<p>ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে বন্ড দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২৮ প্রতিষ্ঠানের ৩১৬ মালিককে তলব করে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকে চিঠি ছাড়া শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এসব চিঠি ছাড়া হবে। চিঠি প্রাপ্তির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বন্ড কমিশনারেটে হাজির হতে হবে। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের কাছে অভিযোগ তুলে ধরে এর জবাব চাইবেন।</p> <p>বন্ড কমিশনারেট বলছে যে ২২৮ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে অনিয়মের তথ্য মিলেছে এর মধ্যে ১০৯টি প্রতিষ্ঠান মূলত কাগজে-কলমেই আছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই অস্তিত্বহীন। আবার অনেকগুলো অকার্যকর প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ একসময় উৎপাদনে থাকলেও তিন বছর ধরে উৎপাদনে নেই। ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরাসরি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ১৩০টি, প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ৮২টি, সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা নেওয়া প্রতিষ্ঠান ১৫টি।</p> <p>ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেনের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।  </p> <p>তবে অভিযোগ আছে, অতীতে অভিযানে বন্ড দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে এনবিআরের দেওয়া ঠিকানায় তলবের চিঠি পাঠানো হলেও অকার্যকর ও অস্তিত্বহীন কারখানার একজন মালিককেও পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি হিসেবে বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সাময়িকভাবে বিন (ব্যবসা চিহ্নিতকরণ নম্বর) লক করা ও ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। প্রকৃত মালিকের সন্ধান না পাওয়ায় পাওনা রাজস্ব আদায়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। গত কয়েক বছরে এমন অন্তত এক হাজার ৫০০ প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে, যারা মূলত ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেছে।</p> <p>গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এ তিন মাসে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত ১৫টি টাস্কফোর্স কমিটি নতুন করে অভিযান চালায়। এ সময়ে ২২৮ প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে, যারা বন্ড সুবিধা নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে।</p> <p>ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা নিয়ে টাস্কফোর্স কমিটি টঙ্গী, আশুলিয়া, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর, উত্তরা, নয়াবাজার, বংশাল, বকশিবাজার, হাতেম টাওয়ার, ধোলাইখালসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের একটি টাস্কফোর্স কমিটিকে নেতৃত্বদানকারী ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের উপকমিশনার রেজভী আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিন মাসে ২২৮টি অস্তিত্বহীন ও অকার্যকর প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের তলব করা হচ্ছে।’</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এর আগে বিভিন্ন সময়ে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হলেও এদের মালিকদের খোঁজ মেলেনি। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনের আওতায় এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আনা গেলে অন্তত জেল-জরিমানার ব্যবস্থা হতো। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনী এসব অসাধু মালিককে ঠিকই খুঁজে বের করতে সক্ষম হতো।’    </p> <p>প্রসঙ্গত, শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কাঁচামাল বিনা শুল্কে আমদানির সুবিধা দিয়েছে সরকার। শর্ত আছে যে আমদানি করা কাঁচামালের সবটুকুই কারখানায় ব্যবহার করতে হবে। মিথ্যা তথ্যে আমদানি করা যাবে না।  নতুন করে চিহ্নিত ২২৮ প্রতিষ্ঠান এসব শর্ত ভঙ্গ করেছে। ঢাকা কাস্টমস কমিশনারেট থেকে চিহ্নিত ওই ২২৮ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনকে অবহিত করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কারখানা ঠিক কত টাকার পণ্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনেছে তারও তদন্ত ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট করছে বলে জানা গেছে।</p> <p> </p>