ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

চুক্তি করেও অরক্ষিত শ্রমিক

হায়দার আলী, মালয়েশিয়া থেকে ফিরে
হায়দার আলী, মালয়েশিয়া থেকে ফিরে
শেয়ার
চুক্তি করেও অরক্ষিত শ্রমিক

মালয়েশিয়ার মাটিতে গত বছরের ৩ অক্টোবর পা রাখতে না রাখতেই শোনা গেল এক ‘গরম’ খবর। টিয়ং টট নামে এক প্রিন্টিং কারখানায় চলছে শ্রমিক অসন্তোষ। আর সেটা বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত কারখানা। ওই দিন দুপুরে কুয়ালালামপুরের মসজিদ ইন্ডিয়া এলাকার ডাব্লিউ হোটেলে বসে স্থানীয় সাংবাদিক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ গৌতম রায় বললেন, ‘চলেন ভাই, এখানকার যুবলীগ নেতা ব্রাউন সোহেলের কাছে যাই; তাহলেই সব জানতে পারবেন।

এই ব্রাউন সোহেল হলেন আশফাকুল ইসলাম সোহেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ছেলে। ১৯৯৬ সালে কুয়ালালামপুরে এসে মালয়েশীয় মেয়ে বিয়ে করে সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে এখানেই বসবাস করছেন। পেশায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী সোহেল পারিবারিক নেশায় পড়ে বিদেশবিভুঁইয়ে রাজনীতি করলেও শ্রমিকদরদি হিসেবে পরিচিত তিনি। তাই তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে বিবাহসূত্রে মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী শ্রমিকদরদি সাংবাদিক গৌতমের।

বিকেলেই গৌতমের সঙ্গে রওনা হই বুকিত বিনতাং এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে। সেখানে বসে ব্রাউন সোহেলের কাছে জানা গেল বিস্তারিত। ঘটনাটা সংক্ষেপে দাঁড়ায়—টিয়ং টটে পুরনো পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিকের সঙ্গে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে যাওয়া আরো ১৪৯ জন শ্রমিক যুক্ত হয়েছে ৮-১০ মাস হলো। কিন্তু তারা কেউ চুক্তি অনুযায়ী বেতন পাচ্ছে না।
বেতনের এক হাজার এবং ওভারটাইমের ৪০০-৫০০ রিঙ্গিত থেকে থাকা, ঋণ, লেভি, ইউটিলিটি ইত্যাদি খাতের নাম করে কেটে রেখে মাস শেষে ৮০০-৯০০ রিঙ্গিত করে দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের। অথচ চুক্তিতে লেভি বা ভিসা নবায়নের ফি দেওয়ার কথা কম্পানির। আর ঋণ বলে কিছু না থাকলেও সেটা চাপিয়ে দিয়ে টাকা কাটা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট কাজ বন্ধ রেখে এসবের প্রতিবাদ জানায় শ্রমিকরা। সেখানে কর্মরত খালাতো ভাইয়ের কাছে ঘটনা জানতে পেরে ব্রাউন সোহেল জানান বাংলাদেশ হাইকমিশনে।
বারবার জানিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে ইফতেখারুল আলম নামে এক শ্রমিক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। তখন টনক নড়ে হাইকমিশনের। ঘটনাস্থলে দৌড়ান লেবার উইংয়ের কর্মকর্তা সিলভি সুগুমারান ও মো. মুকসেদ আলী। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা না বলে ভালো-মন্দ খেয়েদেয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে দহরম-মহরম করে চলে আসেন। পরে মালিকপক্ষ ওই দিনই ছয় শ্রমিককে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। বুঝতে পেরে চারজন পালিয়ে যায়। বাকি দুজনকে পাওনা বেতন-ভাতা না দিয়েই দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অথচ সেটাও চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এভাবে মালয়েশিয়ার মাটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে পদে পদে চুক্তি লঙ্ঘন করে শোষণের নানা ঘটনা শুনে পরদিনই রওনা হই সেলাংগর শহরে টিয়ং টট করখানায়। অনেক চেষ্টা করে ভেতরে ঢুকতে না পারলেও বোঝা গেল, কারখানার পরিস্থিতি থমথমে। সময় নষ্ট না করে গেলাম শ্রমিক ডরমিটরিতে। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ তারা, যদি দেশে পাঠিয়ে দেয়! এখানে ৪০-৪৫ মিনিট থেকে, শ্রমিকদের মানবেতর জীবনের চিত্র দেখে ছুটলাম পালিয়ে যাওয়া চার শ্রমিকের খোঁজে। ফোনে যোগাযোগ করে কাজাং শহরে পাওয়া গেল দুজনকে—ইফতেখারুল আলম ও এস এম মনির। মুখ শুকিয়ে কাঠ হওয়ার জোগাড় তাঁদের। কান্নারুদ্ধ কণ্ঠে জানালেন তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা আর প্রতিবাদ করার করুণ পরিণতির সেই ঘটনা। ইফতেখার বললেন, ‘চুক্তিতে কর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা মালিকপক্ষের করার কথা থাকলেও চারজন ধারণক্ষমতার একেকটি রুমে ১৬ থেকে ২০ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে কয়েদিদের মতো। তার ওপর মাস শেষে বেতন থেকে আবাসন বাবদ টাকা কেটে রাখা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে তামিল নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।’

কর্মীদের বেতনের রসিদগুলোতেই ফুটে আছে কম্পানি কর্তৃপক্ষের চুক্তি লঙ্ঘনের ভয়ংকর চিত্র। নরসিংদীর সদর উপজেলার নোয়াপাড়া ভগিরতপুর গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে এস এম মনির দেশে থাকতে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। সুদর্শন ছেলেটি লেখাপড়া ফেলে সচ্ছল জীবনের আশায় পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। ক্যাথারসিস রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে টিয়ং টট প্রিন্টিং কারখানায় চাকরি নিয়ে আসেন। এস এম মনিরের সঙ্গে চুক্তিপত্রে কম্পানির পক্ষে স্বাক্ষর করেন নিয়োগকর্তা টেং জোক হং; কম্পানির এনআরআইসি নম্বর-৬৪০৭১০০১৫৯০৮; ঠিকানা-লোট ২০২০৮ বাটু ৭৩/৪, জালান কাপার, কেলাং ৪২১০০, কেলাং সেলাংগর। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এস এম মনিরের দৈনিক ৩৮.৪৬ রিঙ্গিত করে মজুরি হিসেবে বেতন এসেছিল ৯৬১.৩০ রিঙ্গিত। ওভারটাইম হয়েছিল ৫৪০.৮৪ রিঙ্গিত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অতিরিক্ত কাজ করায় আরো পেয়েছিলেন ৮৬.৫৪ রিঙ্গিত। ওই মাসে মোট এক হাজার ৫৮৮.৮৮ রিঙ্গিত বেতন পাওয়ার কথা মনিরের, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৩ হাজারেরও বেশি। কিন্তু নানা ছুতায় টাকা কাটায় কম্পানি থেকে মনির পেয়েছেন এক হাজার ১৮৮.৮৮ রিঙ্গিত, যা বাংলাদেশি ২৪ হাজার ৯০০ টাকার মতো। মনিরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া বেতনের রসিদ থেকে দেখা যায়, ঋণ দেখিয়ে কেটে নেওয়া হয়েছে ৩০০ রিঙ্গিত, বাংলাদেশি টাকায় যা ছয় হাজার ৩০০ টাকা। আর ইউটিলিটি চার্জ ৫০ ও লজিং চার্জ ৫০ রিঙ্গিত কেটে রাখা হয়েছে।

এস এম মনির বললেন, ‘কম্পানি থেকে এক টাকাও ঋণ নিইনি, কিন্তু বেতন থেকে মাসে মাসে টাকা কাটা হয়েছে। চুক্তিতে থাকার খরচ কম্পানির নামে থাকলেও প্রতি মাসে ৫০ রিঙ্গিত করে কেটে নেয়।’

টিয়ং টটের এফ০৪৬৩ নম্বরের কর্মী আব্দুল মান্নানের ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের বেতন রসিদে দেখা যায়, ২৫ দিনের দৈনিক বেসিক ৯৬১.৫০ রিঙ্গিত+৭৫ ঘণ্টা ওভারটাইমের ৫৪০.৮৪ রিঙ্গিত—মোট ১৫০২.৩৪ রিঙ্গিত বেতন-ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু লোন ৩০০ রিঙ্গিত, লজিং ৫০ ও ইউটিলিটি ৫০ রিঙ্গিত দেখিয়ে তাঁর বেতন থেকে কেটে রাখা হয়েছে ৪০০ রিঙ্গিত। অর্থাৎ ওই মাসে মান্নান বেতন পেয়েছেন ১১০২.৩৪ রিঙ্গিত। একইভাবে ওই তিন খাতে ৪০০ রিঙ্গিত কেটে নিয়ে ওই কম্পানির এফ০৪৩৫ নম্বরের কর্মী হোসেন মোহাম্মদ আলমগীরকে ওই মাসের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ১১৮৮.৮৮ রিঙ্গিত।

অথচ মনির, মান্নান, আলমগীর—তিন শ্রমিকের সঙ্গে টিয়ং টটের করা চুক্তির কোনোটিতেই ওই তিন খাতের খরচ কর্মীর কাছ থেকে নেওয়ার কথা লেখা নেই। বরং বলা আছে, ওই সব খরচ মালিকপক্ষ বহন করবে। আবার মান্নানের রসিদে ২৬টির জায়গায় ২৫টি বেসিকের বিষয়ে জানা যায়, অসুস্থতার কারণে এক দিন অনুপস্থিত থেকে পরদিন এসে নিয়মমাফিক ছুটির দরখাস্ত দিলেও তাঁর এক দিনের বেসিক কেটে রাখা হয়, যা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আর আলমগীরের রসিদে রবিবারের ১২ ঘণ্টা ওভারটাইম ভাতার হিসাব করা হয়েছে বেসিকের দেড় গুণ ধরে। কিন্তু চুক্তি ঘেঁটে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ওভারটাইম পাওনা হওয়ার কথা বেসিকের দুই গুণ হিসাবে।

এভাবে টিয়ং টটের ১১ জন শ্রমিকের বেতনের রসিদ ঘেঁটে দেখা যায়, চুক্তির বরখেলাপ করে নানা ছুতায় টাকা কেটে পাওনা মজুরির অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়।

আরেক শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বললেন, ‘প্রথম মাসের বেতনের রসিদ দেখে সুপারভাইজারকে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার পাইনি। পরের মাসে বেতন কম দেওয়ায় দল বেঁধে আমরা ম্যানেজারকে জানাই; তিনিও কোনো সমাধান দেননি। নিরুপায় হয়ে সবাই কাজ বন্ধ করে দিই। কিন্তু সমাধান তো হয়ইনি, উল্টো অনেকের শাস্তি হয়েছে।’

আনোয়ার হোসেন নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘হাইকমিশনের লোকজন আমাদের কথা না শুনে কম্পানির লোকদের সঙ্গে ভূরিভোজ করেন আর আমাদের বলেন, মুখ বুজে কাজ করতে, নইলে দেশে চলে যেতে হবে।’

কম্পানিস কমিশন অব মালয়েশিয়ার ওয়েবসাইটে দেখা যায়, টিয়ং টটের নিবন্ধন নম্বর ০০০৮০৬৭১৫৩৯২। এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তান জক হং, মহাব্যবস্থাপক নিকশন আউ ইয়ং ও বিপণন প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক আনসন আউ ইয়ং। এখানে অফসেট ডিসপেনসার, কার্টন ইত্যাদি তৈরি হয় বলা আছে।

কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে মালয়েশিয়াকিনি টিয়ং টট কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রশ্ন পাঠিয়ে অভিযোগগুলোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কোনো সাড়া দেয়নি।

চুংগাই লালং পেটানি এলাকার ‘মেডিক্যাল রাবার প্রডাক্ট এসডিএন বিএইচডি’র শ্রমিক মো. হাফিজউদ্দিন প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা কাজ করলেও কোনো ওভারটাইম ভাতা পান না। মিরাজুল ইসলাম নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে অফিস করে ছুটি পাই ৬টায়। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে বেশি কাজ করালেও বেতন পাই সেই এক হাজার রিঙ্গিত। দুজনেরই বেতনের রসিদে তাদের কথার প্রমাণ মেলে।

দেশে ফিরে রামরুর চেয়ারপারসন তাসনিম সিদ্দিকীকে কয়েকটি চুক্তিপত্র দেখাই এবং শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা জানাই। কিছু পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, হাইকমিশনের কর্মকর্তারা পারত চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিতে, শ্রম আদালতে মামলায় সহযোগিতা করতে কিংবা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতা নিতে। চুক্তির শর্ত মানানোর ক্ষেত্রেও হাইকমিশন উদ্যোগী হতে পারে।

হাইকমিশনের কর্মকর্তা মো. মুকসেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘টিয়ং টটে শ্রমিক ধর্মঘটের খবর পেয়ে আমরা সরেজমিন তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, কারখানায় কাজ করা অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা, সিগারেট খাওয়া, কম্পানির দেওয়া জুতা না পরায় অনেক শ্রমিকের বেতন থেকে টাকা কাটা হয়েছিল।’ কিন্তু জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে যাওয়া প্রতিটি শ্রমিকের কাছ থেকেই নানা খাতে কেন চুক্তি ভেঙে টাকা কাটা হয়?—প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, ‘কম্পানিতে কাজ করলে তো কম্পানির আইন মেনে চলতে হবে। ওদের আইন ভেঙেছে বলেই ছয়জনকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কম্পানি।’

চুক্তিপত্রে বলা আছে, শুধু ফৌজদারি অপরাধ করলেই শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারবে ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে। মোবাইলে কথা বলা আর কম্পানির জুতা পরে অফিস না করা কি ফৌজদারি অপরাধ?’

এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মুকসেদ আলী বলেন, ‘দেখুন, ওদের দেশের আইন না মানলে তো ওরা ব্যবস্থা নেবেই। সবাইকে তো আর দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়নি।’

‘এই কম্পানি থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং দেশে ফেরত পাঠানো শ্রমিকদের অভিযোগ, আপনারা শ্রমিকদের স্বার্থ না দেখে, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা না বলে কম্পানি কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে ভূরিভোজ করে চলে এসেছেন...।’

এবার হাইকমিশন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা মিথ্যা অভিযোগ। আমরা ওদের সঙ্গেও কথা বলেছিলাম।’

১০ দিনের মালয়েশিয়া সফরে যে ৭৮ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩৮ শতাংশ শ্রমিকই চুক্তি অনুযায়ী বেতন-ভাতা পায় না। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ—২৮ জনই বলেছে, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যা চুক্তির ২০ ধারার ১ উপধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই উপধারায় বলা আছে, ‘নিয়োগকর্তা কর্মীর পাসপোর্ট নিজের হেফাজতে রাখতে পারবেন না।’ পরের উপধারাতেই বলা আছে, কর্মী সব সময় পাসপোর্ট নিজের সঙ্গে রাখবে। যদি কোনো কারণে পাসপোর্ট হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায়, তবে কর্মী নিজ খরচে তা আবার করে নেবে। চুক্তির ২০ ধারার ৩ উপধারায় কর্মীর পাসপোর্ট নিয়োগকর্তার কাছে রাখার কিছু শর্ত উল্লেখ আছে—১. চিকিৎসার সুবিধার জন্য, ২. ভিসা আবেদনের প্রয়োজনে (সাময়িক নিয়োগ), ৩. বিদেশি কর্মীর পরিচয়পত্র তৈরির জন্য ও ৪. ভিসা নবায়নের প্রয়োজনে কর্মীর পাসপোর্ট নিয়োগকর্তা সাময়িক সময়ের জন্য রাখতে পারবেন, তবে ওই সব কাজ শেষ হওয়ার পর কর্মীকে তার পাসপোর্ট ফেরত দিতে হবে। কিন্তু অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশি যত শ্রমিক বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় গেছে, সবার কাছ থেকে বিমানবন্দরেই পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে সম্প্রতি বাংলাদেশের প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়ে ৮০ জন শ্রমিকের পাসপোর্ট হাতছাড়া হয়েছে। তাদেরই একজন কুষ্টিয়ার খোকসার শাহিন রানা। দেশে ফিরে গত ২৪ অক্টোবর তাঁর সঙ্গে কথা হয় ফোনে। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে নামার পর ইমিগ্রেশন পার হওয়ার আগেই আমাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট কেড়ে নেয় কম্পানির লোকজন।’ নরসিংদীর রায়পুরার আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘পাসপোর্ট নেওয়ার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে, ফেরত দেয়নি।’

রামরুর পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘যেকোনো দেশের আইন অনুযায়ী কোনো অভিবাসী শ্রমিকের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া আইনবহির্ভূত। শ্রমিককে ক্ষমতাহীন করতে শুরুতেই পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়।’

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো আইনই একজনের পাসপোর্ট আরেকজনের কেড়ে নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। অথচ মালয়েশিয়ায় এটা অহরহ করা হচ্ছে। এটা এক ধরনের জিম্মি কৌশল। বেতন-ভাতা যাই দেওয়া হোক, শ্রমিক যেন কম্পানি ছেড়ে চলে না যায়। এর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া পুলিশ কিংবা আদালতে অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা হতে পারে।

চুক্তির আরেক বড় বরখেলাপ হলো—এক কম্পানির নামে কর্মী এনে আরেক জায়গায় কাজে খাটানো। এই শ্রমিকদের অবস্থা হয় আরো করুণ। কারণ ওরা অর্থাৎ দ্বিতীয় কম্পানি আর তখন চুক্তির পরোয়া করে না, যেহেতু তাদের সঙ্গে ওই কর্মীর কোনো চুক্তি হয়নি। তাই প্রথম দিন থেকেই শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয় শ্রমিকরা।

আরো ভয়াবহ ঘটনা পাওয়া যায় সেরামবাংয়ের ডায়নাকোরাল অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কম্পানিতে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ইউনিক ট্রাভেলস নামের রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা করে দিয়ে এখানে এসে চরম বিপাকে পড়ে ১৯২ জন শ্রমিক। ডায়নাকোরালের নামে ভিসা করে নেওয়া হলেও সেখানে তাদের কোনো কাজ দেওয়া হয় না। কারখানা থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে গুদামের মতো একটি ঘরে রেখে চুক্তির বরখেলাপ করে তাদের একেক দলকে একেক জায়গায় কাজে দেওয়া হয়। তাদেরই একজন রাজু মিয়া বললেন, ‘পরিবারের সুখের জন্য সব কিছু বিক্রি করে মালয়েশিয়া এসে এখন পথের ভিখারি হাওয়ার অবস্থা। গোডাউনের মধ্যে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। দেশের বাড়িতে পাওনাদাররা চাপ দিচ্ছে। পরিবারও আছে কষ্টে। আমাদেরও এখানে তিন বেলা খাবার জোটে না। কিছু চাল আর আলু দিয়েছে মালিকপক্ষ। তা-ই খেয়ে আছি।’

জালালউদ্দিন মোল্লা বললেন, ‘জঙ্গল থেকে শাকসবজি কুড়িয়ে নিয়ে কোনো মতে রান্না করে খাচ্ছি। ডায়নাকোরাল কম্পানিতে ভিসা হলেও কাজ দেয় অন্য কম্পানিতে। সেখানে কিছু দিন কাজ করার পর আবারও আরেক কম্পানিতে নেয়।’

ডায়নাকোরালের পরিচালক রুইবেন অভিযোগগুলো অস্বীকার করে মালয়েশিয়াকিনিকে বলেন, ‘ওরা নির্মাণ শ্রমিক, সিআইডিবি গ্রিন কার্ড ছাড়া কর্মস্থলে যেতে পারে না। কাজ শুরুর দুই মাস আগে এই কার্ড দেওয়া হয়। মেডিক্যাল, স্টিকার ও গ্রিন কার্ডের পর তারা কাজের যোগ্য হয়। এই দুই মাস আমরা শ্রমিকদের সব কিছু দিয়ে যে জায়গায় রাখি, সেটা বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কনস্যুলার পরিদর্শন করে প্রত্যয়ন করেছেন। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা আফিন ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।’

বিস্মিত হতে হয়, সাক্ষাত্কার দেওয়া ৪২ জন শ্রমিকের মধ্যে ২৮ জনই বলেছে, তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তিই হয়নি। কিন্তু উভয় সরকারের এমওইউ অনুযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে নিয়োগকর্তার চুক্তি করা বাধ্যতামূলক, যা লেখা আছে বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছে পাঠানো নিয়োগানুমতিপত্রের ১ নম্বর শর্তেই।

বায়রার সাবেক মহাসচিব মনসুর আহমেদ বলেন, ‘আসলে চুক্তি একটা সই করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের হাতে দেওয়া হয় না। কিছু ভালো কম্পানি চুক্তির কপি শ্রমিককে দেয় এবং চেষ্টা করে চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেওয়ার। যাদের চুক্তির কপি দেওয়া হয় না, তাদেরই মূলত অন্য কম্পানিতে কাজ দিয়ে কম বেতন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং বাকিটা আত্মসাৎ করা হয়।’

অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভ’-এর অ্যাড্রিয়ান পেরেইরার কাছে মালয়েশিয়াকিনি জানতে চেয়েছিল, অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে কেউ চুক্তি ভঙ্গ করলে মালয়েশিয়ার আইন কী বলে?

জবাবে পেরেইরা বলেন, মালয়েশিয়ার আইনে অনেক সমস্যা আছে। বৈধ কাগজপত্রসংক্রান্ত ঝামেলায় আদালতে এলে অভিবাসীদের আইনি সহায়তার ব্যবস্থা নেই এখানে। যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো নিশ্চিতভাবেই যথেষ্ট নয়। শ্রমিক অসন্তোষের মুখোমুখি হলে কম্পানিগুলো ওদের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে দেয় এবং তুচ্ছ অভিযোগে দেশে ফেরত পাঠায়। শ্রমিকদের আইন অনুযায়ী ছাঁটাই করা হলো কি না তা যাচাই করার ব্যবস্থা ইমিগ্রেশনের নেই। বৈষম্যও আছে। অভিবাসীদের দুই সপ্তাহ আটক বা রিমান্ডে রাখা যায়; কিন্তু মালয়েশীয়দের দুই দিনের বেশি রাখা যায় না। ওই দুই সপ্তাহে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। কর্মঘণ্টার হেরফের করে মালয়েশীয় কম্পানি বিদেশি শ্রমিকদের কোনো ছুটি ও সাপ্তাহিক বন্ধ না দিয়ে টানা খাটাতে পারে।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ১০ লাখ শ্রমিকও যদি এখানে থাকে এবং কমপক্ষে ১ শতাংশ শ্রমিকও যদি সমস্যায় পড়ে, তবু সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার। এত শ্রমিকের দেখভাল করার মতো জনবল আমাদের নেই। এখানে আমাদের বড় দুর্বলতা আছে।’

আপনার কর্মকর্তাদের ডাকলেও যান না; কখনো গেলেও মালিকপক্ষের সুবিধা নিয়ে চলে আসেন—টিয়ং টটের শ্রমিকদের এই অভিযোগ তুলে ধরলে হাইকমিশনার বলেন, ‘এ বিষয়টা আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে।’

মালয়েশিয়ায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ইফতেখারুল আলম

দালালের প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসীর স্বজনের কান্না

দালালের প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসীর পরিবার (ভিডিও-১)

দালালের প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসীর পরিবার (ভিডিও-২)

দালালের প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসীর পরিবার (ভিডিও-৩)

দালালের প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসীর পরিবার (ভিডিও-৪)

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।

এ সময় সেখানে আরো অন্তত চারজনকে তাদের পরিবারের সদস্যদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলতে শোনা যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

বেশির ভাগ রোগীর শরীরে কাঁপুনি, গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, হাত-পায়ের গিরায় ব্যথা, ঠাণ্ডা, সর্দি ও নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।

উপসর্গে মিল থাকায় অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না যে আসলে কোনটিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। জ্বর, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে ডেঙ্গু ও কভিড পরীক্ষাও করাতে হবে। সময়মতো রোগ নির্ণয় হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র‌্যাশএসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।

 

জ্বর কেন হয়?

চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়াএসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।

ডা. লেলিন আরো বলেন, এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র‌্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মন্তব্য

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।

সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।

২০ থেকে ২৫ জন জুলাই যোদ্ধা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হামলাকারীদের অভিযোগ, দ্বিতীয় ধাপের টাকা দেওয়ার কথা বলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজনকে তিন-চারবার ঘোরানো হয়েছে। টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়েছিল গতকাল। 

তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।

ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।

ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।

গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?

সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।

জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।

তাঁদের রাগের একটা প্রেক্ষাপট আছে। তাঁদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তাঁরা ভেঙেছেন, তাঁরা উত্তেজিত, অবসাদগ্রস্ত। তাঁরা ভবিষ্যতে কী করবেন, সেটি নিয়ে হতাশার মধ্যে আছেন। সে কারণে তাঁরা হয়তো ভাঙচুর করেছেন।

এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য
প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।

এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

এ ছাড়া গত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক গ্রহণযোগ্য বলে সাফাই গেয়েছিলেন, সেসব পক্ষপাতদুষ্ট পর্যবেক্ষককে এবার অনুমোদন দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহারও রোধ করতে চায়।

নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।

কারণ কানাডার গত বছরের নির্বাচনেও তাদের এটা মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তাদের পরামর্শ চেয়েছি। এ বিষয়ে আমরাও বেশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আশা করি, বিভিন্ন দেশের মতো কানাডার পূর্ণ সহায়তা পাব।
আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কনফিডেন্ট।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।

সিইসি বলেন, কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।

নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি নাসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি নো। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।

পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।

বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।

সিইসি বলেন, ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়নএসবসহ।

গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেনভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়। আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মন্তব্য
মিডিয়াকে হুমকি

ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।

মিডিয়াকে হুমকি দেওয়া সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে সহায়ক নয়।

বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ