গাবতলী, সায়েদাবাদ আর আব্দুল্লাহপুর—এই তিন প্রবেশমুখ দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কোনো বাস। ঢাকার বড় তিনটি আন্ত জেলা বাস টার্মিনাল থেকেও ছাড়েনি কোনো দূরযাত্রার গণপরিবহন। বন্ধ ছিল লঞ্চ চলাচলও। সাত জেলায় লকডাউন শুরুর দিনে গণপরিবহনেই দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি।
সাত জেলায় লকডাউনের প্রথম দিন
গণপরিবহনেই যত কড়াকড়ি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল লকডাউনের প্রথম দিন সাত জেলায় সরাসরি ট্রেন চলেনি এবং আন্ত নগর ট্রেনগুলোও ওই সব জেলায় বিরতি দেয়নি। তবে গতকাল রাত থেকেই ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) সরদার শাহাদাত আলী গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বুধবার রাত ১২টার পর থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বিধি-নিষেধের সাত জেলায়ও রেল চলাচল করবে না। তবে যেসব জেলায় বিধি-নিষেধ নেই, সেখান থেকে অন্য জেলায় রেল চলাচল করতে পারবে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই ছিল বিরামহীন বৃষ্টি। এর সঙ্গে রাজধানীতে গণপরিবহন ঢুকতে না দেওয়ায় অফিসগামী যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে। কারণ সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের মানুষ রাজধানীর বিভিন্ন অফিসে চাকরি ও ব্যবসা করেন। তাঁরা বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে রাজধানীর কর্মস্থলে ঢুকেছেন। কেউ কেউ কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন বাহনে এসেছেন।
রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলী দিয়ে গতকাল কোনো গণপরিবহন ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হয়নি। আমিনবাজার ব্রিজের সামনে দিয়েই এসব গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক মানুষকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। আবার কাউকে কাউকে আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়ে রিকশা-ভ্যানে যেতে দেখা যায়। সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও ছিল জনস্রোত। ঢাকায় ঢোকার লেনে ছিল বিভিন্ন গাড়ির জট।
আব্দুল্লাহপুরে দেখা যায়, গন্তব্যে পৌঁছার জন্য কয়েক শ যাত্রী জড়ো হয়ে যানবাহন খুঁজছে, তবে পুলিশের কড়া প্রহরা থাকায় আগের মতো ট্রাক বা পিকআপ ভ্যানে কেউ যাতায়াত করতে পারছে না।
ময়মনসিংহের মামুন মোল্লা মেয়ের চিকিৎসার জন্য পরিবার নিয়ে চার দিন আগে ঢাকা এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কথা আমি জানি না, জানতে পারলে রাতে চলে যেতাম, এখন তো মহাবিপদ।’ গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় ফেরা মনিরুল হক বলেন, ‘আমাদের বাস ভোরে এসে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড়ে পৌঁছলে পুলিশ আটকে দেয়। আমি বাস থেকে নেমে ৩০০ টাকায় একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করে এসেছি।’
গাজীপুরের শ্রীপুরে পোশাক কারখানায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য আব্দুল্লাহপুরে মোটরসাইকেল খুঁজছিলেন শফিকুল আলম। ৮০০ টাকা ভাড়া চাইলে তিনি রেগে বলেন, ‘এমন লকডাউনের কি কোনো মানে আছে? এক দিন অফিসে যেতেই আমার সারা মাসের যাতায়াত খরচ চলে যাবে।’
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সৌখিন, শ্যামলী বাংলা, আলম এশিয়া, নেত্র পরিবহনসহ আরো বেশ কয়েকটি পরিবহন কাউন্টারে যাত্রীর ভিড়। কেউ এসেছে অগ্রিম টিকিটের টাকা ফেরত নিতে, কেউ এসেছে নিজ গন্তব্যে যেতে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত যাত্রী অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীরা জানায়, তারা জানত না লকডাউনের বিষয়টি। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য অনেককে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল খুঁজতে দেখা যায় ।
নোয়াখালী থেকে ইয়াসমিন আক্তার তাঁর মেয়ের বাড়িতে এসেছিলেন দুই দিন আগে। তিনি বলেন, ‘আমি যে এখন কী করুম বুঝতে পারছি না।’ জালাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখার জন্য সিলেট থেকে এসেছিলেন। এখন আর ফিরতে পারছেন না।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘আমরা মালিক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছি দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখার। সরকার লকডাউন ঘোষণা করলে আমাদের তো বিকল্প কিছু থাকে না। দেশের স্বার্থে বহু শ্রমিক আবার বেকার হয়ে পড়বে, দুর্দশায় পড়বে মালিকরা।’
গতকাল সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বা আসেনি। ঢাকা নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডাব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক গুলজার হোসেন বলেন, ‘সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। লঞ্চ টার্মিনালের প্রবেশপথও বন্ধ রাখা হয়েছে।’
গাজীপুরে গতকাল ছিল ঢিলেঢালা লকডাউন। যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেন ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে অন্যান্য যানবাহন চলেছে আগের মতোই। বেশির ভাগ সরকারি অফিসে কাজ চলতে দেখা গেছে। দু-একটি ছাড়া প্রায় সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট, বাজারের দোকানপাট খোলা ছিল। নগরীতে তেমন তৎপরতা দেখা না গেলেও জেলার সীমান্তে কড়াকড়ি অবস্থানে ছিল পুলিশ। সকালে গাজীপুর চৌরাস্তায় দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাস ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। যাত্রীদের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজি বাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদিতে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। চালু ছিল শ্রমিকবাহী গার্মেন্ট, শিল্প-কারখানার নিজস্ব পরিবহন। শহরের শিল্প অধ্যুষিত বাংলাবাজার, বাঘের বাজার, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, ভোগড়া, বোর্ডবাজার, পুবাইল, টঙ্গীতেও দেখা গেছে একই ছবি। বড় শপিং মল বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল ছোটগুলো। নগরীতে স্বাভাবিক সময়ের মতোই মানুষকে চলাচল করতে দেখা গেছে।
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে সব ধরনের বাস, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ছিল। তবে এ রুটে ফেরি চলাচল করেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঘাটে মানুষের চাপ ছিল না। পণ্যবাহী গাড়ির ঘাটে কিছুটা চাপ ছিল। হাট-বাজারগুলো ছিল খোলা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ায় ঢাকামুখী গাড়ি আটকে দেওয়ায় সেখানে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। শ্রীনগর উপজেলার মহসড়কের পাশেও বিভিন্ন স্থানে পুলিশ পাহারা ছিল। পুলিশ দূরপাল্লার কোনো গাড়ি চলতে দেয়নি। তবে জেলার বিভিন্ন স্থানে ১০টি চেকপোস্ট থাকলেও ঢাকা থেকে ভেঙে ভেঙে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানে করে লোকজন শিমুলিয়া ঘাটে এসে ফেরিতে নদী পার হয়েছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উভয় ঘাট থেকে পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে দু-তিনটি করে যাত্রীবাহী বাস পার হতে দেখা যায়। তবে লঞ্চ পারাপার বন্ধ ছিল। এ ছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যাত্রীবাহী বাস তেমন লক্ষ করা যায়নি। বিআইডাব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান বাস পারের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘দৌলতদিয়া প্রান্তে আটকে থাকা দূরপাল্লার কয়েকটি বাস পার করা হয়েছে।’
মানিকগঞ্জ শহরে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল ছিল। হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণায় বিপাকে পড়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণপরিবহনের যাত্রীরা। চাকরি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন মানিকগঞ্জসহ সারা জেলা থেকে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করে। বেশির ভাগ যাত্রী বাড়ি ফিরে গেলেও অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হ্যালো বাইক, রিকশা, মোটরসাইকেলে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় পৌঁছার চেষ্টা করে।
গোপালগঞ্জে নিষেধাজ্ঞা না মেনে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সড়কে চলাচলকারী থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, রিকশা-ভ্যানে যাত্রী পরিবহনে বিধি-নিষেধ আরোপ করেলেও মানা হচ্ছে না। তবে দূরপাল্লার ও লোকাল বাস চলছে না। মানুষকে সচেতন করতে এবং অপ্রয়োজনে বাইরে না আসতে জেলা শহরের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশি টহল।
রাজবাড়ী শহরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশির ভাগ দোকান বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। সড়কে গণপরিবহন চলেনি। যদিও যাত্রীদের ছোট ছোট যানবাহনে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে চলাচল করতে হয়েছে।
আরো নতুন এলাকায় লকডাউন : করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ, যশোরের কেশবপুর ও চৌগাছা, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এবং টাঙ্গাইল ও এলেঙ্গা পৌর এলাকা।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।