ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

উপমন্ত্রী জয় ও তাঁর ৫ ভাইয়ের ‘সাম্রাজ্য’

তৈমুর ফারুক তুষার, নেত্রকোনা থেকে ফিরে
তৈমুর ফারুক তুষার, নেত্রকোনা থেকে ফিরে
শেয়ার
উপমন্ত্রী জয় ও তাঁর  ৫ ভাইয়ের ‘সাম্রাজ্য’

গত বছর ১৩ অক্টোবর যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব এ এস এম মামুন মন্ত্রণালয় থেকে নেত্রকোনা বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব আরিফ খান জয় এমপি নেত্রকোনা বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বাহী কার্যালয়ে প্রতিনিধি হিসেবে আলহাজ মিজানুর রহমান খান, পিতা-হাজি মিজাজ উদ্দিন খান, গ্রাম-মোক্তারপাড়া, সদর-নেত্রকোনাকে মনোনয়ন প্রদান করেছেন। বর্ণিত অবস্থায় এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মিজানুর রহমানকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয়ে ঠিকাদারি ও তদবিরে আধিপত্য করার সুযোগ করে দিতে এ চিঠি দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে নেত্রকোনা বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ রকম একটি চিঠি পেয়েছিলাম। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। তারা জানায়, সরকারি কোনো অফিসে এ রকম প্রতিনিধি মনোনয়নের সুযোগ নেই।’

এভাবে নানা কাজে উপমন্ত্রিত্বের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নেত্রকোনায় আরিফ খান জয় ও তাঁর পাঁচ ভাই নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

তাঁরা এখন শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম-দুর্নীতি, টেন্ডার-ঠিকাদারির নিয়ন্ত্রক। তাঁরা নিজেদের আধিপত্যের স্বার্থে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদেরও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। অথচ নিজ দলের নেতাকর্মীরা কোনো সুপারিশের জন্য গেলে তাদের শুনতে হচ্ছে, ‘টাকা দিয়ে মন্ত্রিত্ব এনেছি, টাকা ছাড়া চাকরি হবে না।’ দলে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চালাচ্ছেন জুলুম-নির্যাতন।
তাঁদের ক্ষমতার কাছে অসহায় নেতাকর্মীরা কালের কণ্ঠ’র কাছে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানানো ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।’

চলছে পারিবারিক রাজত্ব

নেত্রকোনা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক নেতা বলেন, উপমন্ত্রী জয় ও তাঁর পাঁচ ভাই মিলে নেত্রকোনায় এক পারিবারিক রাজত্ব কায়েম করেছেন। ভাইদের কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, কেউ ভাইয়ের মন্ত্রিত্বের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিছুদিন আগেও মফস্বল শহরের আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো জীবনযাপন করলেও এখন সবাই বিলাসী জীবন কাটান। প্রত্যেক ভাই এখন একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন।

ভাইদের মধ্যে সবার বড় শামীম খান টিটু। তিনি চা বাগানে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে এখন তিনি নেত্রকোনায় থাকছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছোট ভাইয়ের মন্ত্রিত্বের প্রভাবে টিটু সম্প্রতি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি হয়েছেন। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নানা কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন টিটু।

ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয় ও সবচেয়ে প্রভাবশালী নূর খান মিঠু। তিনি নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জেলায় ঠিকাদারি ও অন্যান্য ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, জায়গাজমি দখল, টিআর-কাবিখায় অনিয়মের বহু অভিযোগ শোনা যায় মিঠুর বিরুদ্ধে।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নেত্রকোনা জেলার সার মনিটরিং কমিটির সদস্য হয়েছেন মিঠু। তিনি এ কমিটিতে সংসদ সদস্যের প্রতিনিধিও। এ পদের অপব্যবহার করে মিঠু জেলার সার ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছেন। সম্প্রতি দক্ষিণ বিসিউড়া ইউনিয়নে সারের ডিলারশিপও নিয়েছেন তিনি।

জানতে চাইলে নেত্রকোনার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহেদুল হক জানান, নূর খান মিঠু দক্ষিণ বিসিউড়ায় এবং তাঁর ভাই সাইফ খান বিপ্লব কেগাতি ইউনিয়নে মাস তিনেক আগে সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন।

জয়ের আরেক ভাই সাইফ খান বিপ্লব নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের সহসভাপতি, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের  সভাপতি। তিনি আবার

বারহাট্টা থানার সিরাম ইউনিয়নে অবস্থিত তাহেরা মান্নান উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। জামায়াত নেতা মহসীন আহমেদ এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

জয়ের ছোট ভাই অমিত খান শুভ্র বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করলেও তিনি দুগিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। এ মাদ্রাসায় জামায়াত-বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শুভ্রর বিরুদ্ধে।

জয়ের সবচেয়ে ছোট ভাই মাসুদ খান জনি নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক। তিনি তাঁর অনুসারীদের কাছে ‘নেত্রকোনার যুবরাজ’ নামে খ্যাত। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জনি। ভাইয়ের মন্ত্রিত্বের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে জনি মেয়র পদে দলীয় সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

জামায়াত-বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা গত কয়েক দিনে নেত্রকোনা শহর ও মালনী এলাকায় দুই দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনের পোস্টারে সয়লাব হয়ে গেছে। ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর এ মহাসম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন হেফাজত নেতা আবদুল কাইয়ুম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপমন্ত্রী জয়। এই কাইয়ুমের নেতৃত্বে ঢাকায় হেফাজতের তাণ্ডবের দিন নেত্রকোনায় বিশাল মিছিল বের হয়। এদিন কাইয়ুমের নেতৃত্বে হেফাজত নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে। এর প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগ সমাবেশ করে নেত্রকোনায় কাইয়ুমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। সেই কাইয়ুমের সঙ্গেই বিজয় দিবসের এক দিন পর এক মঞ্চে উঠতে যাচ্ছেন জয়।

গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জয় শহরের আন্তজেলা বাস টার্মিনালের পাশে এ আর খান পাঠান সিএনজি স্টেশন উদ্বোধন করেন। এ আর খান পাঠান মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনা জেলা শান্তি কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। অথচ এইা চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীর সন্তানদের সঙ্গে জয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

গত বছর জেলার কাইলাতি ইউনিয়নের বালী এলাকায় আব্বাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পান বিএনপিকর্মী আবদুর রেজ্জাক। রেজ্জাকের আবেদনপত্রের ওপর উপমন্ত্রী জয় লেখেন, ‘আবেদনটি ইতিবাচক, জরুরি মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।’

কাইলাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আব্বাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপিকর্মী রেজ্জাককে নিয়োগ না দিতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু উপমন্ত্রীর চাপে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।’

এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। কিছুদিন আগে পুলিশে চাকরি পান রামকৃষ্ণপুর বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম দুলালের ছেলে ছাত্রদলকর্মী ফারুক, পাঁচকাহনিয়া পূর্বপাড়া এলাকার ৪ নম্বর ব্লক বিএনপির সভাপতি ছানু মিয়ার ছেলে রতন, পাঁচকাহনিয়া পূর্বপাড়া মুনসুরের ছেলে ছাত্রদলকর্মী আলম, দুগিয়ার শিবিরকর্মী আতাউর রহমান সোহাগ। আমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল্লাহর মাধ্যমে উপমন্ত্রী জয়ের ভাই মিঠুর সহযোগিতায় এসব চাকরি হয় বলে অভিযোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অনেক নেতার। বিএনপির জেলা কমিটির সাবেক নেতা শফিউল্লাহর চাচা এ কে এম ফজলুল হক ছিলেন নেত্রকোনা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক। এই শফি চেয়ারম্যানের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে জয়ের বড় ভাই মিঠুর। তিনি নেত্রকোনা শহরে শফিউল্লাহর বাসায়ই ভাড়া থাকেন।

আমতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আওয়াল বলেন, ‘মন্ত্রী (জয়) ও তাঁর ভাইকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে এসব চাকরি হয়েছে। ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে বলে জানি। যেসব বিএনপি-জামায়াত নেতা আমাদের নামে মামলা করেছেন, নির্যাতন-হয়রানি করেছেন, এখন তাঁদের ছেলেদেরই পুলিশে চাকরি হচ্ছে।’ মন্ত্রীর ভাইকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেন, ‘টাকা দিয়ে মন্ত্রিত্ব এনেছি, টাকা ছাড়া কারো চাকরি হবে না।’

আমতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আরেক নেতা ফরিদ আহমেদও একই ধরনের অভিযোগ তোলেন।

বড় ভাই মিঠুর ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা শফি চেয়ারম্যানকে নেত্রকোনা সদরের আমতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মনোনীত করতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ‘জোর সুপারিশ’ জানিয়ে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দেন আরিফ খান জয়।

দুগিয়া আব্বাসিয়া মাদ্রাসায় সম্প্রতি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আমতলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান ও জামায়াত নেতা হাদিস কাজী। এ মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়ের ভাই শুভ্র।

জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক গাজী কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জয় মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছেন। কিছু দিন আগে সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের এক নেতার কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সামনে জয়ের উপস্থিতিতেই আমি এ অভিযোগ জানিয়েছি।’

দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বংশানুক্রমিক আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক কারণে ১৭ বার জেল খেটেছেন। ১৫ নভেম্বর গাবরাগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানে সেই আমজাদকে প্রহার করেন জয় ও তাঁর কয়েকজন অনুসারী।

আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপমন্ত্রী তাঁর চাচাতো ভাই আবুল বাশারকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করার চেষ্টা করেন। যখন বুঝতে পারেন কাউন্সিলররা প্রায় সবাই আমার পক্ষে তখনই আমাকে হেয় করার চেষ্টা করেন। উপমন্ত্রী নিজে আমাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানানো ছাড়া আমি আর কী করতে পারি?’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।’

আমতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ আহমদ বলেন, ‘আমাদের উপমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের উপকার তো করেনই না, উল্টো অনেককে শায়েস্তা করতে মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। মামলায় পড়ে অনেক দিন ঢাকায় ছিলাম। পরে পাশের আসনের আওয়ামী লীগের একজন এমপির সহযোগিতায় জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরেছি।’

দখলেও পিছিয়ে নেই তাঁরা

নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, ত্রিশের দশকে শহরের অজহর রোডের নিউটাউন বড় পুকুর পার এলাকায় নিজ বাসায় বীণাপাণি নামের এক নারী ছেলেমেয়েদের পাঠদান করতেন। পরে ১৯৪২ সালে এটি বীণাপাণি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পাশেই আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। দোতলা পুরনো ভবনের নিচতলায় বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ভাঙা চেয়ার-বেঞ্চ রাখা হয়। এক সময় নেত্রকোনা মৎস্যজীবী সমিতি নামের একটি সংগঠনের কার্যালয় স্থাপন হয় ভবনের দ্বিতীয় তলায়। এর পরই ভবনটি দখলদারদের হাতে চলে যেতে শুরু করে। মহাজোট সরকারের গত মেয়াদে এখানে পুরনো ভবন ভেঙে নতুন চারতলা ভবন নির্মাণ শুরু করেন উপমন্ত্রী জয়ের ভাই মিঠু।

মিঠুর ভবনের জায়গাটি উত্তরাধিকার সূত্রে নিজেদের বলে দাবি করেন খ্যাতিমান কবি অসীম সাহা। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই জায়গাটির মালিক ছিলেন ভুবন মোহন রায়। পরে উত্তরাধিকার সূত্রে তা যতীন্দ্র মোহন রায় পান। এরপর জমিটি পান গুপন কুমার রায়। তাঁর উত্তরাধিকার হিসেবে জায়গাটির মালিক এখন আমি ও আমার দুই ভাই।’

অসীম সাহা বলেন, ‘ক্ষমতার জোরে মিঠু ভবনটি নির্মাণ করেছেন। এর বিরুদ্ধে আমরা আদালতে গেছি। পক্ষে রায়ও পেয়েছি। এখন জায়গাটি উদ্ধারের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসব।’

এদিকে নেত্রকোনা পৌরসভা সূত্র জানায়, মিঠুর চারতলা ওই ভবনটির নকশারও অনুমোদন নেই। গত বছরের ২০ জুলাই নেত্রকোনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিধি মোতাবেক নকশা অনুমোদন গ্রহণের জন্য একটি চিঠি দেন। এ চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া হয়।

নেত্রকোনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুন্নবী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওনাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এরপর যত দূর মনে পড়ে উনি আর কোনো অনুমোদন নেননি।’

মিঠুর ভবনের সামনেই জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের অংশ দখল করে একতলা ভবন বানিয়েছেন সাইফ খান বিপ্লব। বীণাপাণি বিদ্যালয়ের পাশে এ ভবনটি বিপ্লবের চেম্বার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপমন্ত্রী জয়ের ভাই হওয়ায় পুকুর দখল করলেও বিপ্লবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

 

জয় ও ভাইদের বক্তব্য

নেত্রকোনা জেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয়ে প্রতিনিধি মনোনয়নের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক সময় সরকারি কর্মকর্তারা ঠিকভাবে কাজ করেন না। কোনো অফিসকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনার জন্য এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে ওই অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার জন্য একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া দোষের কিছু নয়। এতে ওই অফিসে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা জানতে পারি। সরকারের অর্জন ম্লান হয় এমন কোনো কাজ যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে পারি।’

বিএনপিকর্মী রেজ্জাককে চাকরি পেতে সুপারিশ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘ওই পদে চাকরির জন্য আমার সামনে ছাত্রলীগের দৃশ্যমান কেউ ছিল না। যে ছেলেটিকে চাকরির জন্য সুপারিশ করেছি, তার বাবা ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন; সেটিই ছিল তাকে বিবেচনায় নেওয়ার কারণ।’

হেফাজত নেতার সঙ্গে ইসলামী মহাসম্মেলনে একই মঞ্চে অতিথি হওয়ার বিষয়ে জয় বলেন, ‘ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার জন্য আমার অনুমতি নেওয়া হয়নি। আমি মৌখিকভাবেও কোনো সম্মতি দিইনি। তারা কেন পোস্টারে লিখেছে, আমি বলতে পারব না।’

ভাই মিঠুর বিরুদ্ধে কবি অসীম সাহার জমি দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘জমির প্রকৃত মালিক যদি তিনি হয়ে থাকেন তবে অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসতে পারতেন। তিনি যদি আদালতের রায় পেয়ে থাকেন তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জায়গার দখল নিতে পারেন।’

ভাইদের ক্ষমতার অপব্যবহার প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আমার সব ভাই-ই যে যার যোগ্যতায় নিজের অবস্থান গড়েছেন। এখানে আমার মন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আমি মন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই আমার কোনো কোনো ভাই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন।’

একটি বিশেষ মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গণমাধ্যমে এসব অভিযোগ আনছে মন্তব্য করে জয় আরো বলেন, ‘আমি একজন খেলোয়াড় ছিলাম; আমি মানুষের কষ্ট বুঝি। মানুষের জন্য সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমার সম্মান, উত্থানে হিংসাকাতর হয়ে কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যারা আমার বিরুদ্ধে এসব বানোয়াট, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে ম্লান করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি স্বার্থান্বেষী মহল মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খাটো করতে চায়।’

উপমন্ত্রী জয় বলেন, ‘এমনটা চলতে থাকলে এদের বিরুদ্ধে আমাকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম খান টিটু বলেন, ‘আমি ফুটবলার ছিলাম। ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। নেত্রকোনায় ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমি ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি হয়েছি। এর সঙ্গে ভাইয়ের মন্ত্রিত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।’

টিটু বলেন পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে আমাদের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। এতে আমার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের দেশে ছোটখাটো কাজে তদবির একটি সংস্কৃতি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় মানুষের উপকারের জন্য পল্লী বিদ্যুতের জিএমকে ফোন করে থাকি। এটাকেই কেউ কেউ বাঁকা চোখে দেখছে।’

অমিত খান শুভ্র কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাইয়ের নির্বাচনের সময় আমি আমতলা ইউনিয়নে নির্বাচন সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করি। ফলে ওই এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। এ জন্য এলাকার লোকেরা আমাকে অনুরোধ করে দুগিয়া আব্বাসিয়া মাদ্রাসার সভাপতি করে।’

মাদ্রাসায় জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়োগ প্রসঙ্গে শুভ্র বলেন, ‘মাদ্রাসা লাইনে আওয়ামী লীগের লোক কম। মাদ্রাসা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে গেলে দল দেখলে চলে না। যাদের যোগ্যতা আছে, যাদের দিয়ে মাদ্রাসা ভালো চলবে, আমি তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি। এটাকেই অনেকে ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করছে।’

উপমন্ত্রী জয়ের অন্য ভাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানার জন্য তাঁদের মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন করলেও তাঁরা ধরেননি। তাঁদের প্রত্যেকের ফোনে কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে একাধিক এসএমএস পাঠালেও তাঁরা সাড়া দেননি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে  জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বহুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা। প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তবে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি নেমেছিল ৮.৯১ শতাংশে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০৫ শতাংশ, জুনে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

মূল্যস্ফীতির এই পতন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা বয়ে আনলেও বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, সবজি, মাছসহ খাদ্যপণ্যের দামে আগুন। তাই পরিসংখ্যানগত স্বস্তি বাস্তব জীবনে এখনো প্রতিফলিত হয়নি।

 

খাদ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে

বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে নেমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮.৫৯ শতাংশ।

একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।

তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকার খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা/কেজিতে পৌঁছেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল ব্রি২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে, যা আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মাছের দামেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার ঘোষণা ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি দিতে পারেনি।

 

আয় বেড়েছে কম, ব্যয় বেড়েছে বেশি

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের অদৃশ্য কর-এর মতো। বিশেষ করে মজুরিনির্ভর মানুষের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুনে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ শতাংশে, কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে।

 

প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে গতি

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।

তবে পুরো অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১ শতাংশ। এই ধীরগতির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, আর এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ৩.৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাত কিছুটা উন্নতি করলেও গতি কমেছে শিল্প খাতে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৪২ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো৫.৮৮ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪.৩১ শতাংশ। চলতি মূল্যে এই প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়ছে। তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে, ফলে মানুষের বাস্তব আয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে।

মন্তব্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক উপাদান (প্রাইমা ফেসিয়া) পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্র নিযু্ক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলার অভিযোগ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি এবং অভিযোগ থেকে তাঁর অব্যাহতিও চাওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আমির হোসেন ওই আরজি তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করার আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন।

ওই দিন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মামলার অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন : দাবি আইনজীবীর

অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমির হোসেন প্রসিকিউশনের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলেননি।

আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর সঠিক কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণদাফন, লাশ গুম করে ফেলার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন বলেছিল, জুলাই গণ-আন্দোলন চলার সময় বিটিভি ভবন, মেট্রো রেলসহ কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মেট্রো রেলসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এইসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধ প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের গণভবনে এনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছেএমন নজিরও নেই।

জুলাই গণ-আন্দোলনে আসামিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, গণ-আন্দোলনের সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। পরে তিনি অভিযোগ থেকে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৪ আগস্ট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত চারটি মামলার বিচারকাজ চলতি বছর শেষ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। চারটি মামলার অভিযোগই আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচারে সময় নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

চার মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তিনিসহ এই চার মামলায় মোট আসামি ৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে পলাতক ৪১ জন। গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।

এ ব্যাপারে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চারটি মামলা আনুষ্ঠনিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার হবে। অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিলে মামলা ওইখানেই শেষ।

আর যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষকে প্রস্তুতির জন্য ২১ দিন সময় দিতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে আমাদের আরজি থাকবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার জন্য। যদি ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি বিধান তুলে ধরে এই প্রসিকিউটর বলেন, আইনে আছে, অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে তা চলবে বিরতিহীনভাবে। কোনো পক্ষ মুলতবির আবেদন করতে পারবে না।

সব মিলিয়ে আশা করছি, চলতি বছরই চারটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দিতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে তা আমলে নিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগ আমলে নেওয়া হলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে চার মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় পরিকল্পিতভাবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে একটি মামলায়। মামলাটি ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্য দুজন পলাতক। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঘটনা ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি তিনটি মামলাও বেশ আলোচিত।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১০ জুলাই এ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন। বাকি ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে বলা হচ্ছে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলা। সরকার পতনের আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় তরুণ। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়া। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটিই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। গত ৩ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আগামী ১৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা রয়েছে। মামলার আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে চারজনকে।

আশুলিয়ায় মৃতপ্রায় একজন ও পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর মামলাটি লাশ পোড়ানোর মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেদিনই তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হতাশা

মামলার তদন্তকাজ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও বিচার নিয়ে আশাবাদী শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই বিচারটা দেখতে পাব এবং ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু তদন্তেই দীর্ঘ সময় লাগল। তার পরও বলতে চাই, যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাউকে যেন এ মামলায় যুক্ত না করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভীর। পরে ১৯ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অভিযোগটি কী পর্যায়ে আছে, জানি না। গত সপ্তাহেও আমি প্রসিকিউশনে গিয়েছিলাম। গেলে শুধু একটা কথাই বলে, কাজ করছি, বিচার হবে। কিন্তু আদৌ বিচার হবে কি নাজানি না। আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা হতাশায় ভুগছি।

মামলার বাদী এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার দাবি জানান আবুল হাসান। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ২৭টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

আগামী ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই দিন বা এর আগে-পরে যেদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সম্মতি দেওয়া হবে, সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। সেই হিসাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফল প্রকাশের সময় রয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ