ব্যবসায়ী, আড়তদার ও মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্যের বাজার। পর্যাপ্ত উৎপাদন, আমদানি, মজুদ থাকার পরও এরই মধ্যে চাল, ভোজ্য তেলসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। আসছে রমজান মাস ঘিরে ছোলা, মটর ডালসহ আরো কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা। চীনের করোনাভাইরাসে ‘আমদানি বন্ধের’ গুজব ও অজুহাত তুলে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ানোরও অপচেষ্টা আছে।
সরকারের কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন
সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্যের বাজার
- ► আড়তদার ও মিল মালিকদের আধিপত্য চালের বাজারে
► পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজির কবলে ভোজ্য তেল
► চিনির বাজার অযৌক্তিকভাবে অস্থির করার পাঁয়তারা
► রমজানে ছোলাসহ মসলার দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা
সজীব হোম রায়

প্রতিবেদনে রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া না বাড়াতে পারেন, সে জন্য অসৎ ব্যবসায়ীদের নজরদারিতে আনা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া এবং টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকিতে পণ্য বিক্রির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, দেশে কিছু কিছু পণ্যের মজুদ চাহিদার চেয়ে বেশি। এর পরও বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়তি।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এফবিসিসিআই প্রতিবারের মতো এবারও রমজানের বাজারে যেন ভোগ্য পণ্যের দাম না বাড়ে সে জন্য মনিটর করবে। তবে আমরা এখন চীনে করোনাভাইরাস ঘটনার কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে চিন্তিত। চীনের কারখানাগুলোয় উৎপাদন শুরু না হওয়ায় সামনে স্থানীয় বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছি।’
চাল : এসবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমন মৌসুমে কৃষক মোটামুটি ন্যায্য মূল্য পেয়েছে। তবে বর্তমানে কৃষকের হাতে ধানের মজুদ খুবই কম।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর কৃষি শাখার হিসাবে, গত বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ছিল ১৯৫ দশমিক ৬১ লাখ টন। আমন মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১৪০ দশমিক ৫৫ টন এবং আউশ উৎপাদন হয়েছে ২৭.৭৫ টন। সর্বমোট উৎপাদন ৩৬৩ দশমিক ৯১ লাখ টন। অন্যদিকে মোট বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৮৩ লাখ টন। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত প্রায় ৮০ লাখ টন। অথচ চালের দাম গত দশ দিনে বেড়েছে কেজিপ্রতি তিন-দশ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমনের মৌসুমে ফসল ঘরে ওঠার পর কৃষকের হাতে থাকাকালে বাজারে চালের মূল্য স্থিতিশীল ছিল। ধান কৃষকের হাত থেকে মিল মালিক ও আড়তদারদের হাতে চলে যাওয়ার পরই চালের দামের ঊর্ধ্বগতি ঘটছে।
ভোজ্য তেল : গত ১০-১১ দিনে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আট-দশ টাকা বেড়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে সয়াবিনের পাইকারি মূল্য ছিল প্রতি লিটার ১০০-১০২ টাকা (বোতলজাত) ও খুচরা মূল্য ১০৫-১০৬ টাকা। খোলা তেলের খুচরা মূল্য ছিল লিটার ৮৭-৮৮ টাকা। বর্তমানে সয়াবিনের পাইকারি মূল্য লিটার ১০৫-১০৭ টাকা, খুচরা ১১৩-১১৫ টাকা। এ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। মিলগুলোর কাছে পরিশোধনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ক্রুড অয়েল আছে। বাজারে পরিশোধিত তেলের সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। এর পরও দাম বাড়ার কারণ হিসেবে এসবি বলছে, মালিক/আমদানিকারকরা অপরিশোাধিত ভোজ্য তেল পরিশোধন করার সময় বা আগে নির্দিষ্ট এজেন্টের (মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী) কাছে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বিক্রি করেন। প্রতি মণ তেলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভে ডিও এজেন্টদের কাছে বিক্রি করা হয়। এজেন্টরা আবার স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতার কাছে মণপ্রতি ৩০-৪০ টাকা লাভে ওই ডিও বিক্রি করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ডিও হাতবদল হয়ে ধাপে ধাপে তেলের দাম বাড়ে। একপর্যায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে আবার মণপ্রতি ৩০-৪০ টাকা লাভ যোগ করে ডিও বিক্রি করা হয়। এভাবে বিক্রয়মূল্যের তুলনায় স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতার কাছে তেলের কেজিপ্রতি ছয়-সাত টাকা এবং খুচরা বিক্রেতার কাছে ১০-১১ টাকা দাম বাড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্ন্তজাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় আমদানিকারক ও এজেন্টরা তেলের দাম বাড়ান। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে তাঁরা কমান না। বর্তমানে বাজারে সরবরাহকৃত ভোজ্য তেল অন্তত ১০ থেকে ৪৫ দিন আগে আমদানি করা। এ ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।
চীন বিশ্বে ভোজ্য তেল আমদানিকারকের তালিকায় শীর্ষে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনে তেল আমদানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেল ও সয়াবিন তেলের দাম প্রতি কেজিতে সাড়ে সাত টাকা কমেছে। মালয়েশিয়ায় পাম তেলের দাম ৮৫০ ডলার থেকে ৭২০ ডলারে নেমেছে। সয়াবিনের দাম ৯০০ ডলার থেকে ৮১০ ডলারে নেমেছে। বিশ্ববাজারে দাম কমতে থাকায় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাম অয়েল কেজিতে ১২ টাকা এবং সয়াবিন তেল কেজিতে ৯ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে ভোজ্য তলের দাম কেজিতে আট থেকে দশ টাকা বেড়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
পেঁয়াজ : দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। দেশে গড় উৎপাদন ১৬ লাখ টন। চাহিদার বাকি আট-দশ লাখ টন আমদানি করতে হয়। বেশির ভাগই ভারত থেকে আমদানি হয়। চীন, মিসর ও মিয়ানমার থেকেও কিছু আমদানি হয়। ভারত হঠাৎ এলসি মূল্য বাড়ালে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ৩৬-৪০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ দাম বাড়ে, যা একপর্যায়ে কেজি ২২০-২৩০ টাকায় ওঠে। পেঁয়াজ চাষিরা বেশি লাভের আশায় ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ক্ষেত থেকে অপরিপক্ব পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করেন। ফলে এ বছর পেঁয়াজ পরিপুষ্ট বা স্বাভাবিক উৎপাদন উপযোগী হওয়ার সুযোগ পায়নি। তাই এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন হবে না। সে ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হবে। আগামী এপ্রিল মাসে রমজানের সময় পেঁয়াজের ভরা মৌসুম থাকলেও দেশের উৎপাদন দিয়ে বিগত ঘাটতি পূরণ করা কঠিন হবে। কারণ রমজানে অন্যান্য মাসের তুলনায় দ্বিগুণ অর্থাৎ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টন পেঁয়াজের প্রয়োজন হবে। তাই ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমদানির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এখনই উদ্যোগ না নিলে রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ দেশে পৌঁছতে যে সময়ের প্রয়োজন হবে, তাতে সরবরাহ ঘাটতির পাশাপাশি জনমনে অহেতুক আতঙ্কের কারণে রমজানে দর প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
চিনি : চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের তথ্য মতে, দেশে চিনির বছরে চাহিদা ১৬ লাখ টন। সে হিসাবে প্রতি মাসে চাহিদা এক থেকে সোয়া লাখ টন। তবে রমজানে চাহিদা দুই থেকে আড়াই লাখ টন হয়। চিনিকলগুলোর গোডাউনে বর্তমান মজুদ ৫৬ হাজার টন। চিনি রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, এ বছর তারা ১২ লাখ টন চিনি উৎপাদন করবে। বিআইএসএফের তথ্য মতে দেশের বাজারে চিনির ঘাটতি নেই। তবে রমজানে বাড়তি চাহিদা মেটাতে রিফাইনারি মিলগুলোর উৎপাদন যথাযথ পর্যায়ে রাখাসহ সরকারি মিলগুলোর গোডাউন থেকে চিনির বাজারজাতকরণ পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে করা প্রয়োজন। অন্যথায় রিফাইনারি মিল মালিকরা সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে সংকট তৈরি করতে পারেন।
ছোলা, মটর ও ডালজাতীয় ভোগ্য পণ্য : বাজারে গত ১০ দিনে মসুর ডালের মূল্য কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে এর পাইকারি মূল্য ছিল ৯৫-১০০ টাকা, খুচরা মূল্য ছিল ১০০-১০৫ টাকা। এখন পাইকারি মূল্য ১০৫-১১০ টাকা এবং খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। রমজান সামনে রেখে অতি চাহিদাসম্পন্ন ভোগ্য পণ্য ব্যাপক হারে আমদানি হচ্ছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক আমদানিকারকরা ছোলা, ডালজাতীয় পণ্যের প্রচুর এলসি করেছেন এবং এরই মধ্যে শিপমেন্টও হয়েছে। রমজানে ছোলার চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন, অন্যান্য মাসে থাকে ১০-১২ হাজার টন। রমজানে মসুর ডালের চাহিদা ৭৫-৮০ হাজার টন। বাংলাদেশে ছোলা ও ডালজাতীয় পণ্য আমদানির অন্যতম দেশ অস্ট্রেলিয়া। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় বুকিং রেট বা রপ্তানি মূল্য বেড়ে গেছে। প্রতিটন ছোলার রপ্তানি মূল্য ৫৬০ ডলার থেকে বেড়ে ৭৪০ ডলার, মসুর ডাল ৪৬০ থেকে ৫৯০ ডলার, মটর ২৬০ ডলার থেকে ৩২৫ ডলার হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও ছোলাসহ ডালজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে রমজান মাস সামনে রেখে ছোলা ও ডালজাতীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। সরকারি উদ্যোগে টিসিবির মাধ্যমে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে এখনই এসব পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশের এই বিশেষ শাখা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রসুন, আদা ও মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়। চীনে সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের কারণ দেখিয়ে ‘আমদানি বন্ধ থাকার’ অজুহাত বা গুজব তুলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা, আদা কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকা, এলাচ কেজিপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা ও দারুচিনি কেজিপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বাড়িয়েছেন। আমদানির বিকল্প বাজার সৃষ্টি না করলে রমজানে দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।
এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ‘আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী’ ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, “পুলিশের তদন্তে এসেছে ‘ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব’ থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।”

বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।
এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—এমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।
প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।
স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।
রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।
সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে।
অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।
নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’
ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।
বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।
নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।
পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।
গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।
এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।
আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।
কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।’
জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।