ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

নৌপথে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
নৌপথে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত
‘লকডাউন’ অনেকটাই শিথিল। আজ থেকে খুলছে দোকান, মার্কেট। এবার ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে গতকাল দুপুরে তোলা। ছবি : প্রদ্যুৎ কুমার সরকার

চলমান লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ রবিবার থেকে দোকানপাট ও শপিং মল খোলার সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিল সরকার। কিন্তু ঢাকার বিপণিবিতানের কর্মীরা কী করে গ্রাম থেকে কর্মস্থলে ফিরবেন বা ফেরার পথে স্বাস্থ্যবিধি কী করে নিশ্চিত করা হবে, তার কোনো নির্দেশনা আসেনি সরকারের তরফ থেকে। ফলে গতকাল শনিবার বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে স্রোত নেমেছিল ঢাকায় দোকানে কাজ করা মানুষের। তাঁদের ভাষ্য, দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত হলেও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ছোট ছোট যানে কয়েক গুণ ভাড়া যেমন গুনতে হয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাইও ছিল না।

ফেরি চলাচল সীমিত থাকায় নৌঘাটে উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয়। পরিস্থিতি এতই নাজুক হয় যে ফেরিতে যাত্রীর চাপ সামলাতে গিয়ে জরুরি যানবাহন পারাপারে হিমশিম পরিস্থিতি তৈরি হয়।

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, দোকানপাট খোলার ঘোষণায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথ দিয়ে গতকাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফিরেছেন কর্মজীবীরা। গণপরিবহন বন্ধের সঙ্গে ফেরি চলাচল সীমিত এবং লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে প্রত্যেক যাত্রীকেই গুনতে হয়েছে কয়েক গুণ ভাড়া।

বিআইডাব্লিউটিসিসহ ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, ইজি বাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনে বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঘাটে আসছেন যাত্রীরা। ইজি বাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেলে বরিশাল থেকে ৫০০ থেকে ৬০০, গোপালগঞ্জ থেকে ৫০০, খুলনা থেকে এক হাজার ৭০০, মাদারীপুর থেকে ২০০, বাগেরহাট থেকে ৬৫০ টাকাসহ প্রতিটি যানবাহনেই কয়েক গুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

গতকাল সকাল থেকেই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভিড় আরো বাড়ে।

মাত্র চার-পাঁচটি ছোট ফেরি চলায় সংকট প্রকট রূপ নেয়। এ রুটের ৮৭টি লঞ্চ, বেশির ভাগ ফেরি বন্ধ থাকায় চলাচলকারী চার-পাঁচটি ফেরিতে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়। গায়ে গায়ে শুধু ধাক্কাই নয়, একজন পারলে অন্যজনের ওপর উঠে পদ্মা নদী পাড়ি দেয়—এমন অসহনীয় দৃশ্য দেখা দেয়। প্রখর রোদে যাত্রীরা হেঁটে ঘাটে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ঘাট এলাকায় পুলিশ, নৌ পুলিশ ও বিআইডাব্লিউটিসিকে হিমশিম খেতে দেখা যায়।
কোথাও দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষণ।

বরিশাল থেকে ঢাকাগামী সুরুজ মিয়া বলেন, ‘এলিফ্যান্ট রোডে গার্মেন্টের দোকানে চাকরি করি। দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর মালিক ফোন দিয়ে আজই যেতে বলেছেন। বরিশাল থেকে মোটরসাইকেলে তিনজন আনল, একেকজনের ভাড়া ৬০০ টাকা। কোথায় থাকল করোনা? ফেরিতেও গাদাগাদি। এর মধ্যেই যেতে হচ্ছে।’

নবাবপুরের কাপড় ব্যবসায়ী ইব্রাহিম খলিফা চরম ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘দোকানও খুললেন আবার বাস-ফেরি বন্ধ রাখলেন। লাভ কী হলো? গোপালগঞ্জ থেকে বিভিন্নভাবে ৮০০ টাকায় ঘাটে এলাম। এখন দেখি ফেরি ছাড়ছে না। আজব সিদ্ধান্ত।’

বিআইডাব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাট ম্যানেজার মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী দিনের বেলা সীমিত আকারে চার-পাঁচটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও জরুরি যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। রাতের বেলা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্যবাহী ও পচনশীল দ্রব্যের ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে।’

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, গতকাল শনিবার গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার বহু মানুষ মাহেন্দ্র, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাসে করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসছেন। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় নৌপথ পাড়ি দিতে তাঁরা ফেরিতে গিয়ে উঠছেন। আবার অনেকে ফেরির অপেক্ষায় না থেকে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চেপে নদী পাড়ি দিচ্ছেন।

ঢাকামুখী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল যাঁরা রাজধানীতে ফিরেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ফুটপাতের দোকানি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী। মাগুরার শ্রীপুর থেকে আসা ফয়সাল মাহমুদ নামে এক যুবক জানান, ঢাকায় গাউছিয়া সুপার মার্কেটে প্রসাধনীর (কসমেটিকস) একটি দোকানে তিনি সেলসম্যানের চাকরি করেন। লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে তিনি ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। পরে দোকান মালিকের ফোন পেয়ে গতকাল ভোরে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. ফিরোজ শেখ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উভয় ঘাটে যাত্রীবাহী বাসের জন্য নির্ধারিত টিকিট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স, লাশবাহী গাড়িসহ পণ্যবোঝাই ট্রাক পারাপার স্বাভাবিক রাখতে সীমিত আকারে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রী ফেরি পারাপার হচ্ছেন।’

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ গতকাল ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে এসে রাজধানীর উদ্দেশে পাড়ি জমান। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রাইভেট কার, সিএনজি, মোটরসাইকেলে করে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে তাঁরা গন্তব্যে যান। অনেককে রিকশা ও ভ্যানে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে দেখা গেছে।

বিআইডাব্লিউসিটি পাটুরিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. আবদুস সালাম জানান, কঠোর লকডাউনের শুরু থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স ও জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে। তবে রবিবার থেকে শপিং মল ও দোকানপাট খোলার খবরে লোকজন ঢাকা ফিরছে। এ কারণে যানবাহনের পাশাপাশি শত শত লোক হুমড়ি খেয়ে ফেরিতে উঠছে। এই নৌ রুটে আপাতত ছোট তিনটি ফেরি চলাচল করছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।

এ সময় সেখানে আরো অন্তত চারজনকে তাদের পরিবারের সদস্যদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলতে শোনা যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

বেশির ভাগ রোগীর শরীরে কাঁপুনি, গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, হাত-পায়ের গিরায় ব্যথা, ঠাণ্ডা, সর্দি ও নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।

উপসর্গে মিল থাকায় অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না যে আসলে কোনটিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। জ্বর, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে ডেঙ্গু ও কভিড পরীক্ষাও করাতে হবে। সময়মতো রোগ নির্ণয় হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র‌্যাশএসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।

 

জ্বর কেন হয়?

চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়াএসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।

ডা. লেলিন আরো বলেন, এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র‌্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মন্তব্য

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।

সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।

২০ থেকে ২৫ জন জুলাই যোদ্ধা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হামলাকারীদের অভিযোগ, দ্বিতীয় ধাপের টাকা দেওয়ার কথা বলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজনকে তিন-চারবার ঘোরানো হয়েছে। টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়েছিল গতকাল। 

তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।

ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।

ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।

গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?

সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।

জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।

তাঁদের রাগের একটা প্রেক্ষাপট আছে। তাঁদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তাঁরা ভেঙেছেন, তাঁরা উত্তেজিত, অবসাদগ্রস্ত। তাঁরা ভবিষ্যতে কী করবেন, সেটি নিয়ে হতাশার মধ্যে আছেন। সে কারণে তাঁরা হয়তো ভাঙচুর করেছেন।

এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য
প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।

এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

এ ছাড়া গত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক গ্রহণযোগ্য বলে সাফাই গেয়েছিলেন, সেসব পক্ষপাতদুষ্ট পর্যবেক্ষককে এবার অনুমোদন দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহারও রোধ করতে চায়।

নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।

কারণ কানাডার গত বছরের নির্বাচনেও তাদের এটা মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তাদের পরামর্শ চেয়েছি। এ বিষয়ে আমরাও বেশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আশা করি, বিভিন্ন দেশের মতো কানাডার পূর্ণ সহায়তা পাব।
আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কনফিডেন্ট।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।

সিইসি বলেন, কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।

নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি নাসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি নো। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।

পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।

বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।

সিইসি বলেন, ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়নএসবসহ।

গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেনভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়। আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মন্তব্য
মিডিয়াকে হুমকি

ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।

মিডিয়াকে হুমকি দেওয়া সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে সহায়ক নয়।

বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ