ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ১৩ জুলাই ২০২৫
২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ মহররম ১৪৪৭

‘গলাকাটা’ মোবাইল ফোন

  • গ্রাহকদের পাত্তাই দেয় না মোবাইল অপারেটররা
কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
‘গলাকাটা’ মোবাইল ফোন

অফার ছিল ৪১ টাকা রিচার্জে ১০ দিন মেয়াদে ২ জিবি ইন্টারনেটের। কিন্তু টাকা রিচার্জের পর ২ জিবি ইন্টারনেট মিললেও মেয়াদ পাওয়া গেল মাত্র দুই দিনের। ভুক্তভোগী পাবনার চাটমোহরের গাজীউর রহমান গ্রামীণফোনের গ্রাহক। গত ২৫ জানুয়ারির ঘটনা এটি।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে (ডিএনসিআরপি) আবেদন করেছেন। এ অধিদপ্তরে এয়ারটেলের গ্রাহক লালবাগের মো. আরিফ হোসেন ভূঁইয়ার অভিযোগ, তিনি তাঁর বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩ ডিসেম্বর ১১৭ টাকা রিচার্জ করেন। কিন্তু তাঁর অনুমতি ছাড়াই এয়ারটেল তাদের ইচ্ছামতো ইন্টারনেট বান্ডেল দেয় এবং ওই টাকা নিয়ে নেয়। আরিফ হোসেন ভূঁইয়ার আরো অভিযোগ, এর আগেও এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে এবং বিষয়টি এয়ারটেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও প্রতিকার পাননি।

রবির গ্রাহক চট্টগ্রামের হালিশহরের জাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, তিনি অননেট ও অফনেট পার্থক্য তুলে দেওয়ার এবং এর সঙ্গে সঙ্গে ‘এফএনএফ’-এ কম টাকায় কথা বলার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতেন না। গত ২৪ জানুয়ারি রবির ওয়েবসাইটে ‘এফএনএফ’-এর অফার দেখেই তিনি ৪০ টাকা রিচার্জ করেন এবং নিজের ‘এফএনএফ’ পার্টনারের সঙ্গে কথা বলার পর লক্ষ করেন, অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। রবির কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলে সেখান থেকে তাঁকে জানানো হয়, কয়েক মাস আগেই ‘এফএনএফ’ সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী এ গ্রাহকের প্রশ্ন, বন্ধ হয়ে গেলে কেন গ্রাহকদের তা জানানো হয়নি।

কেন রবির ওয়বসাইটে ওই অফারের প্রচার বহাল থাকল। জাহিদুল তাঁর অভিযোগের সঙ্গে ওই অফার প্রচারের স্ক্রিনশটও যুক্ত করেছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এ ধরনের অভিযোগ প্রচুর। কিন্তু অন্যান্য খাতের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু থাকলেও মোবাইল ফোন গ্রাহকদের ‘ভোক্তা অধিকার’ প্রায় ২১ মাস ধরে স্থগিত। আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে তাদের অভিযোগের নিষ্পত্তি হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের জানিয়ে দিচ্ছেন, আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই। এ সত্ত্বেও ২০১৭ সালের ২৮ মে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পর থেকে গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এক হাজার ৮৪৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে। আর আপাতত প্রতিকার মিলবে না—এই তথ্য জানার পর অভিযোগপত্র জমা দেননি এর কয়েক গুণ গ্রাহক।

গত সোমবার ডিএনসিআরপিতে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (গবেষণাগার উপবিভাগ) শাহীন আরা মমতাজ ও সহকারী পরিচালক (তদন্ত ) মো. মাসুদ আরেফিনের সঙ্গে আলোচনায় এসব তথ্য জানা যায়। তাঁরা জানান, মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে দুইটি রিট হয়েছে। রিট দুটি কজ লিস্টে (দৈনন্দিন কার্যতালিকা) না আসায় শুনানি শুরু হয়নি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ‘কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ বা ক্যাব-এর চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বিষয়টি সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রাহকদের স্বার্থে এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শুরু হলে আমরা পক্ষ হতে চাই। মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক সেবার অনেক অভিযোগ রয়েছে। অনেকে এর শিকার হচ্ছে।’ দুদকের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিন্তু বাড়তি দুর্ভোগের আশঙ্কায় সবাই অভিযোগও করে না। আমাদের প্রত্যাশা মহামান্য আদালত এর দ্রুত নিষ্পত্তি করবেন।’

যে ব্যবস্থা নিয়েছিল ডিএনসিআরপি : ২০১৭ সালের প্রথম দিকে গ্রাহকদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবিকে জরিমানা করে ডিএনসিআরপি। রবিকে জরিমানা করা হয় একাধিকবার। মো. রুবেল মিয়া নামের এক গ্রাহকের অভিযোগের পর শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রবি আজিয়াটাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রুবেলের অভিযোগ ও প্রশ্ন ছিল : রবি অফারে বলা হয়েছিল, ৭৪৬ টাকা রিচার্জ করলে আনলিমিটেড ১৬ জিবি ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। কিন্তু মেয়াদ ৩০ দিন। যে অফারের মেয়াদ ৩০ দিন সেটি কী করে আনলিমিটেড হয়?

এরপর বিজ্ঞাপনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা না দেওয়ার কারণে আনিসুল হাই নামে রবির এক গ্রাহক ভোক্তা অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ে প্রতারণার অভিযোগ করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রবিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই বছরের এপ্রিলে তিন গ্রাহকের পৃথক তিন অভিযোগের ভিত্তিতে রবিকে চার লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গ্রাহক মো. সাইফুল রশীদ শাফিন অভিযোগ করেন, ভ্যাটসহ ২৮ টাকায় ৫০ এমবি ইন্টারনেট ডাটার অফার দেওয়া হয়, একটি লিংকে গেলে সারা দিন বাংলা নাটক দেখা যাবে। কিন্তু তিনি ওই লিংকে গিয়ে কোনো নাটক দেখতে পাননি। এ অভিযোগে রবিকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সোহাগ নামে আরেক অভিযোগকারী ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানান, ৯৮ টাকা রিচার্জে ২৮ দিনের মেয়াদে রবির দেড় জিবি ইন্টারনেটের অফার তিনি গ্রহণ করেন। কিন্তু রিচার্জ করার পর তাঁকে দেওয়া হয় এক জিবি ইন্টারনেট। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯-এর ৪৪ ও ৪৫ ধারায় রবিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

আল-আমিন নামে আরেকজন অভিযোগ করেন, তিনি প্রতিদিন দুই টাকার বিনিময়ে হেলথ টিপস নামে একটি ভ্যাস সার্ভিস নেন। সার্ভিসটি বন্ধ করতে গেলে নির্ধারিত শর্টকোড দিলেও তা বন্ধ হয়নি। সার্ভিসটি চালু থাকার কারণে তাঁর মোবাইল ব্যালান্স থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ অভিযোগে রবিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সব শেষ ওই বছরের ৪ মে সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. জাকারিয়া খানের অভিযোগে রবিকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জাকারিয়ার অভিযোগ ছিল, ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল ইন্টারনেট অফারের একটি মেসেজ দেওয়া হয়। যাতে লেখা ছিল—২৭ টাকা রিচার্জে সাত দিনের মেয়াদে ৪০০ মেগাবাইট (এমবি) ইন্টারনেট দেওয়া হবে। কিন্তু দেওয়া হয় ৩০০ এমবি।

গ্রামীণফোনকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয় আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিক নামের এক গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর আমি ‘দারুণ ঈদ অফার’ নামের ২৮ দিন মেয়াদি এক জিবির সঙ্গে দুই জিবি ফ্রি একটি অফার কিনি। ভ্যাটসহ যার মূল্য ২৭৫ টাকা বলা হয়েছিল। কিন্তু অফারটি গ্রহণ করলে ৩২৫ টাকা ৭৪ পয়সা নিয়ে নেয় গ্রামীণফোন। পরে একটি এসএমএসের মাধ্যমে তাঁকে জানানো হয় সাত দিনের মেয়াদে ফ্রি দুই জিবি ডেটা দেওয়া হয়েছে এবং এটি ব্যবহার করা যাবে রাত ২টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু অফারের এসএমএসে এই শর্তের বিষয় উল্লেখ ছিল না।’

২০১৭ সালের ১৯ মার্চ বাংলালিংককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় আহম্মদ আলী মিনু নামের এক গ্রাহকের অভিযোগে। মিনু অভিযোগ করেন, বাংলালিংকের গ্রাহকসেবা নম্বরে কল করলে কোনো সেবা না দিয়েই এক ঘণ্টা ২৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড ধরে রিং বাজতে থাকে। কেউ কল রিসিভ না করলেও তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৫৪ টাকা ৭৯ পয়সা চার্জ কাটা হয়। কিন্তু এর কোনো সদুত্তর বাংলালিংক তাঁকে দেয়নি।

বিটিআরসি নির্দেশনা কার্যকর হয়নি : ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে মোবাইল সেবা বিষয়ে যে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়, তাতে গ্রাহকদের অভিযোগ ছিল, অপারেটররা এত বেশি প্যাকেজ ও প্রমোশনাল অফার দিচ্ছে যা বাছাই করা কঠিন। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এবং তাদের প্রতারিত হতে হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের একসঙ্গে ২০টি রেগুলার অফার এবং ১৫টি প্রমোশনাল অফারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু গত ২৪ জানুয়ারির অপর এক নির্দেশনায় বলা হয়, প্যাকেজ/বান্ডেল/ অফারের সর্বোচ্চ সংখ্যা পরে নির্ধারণ করে জানানো হবে।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, বিটিআরসিতে গ্রাহকদের অভিযোগ গ্রহণের জন্য ১০০ নম্বরের একটি হটলাইন চালু রয়েছে। কিন্তু সেখানে অভিযোগ গ্রহণ করা হলেও তেমন প্রতিকার মেলে না।

মোবাইল অপারেটরদের বক্তব্য : সার্বিক এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করলেও কেউ নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁরা এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় অ্যামটবের কাছে কালের কণ্ঠ’র প্রশ্ন ছিল,  ‘মোবাইল অপারেটররা ভোক্তা অধিকার সংক্ষরণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কে উচ্চ আদালতে যে রিট করেছে, তার পেছনে কী যুক্তি ছিল বা কী কারণে এই রিট করা হয়। আর সরকার গ্রাহকদের জন্য প্যাকেজের সংখ্যা কমিয়ে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে সে বিষয়ে অপারেটরদের অবস্থান কী?’

রিট সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে গতকাল বুধবার অ্যামটব লিখিতভাবে জানায়, ‘টেলিকম একটি উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন খাত এবং একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ—বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই আমরা মহামান্য উচ্চ আদালতের কাছে টেলিকম সেবায় অভিযোগ দায়ের সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা (গাইডলাইন) প্রদান করার জন্য আবেদন করেছিলাম। আমার আশা করি উচ্চ আদালত শিগগিরই আমাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করবেন।’

আর প্যাকেজ সংক্রান্ত প্রশ্নে অ্যামটবের বক্তব্য, ‘মোবাইল অপারেটররা সব সময় গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা প্রদান করে এবং তা কতটা সরল করা যায় তা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।’

মন্ত্রী যা বললেন : যোগাযোগ করা হলে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্যাকেজ সংখ্যা সীমিত করার জন্য আমার নির্দেশনা ছিল। ওরা (অপারেটররা) ওদের স্বার্থের পক্ষে তো বলবেই। কিন্তু নানা ধরনের প্যাকেজ গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমি ফোনে কথা বলব তার জন্য ১০০ অপশন কার স্বার্থে? মোবাইল অপারেটরদের শত শত প্যাকেজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো কমাতে হবে, সহজ-সরল করতে হবে। আগামী মাসেই এটা করা হবে। আগে ঘণ্টা মেয়াদে প্যাকেজ ছিল। এখন সর্বনিম্ন তিন দিন করা হয়েছে। এটাও সাত দিন হবে। এসব বিষয়ে কোনো ছাড়া দেওয়া হবে না।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিবিসি বাংলার দাবি

শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলাচ্ছে না

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনার অডিও ফাঁস কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ গঠনযত যাই হোক, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ভারতের অবস্থানে এখনো কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের অনুরোধ মেনে তাঁকে বিচারের জন্য প্রত্যর্পণ করার যে কোনো সম্ভাবনা নেই, দিল্লিতে ওয়াকিবহাল মহল সেটাও এখনো জোর দিয়েই বলছে। শেখ হাসিনা নিজেও এই দুটি বিষয়ের কোনোটি নিয়েই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

গত এগারো মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের আশ্রয়ে থাকাকালে তিনি নিয়মিতই দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাষণ দিচ্ছেন বা নানাভাবে ইন্টার‌্যাক্ট করছেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ও ইউটিউব চ্যানেলে তিনি শেষ লাইভ ইন্টারঅ্যাকশন করেছেন গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায়। কিন্তু সেখানে এই প্রসঙ্গগুলোর কোনোটিই আসেনি।

তবে বিবিসির যে তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশের অডিও ফাঁস করা হয়েছে, তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক পোস্টে সেটিকে অপসাংবাদিকতার নির্লজ্জ নজির বলে দাবি করেছেন।

এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের যে শত শত নেতাকর্মী ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁদেরও অনেকেই তাঁদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খণ্ডন করার চেষ্টায় সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এরই মধ্যে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, সেটা বিবিসির তদন্তে প্রমাণিত। এই পরিস্থিতিতে ভারতের যে আর টালবাহানা না করে এবং শেখ হাসিনাকে আড়াল না করে তাঁকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া উচিতশফিকুল আলম সেই দাবিও জানিয়েছেন।

তবে ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক ও শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় পরিষ্কার বলছেন, এই দাবি মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ শেখ হাসিনাকে যে পরিস্থিতিতে ও ভারতের যে নীতির ভিত্তিতে এ দেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি।

তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর যদি কোনো অডিও কেউ গোপনে রেকর্ড করে সেটা ফাঁসও করে দেয়; ভারতের সেটা দেখার বিষয় নয়, আর তাঁকে এ দেশে আতিথেয়তা বা রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সেই অডিওর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।  

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্য অভিযুক্তদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটা আদৌ কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে, তা নিয়েও ভারত সন্দিহান। এই পরিস্থিতিতে সেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হলেও ভারত যে সেটাকে গুরুত্ব দেবে না, সে ইঙ্গিতও পরিষ্কার।

অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি, বা মন্তব্যও করেনি।

প্রত্যর্পণের অনুরোধে যে কারণে সাড়া নেই : বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যাতে বিচারের জন্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ জানিয়ে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে একটি নোট ভার্বাল পাঠিয়েছিল গত ডিসেম্বর মাসেই।

ভারত সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, কিন্তু তার পর প্রায় সাত মাস হতে চললেও সে ব্যাপারে আর কোনো সাড়াশব্দ করেনি। বাংলাদেশের ওই প্রত্যর্পণের অনুরোধকে ভারত যে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না, সেটাও আকারে ইঙ্গিতে একাধিকবার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারত সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেছিলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে ঠিকই, কিন্তু কোনো দেশ যদি মনে করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হবেন, তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার অধিকারও তাদের আছে।

তাঁর যুক্তি ছিল, বাংলাদেশে যেভাবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা আনা হচ্ছে, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা পর্যন্ত আদালতে হাজির হতে পারছেন না কিংবা সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক বা দীপু মনির মতো সাবেক নেতা-মন্ত্রীদের আদালত প্রাঙ্গণেই শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, তাতে এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন সম্পন্ন হলেও তাতে বিচারপ্রক্রিয়ার গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন হয়েছেএমনটা ভারত মনে করছে না। আর সে কারণেই চার্জ গঠন হলেও শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ভারত বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবেএই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে এগুলো সবই মূলত ঘোষিত যুক্তি। ভারতের একাধিক সাবেক কূটনীতিবিদ বিবিসিকে বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করার আসল কারণটা হলো রাজনৈতিক। তাঁদের বক্তব্য হলো, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে যিনি ভারতের আস্থাভাজন ও পরীক্ষিত বন্ধুর ভূমিকায় ছিলেন, তিনি শেখ হাসিনা। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের এক সাবেক হাইকমিশনার বিবিসিকে বলেছেন, আজ সংকটের মুহূর্তে ভারত যদি তাঁর পাশে না দাঁড়ায়, ভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশের কোনো নেতা-নেত্রীই ভারতকে আর কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না। আর এটাই সেই প্রকৃত কারণচার্জশিট পেশ হোক বা না হোক, অডিও লিক হোক বা না হোকভারত যে জন্য কখনোই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না।

শেখ হাসিনা নিজেই যা বলার বলবেন : গত বাহাত্তর ঘণ্টায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার যেসব অভিযোগ উঠেছে বা আদালতে যে চার্জশিট পেশ হয়েছে, তা নিয়ে ভারত অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, আমরা শেখ হাসিনার মুখপাত্র নই। তিনি যেসব বক্তব্য দেন তার সঙ্গে ভারত সরকারের যে কোনো সম্পর্ক নেই, সেটা অনেক আগেই আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি।

ওই কর্মকর্তার বক্তব্য ছিল, শেখ হাসিনা ভারতের একজন অতিথি, কোনো রাজনৈতিক বন্দি নন। কাজেই ভারত তাঁর মুখে লাগাম পরানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি কখনোই! সূত্র : বিবিসি বাংলা

মন্তব্য

শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি

    এক বছরে পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুদ্ধি অভিযানে বিএনপি

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি। এমনকি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা।

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার আসামি পাঁচজনকে এরই মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন বলেছে, গত এক বছরে অপকর্মের অভিযোগে এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গত শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত সব ইউনিটকে জানিয়ে দেওয়া হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের জেলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে একটি শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কী প্রক্রিয়ায় এই অভিযান চালানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো দাগি অপরাধী কোনোভাবে দলের সঙ্গে যুক্ত কি না, দলে নতুন করে কেউ অনুপ্রবেশ করেছে কি না, বিএনপির নতুন সদস্য যাঁরা হয়েছেন তাঁদের আগের ইতিহাস কী তা পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দল থেকে ইউনিট কমিটিগুলোকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সম্প্রতি বলেছেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রিজভী গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় বিএনপি বা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নামে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের রাতেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার।

কোনো ছিদ্রপথে দু-একজন দুষ্কৃতকারী ঢুকে পড়লে সেটা সব সময় হয়তো খোঁজ রাখা যায় না। এত বড় একটি পরিবার। কিন্তু কোনোভাবে যদি দুষ্কৃতকারীকে চিহ্নিত করা যায়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দল কখনো কার্পণ্য করেনি।

মূল আসামিদের এজাহার থেকে বাদ দেওয়া রহস্যজনক : পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূল আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার না করা এবং মামলার এজাহার থেকে তাদের বাদ দেওয়া রহস্যজনক বলে দাবি করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে।

তিন সংগঠনের পক্ষে যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট, ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরায় যাদের দেখা গেছে, আশ্চর্যজনকভাবে তাদের মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে, তারা অদ্যাবধি গ্রেপ্তারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। বাদীর মেয়ে বলেছেন, মামলার এজাহারে খুনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজন খুনিকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। ঘটনার ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল না! এটি একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।

মোনায়েম মুন্না বলেন, কারা কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্যজনকে আসামি করল, এটি আমরা জানতে চাই। আর ঘটনাটি বুধবারের। শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগের ঘটনা কেন দুই দিন পর প্রচার করা হলো? এর পেছনে কারা জড়িত, সেটিও খুঁজে দেখা উচিত। আপনাদের মাধ্যমে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এই প্রশ্নটি রেখে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা এক তীব্র মানসিক যাতনা নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করছি। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে পুরো জাতি স্তম্ভিত। আমি এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সভ্যতার এই সময়ে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইন্ধনদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তার মধ্যে আমাদের তিন সংগঠনের পাঁচজনকে গতকাল আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছি অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির জায়গা থেকে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি। অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।

তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর হতেই হবে। আপনারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। এখানে আমাদের যদি কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করীম পল, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ।

মন্তব্য

খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা শনাক্ত

    ১১ মাসে ২৭ হত্যা
খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
খুলনায় সাবেক যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ডে  জড়িতরা শনাক্ত

খুলনা মহানগরে ১১ মাসে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি, ছিনতাই, হামলার মতো ঘটনা। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনার বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে এবং পরে রগ কেটে নিজ বাড়ির সামনে হত্যা করে যুবদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লাকে।

তাঁর হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। তবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

খুলনার পুলিশ দাবি করছে, ১১ মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশির ভাগের কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জড়িতদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

পুলিশ চেষ্টা করছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে। খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত খুলনা মহানগরীতে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই সময়ে মামলা করা হয় ২০টি।

খুলনা মহানগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা বিএনপির নেতারা।

মহানগর বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুসহ পদস্থ নেতারা গত শুক্রবার রাতে যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, খুন, অস্ত্রের মহড়া, চুরি, ডাকাতি ও লুটপাটের মতো ঘটনা খুলনায় নিত্যদিন ঘটছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলি, খুনসহ সন্ত্রাসী ঘটনা। তাঁরা বলেন, মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায়ভার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তাই দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

খুলনার নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, সন্ধ্যা নামলেই খুলনাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।

এখন আবার শুরু হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের ঘটনা। খুলনার পুলিশ প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। যার ফলে অপরাধগুলো ঘটছে। খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান জানান, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

নিহত মাহবুবুরের বাবা মো. আ. করিম মোল্লা বাদী হয়ে গতকাল দুপুরে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের সবাই অজ্ঞাতপরিচয়। মামলা তদন্ত করছেন দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত হত্যার কারণ বলা যাচ্ছে না। পুলিশের দুটি এবং ডিবির একটি মিলে মোট তিনটি দল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্ট-পরবর্তী দুটি মামলার জের, দলীয় কোন্দল, স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি, মাদক ও চরমপন্থী সংযোগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলাসহ সাতটি বিষয় সামনে রেখে পুলিশ তদন্ত করছে।

গত শুক্রবার দুপুর দেড়টায় দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলযোগে আসা তিন অস্ত্রধারী মাহবুবুরকে (৪০) প্রথমে গুলি করে এবং পরে দুই পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। ওই দিন বিকেলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

গতকাল সকালে নিহতের বাড়িতে গেলে মাহবুবুরের স্ত্রী এ্যারিন সুলতানা বলেন, আমার স্বামী সবাইকে বিশ্বাস করতেন। ঘটনার কিছুদিন আগে থেকেই তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সম্প্রতি বাড়ি এসেও একটা গ্রুপ হুমকি দিয়ে গেছে। নিহত মাহবুবুরের দুটি মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে জান্নাতুল (১১) চতুর্থ শ্রেণির এবং ছোট মেয়ে মাওয়া (৯) দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

নিহত মাহবুবুরের এক আত্মীয় বলেন, মূলত দুটি মামলাকে কেন্দ্র করেই তার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধ হয়। একটি মামলার বাদী মাহবুব নিজে এবং অন্যটির বাদী মো. জাকির হোসেন। ওই দুটি মামলার আসামিরা মাহবুবকে কয়েকবার হুমকি দিয়েছিল।

মন্তব্য
আইন উপদেষ্টা

সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সোহাগ হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে করা হবে।

গতকাল শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।

স্ট্যাটাসে ড. আসিফ নজরুল লেখেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

তিনি জানান, পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২-এর ধারা ১০ অনুযায়ী এই মামলাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ