ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

আত্মীয়দের নিয়োগে বেপরোয়া ভিসিরা

শরীফুল আলম সুমন
শরীফুল আলম সুমন
শেয়ার
আত্মীয়দের নিয়োগে বেপরোয়া ভিসিরা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে আত্মীয়দের নিয়োগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বেশ কয়েকজন উপাচার্য (ভিসি)। তাঁরা তাঁদের পুত্র, কন্যা বা আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দিতে কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। ইচ্ছামতো নিয়োগ বিধিমালায় সংশোধন আনছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল ও অভিজ্ঞতায় পরিবর্তন আনছেন।

আবার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া শেষে বিধিমালা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ভিসিদের এসব অনিয়ম প্রমাণ হওয়ার পরও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে অনুসরণীয়। আর সেখানে যাঁরা ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান, তাঁরা সম্মাননীয় ও আদর্শ ব্যক্তি।

কিন্তু তাঁদের অনেকেই ক্ষমতা পেয়ে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে একাধিক ভিসির ব্যাপারে অনিয়ম প্রমাণের পর সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ফাইলবন্দি হয়েই পড়ে আছে। দেশের ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬টির শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এর মধ্যে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ১০ জন উপাচার্যের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত চলছে। সম্প্রতি তিনজন ভিসির ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এসব ভিসির বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই সাময়িক সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে কম যোগ্যতাসম্পন্ন পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগের পর আবার আগের জায়গায় বিধিমালা ফিরিয়ে নেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশ কয়েকজন ভিসি নিয়োগে অনিয়ম করেছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি।

দেখা যায়, ভিসিরা তাঁর পছন্দের শিক্ষকদের দিয়ে নিয়োগ কমিটি করেন। এ ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটেও তিনিই প্রধান। ফলে তিনি ইচ্ছা করলে যেকোনো কিছুতে পরিবর্তন আনতে পারেন। ফলে আমরা তদন্ত করলেও নিয়মের ব্যত্যয় পাই না। আমার মনে হয়, ভিসিদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।’

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) : এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান তাঁর ছেলেকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে একাধিক যোগ্যতা শিথিল করেছেন। ভিসির ছেলে জাহেদ মান্নান ২০১৬ সালের শেষ দিকে বাউবিতে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করলে নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকায় আবেদন বাতিল হয়। কিন্তু এক বছর পার হওয়া মাত্রই ২০১৮ সালে তাঁর ওই ছেলেই সহযোগী অধ্যাপক পদ বাগিয়ে নেন।

সূত্র জানায়, উপাচার্যের ছেলে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ার পর ২০১৭ সালে নিয়োগবিধি সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের ছেলেকে নিয়োগ দিতে সিজিপিএ ৩.২০ থেকে কমিয়ে ২.৫০ করা হয়। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তাঁকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে উচ্চতর ডিগ্রি থাকা অতিরিক্ত যোগ্যতা বলে উল্লেখ করা হয়। এমনকি উপাচার্যের ছেলের পার্টটাইম শিক্ষকতাকে চাকরিকাল হিসেবে গণনা করে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গত ২৩ মার্চ ছিল উপাচার্যের শেষ কর্মদিবস। এর আগে গত ১৬ মার্চ তিনি তড়িঘড়ি করে পরিচালক অথবা যুগ্ম পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। সেখানে তাঁর মেয়ের জামাইয়েরও যুুগ্ম পরিচালক পদে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে তিনি বোর্ড অব গভর্নর্সের (বিওজি) সভা করে নিয়োগসহ নানা বিষয় অনুমোদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলেও বর্তমানে তিনি ক্যাম্পাসের বাসভবনে অবস্থান করছেন এবং গাড়ি ব্যবহার করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি পেছনের তারিখে এখনো একাধিক ফাইল স্বাক্ষর করছেন।

এ ছাড়া উপাচার্য তাঁর শ্যালিকা, একাধিক আত্মীয় এবং তাঁর নিজ এলাকা কুমিল্লার শতাধিক ব্যক্তিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে গত বুধবার রাতে তাঁকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা ধরেননি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা-২০১৫ শিথিল করে পরিবর্তিত নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী উপাচার্য এম আবদুস সোবহান তাঁর মেয়ে সানজানা সোবহানকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে এবং জামাতা এ টি এম শাহেদ পারভেজকে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন।

এ ব্যাপারে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের নীতিমালায় শিক্ষক নিয়োগের আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল সনাতন পদ্ধতিতে এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত চারটি স্তরেই প্রথম শ্রেণি বা গ্রেড পদ্ধতিতে এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.৫০, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৫০। এ ছাড়া স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেধাক্রম প্রথম থেকে সপ্তমের মধ্যে থাকতে হবে। পরিবর্তিত নীতিমালায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.২৫-এ নামিয়ে আনা হয় এবং মেধাক্রমে থাকার শর্ত তুলে দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনেই বলা হয়, যোগ্যতা কমানোর একটাই উদ্দেশ্য—২০১৭ সালের আগে যাঁদের আবেদন করার যোগ্যতা ছিল না, তাঁদের নিয়োগের পথ উন্মুক্ত করা।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শহীদুর রহমান খান তাঁর নিজের ছেলেকে অ্যাডহক ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা কর্মকর্তা বা সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষক হিসেবে। অধ্যাপক পদে তাঁর স্ত্রীও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেতে আবেদন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেটের পাঁচজন সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছেন। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে ইউজিসি।

পাঁচ সিন্ডিকেট সদস্যের দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নিয়োগপ্রক্রিয়া অনুসরণ না করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যেখানে উপাচার্যের ছেলে মো. শফিউর রহমান খানও রয়েছেন। উপাচার্যের মেয়ে ইসরাত খানকে সম্প্রতি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন উপাচার্য নিজেই। তাঁর মেয়ে ইসরাত খানকে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় যে দুজন শিক্ষককে বাছাই কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রাখা হয়, তাঁদের একজন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ। অন্যজন উপাচার্যের মেয়ের স্নাতকোত্তরে সুপারভাইজার ছিলেন।

উপাচার্যের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। তিনি একটি উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক পদে প্রার্থী হয়েছেন। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৯ ডিসেম্বর এই বিভাগসহ বিভিন্ন নিয়োগ কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে। এ ব্যাপারে জানতে গত বুধবার রাতে উপাচার্যকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) : যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি গত ১৪ মার্চ ইউজিসিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, উপাচার্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অমান্য করে পিএইচডি ডিগ্রিবিহীন ৩৫ বছরের অধিক বয়সী ফিরোজ কবিরকে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এরপর ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ খুলে এই বিভাগের চেয়ারম্যান পদে ফিরোজ কবিরকে নিয়োগ দিয়েছেন। ফিরোজ কবিরের স্ত্রীকেও এই বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁর বয়সও ৩০ বছরের ওপরে। এ ছাড়া মেডিক্যাল অফিসার ও সহকারী স্টোরকিপার পদে অস্বচ্ছভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। উপাচার্য নিজের অনুগত শিক্ষকদের দিয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেন।

উপাচার্য আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফিরোজ কবিরকে যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগে ৩০ বছরের নিচে কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। ফলে রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে অন্য যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) : বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়মের ব্যাপারে এখনো তদন্ত করছে ইউজিসি। ২০১৭ সালে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও ২০১৮ সালে বিজ্ঞাপনের চেয়ে ২৬ জন বেশি অর্থাৎ মোট ১০১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, কৃষিতত্ত্ব বিভাগে নিয়োগ বোর্ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপাচার্যের জামাতা এবং বিভাগের অধ্যাপক ড. মির্জা হাসানুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য তাঁর আপন ভাগ্নে মো. মাহবুব আলমকে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ প্রদানের জন্যই জামাতাকে বিশেষজ্ঞের পদে বসান। অ্যাগ্রিবিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অনুষদের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. আনোয়ারুল হক বেগের মেয়ে তাহরিমা হক বেগকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাহরিমা হক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন বলে জানা যায়।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) : ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি বিভাগে সাতটি প্রভাষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিকৃবি। এরপর ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ১৫টি বিভাগে ১৫টি প্রভাষক পদ, চারটি বিভাগে চারটি প্রফেসর পদ ও একটি বিভাগে একটি সহযোগী প্রফেসর পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

দুই বিজ্ঞপ্তিতে ২২টি পদে নিয়োগের কথা থাকলেও ২৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিকৃবি কর্তৃপক্ষ অ্যানাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগে একজনের জায়গায় দুইজন, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে একজনের জায়গায় তিনজন, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মাত্স্য বিজ্ঞান বিভাগে একজনের জায়গায় দুইজন, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগে একজনের জায়গায় তিনজন, অ্যাগ্রিকালচারাল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দুইজনের জায়গায় তিনজন, কৃষি বিপণন ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগে একজনের জায়গায় দুইজন, অ্যাকোয়াকালচার বিভাগে একজনের জায়গায় দুইজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ শিক্ষক পদে একাধিক গোল্ড মেডেলিস্ট ও মেধাবী শিক্ষার্থী থাকলেও তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ : এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিন নিয়োগে নানা অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি থাকার পরও নানা কৌশলে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতায় তৃতীয় বিভাগ বা জিপিএ ২.৫০-এর নিচে গ্রহণযোগ্য নয়। এ জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অধিকতর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দার কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন, যার মধ্যে বিকমে (সম্মান) তৃতীয় শ্রেণি পেয়েছিলেন। অথচ তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মেকাইল ইসলামের শিক্ষাজীবনেও তৃতীয় শ্রেণি (এইচএসসি) রয়েছে। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। উপরেজিস্ট্রার খান মোহাম্মদ আলী এসএসসি ও স্নাতকে তৃতীয় শ্রেণি পেয়ে পাস করেছেন। এ ছাড়া উপাচার্যের একাধিক আত্মীয়-স্বজনকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে  জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বহুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা। প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তবে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি নেমেছিল ৮.৯১ শতাংশে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০৫ শতাংশ, জুনে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

মূল্যস্ফীতির এই পতন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা বয়ে আনলেও বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, সবজি, মাছসহ খাদ্যপণ্যের দামে আগুন। তাই পরিসংখ্যানগত স্বস্তি বাস্তব জীবনে এখনো প্রতিফলিত হয়নি।

 

খাদ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে

বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে নেমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮.৫৯ শতাংশ।

একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।

তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকার খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা/কেজিতে পৌঁছেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল ব্রি২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে, যা আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মাছের দামেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার ঘোষণা ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি দিতে পারেনি।

 

আয় বেড়েছে কম, ব্যয় বেড়েছে বেশি

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের অদৃশ্য কর-এর মতো। বিশেষ করে মজুরিনির্ভর মানুষের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুনে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ শতাংশে, কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে।

 

প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে গতি

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।

তবে পুরো অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১ শতাংশ। এই ধীরগতির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, আর এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ৩.৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাত কিছুটা উন্নতি করলেও গতি কমেছে শিল্প খাতে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৪২ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো৫.৮৮ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪.৩১ শতাংশ। চলতি মূল্যে এই প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়ছে। তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে, ফলে মানুষের বাস্তব আয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে।

মন্তব্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক উপাদান (প্রাইমা ফেসিয়া) পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্র নিযু্ক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলার অভিযোগ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি এবং অভিযোগ থেকে তাঁর অব্যাহতিও চাওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আমির হোসেন ওই আরজি তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করার আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন।

ওই দিন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মামলার অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন : দাবি আইনজীবীর

অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমির হোসেন প্রসিকিউশনের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলেননি।

আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর সঠিক কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণদাফন, লাশ গুম করে ফেলার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন বলেছিল, জুলাই গণ-আন্দোলন চলার সময় বিটিভি ভবন, মেট্রো রেলসহ কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মেট্রো রেলসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এইসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধ প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের গণভবনে এনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছেএমন নজিরও নেই।

জুলাই গণ-আন্দোলনে আসামিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, গণ-আন্দোলনের সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। পরে তিনি অভিযোগ থেকে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৪ আগস্ট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত চারটি মামলার বিচারকাজ চলতি বছর শেষ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। চারটি মামলার অভিযোগই আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচারে সময় নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

চার মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তিনিসহ এই চার মামলায় মোট আসামি ৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে পলাতক ৪১ জন। গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।

এ ব্যাপারে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চারটি মামলা আনুষ্ঠনিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার হবে। অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিলে মামলা ওইখানেই শেষ।

আর যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষকে প্রস্তুতির জন্য ২১ দিন সময় দিতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে আমাদের আরজি থাকবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার জন্য। যদি ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি বিধান তুলে ধরে এই প্রসিকিউটর বলেন, আইনে আছে, অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে তা চলবে বিরতিহীনভাবে। কোনো পক্ষ মুলতবির আবেদন করতে পারবে না।

সব মিলিয়ে আশা করছি, চলতি বছরই চারটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দিতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে তা আমলে নিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগ আমলে নেওয়া হলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে চার মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় পরিকল্পিতভাবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে একটি মামলায়। মামলাটি ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্য দুজন পলাতক। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঘটনা ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি তিনটি মামলাও বেশ আলোচিত।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১০ জুলাই এ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন। বাকি ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে বলা হচ্ছে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলা। সরকার পতনের আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় তরুণ। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়া। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটিই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। গত ৩ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আগামী ১৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা রয়েছে। মামলার আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে চারজনকে।

আশুলিয়ায় মৃতপ্রায় একজন ও পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর মামলাটি লাশ পোড়ানোর মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেদিনই তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হতাশা

মামলার তদন্তকাজ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও বিচার নিয়ে আশাবাদী শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই বিচারটা দেখতে পাব এবং ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু তদন্তেই দীর্ঘ সময় লাগল। তার পরও বলতে চাই, যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাউকে যেন এ মামলায় যুক্ত না করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভীর। পরে ১৯ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অভিযোগটি কী পর্যায়ে আছে, জানি না। গত সপ্তাহেও আমি প্রসিকিউশনে গিয়েছিলাম। গেলে শুধু একটা কথাই বলে, কাজ করছি, বিচার হবে। কিন্তু আদৌ বিচার হবে কি নাজানি না। আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা হতাশায় ভুগছি।

মামলার বাদী এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার দাবি জানান আবুল হাসান। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ২৭টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

আগামী ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই দিন বা এর আগে-পরে যেদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সম্মতি দেওয়া হবে, সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। সেই হিসাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফল প্রকাশের সময় রয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ