পেঁয়াজ নিয়ে কেলেঙ্কারি দূর না হতেই দেশে হঠাৎ লবণ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়েছে। লবণ পাওয়া যাবে না—এমন গুজবে সাধারণ মানুষ বেশি বেশি লবণ কিনতে শুরু করায় তৈরি হয় সংকট। আর এই সংকটকে আরো গভীর করার জন্য একটি মহলের তৎপরতা লক্ষ করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সব মিলিয়ে সারা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে।
গুজব রটিয়ে লবণ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক

এই গুজব রোধে সরকারের মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর মাঠে রয়েছে। এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি স্থান থেকে গুজব সৃষ্টিকারীদের আটক করা হয়েছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। সরকার প্রেস নোট দিয়ে জানিয়েছে, দেশে লবণের কোনো সংকট নেই। লবণ ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাও জানিয়েছেন, দেশে কোনো লবণসংকট নেই।
গতকাল মঙ্গলবার কোনো কোনো এলাকায় ক্রেতাদের মধ্যে লবণ নিয়ে কাড়াকাড়ির চিত্রও পাওয়া গেছে। কোন কোন ব্যবসায়ী ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে রাজধানীসহ সারা দেশে মাইকিং করা হচ্ছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা লবণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে লবণের কোনো সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যক্তি গুজব ছড়িয়ে লবণের বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে। আমরা কঠোর হস্তে বাজার স্থিতিশীল করব।’
জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যার পর সিলেটের বিয়ানীবাজার এলাকায় লবণসংকটের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পৌর শহর ও গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে সেই খবর। রাতের মধ্যেই সেই গুজব পুরো সিলেট জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। রাত পোহাতেই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আর শুরু হয় লবণকাণ্ড। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই লবণ কেনায় নেমে পড়ে। ফলে সেই সুযোগ গ্রহণ করা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে গতকাল সন্ধ্যার দিকে ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় বাজারে লবণসংকটের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস) মো. জেদান আল মুসা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লবণের দাম বাড়ার গুজব ফেসবুক থেকেই ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা কয়েকটি আইডি শনাক্ত করেছি। তবে প্রথমে কোন আইডি থেকে কে বা কারা এই গুজব ছড়িয়েছে সেটি চিহ্নিত করতে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
রাতেই একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের লোকজন এই গুজব প্রতিরোধে মাঠে নামেন। গুজবে কান না দিতে মাইকিং করা হয়। সোমবার রাতে সিলেট শহরের পাইকারি বাজার কালিঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করায় মেসার্স শিমুল স্টোরকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া লবণ স্থানান্তরের জন্য তিনটি ঠেলাগাড়িতে রাখা ৬০০ কেজি লবণ মালিক না পাওয়ায় জব্দ করা হয়। এ ছাড়া রাত ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন ব্যবসায়ীকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে : লবণসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এর নম্বর হচ্ছে : ০২-৯৫৭৩৫০৫ (ল্যান্ড ফোন), ০১৭১৫-২২৩৯৪৯ (সেল ফোন)। লবণসংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন করে জানাতে বলা হয়েছে।
রাজধানীর চিত্র : গুজবে কান দিয়ে গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে আসেন আরমান শেখ নামের এক বয়স্ক ব্যক্তি। তাঁর ব্যাগে কী জানতে চাইলে বলেন, ‘পাঁচ কেজি লবণ।’ একসঙ্গে এত লবণ কখনো কেনেননি জানিয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি রাজাবাজারে থাকি। শুনলাম পেঁয়াজের মতো লবণের দাম বেশি হবে। রাজাবাজারের গলির দোকানে কোনো লবণ না পেয়ে কারওয়ান বাজারে এসে পাঁচ কেজি কিনেছি।’ তিনি যখন এ কথা বলছিলেন তখন কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের সামনে শত শত মানুষের ভিড়। তাদের বেশির ভাগ গুজবে কান দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশের এই বড় মার্কেটে লবণ কিনতে এসেছে। তবে এর আগেই সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে কারওয়ান বাজারের অন্তত ৩০টি পাইকারি দোকানের শতাধিক বস্তা লবণ বিক্রি হয়েছে বলে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এই গুজব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামিয়ে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে কারওয়ান বাজার ঘুরে জানা যায়, সকাল থেকে কারওয়ান বাজারে কার্যত অন্যান্য পণ্যের চেয়ে লবণ বিক্রি হয়েছে বেশি। খবর পেয়ে তেজগাঁও থানার ওসি শামীম শিকদারের উপস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সবাইকে লবণের ব্যাপারে অভয় দিতে থাকেন। মাইকিং করে পুলিশ সদস্যরা বলছিলেন, কেউ গুজবে কান দেবেন না। দেশে লবণের কোনো সংকট নেই। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের ধরিয়ে দিন। ওসি শামীম শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা স্রেফ গুজব ছাড়া আর কিছু নয়। বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই। এর পরও মানুষ গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কে বেশি লবণ কিনে সংকট তৈরি করছে। যারা এই গুজব ছড়িয়েছে তাদেরকে ধরার চেষ্টা চলছে।’
জানা গেল, মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে মুদি দোকানের সাপ্তাহিক বন্ধ। এর পরও অন্তত ৩০টি পাইকারি মুদি দোকান কেন খোলা ছিল সে প্রশ্ন অনেকের। তারা অন্য মালপত্র বিক্রি বাদ দিয়ে শুধু লবণ বিক্রি করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দোকানদারদের সঙ্গে সরকারবিরোধী সংঘবদ্ধ চক্রের যোগসাজশ আছে কি না সেটাও দেখা হচ্ছে।
ডিএমপি সদর দপ্তরের নির্দেশে নগরীর ৫০টি থানার পুলিশ কারওয়ান বাজারসহ সব মার্কেট, গলির দোকানপাটের ওপর নজরদারি করতে থাকে। একই সঙ্গে মাইকিংও চলে। যারা বেশি লবণ কিনে বাসায় মজুদ করার চেষ্টা করছে তাদেরও খোঁজ করা হয়।
সিলেটের পর পাশের জেলা হবিগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ে গুজব। রংপুরের পীরগাছায়ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। সেখানে আগের দিন লবণের কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিকেলে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। দিনাজপুরে শহরে গতকাল ১২০ টাকা কেজি লবণ বিক্রি হয়েছে। এক শ্রেণির মুনাফালোভী দোকান থেকে লবণ সরিয়েও ফেলেছে। এ কারণে লবণ পাওয়াও যাচ্ছিল না। মহল্লার দোকানে ১৬০ থেকে ২০০ টাকাও লবণ বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে।
পটুয়াখালীর গলাচিপায় লবণ কেনার জন্য মানুষের ঢল নামে। এতে নারী-পুরুষ সবাই যোগ দেয়। অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করায় গৌতম পাল নামের এক ব্যবসায়ীকে ১৬ বস্তা লবণসহ আটক করে পুলিশ। পাবনার আতাইকুলায় চড়া দামে লবণ বিক্রি করায় সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীকে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নওগাঁর রানীনগরেও গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে লবণের দোকানের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। ৩০ টাকার লবণ এক লাফে ৮০ টাকা হয়ে যায়। কোনো কোনো দোকানি ১০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করেন। কোনো কোনো দোকানিকে দোকান বন্ধ করে চলে যেতেও দেখা যায়। দুর্গাপুর গ্রামের পিন্টু জানান, গুজব শুনে বাজারে গিয়ে তিনি দুই কেজি লবণ ১৯০ টাকা দিয়ে কেনেন। গতকাল দুপুর থেকে নওগাঁর বদলগাছী মহাদেবপুর এলাকায় লবণ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে কাড়াকাড়ি হতে দেখা যায়।
একই চিত্র দেখা গেছে বরগুনা, বামনা, আমতলী, ফরিদপুর, ঝালকাঠি, জয়পুরহাট, খুলনা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ত্রিশাল, পিরোজপুর, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, পাবনা, নাটোর, টাঙ্গাইলের সখীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট, নাচোল, বগুড়ার ধুনট, গাইবান্ধা, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নীলফামারীর ডোমার, শেরপুরের নকলা, বরগুনার বেতাগী, নীলফামারী, মুন্সীগঞ্জ, দিনাজপুর, কুড়িগ্রামের উলিপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, নাটোর, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল, বগুড়ার শাজাহানপুর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, মধুপুর, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী, নেত্রকোনার বারহাট্টা, নওগাঁর ধামইরহাট, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, নড়াইলের লোহাগড়া, সুনামগঞ্জের সুন্দরগঞ্জ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, যশোর, রাজশাহী, মাদারীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঢাকার ধামরাই এলাকায় একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
সরকারের প্রেস নোট : তথ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস নোটে বলা হয়েছে, ‘একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে গুজব ছড়ানোতে লিপ্ত রয়েছে। সম্প্রতি দেশে লবণের প্রাপ্যতা নিয়েও গুজব ছড়ানোর একটি অপচেষ্টা চলছে। এরইমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে যে প্রকৃতপক্ষে দেশে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং ডিসেম্বর মাসেই দেশে নতুন লবণ উৎপাদিত হয়ে বাজারে আসবে। বর্তমান মজুদের সঙ্গে যোগ হবে নতুন উৎপাদিত লবণ। ফলে দেশে লবণের কোনো সংকট নেই বা এমন কোনো সম্ভাবনাও নেই।’
লবণ ব্যবসায়ীরা যা বললেন : বাংলাদেশ লবণ সমিতির সভাপতি মো. নুরুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমাদের কাছে এখনো সাড়ে চার লাখ টন লবণ মজুদ আছে। এই লবণ দিয়ে আরো তিন মাসের চাহিদা মেটানো যাবে। এ ছাড়া প্রত্যেক পাইকার ও লবণ ব্যবসায়ীর কাছে প্রচুর লবণ মজুদ আছে। এ ছাড়া অপরিশোধিত আছে সাড়ে সাত লাখ টন।’ তিনি আরো জানান, দেশে ২৪ লাখ টন লবণ লাগে। এর মধ্যে অধিকাংশই দেশে উৎপাদন হয়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের মতলব স্টোরের মো. শাহিন বলেন, বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই। ভালো মানের লবণ ৩৪ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করছি। আজ বিক্রি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ হঠাৎ করেই লবণের চাহিদা বেড়ে গেছে। কেউ কেউ তিন থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত কিনছেন।
বিসিকের ঘোষণা : বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানিয়েছে, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ ১৮ দশমিক ২৪ লাখ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে লবণের মজুদের পরিমাণ ৬ দশমিক ৫০ লাখ টন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারা দেশে লবণ কম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে।
প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।