<p>বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য কঠিন শর্তে বেশি সুদে ঋণ নিয়ে ইঞ্জিন কিনছে সরকার। ‘৭০টি মিটার গেজ (এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকোমোটিভ সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য এক্সিম ব্যাংক অব কোরিয়াসহ তিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেওয়া হবে। এতে সুদের হার হবে ৪.২১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের জন্য সরকার সময় পাবে ১৯ বছর। এ ছাড়া থাকছে এজেন্ট ফি পরিশোধসহ নানা শর্ত।</p> <p>তবে এজেন্ট ফির একটি শর্তে আপত্তি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল মঙ্গলবার অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির (স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল লোন) ৩১তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <p>সাধারণত বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপানের ঋণদানকারী সংস্থা জাইকার মতো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে নমনীয় সুদে ঋণ নেয়। নমনীয় সুদের ঋণে সুদ হার হয় অত্যন্ত কম। কিন্তু বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়াতে এসব ঋণদাতা সংস্থা নমনীয় সুদে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উচ্চ সুদের কঠিন শর্তের ঋণে ঝুঁকছে। এসব ঋণে নমনীয় ঋণের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি সুদ ধরা হয়। পাশাপাশি থাকে কঠিন শর্ত। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে এখন বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে।</p> <p>সূত্র মতে, এ প্রকল্পের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রকল্পটি ২০১১ সালে শর্তসাপেক্ষে একনেকে অনুমোদিত হয়। কিন্তু প্রকল্পে সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে অর্থ পাওয়া যায়নি। এরপর দুই দফায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। তৃতীয় দফায় টেন্ডারের কাগজপত্র এবং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো হালনাগাদ করে ২০১৪ সালে আবারও দরপত্র আহ্বান করলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রস্তাব দাখিল করে। এর মধ্যে স্পেনের প্রতিষ্ঠান এম/এস ভোসলোহ ইস্পানা এস.এ স্পেন সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ৮৬৪ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকার প্রস্তাব করে। তবে পরে এ প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা কোরিয়ার এম/এস হুন্দাই রোতেম কম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়। কম্পানিটি প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে ৮১৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ২৫০ টাকা বেশি প্রস্তাব করে। আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে তাদের দর দুই হাজার ৬৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ৬৩৬ টাকা। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এই প্রতিষ্ঠানকেই প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত করার সুপারিশ করে।অন্য কোনো উৎস থেকে নমনীয় সুদে ঋণ না পাওয়ায় সরকার শেষ পর্যন্ত কঠিন শর্তে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। লোন নেগোসিয়েশন কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোরিয়া ট্রেড ইনস্যুরেন্স করপোরেশন (কেএসইউআরই), এক্সিম ব্যাংক অব কোরিয়া (কে-এক্সিম) এবং কমার্শিয়াল ফ্যাসিলিটিকে চূড়ান্ত করা হয়। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড ধরে ঋণ পরিশোধের সময় ধরা হয়েছে ১৯ বছর। সুদের হার ধরা হয়েছে ছয় মাস লাইবর+২.৪০ শতাংশ। সব মিলিয়ে সুদ হার হবে ৪.২১ শতাংশ। এর মধ্যে লাইবর হার ১.৮১ শতাংশ। ঋণটির গ্র্যান্ট এলিমেন্ট ১৭ শতাংশ। তিনটি সংস্থাকে ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ ১.৫০ শতাংশ করে অর্থ দিতে হবে। আর একটি সংস্থাকে দিতে হবে ১.৬০ শতাংশ। প্রতিশ্রুতি ফি বাবদ চারটি সংস্থাকেই ০.৫০ শতাংশ করে দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো ১৯ বছর পর্যন্ত এজেন্ট ফি বাবদ ২০ হাজার ডলার করে দাবি করেছে। তবে অর্থমন্ত্রী এতে আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বৈঠকে বলেছেন, ২০ হাজার ডলার শুধু প্রথম বছর দেওয়া হবে। পরে আর কোনো অর্থ দেওয়া হবে না।</p> <p> </p>