ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ মহররম ১৪৪৭

১৫ জেলাজুড়ে তাণ্ডবের ক্ষত

  • ►ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ২২ জনের মৃত্যু
    ►নিখোঁজ ১৫ জেলের
  • মধ্যে ১২ জনের সন্ধান
    ►উড়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, গাছপালা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
১৫ জেলাজুড়ে তাণ্ডবের ক্ষত
উপকূলজুড়ে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন রেখে গেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন লাগোয়া বকখালী, বসিরহাট ও সন্দেশখালীতে তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল যখন গত রবিবার ভোর ৫টায় বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা সুন্দরবন অংশে প্রবেশ করে, তখন ঝড়টি ছিল অনেকটা দুর্বল। শনিবার আবহাওয়া অফিস থেকে আভাস দেওয়া হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সময় ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটারের মধ্যে। তবে ভারতের সুন্দরবন অংশে শক্তি ক্ষয় হওয়ায় বাংলাদেশ অংশে বাতাসের গতিবেগ নেমে আসে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটারে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দুর্বল হওয়ার পরও দেশের উপকূল অতিক্রম করার চার ঘণ্টা সময় তাণ্ডব চালিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় ১৫টি জেলায়।

বুলবুলের তাণ্ডবে এসব জেলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২২ জন। আহত হয়েছে অনেক। অন্যদিকে ভোলার রাজাপুর ও বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মাঝামাঝি মেঘনা নদীতে চরফ্যাশনের তোফায়েল মাঝির নৌকাডুবির ঘটনায় গতকাল

সোমবার ১০ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কৃষকের আমন ধান মাঠে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভারি বর্ষণের পাশাপাশি তীব্র বাতাসে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে শীতকালীন সবজি। দেশের বিভিন্ন জেলায় উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছ। এতে সড়ক, রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় অনেক জেলা এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হওয়ায় ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড়টি না আসায় বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা মিলেছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে যতটা ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হয়নি বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সুন্দরবনের কারণে এবারও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সুন্দরবন একটাই। বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষায় সুন্দরবনকে বাঁচানোর তাগিদ দিয়েছে টিআইবি।

আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আবদুল মান্নান গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সোমবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ অতিক্রম করে আরো দুর্বল হয়ে ভারতের মিজোরামে চলে গেছে। বাংলাদেশে এখন আর বুলবুলের কোনো অস্তিত্ব নেই। এতে আজ মঙ্গলবার দেশে আবহাওয়া ভালো থাকবে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে।

ঢাকার বাইরে থেকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবের বিস্তারিত জানিয়েছেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা

গলাচিপা (পটুয়াখালী) : বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ ১৫ জেলের মধ্যে ১২ জনের সন্ধান পেয়েছে স্বজনরা। তাঁরা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের মধ্যে আটকে ছিলেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলেদের স্বজনসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

ইলিশ মাছ শিকারের জন্য সাগরে গিয়ে ফিরতে পারেননি গলাচিপার ১২ জন জেলে। তাঁদের ট্রলারের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেলে ঘূর্ণিঝড় চলাকালে হারিয়ে যান। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় পরিবারের সদস্যদের। এরপর দুই দিন যোগাযোগ হয়নি। নিখোঁজ জেলেদের পরিবারগুলো অজানা শঙ্কায় ছিল। হারিয়ে যাওয়া ট্রলারে ছিলেন গলাচিপা পক্ষিয়া গ্রামের রিপন খলিফা। তিনিই ট্রলারের মালিক ও মাঝি। অন্যদের মধ্যে ছিলেন তাঁর ভাগ্নে তরিকুল, মনসুর, সেলিম, রিয়াজ, সাহা গাজী, চরখালী গ্রামের নিজাম মৃধা, রাজিব মৃধা, আলম হাওলাদার, মহিউদ্দিন ও মোকলেস মৃধা।

গলাচিপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিখোঁজ জেলেদের পরিবার সংবাদ পেয়ে এখন চিন্তামুক্ত। তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। জেলেদের গলাচিপায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছি।’

বাগেরহাট : বুলবুলের আঘাতে বাগেরহাটের রামপালে ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক নারী নিহত এবং দুজন আহত হয়েছে। গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে ঘরের ওপর গাছ পড়লে সামিয়া খাতুন (১৫) ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় আরো দুজন আহত হয়েছে। নিহত সামিয়া খাতুন বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ভরসাপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের মেয়ে। বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম এবং পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুলবুলের প্রভাব কেটে যাওয়ায় বাগেরহাটের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়ি ফিরে যেতে শুরু করেছে। বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন হাজার ৫২৯টি মত্স্যঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মত্স্য বিভাগ জানায়।

ঝড়ে বাগেরহাট সদর, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, ফকিরহাট এবং কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বহু এলাকায় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে।

পিরোজপুর : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে গাছচাপায় ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং অর্ধশতাধিক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে আমন ফসলের মাঠ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ঝড়ের তাণ্ডবে গ্রামীণ সড়ক ও মহাসড়কের দুই পাশের কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পিরোজপুরে বুলবুলের তাণ্ডবে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু আলী মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, জেলার নাজিরপুরে ননী মণ্ডল নামের এক বৃদ্ধ গাছচাপায় নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ১৫ জন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আড়াই হাজার ঘরবাড়ি, ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৭০ কোটি টাকার কৃষি, অকৃষিসহ মাছের ঘের, পাঁচ কোটি টাকার গবাদি পশু ও খামার।

সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূল এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ, রমজাননগর, কাশিমাড়ি ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও শ্রীউলা এলাকার বেশির ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। ঝড়ের সঙ্গে ভারি বর্ষণে একাকার হয়ে গেছে মত্স্যঘের, ধানের ক্ষেত। বুলবুল উপকূলে আঘাত হানলে শ্যামনগরের ভেটখালী ইউনিয়নের তারাণীপুর গ্রামে দেয়ালচাপা পড়ে ভ্যানচালক পলাশ ও তাঁর স্ত্রী আহত হন। অন্যদিকে গত রবিবার সকালে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামের আবুল কালাম (৬০) হৃদেরাগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীর চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নে পানিতে ডুবে ৩৭৫টি ভেড়া মারা গেছে। গত রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ইউনিয়নের নতুন চর এলাকায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। এদিকে টানা বর্ষণে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরক্তি উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানান, বৃষ্টিতে আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে।

গোপালগঞ্জ : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে গোপালগঞ্জে শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রবিবার কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামে গাছচাপা পড়ে সেকেন হাওলাদার (৭০) নামের এক বৃদ্ধ এবং সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের খাটিয়াগড় গ্রামের বাবন কাজীর স্ত্রী মাজু বিবি (৬৫) নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ১১টায় কোটালীপাড়ার কান্দি গ্রামে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ভেঙে গিয়ে ঝুলে থাকা গাছের ডাল পড়ে সাথী বৈদ্য (৬) নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। সে ওই গ্রামের সুখরঞ্জন বৈদ্যর মেয়ে। এ নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলায় বুলবুলের আঘাতে শিশু ও নারীসহ তিনজন প্রাণ হারাল।

নিহতদের দাফনের জন্য এরই মধ্যে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার গাছপালা ভেঙে গেছে।  

কাশিয়ানী : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উপজেলার কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার রসময় মণ্ডল জানান, এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাওয়া যায়নি। তবে রবিশস্য, সবজি, আমন ধান চাষিরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

শরীয়তপুর : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে শরীয়তপুর জেলায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে নড়িয়া ও ডামুড্যায় দুজন নিহত হয়েছে। এ সময় ঝড়ে পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও শত শত গাছপালা বিধ্বস্ত এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া দুই হাজার ৭৬০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফনের জন্য প্রতিটি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

মাদারীপুর : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝিতে রবিবার দুপুর ৩টার দিকে বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে ঘরের ভেতর আলমারির নিচে চাপা পড়ে সালেহা বেগম (৪০) নামের এক নারী মারা গেছেন। অন্যদিকে সদর উপজেলার চৌহদ্দি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম ভেঙে গেছে।

বামনা (বরগুনা) : বুলবুলের তাণ্ডবে বরগুনার বামনা উপজেলায় গাছ উপড়ে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলার উত্তর কাকচিড়া গ্রামে ঝড়ের আতঙ্কে শিশির বিশ্বাস (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

খুলনা : বুলবুলের আঘাতে খুলনার উপকূলীয় এলাকাসহ জেলার ৯টি উপজেলায় কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়রা ও দাকোপ উপজেলা।

জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, জেলায় দুই লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ মানুষ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ২৭৫টি। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ৩৭ হাজার ৮২০টি। আর ঝড়ে গাছচাপা পড়ে নিহত হয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন দাকোপ উপজেলার দক্ষিণ দাকোপ গ্রামের সুভাষ মণ্ডলের স্ত্রী প্রমিলা মণ্ডল (৫২) ও দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি গ্রামের আলমগীর হোসেন (৩৫)।

ভোলা  ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভোলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘরবাড়ি ও ফসলের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার রাতের ঘূর্ণিঝড়ে লালমোহন, চরফ্যাশন ও ভোলা সদর উপজেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন।

অন্যদিকে ভোলার রাজাপুর ও বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মাঝামাঝি মেঘনা নদীতে চরফ্যাশনের তোফায়েল মাঝির নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ১০ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল রাত ৯টার দিকে ভোলার রাজপুর ও বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মাঝামাঝি মেঘনা নদী থেকে ১০ জেলের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় বাসিন্দারা। নিহতদের সবার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট এলাকায়। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলো মফিজ, কামাল ও বিল্লাল।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে  জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বহুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা। প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তবে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি নেমেছিল ৮.৯১ শতাংশে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০৫ শতাংশ, জুনে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

মূল্যস্ফীতির এই পতন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা বয়ে আনলেও বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, সবজি, মাছসহ খাদ্যপণ্যের দামে আগুন। তাই পরিসংখ্যানগত স্বস্তি বাস্তব জীবনে এখনো প্রতিফলিত হয়নি।

 

খাদ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে

বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে নেমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮.৫৯ শতাংশ।

একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।

তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকার খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা/কেজিতে পৌঁছেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল ব্রি২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে, যা আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মাছের দামেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার ঘোষণা ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি দিতে পারেনি।

 

আয় বেড়েছে কম, ব্যয় বেড়েছে বেশি

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের অদৃশ্য কর-এর মতো। বিশেষ করে মজুরিনির্ভর মানুষের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুনে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ শতাংশে, কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে।

 

প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে গতি

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।

তবে পুরো অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১ শতাংশ। এই ধীরগতির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, আর এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ৩.৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাত কিছুটা উন্নতি করলেও গতি কমেছে শিল্প খাতে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৪২ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো৫.৮৮ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪.৩১ শতাংশ। চলতি মূল্যে এই প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়ছে। তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে, ফলে মানুষের বাস্তব আয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে।

মন্তব্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক উপাদান (প্রাইমা ফেসিয়া) পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্র নিযু্ক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলার অভিযোগ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি এবং অভিযোগ থেকে তাঁর অব্যাহতিও চাওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আমির হোসেন ওই আরজি তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করার আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন।

ওই দিন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মামলার অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন : দাবি আইনজীবীর

অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমির হোসেন প্রসিকিউশনের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলেননি।

আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর সঠিক কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণদাফন, লাশ গুম করে ফেলার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন বলেছিল, জুলাই গণ-আন্দোলন চলার সময় বিটিভি ভবন, মেট্রো রেলসহ কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মেট্রো রেলসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এইসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধ প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের গণভবনে এনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছেএমন নজিরও নেই।

জুলাই গণ-আন্দোলনে আসামিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, গণ-আন্দোলনের সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। পরে তিনি অভিযোগ থেকে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৪ আগস্ট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত চারটি মামলার বিচারকাজ চলতি বছর শেষ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। চারটি মামলার অভিযোগই আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচারে সময় নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

চার মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তিনিসহ এই চার মামলায় মোট আসামি ৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে পলাতক ৪১ জন। গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।

এ ব্যাপারে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চারটি মামলা আনুষ্ঠনিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার হবে। অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিলে মামলা ওইখানেই শেষ।

আর যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষকে প্রস্তুতির জন্য ২১ দিন সময় দিতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে আমাদের আরজি থাকবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার জন্য। যদি ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি বিধান তুলে ধরে এই প্রসিকিউটর বলেন, আইনে আছে, অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে তা চলবে বিরতিহীনভাবে। কোনো পক্ষ মুলতবির আবেদন করতে পারবে না।

সব মিলিয়ে আশা করছি, চলতি বছরই চারটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দিতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে তা আমলে নিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগ আমলে নেওয়া হলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে চার মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় পরিকল্পিতভাবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে একটি মামলায়। মামলাটি ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্য দুজন পলাতক। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঘটনা ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি তিনটি মামলাও বেশ আলোচিত।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১০ জুলাই এ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন। বাকি ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে বলা হচ্ছে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলা। সরকার পতনের আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় তরুণ। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়া। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটিই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। গত ৩ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আগামী ১৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা রয়েছে। মামলার আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে চারজনকে।

আশুলিয়ায় মৃতপ্রায় একজন ও পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর মামলাটি লাশ পোড়ানোর মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেদিনই তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হতাশা

মামলার তদন্তকাজ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও বিচার নিয়ে আশাবাদী শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই বিচারটা দেখতে পাব এবং ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু তদন্তেই দীর্ঘ সময় লাগল। তার পরও বলতে চাই, যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাউকে যেন এ মামলায় যুক্ত না করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভীর। পরে ১৯ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অভিযোগটি কী পর্যায়ে আছে, জানি না। গত সপ্তাহেও আমি প্রসিকিউশনে গিয়েছিলাম। গেলে শুধু একটা কথাই বলে, কাজ করছি, বিচার হবে। কিন্তু আদৌ বিচার হবে কি নাজানি না। আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা হতাশায় ভুগছি।

মামলার বাদী এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার দাবি জানান আবুল হাসান। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ২৭টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

আগামী ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই দিন বা এর আগে-পরে যেদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সম্মতি দেওয়া হবে, সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। সেই হিসাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফল প্রকাশের সময় রয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ