আফিয়া ও উক্য মারমা।

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি : অকালে ঝরা ফুল

 

মন্তব্য

পরশুরাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

    জামায়াতের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি
ফেনী প্রতিনিধি
ফেনী প্রতিনিধি
শেয়ার
পরশুরাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

ফেনীর পরশুরামে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে তিন বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে উপজেলার গুথুমা বাঁশপদুয়া সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মিল্লাত হোসেন পৌর এলাকার বাঁশপদুয়া গ্রামের ইউছুফ মিয়ার ছেলে এবং নিহত লিটন একই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। আহত আবছারও একই গ্রামের মৃত এয়ার আহম্মদের ছেলে।

পরশুরাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ইফতেখার হোসেন জানান, গুলিবিদ্ধ মিল্লাত হোসেনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই তিনি মারা যান এবং মো. আবছারের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ লিটনকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিলোনিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু রাতেই তিনি মারা যান বলে খবর আসে।

এলাকাবাসী ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ২১৬৪/৩ এস পিলারের কাছে বিএসএফের ৪৩ ব্যাটালিয়নের আমজাদনগর ক্যাম্পের সদস্যরা বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে গুলি চালান।

বিএসএফ সূত্রে জানা যায়, তাঁরা গভীর রাতে চোরাচালানির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। খবর পেয়ে বিজিবির টহলদল স্থানীয়দের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মিল্লাত ও আবছারকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিজিবি জানতে পারে, তাঁরা রাতের বেলায় অবৈধ মালপত্র পারাপারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় বিএসএফ তাঁদের ওপর গুলি চালায়।

এ বিষয়ে ফেনী বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। কেন তাঁরা গভীর রাতে শূন্য রেখা অতিক্রম করেছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। বিজিবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনায় বিএসএফকে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে। নিহত লিটনকে আনার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএসএফের তাড়ায় একজন আহত : চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার সিংনগর সীমান্তের ওপারে বিএসএফের তাড়ার মুখে দেশে ফেরার পথে সেলিম মিয়া (২৫) নামের এক বাংলাদেশি চোরাকারবারি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিজিবি।

সেলিম একই ইউনিয়নের তারাপুর পণ্ডিতপাড়া গ্রামের আরিফুল হক ওরফে হানিফের ছেলে। তবে তিনি কিভাবে আহত হয়েছেন তা বিজিবি জানাতে পারেনি। এ ছাড়া সীমান্তে গুলির কোনো ঘটনাও ঘটেনি বলে জানিয়েছে বিজিবি।

বিজিবি জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৪টার দিকে সিংনগর বিওপির অধীন সীমান্ত পিলার ৪/৫-১ এস-এর কাছ দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে দুই-তিনজন চোরকারবারির একটি দল। এ সময় ৭১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের দৌলতপুর ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বিজিবি ঘটনাটি জানার পর সেলিমের বাড়িতে খোঁজ করে তাঁকে পায়নি। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত আহত ব্যক্তির খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি লুকিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জামায়াতের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি : দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান।

জামায়াত আমির বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায়ই বিনা কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও হত্যাকাণ্ড ক্রমাগত বাড়ছে। এসব হত্যাকাণ্ড ও ঘটনার আজ পর্যন্ত কোনো তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি। বাংলাদেশের জনগণ সব সময় প্রতিবেশীদের কাছে বন্ধুসুলভ ও সম্মানজনক আচরণ কামনা করে। আশা করি, ভারত সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে এবং বাংলাদেশি দুই যুবক মিল্লাত হোসেন ও লিটন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে আমরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সব বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

 

 

মন্তব্য
তারেক রহমানের নির্দেশ

নিহতদের বাসায় গিয়ে সহমর্মিতা ফখরুলসহ বিএনপি নেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নিহতদের বাসায় গিয়ে সহমর্মিতা ফখরুলসহ বিএনপি নেতাদের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বিকেলে ঢাকার সেনানিবাসে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের বাসাবাড়িতে গিয়ে সহমর্মিতা জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সমবেদনা ও শোক বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার দলটির নেতারা নিহতদের বাসায় যান বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিকেল ৪টায় ঢাকার সেনানিবাসে অবস্থিত শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তাঁদের সঙ্গে তিনি বেশ কিছু সময় কথা বলেন। সে সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শহীদ তৌকির ইসলামের শ্বশুর, শাশুড়ি, স্ত্রী আকসা আহম্মেদ নিঝুমসহ অন্যরা।

আর মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যান রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে নিহত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান আনিকাদের বাসায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যান তুরাগ থানার নয়ানগর এলাকায় অবস্থিত সারিয়া আকতারের বাসায়। স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন যান উত্তরার দিয়াবাড়ী গোলচত্বর এলাকায় সাদ আলাউদ্দিনদের বাসায়।

দলের যুগ্ম মহাসচিব ও মিডিয়া সেলের সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি যান শিক্ষিকা মাসুকা বেগমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানে তাঁরা এই শিক্ষিকার কবর জিয়ারত করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে শোক ও সমবেদনা জানান।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী খালেদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন যান উত্তরার কামারপাড়ার রাজাবাড়ি পুকুরপাড় এলাকায় অবস্থিত নাজিয়া নাফিদের বাসায়।

জাতীয়তাবাদী মহিলাদলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ দলের অন্য নেত্রীরা যান নীলফামারী জেলায়। সেখানে তাঁরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরীর কবর জিয়ারত করেন, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে ২০ জন শিশুর প্রাণ রক্ষা করেছেন।

নীলফামারীতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল : নীলফামারী ও জলঢাকা প্রতিনিধি জানান, উত্তরায় শিক্ষার্থীদের জন্য জীবন উৎসর্গকারী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরীর কবর জিয়ারত করতে গতকাল শুক্রবার তাঁর গ্রামের বাড়িতে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে মহিলা দলের নেত্রীরা নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়া গ্রামে পৌঁছান। তাঁরা কবর জিয়ারতের পর শিক্ষিকা মেহরিনের পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হেলেন জেরিন খান, মৃত মেহরিন চৌধুরীর স্বামী মনছুর হেলাল, নীলফামারী জেলা মহিলা দলের সভাপতি তাসমিন ফৌজিয়া ওপেল, লালমনিরহাট মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিনাত ফেরদৌস আরা রোজি, জলঢাকা উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসনি আক্তার ববি প্রমুখ।

 

 

মন্তব্য

‘কালো জামাটায় নুসরাতের গায়ের ঘ্রাণ লেগে আছে’

শিমুল মাহমুদ
শিমুল মাহমুদ
শেয়ার
‘কালো জামাটায় নুসরাতের গায়ের ঘ্রাণ লেগে আছে’

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান আনিকা। নতুন জামার প্রতি একটা টান ছিল ওর। প্রায়ই বায়না ধরত নতুন জামা কিনে দেওয়ার। ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করত আর পছন্দ ছিল পাখি পুষতে।

মা-বাবা আদরের মেয়ের কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখেননি। কিন্তু এখন সে নিজেই চির-অপূর্ণতার আঁধারে বিলীন।

গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মারা গেছে নুসরাত। উত্তরার দিয়াবাড়ীর মেট্রো রেলের ডিপোর পাশেই নুসরাতদের বাড়ি।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়িতে গেলে শোক বিহ্বল মা-বাবার সঙ্গে দেখা হয়, হয় কিছু কথা।

ড্রয়িংরুমের যে সোফায় বসে নুসরাত টিভি দেখত, সেখানে বসে আছেন বাবা আবুল হোসেন। পাশেই নুসরাতের প্রিয় সাইকেলটি। ভেতরের রুমে বিলাপ করছেন মা পারুল বেগম।

আবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনার পর নিখোঁজ মেয়ের মরদেহ পাই পাঁচ ঘণ্টা পর, সিএমএইচে। গিয়ে দেখি, মুখে শুধু কালো দাগ। চুলের বেণি, স্কুলের আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম কোনো কিছুই পোড়েনি।

আবুল হোসেন বলেন, ঘটনা ঘটে ২১ জুলাই। এর দুই দিন আগে নতুন জামা কিনে দিতে আবদার করেছিল।

আমি জামা কিনে দিলাম, এক দিন পরে আর পরতে পারেনি!

প্রতিদিনের মতো সেদিনও বাবার হাত ধরে স্কুলে যায় নুসরাত। দুপুরে টিফিন নিয়ে যান মা পারুল বেগম। তিনি বলেন, মৃত্যুর ১০ মিনিট আগেও আমার সঙ্গে কথা হয়। ক্লাস থেকে বের হয় মন খারাপ নিয়ে। জিজ্ঞাসা করলাম, কিছু হয়েছে? কিছু বলেনি। তখন  দুপুর ১টা। আমি ঠাণ্ডা একটা কোক, রোল আর একটা কেক টিফিন নিয়ে যাই। বললাম, টিফিন খেয়ে নিয়ো। কোচিং শেষে আমি না হয় তোমার বাবা এসে নিয়ে যাব।এর কিছুক্ষণ পর বিমান বিধ্বস্ত হলো।

তিনি বলেন, ঘটনার খবর শুনে স্কুলে গিয়ে দেখি, শ্রেণিকক্ষে স্কুলের ব্যাগ, টিফিন বক্স পড়ে আছে। মেয়ে আমার টিফিনটুকুও খেতে পারল না।

নুসরাতের ঘরে ঢুকতেই চোখ যায় দেয়ালে তার ছবিটির দিকে। দরজায় ফুল, লতাপাতা, মাঝে আরবিতে আল্লাহ লেখা হাতে আঁকা ছবি। বিছানার পাশে পড়ার টেবিল রাখা, ড্রয়িং খাতা, বাংলা ও ইংরেজি বই। এর পাশে ওয়ার্ডরোব।

নুসরাতের মা ওয়ার্ডরোব খুলে কালো রঙের জামা বের করে দেখান। মেয়ের জামা বুকে জড়িয়ে চুমু খেতে খেতে বলেন, এই জামাটায় মেয়ের গায়ের ঘ্রাণ পাই। স্কুলে যাওয়ার আগে মেয়েটার এ জামা পরা ছিল। কিছুদিন পর পর আবদার করত নতুন জামা কিনে দিতে। কত জামা যে কিনে দিয়েছি, এর মধ্যে এই জামাটা বেশি পরত।

তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল নুসরাত। মেজো বোন সুমাইয়া আক্তার রাত্রিও থাকত একসঙ্গে। সেও একই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে।

সুমাইয়া কালের কণ্ঠকে বলে, নুসরাত যেদিন মারা যায়, সেদিন আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়নি। আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই ও স্কুলে চলে যায়। দুজনের মধ্যে প্রায়ই খুনসুটি লেগে থাকত। এখনো আমার মনে হয় না যে ও নেই।

সুমাইয়া বলেন, গত দুই দিন আমি ওর বিছানায় যাইনি। যখনই ঘুমাতে যাই, আমার মনে হয়, নুসরাত আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ