<p>করোনা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে আজ রবিবার থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। প্রতিটি ট্রেনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়া হবে, তবে ভাড়া আগের মতোই থাকবে। আর টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে। কিন্তু তার আগেই গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর ও রাজশাহী রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে আসেন অনেকেই। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে লোকজন।</p> <p>গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন তথ্য জানান রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বন্ধ থাকা ট্রেন পুনরায় চালুর বিষয়ে রাজধানীর রেল ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।</p> <p>রেলমন্ত্রী জানান, প্রথম দফায় আজ থেকে আট জোড়া আন্ত নগর ট্রেন চলবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকার বিমানবন্দর, জয়দেবপুর বা নরসিংদীর মতো রেলস্টেশনে এসব ট্রেনের যাত্রা বিরতি দেওয়া হবে না। খাবার সরবরাহও করা হবে না ট্রেনে। ট্রেনের এক আসন থেকে অন্য আসনে গিয়ে যাত্রীরা বসতে পারবে না।</p> <p>এ ছাড়া যাত্রার তারিখসহ পাঁচ দিন আগে অনলাইনে টিকিট কাটতে হবে। রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে টিকিট ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানসহ রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>রেলমন্ত্রী বলেন, সাধারণ ছুুটি প্রত্যাহারের পর সরকার যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছে। সেই ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আট জোড়া আন্ত নগর ট্রেন রবিবার থেকে চলাচল করবে। তিনি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ঢাক-সিলেট রুটে কালনী এক্সপ্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস চলাচল করবে। এ ছাড়াও ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বনলতা এক্সপ্রেস, ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে লালমনি এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, ঢাকা-খুলনা রুটে চিত্রা এক্সপ্রেস চলাচল করবে। পরবর্তী ধাপে ৩ জুন থেকে ১১ জোড়া ট্রেন পরিচালনা করা হবে বলে জানান রেলমন্ত্রী।</p> <p>কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে গিয়ে যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে সে জন্য কয়েক দিন আগেই তিন ফুট ব্যবধানে বর্গাকার লাল চিহ্ন দেওয়া হয়। কিন্তু কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া হবে না—এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। রেলের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে টিকিট বিক্রির বিষয়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দেখা যায়নি। গতকাল সকাল ৯টা থেকেই টিকিটপ্রার্থীরা ভিড় করতে থাকেন কমলাপুর রেলস্টেশনের ছয়টি কাউন্টারের সামনে। পরে দুপুর দেড়টার দিকে টিকিট অনলাইনে দেওয়া হবে—এমন ঘোষণা দেওয়ার পর টিকিটপ্রার্থীরা কাউন্টার ছেড়ে যান।</p> <p>এ ব্যাপারে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমিনুল হক জুয়েল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাকালের পরিবর্তিত অবস্থার কারণে কাউন্টারে নয় অনলাইনে টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আগে কাউন্টারে বিক্রি হতে পারে ধরে নিয়ে অনেক টিকিটপ্রার্থী ভিড় করেন। আমরা দুপুর থেকে সবাইকে অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট কিনতে বলেছি।’</p> <p>বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে,  যাত্রার জন্য নির্ধারিত ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে। সব ট্রেনের টিকিট অনলাইনে সংগ্রহ করতে হবে। কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হবে না। যাত্রী সাধারণকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় স্টেশন এলাকায় বা ট্রেনে প্রবেশ করতে হবে। ট্রেনে আরোহণ ও অবতরণের জন্য নির্দিষ্ট দরজা ব্যবহার করতে হবে। যাত্রীদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় সঙ্গে নিতে হবে। তাপমাত্রা পরিমাপের সুবিধার্থে যাত্রীদের ট্রেন ছাড়ার কমপক্ষে ৬০ মিনিট আগে রেলস্টেশনে পৌঁছাতে হবে। দর্শনার্থী  ও প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকবে।</p> <p>আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, ট্রেনের টিকিটের জন্য গতকাল সকালে কিছু যাত্রী রাজশাহী রেলস্টেশনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ায়। তবে তাদের টিকিট দেওয়া হয়নি। দুপুর ১টার দিকে ঢাকা রেলভবন থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় অনলাইনে টিকিট বিক্রি হবে।</p> <p>টিকিট কিনতে এসে লুত্ফা খাতুন নামের এক নারী জানান, সকাল থেকেই তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুর ১টার দিকে স্টেশন থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা হবে। এই সিদ্ধান্তটি আগেই নিতে পারত রেল।</p> <p>নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চট্টগ্রাম-ঢাকা বিরতিহীন সোনার বাংলা ও সুবর্ণ ট্রেন এবং চট্টগ্রাম-সিলেট আন্ত নগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট গতকাল বিকেল থেকে অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। এ তিনটি ট্রেনে দুই হাজার ৮০টি আসন রয়েছে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০টি টিকিট।</p> <p>পূর্ব রেলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক (ডিসিও) আনসার আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, একটি বাদ দিয়ে আরেকটি (যেমন-১, ৩, ৫...) আসনের টিকিট বিক্রি হবে। এরই মধ্যে অনলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আগামীকালের (আজ সকাল ৭টায় ছেড়ে যাবে) সুবর্ণ এক্সপ্রেসের প্রায় ৫০ শতাংশ টিকিট শেষ। জানা গেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে যাবে সুবর্ণ এক্সপ্রেস, উদয়ন রাত পৌনে ১০টায় এবং সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ছাড়বে বিকেল ৫টায়।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/05.May/31-05-2020/121/fgt.jpg" style="height:610px; margin:12px; width:800px" /></p>