<p>বিএনপির প্রার্থীদের ঘোর আপত্তির মধ্যেও আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপি ছাড়াও ইভিএম নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। আর বিষয়টি নিয়ে ভোটাররা রয়েছেন ধোঁয়াশায়। তবে ইভিএম ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের ওপর পূর্ণ আস্থার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <p>ভোটারদের মতে, প্রতীকে সিল দিয়ে ভোট দেওয়া দীর্ঘদিনের অভ্যাস। প্রতীক দেখে নিজের ইচ্ছামতো ভোট দেওয়া যায়। কিন্তু আঙুলের ছাপে ভোট দেওয়ার অভ্যাস তাঁদের নেই। ‘ইভিএমে ভোট দেওয়ার কোনো ধরনের কারিগরি ত্রুটি নেই’—নির্বাচন কমিশনের এমন নিশ্চয়তা দেওয়ার পরও ফল নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন তাঁরা। আর ইভিএম নিয়ে এই আশঙ্কা তরুণদের চেয়ে বয়স্ক ভোটারদের মধ্যে বেশি।</p> <p>একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইভিএম বিশ্বের অনেক দেশে আছে জানি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার অভ্যাস আমাদের নেই। তা ছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেজাল্ট পাল্টে দেওয়া যায় কি না, তা তো আমরা জানি না।’</p> <p>অন্যদিকে সিটি নির্বাচনের শুরু থেকে ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। দলটি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরাও রয়েছেন আশঙ্কায়। তাঁদের দাবি, নিয়ম রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। ইভিএমে ভোট হলে সূক্ষ্ম কারচুপি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p>ঢাকা দক্ষিণের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফারুকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইভিএমের প্রতি আস্থা রাখার কোনো কারণ দেখছি না। আগের রাতে যেখানে ভোট হয়ে যায়, সেখানে কী করে ক্ষমতাসীনরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে, তা বোধগম্য নয়।’</p> <p>আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমাদের দলীয় অবস্থান একই জায়গায় রয়েছে। এখানে অবশ্যই কারচুপির সুযোগ রয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এমনভাবে প্রগ্রামিং করা হবে, যাতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর ফলাফল পাল্টে যায়। বিষয়টি আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি; কিন্তু এ বিষয়ে তারা কোনো সমাধান দিতে পারছে না। তার পরও গণতন্ত্র রক্ষায় মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’</p> <p>বিএনপির ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ইভিএম প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আমাদের আশঙ্কা ও আপত্তি রয়েছে। কারণ নির্বাচন কমিশন নিজেরাই স্বীকার করেছে ইভিএম ব্যবহার করার মতো নিজস্ব লোকবল তাদের নেই। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে তাদের লোক ধার করতে হচ্ছে। তা ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করতে দেশের মানুষ এখনো প্রস্তুত নয়। ইভিএমের সফটওয়্যার ও এর ব্যবহারের নানা বিষয় নিয়ে ইসির কাছে আমরা যে প্রশ্নের উত্তর চেয়েছি, সে বিষয়ে এখনো কিছুই জানানো হয়নি।’</p> <p>এদিকে ইভিএমের পক্ষে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। দৃঢ়ভাবে তাঁরা আস্থা রাখছেন ইভিএমের ওপর। ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ফজলে নূর তাপস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি একটি আধুনিক ব্যবস্থা। আমরা নতুন এবং আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে চাই। তা ছাড়া আমিও কখনো এই পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করিনি। তাই ভোটারদের মতো আমিও অপেক্ষায় আছি ইভিএমে ভোট দিতে।’</p> <p>ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইভিএম বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আশা করি, নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’</p> <p>ঢাকা উত্তর সিটির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহিদুল  ইসলাম মোল্লা। আওয়ামী লীগের কর্মী হলেও তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। ইভিএম সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর আমার পরিপূর্ণ আস্থা আছে। এতে কোনো ধরনের কারচুপি হবে বলে মনে করি না, বরং দ্রুত ভোটের ফলাফল জানা যাবে।’</p> <p>ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুম আহমেদ বলেন, ‘আমি ইভিএমের পক্ষে। একবার করে দেখা যাক না। কারণ সিল মারতে তো কেন্দ্র দখল হয়। এখানে তো কেন্দ্র দখলের সুযোগ নেই। একবার প্রযুক্তির ওপর আস্থা রাখতে চাই।’</p> <p>আবার জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বলছেন সরকারের সদিচ্ছার কথা। জাতীয় পার্টির ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি হবে না, এটা নির্ভর করে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। এখানে ইভিএম বা ম্যানুয়াল কোনো বিষয় নয়।’</p>