জাতীয় সংসদের অধিবেশনকক্ষে পিনপতন নীরবতা। কক্ষের বড় পর্দায় একের পর এক ভেসে উঠছে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার ছবি। পানিতে ভাসছে অসংখ্য নারী-পুরুষের লাশ। আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে চোখ মুছতে দেখা গেল।
জাতীয় সংসদের অধিবেশনকক্ষে পিনপতন নীরবতা। কক্ষের বড় পর্দায় একের পর এক ভেসে উঠছে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার ছবি। পানিতে ভাসছে অসংখ্য নারী-পুরুষের লাশ। আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে চোখ মুছতে দেখা গেল।
এটা ছিল গতকাল শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনের চিত্র।
এরপর দীর্ঘ আলোচনা শেষে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার দিনটি জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব পাস হয়। একই সঙ্গে এই দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবটির ওপর দীর্ঘ চার ঘণ্টার সাধারণ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় অর্ধশত সংসদ সদস্য অংশ নেন।
প্রমাণ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার, ভয়াল গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, ২৫ মার্চ গণহত্যা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট, গণহত্যা নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের বক্তব্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও ইপিআরে গণহত্যার চিত্র স্থান পায়।
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছেন। এটা নিয়ে কেন বারবার বিতর্ক হবে।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার জীবনের বড় দুঃখ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালন করে যেতে পারিনি।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ২৫ মার্চ কালরাতেই পাকিস্তানি বাহিনী প্রায় এক লাখ বাঙালির ওপর গুলি চালায় বলে ওই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, পরাজিত অপশক্তি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে। খালেদা জিয়া মনেপ্রাণে পাকিস্তানি, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের তিনি অবমাননা করেছেন। এখনো উনি দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেননি। শেখ হাসিনা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। সিমলা চুক্তি অনুযায়ী তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধাপরাধীরও বিচারের দাবি জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়ার দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে। তারা সংসদকে কলুষিত করেছে। খালেদা জিয়া ও অপশক্তিকে চিরতরে অপসারণ করতে হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বাঙালিদের জীবনে দুটি কালরাত এসেছে। একটি ২৫ মার্চ গণহত্যা, অন্যটি ১৫ আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকাণ্ড। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। এক রাতেই লাখো বাঙালিকে তারা হত্যা করে। সারা দেশকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চেয়েছিল। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। তাই ২৫ মার্চ জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি ওই দিনে সরকারি ছুটির দাবি জানান তিনি।
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ‘এরই মধ্যে জাতিসংঘ ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করতে পারি।’
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণহত্যা বিংশ শতাব্দীর পাঁচটি গণহত্যার মধ্যে অন্যতম। ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব।’
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে এই গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি পাব বলে আমরা আশা করি। পাকিস্তানিরা এখনো আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। পাকিস্তানের কাছে আমাদের পাওনা ৩৫ হাজার কোটি টাকা আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, সারা বিশ্বকে জানাতে হবে এত দাম দিয়ে কোনো জাতি স্বাধীনতা কেনেনি। তাই পাকিস্তানিদের দোসরদের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জেনারেল জিয়া ২৬ মার্চ পাকিস্তানিদের পক্ষে সারা দিন বোয়ালখালীতে ছিলেন, আক্রান্ত সৈনিক বা মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে একচুলও সাহায্য করেননি।
ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পাকিস্তানের আইএসআইয়ের টাকায় এখনো দেশের ভেতরে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিতে পারে—এই ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। এই ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
আবদুল মান্নান বলেন, পাকিস্তান আগেও একটি বর্বর জাতি ছিল, এখনো আছে। প্রধানমন্ত্রী যে স্থির ও ভিডিও চিত্র দেখিয়েছেন তাতে পাকিস্তান বর্বর ছিল, তা আরো শক্তভাবে প্রমাণিত হলো। খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রমাণ হয় তারা এখনো পাকিস্তানি প্রেতাত্মা হিসেবে এ দেশে টিকে থাকতে চায়।
১ ডিসেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ পালনের প্রস্তাব : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করে বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দিবস আছে, অনান্য দিবস আছে। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করি। তাই ১ ডিসেম্বরকে আমরা মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালন করতে পারি কি না, এটা বিবেচনা করার জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করছি। প্রস্তাবটি সংশোধিত আকারে সংসদে গৃহীত হলে খুব সুন্দর হবে।’ এ সময় তিনি সংশোধিত প্রস্তাব তুলে ধরেন।
সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘যেহেতু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের এ দেশীয় সহযোগীরা বাংলাদেশের ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, যা আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ৭৩-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী গণহত্যা এবং যেহেতু গণহত্যার শিকার বিভিন্ন দেশ গণহত্যায় নিহতদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি গণহত্যার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য জাতীয় পর্যায়ে গণহত্যা দিবস পালন করে, সেহেতু আমরা ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব করছি।’ এরপর তিনি প্রস্তাবে উল্লেখ করেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সংঘটিত গণহত্যায় নিহতদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যেহেতু বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি দেশ এই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করেছে, যেহেতু জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ২০১৫ সাল থেকে ৯ ডিসেম্বর দিবসটি যথাযথ
মর্যাদায় পালন করছে, সেহেতু বাংলাদেশে ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব করছি।’
শেষ হলো দশম সংসদের চতুর্দশ অধিবেশন : দশম জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশন গতকাল শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কিত ঘোষণা পাঠ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর মধ্য দিয়ে অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।
এর আগে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সমাপনী ভাষণ দেন। সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপপ্রচারের কঠোর সমালোচনা করেন।
সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী যা বললেন : সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপপ্রচারের সমালোচনা করে বলেন, ‘যত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরো উন্নত হচ্ছে। কোনো অপশক্তির কাছে আমরা মাথানত করব না।’
জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করে সংসদ নেতা বলেন, জাতীয় সংসদে একসময় থাকার কোনো পরিবেশ ছিল না। এখন যাঁরা বিরোধী দলে আছেন, তাঁদের বক্তব্যও গঠনমূলক। এ জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।
সংবাদপত্রকর্মীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অধিকাংশ সংবাদপত্রের মালিকই বেসরকারি। বেসরকারি মালিকরা কী করবেন, সেটি তাঁদের বিষয়। এর পরও আমরা ওয়েজ বোর্ড করে দিচ্ছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সম্পর্কিত খবর
চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনের পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। স্থায়ীভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে না, ব্যাখ্যা চেয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে নিজাম উদ্দিনকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামে চাঁদা না পেয়ে ‘মব’ তৈরি করে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মচারী ও জামায়াত নেতা নওশেদ জামালকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন নিজাম উদ্দিন।
গতকাল শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক শোকজ নোটিশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রশিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনামের নির্দেশনায় ওই শোকজ নোটিশ দেওয়া হলো।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ—সংগঠনের নীতিমালা ও শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কিছু কার্যকলাপে জড়িত হয়েছেন। একজন দায়িত্বশীল পদধারী সদস্যসচিব হিসেবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংগঠনের ভাবমূর্তি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজাম উদ্দিনের সংগঠনের সদস্যসচিব পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করার কথা উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে একই সঙ্গে নিজাম উদ্দিনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে না—সে বিষয়ে একটি লিখিত ব্যাখ্যা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে সংগঠন নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম পুলিশের কাছে আবেদন করেন এক নারী।
গতকাল সকালে ওই আবেদন করেন রিয়াজুল জান্নাত নামের ওই নারী। তিনি নগরীর বাগমনিরাম দক্ষিণ এলাকার বাসিন্দা নওশেদ জামালের স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
আবেদনে রিয়াজুল জান্নাত উল্লেখ করেন—কিছুদিন ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে নিজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর স্বামীর কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন।
আবেদনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী এই নেতাকে নিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এদিকে সংগঠনের কারণ দর্শানোর নোটিশটি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী নেতা নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে আমার জবাব কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।’
উগ্র জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। গতকাল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উগ্র জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি জানার পর কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিচয় ও তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কিত তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মালয়েশিয়ার আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান পুনরাবৃত্তি করছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার তিনজন কারাগারে : মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক হওয়ার পর দেশে ফেরা তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ উর রহমানের আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গতকাল শনিবার ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের (নন জিআর) উপপরিদর্শক মোস্তফা হোসেন কালের কণ্ঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আসামিরা হলেন জাহিদ, নজরুল ও রেদোয়ান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাঁদের কারাগারে আটক আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে শুক্রবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনজনকে দেশে পাঠানো হয়। তাঁরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটস বা আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোকে অর্থ পাঠাতেন।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং বাকি ১৬ জন এখনো পুলিশি হেফাজতে বলেও জানান দেশটির আইজিপি। তাঁর সন্দেহ, পুরো নেটওয়ার্কে ১০০ থেকে ১৫০ জনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
দেশটির আইজিপি বলেন, ‘তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গি মতবাদও প্রচার করতেন এবং আরো বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই চক্রে যুক্ত করার চেষ্টা করতেন।’
মালয়েশিয়া পুলিশের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আটক বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ও ই-ওয়ালেটে ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতেন। এই নেটওয়ার্কটি সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএসের সেলগুলোকে নিয়মিতভাবে সহায়তা করত।
এর আগে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আইএস সংশ্লিষ্ট এক বিস্ফোরণের পর দেশটির সরকার জঙ্গি তৎপরতা দমনে কঠোর অবস্থান নেয়। এর পর থেকে শত শত সন্দেহভাজনকে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
আজ ৬ জুলাই রবিবার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে কালের কণ্ঠের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাই আগামীকাল সোমবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে কালের কণ্ঠ অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে। —সম্পাদক
।প্রতিবেশী দেশের শিল্প ও কর্মসংস্থান শক্তিশালী করতে দেশের শিল্পকে রুগ্ণ করা হচ্ছে। এমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র খাতের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। সরকার সম্প্রতি তুলা আমদানিতে নতুন ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এ সময় বক্তারা এটা ভারতের নীলনকশা—এমন অভিযোগ তুলে বলেন, আগাম কর বাস্তবায়ন করা হলে দেশের সুতা ও বস্ত্রকল সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে এই বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিটিএমএর পরিচালক মো. খোরশেদ আলম, রাজিব হায়দার, শহীদ আলম, আবুদুল্লাহ আল মামুন, মো. সালেহউজ্জামান, বাদশা গ্রুপের বাদশা মিয়া, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) উপদেষ্টা আইয়ুব ভূইয়া, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হোসেন মেহমুদ, নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমল পোদ্দার।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ২ শতাংশ কর নির্ধারণ প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে ৫০ শতাংশ কর দিতে হয়। একদিকে ১৮ শতাংশ ব্যাংকঋণের সুদ, আবার অন্যদিকে ইনকাম ট্যাক্সের নামে ব্যবসার পুঁজি থেকে ৫০ শতাংশ কেটে নিলে কিভাবে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তা কারখানা চালু রাখবে।
তিনি বলেন, ‘এত দিন শুনেছি সরকার বড় বড় প্রকল্পে হাত দেবে না; এখন শুনছি ভোলায় ব্রিজসহ বিভিন্ন খাতে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেবে। সার্বিকভাবে ভালো নেই দেশের বস্ত্র খাত।’ এ সময় একতরফা সিদ্ধান্ত না নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আশা করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস সরকার বিষয়টা আমলে নেবে এবং এই আগাম কর প্রত্যাহার করবে।
রাজিব হায়দার বলেন, ২ শতাংশ আগাম কর আরোপ করে সরকার বস্ত্রশিল্পকে ধ্বংসের জন্য কফিনের শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। এর ফলে দেশীয় গণমাধ্যমের চেয়ে প্রতিবেশী দেশের মিডিয়াগুলোতে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। তারা বেশ খুশি। কারণ তারা জানে, এর বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।
মো. সালেহউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের সুতাকলগুলো বন্ধের পাঁয়তারা ছলছে। প্রতিবেশী দেশ এই খাতে ৪০ শতাংশ প্রণোদনা দিলেও বাংলাদেশ ২৫ শতাংশ থেকে ১.২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, এই সংকট থেকে বের হওয়া না গেলে সংকটে পড়বে দেশের অর্থনীতি।
বিটিএমএর আরেক পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দেশের বস্ত্রকল ধ্বংসের পরিকল্পনা নতুন নয়। এটি শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। এ ধরনের নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান তিনি।
বিটিএমএ পরিচালক হোসেন মেহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীরা দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হলো। ফলে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর পথে যেতে পারবেন না।