ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭
ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ

দাবি না মানলে কাল রোড মার্চ

  • খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনসহ সাত দফা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দাবি না মানলে কাল রোড মার্চ
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ মঞ্চে ড. কামাল হোসেনসহ অন্য নেতারা। ছবি : কালের কণ্ঠ

খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনসহ সাত দফা দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ওই হুমকি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের দাবি না মানা হলে আগামীকাল ৮ নভেম্বর রাজশাহী অভিমুখে রোড মার্চ এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) অভিমুখে পদযাত্রা করবেন তাঁরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশে যা হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না।

আইনের শাসনের লঙ্ঘন করা হচ্ছে, যাকে তাকে যেনতেনভাবে জেলে অন্তরীণ করা হচ্ছে। এগুলো করে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়, সংবিধানের কথা বলা হয়। সংবিধানকে ষোলো আনা উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে আসছে। এ থেকে আমাদের বাঁচার উপায় হলো—দেশের মালিক জনগণকে দাঁড়াতে হবে, শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে।
আমি বলতে চাই, রাস্তা বন্ধ করে, বাস বন্ধ করে, লঞ্চ বন্ধ করে জনগণকে নিষ্ক্রিয় করা যাবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের অধিকার উদ্ধার করে ছাড়ব। জনগণ জেগেছে, দেশের মালিকরা জেগেছে। এই জাগরণের মধ্য দিয়ে আমরা দেশের মালিকানা ফিরে পাব, জনগণের জয় হবেই।
’ জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা পায়ে হেঁটে কষ্ট করে এখানে দাঁড়াবেন, জেলায় জেলায় দাঁড়াবেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, ঐক্যবদ্ধ থাকব।’

মঞ্চের পেছনে ব্যানারে লেখা ছিল—‘‘সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিসহ সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত জনসভা।”

বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘আমি শুরুতে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। আর যাঁরা রাজবন্দি আছেন তাঁদের সকলেরও মুক্তি দাবি করি।

’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। আপনাদের সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সবাইকে মিলে পাহারাদার হতে হবে, ভোটও দিতে হবে। ভোট পাহারা দেওয়া মানেই হলো স্বাধীনতা পাহারা দেওয়া। এ দেশ কোনো রাজতন্ত্র নয়, কোনো মহারানির নয়, কোনো রাজার নয়; জনগণ ক্ষমতার মালিক। জনগণ যেভাবে মালিকানা প্রয়োগ করে ভোটের মাধ্যমে। ভোট সুষ্ঠু না হলে, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যায়। স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য, ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য আজকে আমরা এখান থেকে শপথ নিয়ে যাই, আপসহীনভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

ড. কামাল অভিযোগ করে বলেন, ‘যেভাবে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা কোনো ব্যক্তির রাষ্ট্র নয়। সরকারি দলের জন্য এক রকম, বিরোধী দলের জন্য অন্য রকম। সরকারি দল সব আইনের ঊর্ধ্বে আর বিরোধী দল যেনতেনভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিদিন বিরোধী দলের কর্মীদের পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, জেলে যেতে হচ্ছে। এটা বন্ধ হতে হবে। স্বাধীন দেশে এটা চলতে পারে না।’

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাত দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আজকে এই পিজি হাসপাতালে ছোট একটি কক্ষে আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় বন্দি কাটাচ্ছেন। আমি জানি না, জনগণের এই উচ্চারণ পৌঁছাচ্ছে কি না। আমি বিশ্বাস করি, তিনি সেখান থেকে শুনছেন এবং বলছেন, ‘এগিয়ে যাও, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য এগিয়ে যাও, বিজয় নিশ্চিত করো।’ কারাগারে যাওয়ার আগে তিনি বলে গেছেন, ‘আমি কারাগারে যেতে ভয় পাই না।’ তিনি বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে, জাতীয় নেতাদের আহ্বান জানাবে।’ আজকে আল্লাহর কাছে এই শুকরিয়া আদায় করছি এই মঞ্চে জাতীয় নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাচ্ছেন, জনগণের মুক্তি চাচ্ছেন।’’

সংলাপ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘এখনো আমাদের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। সংলাপ তথাকথিত প্রহসনের মতো। বলা হলো, আর গ্রেপ্তার করা হবে না, মামলা তুলে নেওয়া হবে। কিছুই করা হয় নাই। প্রতিদিনই গ্রেপ্তার হচ্ছে। এই জনসভা থেকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার কাছে লম্বা তালিকা আছে, যা পড়ে শেষ করা যাবে না। শুধু গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে চার হাজার ৩৭১টি মামলা হয়েছে। ২৫ লাখ আসামি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগামীকাল একটা ছোট সংলাপের ডাক দিয়েছে। আমরা রাজি আছি। সংলাপে বিশ্বাস করি। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনগণের সমস্যার সমাধান হোক, জনগণ মুক্তি পাক। কিন্তু এটা নিয়ে নাটক করলে চলবে না। আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। আমরা আশা করব, আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, জনগণের স্বার্থে সাত দফা দাবি মেনে নেবেন।’

প্রধান বক্তা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘এই লড়াই মুক্তির লড়াই, এই লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আমরা দাবি আদায় ছাড়া ঘরে ফিরব না। ৭ দফা দাবি মেনে নিন। তা না হলে আপনার উপায় নেই। আর গায়েবি মামলা দেবেন না, কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, বেগম জিয়াসহ সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিন। অন্যথায় খবর আছে।’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি বিএনপিতে যোগদান করিনি। আমি ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেছি। যদি জয়ী হতে চান তাও আপনাদের হাতে, হারতে চাইলে তাও আপনাদের হাতে।’ তিনি বলেন, ‘তারা বলে বিএনপি রাজাকারের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছিল। এই অভিযোগ সত্য নয়। আওয়ামী লীগ প্রথম শরিষাবাড়ীর নুরুল হকের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছে। রাজাকার মহিউদ্দিন, আশিকুর রহমানের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন দিতে হবে হাসিনাকে। আমি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। কারণ খালেদার মুক্তির কোনো দরকার নেই। আমাদের চিন্তা করতে হবে, হাসিনার মুক্তি কবে হবে। বেগম জিয়া জেলখানায় গিয়ে গণতন্ত্রের প্রতীক হয়েছেন। জেলে বন্দি থেকে বাংলাদেশের কোটি মানুষের অন্তরে জায়গা নিয়েছেন। আমি জানি বাংলাদেশকে কেউ বন্দি রাখতে পারে না। তাই খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা যাবে না।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে একটি বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতায় আছে। এই পাঁচ বছর ধরে সরকার একটা লুটপাটের তাণ্ডব তৈরি করেছে। ব্যাংক লুট করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক চুরি করেছে, শেয়ারবাজার চুরি করেছে, সোনা চুরি করে বাংলাদেশকে তামা বানিয়ে দিয়েছে। এই সরকার ভোটের নামে ভোট চুরি করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যখন ভোট হয়, তখন কেন্দ্রে ভোটার ছিল না, টিভিতে দেখেছেন কুকুরের ছবি।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সাত দফা দাবিতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। প্রথম সংলাপ কোনো কাজের সংলাপ হয় নাই। আমরা আগামীকাল যাচ্ছি। আমরা কোনো ঝগড়া করতে চাই না। আমরা বলতে চাই, আগামী দিনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা সংলাপে এখনো কোনো কিছু পাই নাই। আজকে সরকার সংলাপের মাধ্যমে, সমঝোতার মাধ্যমে না আসলে রাজপথ ও আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প থাকবে না। আপনারা প্রস্তুত হোন।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে তাদের চোখে ছানি পড়েছে, কানে শুনতে পারে না। উন্নয়ন ও দুর্নীতির কারণে তাদের উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেছে। এর থেকে উত্তরণে সকলকে এক হতে হবে।’

জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মো. মনসুর আহমেদ বলেন, ‘আমরা সংলাপে আছি। আমরা জনগণকে বলতে চাই, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, আঙুল বাঁকা করতে হতে পারে। সকলে প্রস্তুতি নিন।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই মঞ্চে যাঁরা আছেন, তাঁরা কেউ প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা না। যারা একাত্তরে গণতন্ত্র উদ্ধারের বিপক্ষে ছিল তারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিল। আজ যারা গণতন্ত্রের বিরোধী তারাও স্বাধীনতাবিরোধী।’

দুপুর ২টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টার পর। মূল অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে সংগীতশিল্পী মনির খান, বেবী নাজনীনসহ জাসাসের শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান ও দলীয় সংগীত পেরিবেশন করেন। বিকেল ৩টার মধ্যে উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মানুষের ঢল উদ্যান ছাড়িয়ে মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে গড়ায়।

গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর ঢাকায় এটি তাদের প্রথম জনসভা।

বিএনপির শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম আলীম, জেএসডির শফিকউদ্দিন আহমেদ স্বপন ও গণফোরামের মোশতাক আহমেদের পরিচালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য দেন জেএসডির তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, এম এ গোফরান, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।

বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, জয়নাল আবেদীন, আমানউল্লাহ আমান, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, কাজী আবুল বাশার, আহসানউল্লাহ হাসান, আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নীরব, শফিউল বারী বাবু ও রাজীব আহসান বক্তব্য দেন।

২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিকল্পধারার একাংশের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী প্রমুখ।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে  জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বহুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা। প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তবে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি নেমেছিল ৮.৯১ শতাংশে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০৫ শতাংশ, জুনে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

মূল্যস্ফীতির এই পতন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা বয়ে আনলেও বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, সবজি, মাছসহ খাদ্যপণ্যের দামে আগুন। তাই পরিসংখ্যানগত স্বস্তি বাস্তব জীবনে এখনো প্রতিফলিত হয়নি।

 

খাদ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে

বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে নেমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮.৫৯ শতাংশ।

একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।

তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকার খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা/কেজিতে পৌঁছেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল ব্রি২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে, যা আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মাছের দামেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার ঘোষণা ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি দিতে পারেনি।

 

আয় বেড়েছে কম, ব্যয় বেড়েছে বেশি

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের অদৃশ্য কর-এর মতো। বিশেষ করে মজুরিনির্ভর মানুষের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুনে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ শতাংশে, কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে।

 

প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে গতি

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।

তবে পুরো অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১ শতাংশ। এই ধীরগতির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, আর এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ৩.৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাত কিছুটা উন্নতি করলেও গতি কমেছে শিল্প খাতে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৪২ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো৫.৮৮ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪.৩১ শতাংশ। চলতি মূল্যে এই প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়ছে। তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে, ফলে মানুষের বাস্তব আয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে।

মন্তব্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক উপাদান (প্রাইমা ফেসিয়া) পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্র নিযু্ক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলার অভিযোগ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি এবং অভিযোগ থেকে তাঁর অব্যাহতিও চাওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আমির হোসেন ওই আরজি তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করার আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন।

ওই দিন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মামলার অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন : দাবি আইনজীবীর

অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমির হোসেন প্রসিকিউশনের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলেননি।

আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর সঠিক কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণদাফন, লাশ গুম করে ফেলার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন বলেছিল, জুলাই গণ-আন্দোলন চলার সময় বিটিভি ভবন, মেট্রো রেলসহ কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মেট্রো রেলসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এইসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধ প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের গণভবনে এনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছেএমন নজিরও নেই।

জুলাই গণ-আন্দোলনে আসামিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, গণ-আন্দোলনের সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। পরে তিনি অভিযোগ থেকে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৪ আগস্ট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত চারটি মামলার বিচারকাজ চলতি বছর শেষ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। চারটি মামলার অভিযোগই আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচারে সময় নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

চার মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তিনিসহ এই চার মামলায় মোট আসামি ৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে পলাতক ৪১ জন। গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।

এ ব্যাপারে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চারটি মামলা আনুষ্ঠনিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার হবে। অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিলে মামলা ওইখানেই শেষ।

আর যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষকে প্রস্তুতির জন্য ২১ দিন সময় দিতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে আমাদের আরজি থাকবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার জন্য। যদি ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি বিধান তুলে ধরে এই প্রসিকিউটর বলেন, আইনে আছে, অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে তা চলবে বিরতিহীনভাবে। কোনো পক্ষ মুলতবির আবেদন করতে পারবে না।

সব মিলিয়ে আশা করছি, চলতি বছরই চারটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দিতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে তা আমলে নিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগ আমলে নেওয়া হলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে চার মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় পরিকল্পিতভাবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে একটি মামলায়। মামলাটি ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্য দুজন পলাতক। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঘটনা ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি তিনটি মামলাও বেশ আলোচিত।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১০ জুলাই এ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন। বাকি ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে বলা হচ্ছে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলা। সরকার পতনের আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় তরুণ। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়া। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটিই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। গত ৩ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আগামী ১৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা রয়েছে। মামলার আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে চারজনকে।

আশুলিয়ায় মৃতপ্রায় একজন ও পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর মামলাটি লাশ পোড়ানোর মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেদিনই তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হতাশা

মামলার তদন্তকাজ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও বিচার নিয়ে আশাবাদী শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই বিচারটা দেখতে পাব এবং ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু তদন্তেই দীর্ঘ সময় লাগল। তার পরও বলতে চাই, যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাউকে যেন এ মামলায় যুক্ত না করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভীর। পরে ১৯ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অভিযোগটি কী পর্যায়ে আছে, জানি না। গত সপ্তাহেও আমি প্রসিকিউশনে গিয়েছিলাম। গেলে শুধু একটা কথাই বলে, কাজ করছি, বিচার হবে। কিন্তু আদৌ বিচার হবে কি নাজানি না। আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা হতাশায় ভুগছি।

মামলার বাদী এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার দাবি জানান আবুল হাসান। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ২৭টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

আগামী ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই দিন বা এর আগে-পরে যেদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সম্মতি দেওয়া হবে, সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। সেই হিসাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফল প্রকাশের সময় রয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ