আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মুক্তির ছিল, নাকি স্বাধীনতার? উভয়েরই। ৭ই মার্চের সেই বিখ্যাত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান দুইয়ের কথাই বলেছিলেন; ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তখন এবং যুদ্ধের পরেও এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি। কিন্তু পার্থক্য নিশ্চয়ই ছিল।
মহান স্বাধীনতা দিবস আজ
যুদ্ধটা ছিল অনিবার্যভাবেই মুক্তির
- সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
অন্যান্য

সেই সঙ্গে যোগ করা হয়েছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থার কথা এবং বাদ দেওয়া হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা।
মুক্তির জন্য সংগ্রামটা দীর্ঘকালের। এ লড়াইয়ে নানা মানুষ এসেছে, সংগঠন এসে যোগ দিয়েছে। সবার ভূমিকা সমান নয়। নানা মাত্রার ও মাপের। কিন্তু সব স্রোত মিলেই বৃহত্ ধারাটি তৈরি। হঠাত্ করে অভ্যুত্থান ঘটেনি। ভুঁইফোড় নয়। একাত্তরে শুরু নয়, শেষও নয়। মুক্তির সংগ্রাম এখনো চলছে এবং চলবে।
শেষ যে হয়নি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো ওই সংশোধনগুলো। ওগুলোর উদ্দেশ্য স্পষ্ট। সেটা হচ্ছে—সংগ্রামের লক্ষ্যকে অস্পষ্ট করে দেওয়া। মানুষকে পেছনে ঠেলে দেওয়া। মুক্তির সংগ্রামকে চিহ্নিত করা একটি সামরিক যুদ্ধ হিসেবে। মুক্তির সার্বিক যুদ্ধে একাত্তরের মুখোমুখি লড়াই একটা অত্যন্ত বড় মাপের ঘটনা, এত বড় ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি, কিন্তু সেটা একমাত্র ঘটনা নয়। প্রথমও নয়। এ দেশের মানুষ মুক্তির জন্য সংগ্রাম অনেক কাল ধরে করে এসেছে। প্রচার করা হয়েছিল যে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা তাদের মুক্তি দেবে। কিন্তু দিল না। তাই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছরও পূর্ণ হয়নি, তার আগেই নতুন আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন। ওই দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকায় ধর্মঘট হয়েছে।
তারপর আরো এগিয়েছে মানুষ। বায়ান্নতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সর্বত্র ব্যাপ্ত আকার ধারণ করেছে। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার প্রয়োজনের বোধটা জেগে উঠেছে। সবার মধ্যে নয়, কারো কারো মধ্যে। রাষ্ট্রীয় বিচ্ছিন্নতার কথা প্রকাশ্যে সর্ব প্রথম বলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালে। তখন তাঁর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ হয়েছে; কেউ বলেছে ভাসানী কমিউনিস্ট, কেউ বলেছে তিনি ভারতের দালাল। তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত তাঁর পক্ষে জোরালোভাবে দাঁড়ায়নি।
সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে ঘোষণাপত্র দিয়েছিল তাতে স্বাধীনতার কথা থাকার কথা নয়। নেইও। সেখানে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি আছে। বলা হয়েছে, পাকিস্তান হবে একটি প্রজাতন্ত্র, যার প্রতিটি ইউনিট ছয় দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। ঘোষণাপত্রে ধর্মনিরপেক্ষতারও উল্লেখ ছিল না। বরং বলা হয়েছিল, ‘পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না।’ সমাজতন্ত্রও ছিল না। বলা হয়েছিল, অর্থনৈতিক কর্মসূচির লক্ষ্য হবে ন্যায় ও সমতাভিত্তিক একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। এসব বক্তব্য জিয়াউর রহমান আনীত সাংবিধানিক সংশোধনগুলো থেকে দূরে নয়; কাছাকাছি। বোঝা যায়, ১৯৭০ সালে এ বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। কিন্তু নির্বাচনের পর বদলে গেছে সব কিছু। যা ছিল অস্পষ্ট ইচ্ছা, তা রূপ নিয়েছে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে। যে আকাঙ্ক্ষাকে ভয়ভীতি, পীড়ন-নিপীড়ন, লোভ-আশা দিয়ে অবদমিত করে রাখা হয়েছিল, তা সবেগে বের হয়ে এসেছে। ছয় দফা পরিণত হয়েছে এক দফায়। সেই এক দফা হলো রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা এবং জাতীয় মুক্তি।
মুক্তিযুদ্ধ ছিল ওই জনগণেরই যুদ্ধ। তারাই লড়েছে। কোনো একটি রণাঙ্গনে নয়, সর্বত্র, সব রণাঙ্গনে; শুধু দেশে নয়, বিদেশেও। বলা হয়েছে, যোদ্ধাদের ৮০ শতাংশ ছিলেন কৃষক। এ কোনো অতিরঞ্জন নয়। গ্রামে-গ্রামে, প্রান্তে-প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল ওই যুদ্ধ। পাকিস্তানি শাসকদের মধ্যে কুটিল যারা, তারা আশা করেছিল সংঘর্ষ সীমাবদ্ধ থাকবে। বেছে বেছে হত্যা করা হবে। কট্টর আওয়ামীপন্থী, ছাত্র, পুলিশ, বিদ্রোহী সেনা এদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে হত্যাকাণ্ড। কিন্তু পারেনি, নৃশংস সৈন্যদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তারা বাছবিচার করেনি। আর জনগণও বসে থাকেনি। আক্রমণকে তারা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর ওপর আঘাত হিসেবে দেখেনি, দেখেছে তাদের নিজেদের ওপর আক্রমণ হিসেবে। সেভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অংশ নিয়েছে যুদ্ধে। ভাষা আন্দোলনের সময়ও এ রকমটাই ঘটেছিল। আন্দোলন শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে, প্রথম দিকে সীমাবদ্ধ ছিল সেখানেই। কিন্তু বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে যখন ছাত্র হত্যা ঘটল, তখন আন্দোলন ছড়িয়ে গেল সারা দেশে। ছাত্র হত্যাকে দেশবাসী নিজেদের ওপর আক্রমণ হিসেবেই দেখেছে, অন্য কোনোভাবে নয়। এর আগে পুলিশ ধর্মঘট হয়েছিল। হত্যা করা হয়েছিল বেশ কয়েকজন বাঙালি পুলিশকে, কিন্তু সেই ঘটনা বায়ান্নর ঘটনার মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে এই যে—পুলিশের সঙ্গে জনগণের বিচ্ছিন্নতা ছিল, ছাত্রদের সঙ্গে ছিল না। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বেগবান ও সফল হয়েছে জনগণের অংশগ্রহণের ফলে। অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পেয়েছিল জনগণের কারণে।
মুক্তির যুদ্ধে যারা ছিল নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগও এ কথা বলেনি যে যুদ্ধ তারা শুরু করেছে। বলেছে যুদ্ধ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ যে ঐক্যবদ্ধ ছিল, তাও নয়। সেখানে যেমন তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন, তেমনি ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। তাজউদ্দীন আপসে বিশ্বাসী ছিলেন না, খন্দকার মোশতাক সব সময়ই আপসের পথ খুঁজছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীনের আশপাশে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও সবাই যে তাঁর সঙ্গে ছিলেন; তা নয়। বিরোধ ছিল, যে জন্য মুক্তিবাহিনীর সমান্তরালে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল। খন্দকার মোশতাকরা যে শক্তিহীন ছিলেন না তা বোঝা গেছে ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ডে। এও তাত্পর্যহীন নয় যে—তার আগেই মন্ত্রিসভা থেকে তাজউদ্দীন বাদ পড়ে গেছেন, মোশতাক বাদ পড়েননি। যুদ্ধের সময় জাতীয় সরকার গঠনের দাবি উঠেছিল। সেটা গৃহীত হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। তবে ছাড় হিসেবে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছিল, কিন্তু সেই পরিষদের একটিরও বেশি বৈঠক হয়নি। জাতীয় সরকার গঠনের দাবি স্বাধীনতার পরেও তোলা হয়েছিল। গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে শত্রু কে ছিল? শত্রু ছিল তারাই যারা জাতীয় মুক্তির বিপক্ষে ছিল। অর্থাত্ আলবদর, রাজাকারসহ সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের সমর্থকরা। দক্ষিণপন্থীরা। শত্রু ছিল তারা, যারা মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে মনে করেছে এবং নতুন রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগোতে না দিয়ে পেছন দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে, বড় পাকিস্তান ভেঙে ছোট পাকিস্তান গড়বে ভেবেছে। ১৯৭৮ সালের সাংবিধানিক সংশোধনগুলো দক্ষিণপন্থীদেরই কাজ। এরশাদের সময় পুঁজিবাদের পথকে আরো প্রশস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ধর্ম প্রবর্তন পশ্চাত্গমনেচ্ছুদের আরেকটি বিজয় চিহ্ন। দুঃখজনক হলেও সত্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বর্তমান সরকারের শাসনামলে ওই সব ফরমানগুলোকে সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।
জনগণ সংগ্রাম করেছে, কিন্তু মুক্তি পায়নি। রাষ্ট্র এখন কতটা স্বাধীন তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যায়। কিন্তু জাতি যে মুক্ত নয় সেটা সন্দেহাতীত। জাতি বলতে জনগণকেই বোঝায়। সেই জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতার ধারেকাছেও নেই। দেশে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতি মানে বড়জোর ২০ জনের উন্নতি এবং ৮০ জনের অবনতি। ধনী-দরিদ্রের তারতম্য বোঝাতে আকাশ-পাতালের উপমা অগ্রাহ্য নয়। ওই দুই প্রান্তের মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের বিন্যাস। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম চলছে। সরবে নয় নীরবে। তাকে চলতেই হবে, না হলে আমাদের ভবিষ্যত্ কী, দাঁড়ানোর জায়গা কোথায়?
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পর্কিত খবর

আজ রাজপথে নামছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ‘অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আজ থেকে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে বিএনপিও শক্তি ও জনসমর্থন দেখাবে।
এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি।
মাঠে নামছে ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। গুপ্ত সংগঠন বলতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
ছাত্রদলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মসূচির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘গুপ্ত সংগঠন হিসেবে সেসব সংগঠনকেই বোঝানো হয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বদলে গোপনে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গত ৫ আগস্টের পর একটি মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের এহেন গুপ্ত কার্যক্রম এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনশীল করে তুলছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তুলছে। এ রকম কুচক্রী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেন দেশবাসীকে এসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়।’
গুপ্ত সংগঠন বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘ছত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্যাম্পাসগুলোতে মব সৃষ্টি করে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, তারাই গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রশিবির এবং গুপ্তভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে ছাত্রশিবিরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা।’

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল
বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।
মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮’-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।
প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।
গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।
অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।
তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।
সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
বরগুনা প্রতিনিধি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।