ভাইদের মধ্যে সবার বড় শামীম খান টিটু। তিনি চা বাগানে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে এখন তিনি নেত্রকোনায় থাকছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছোট ভাইয়ের মন্ত্রিত্বের প্রভাবে টিটু সম্প্রতি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি হয়েছেন। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নানা কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন টিটু।
ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয় ও সবচেয়ে প্রভাবশালী নূর খান মিঠু। তিনি নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জেলায় ঠিকাদারি ও অন্যান্য ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, জায়গাজমি দখল, টিআর-কাবিখায় অনিয়মের বহু অভিযোগ শোনা যায় মিঠুর বিরুদ্ধে।
জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নেত্রকোনা জেলার সার মনিটরিং কমিটির সদস্য হয়েছেন মিঠু। তিনি এ কমিটিতে সংসদ সদস্যের প্রতিনিধিও। এ পদের অপব্যবহার করে মিঠু জেলার সার ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছেন। সম্প্রতি দক্ষিণ বিসিউড়া ইউনিয়নে সারের ডিলারশিপও নিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে নেত্রকোনার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহেদুল হক জানান, নূর খান মিঠু দক্ষিণ বিসিউড়ায় এবং তাঁর ভাই সাইফ খান বিপ্লব কেগাতি ইউনিয়নে মাস তিনেক আগে সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন।
জয়ের আরেক ভাই সাইফ খান বিপ্লব নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের সহসভাপতি, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি আবার
বারহাট্টা থানার সিরাম ইউনিয়নে অবস্থিত তাহেরা মান্নান উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি। জামায়াত নেতা মহসীন আহমেদ এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
জয়ের ছোট ভাই অমিত খান শুভ্র বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করলেও তিনি দুগিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। এ মাদ্রাসায় জামায়াত-বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শুভ্রর বিরুদ্ধে।
জয়ের সবচেয়ে ছোট ভাই মাসুদ খান জনি নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক। তিনি তাঁর অনুসারীদের কাছে ‘নেত্রকোনার যুবরাজ’ নামে খ্যাত। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জনি। ভাইয়ের মন্ত্রিত্বের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে জনি মেয়র পদে দলীয় সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
জামায়াত-বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা গত কয়েক দিনে নেত্রকোনা শহর ও মালনী এলাকায় দুই দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলনের পোস্টারে সয়লাব হয়ে গেছে। ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর এ মহাসম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন হেফাজত নেতা আবদুল কাইয়ুম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপমন্ত্রী জয়। এই কাইয়ুমের নেতৃত্বে ঢাকায় হেফাজতের তাণ্ডবের দিন নেত্রকোনায় বিশাল মিছিল বের হয়। এদিন কাইয়ুমের নেতৃত্বে হেফাজত নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে। এর প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগ সমাবেশ করে নেত্রকোনায় কাইয়ুমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। সেই কাইয়ুমের সঙ্গেই বিজয় দিবসের এক দিন পর এক মঞ্চে উঠতে যাচ্ছেন জয়।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জয় শহরের আন্তজেলা বাস টার্মিনালের পাশে এ আর খান পাঠান সিএনজি স্টেশন উদ্বোধন করেন। এ আর খান পাঠান মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনা জেলা শান্তি কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। অথচ এইা চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীর সন্তানদের সঙ্গে জয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
গত বছর জেলার কাইলাতি ইউনিয়নের বালী এলাকায় আব্বাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পান বিএনপিকর্মী আবদুর রেজ্জাক। রেজ্জাকের আবেদনপত্রের ওপর উপমন্ত্রী জয় লেখেন, ‘আবেদনটি ইতিবাচক, জরুরি মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।’
কাইলাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আব্বাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, ‘বিএনপিকর্মী রেজ্জাককে নিয়োগ না দিতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু উপমন্ত্রীর চাপে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।’
এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। কিছুদিন আগে পুলিশে চাকরি পান রামকৃষ্ণপুর বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম দুলালের ছেলে ছাত্রদলকর্মী ফারুক, পাঁচকাহনিয়া পূর্বপাড়া এলাকার ৪ নম্বর ব্লক বিএনপির সভাপতি ছানু মিয়ার ছেলে রতন, পাঁচকাহনিয়া পূর্বপাড়া মুনসুরের ছেলে ছাত্রদলকর্মী আলম, দুগিয়ার শিবিরকর্মী আতাউর রহমান সোহাগ। আমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল্লাহর মাধ্যমে উপমন্ত্রী জয়ের ভাই মিঠুর সহযোগিতায় এসব চাকরি হয় বলে অভিযোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অনেক নেতার। বিএনপির জেলা কমিটির সাবেক নেতা শফিউল্লাহর চাচা এ কে এম ফজলুল হক ছিলেন নেত্রকোনা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক। এই শফি চেয়ারম্যানের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে জয়ের বড় ভাই মিঠুর। তিনি নেত্রকোনা শহরে শফিউল্লাহর বাসায়ই ভাড়া থাকেন।
আমতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আওয়াল বলেন, ‘মন্ত্রী (জয়) ও তাঁর ভাইকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে এসব চাকরি হয়েছে। ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে বলে জানি। যেসব বিএনপি-জামায়াত নেতা আমাদের নামে মামলা করেছেন, নির্যাতন-হয়রানি করেছেন, এখন তাঁদের ছেলেদেরই পুলিশে চাকরি হচ্ছে।’ মন্ত্রীর ভাইকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেন, ‘টাকা দিয়ে মন্ত্রিত্ব এনেছি, টাকা ছাড়া কারো চাকরি হবে না।’
আমতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আরেক নেতা ফরিদ আহমেদও একই ধরনের অভিযোগ তোলেন।
বড় ভাই মিঠুর ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা শফি চেয়ারম্যানকে নেত্রকোনা সদরের আমতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মনোনীত করতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ‘জোর সুপারিশ’ জানিয়ে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দেন আরিফ খান জয়।
দুগিয়া আব্বাসিয়া মাদ্রাসায় সম্প্রতি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আমতলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান ও জামায়াত নেতা হাদিস কাজী। এ মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়ের ভাই শুভ্র।
জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক গাজী কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জয় মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছেন। কিছু দিন আগে সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের এক নেতার কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সামনে জয়ের উপস্থিতিতেই আমি এ অভিযোগ জানিয়েছি।’
দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বংশানুক্রমিক আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক কারণে ১৭ বার জেল খেটেছেন। ১৫ নভেম্বর গাবরাগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানে সেই আমজাদকে প্রহার করেন জয় ও তাঁর কয়েকজন অনুসারী।
আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপমন্ত্রী তাঁর চাচাতো ভাই আবুল বাশারকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করার চেষ্টা করেন। যখন বুঝতে পারেন কাউন্সিলররা প্রায় সবাই আমার পক্ষে তখনই আমাকে হেয় করার চেষ্টা করেন। উপমন্ত্রী নিজে আমাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানানো ছাড়া আমি আর কী করতে পারি?’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।’
আমতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ আহমদ বলেন, ‘আমাদের উপমন্ত্রী দলের নেতাকর্মীদের উপকার তো করেনই না, উল্টো অনেককে শায়েস্তা করতে মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। মামলায় পড়ে অনেক দিন ঢাকায় ছিলাম। পরে পাশের আসনের আওয়ামী লীগের একজন এমপির সহযোগিতায় জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরেছি।’
দখলেও পিছিয়ে নেই তাঁরা
নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, ত্রিশের দশকে শহরের অজহর রোডের নিউটাউন বড় পুকুর পার এলাকায় নিজ বাসায় বীণাপাণি নামের এক নারী ছেলেমেয়েদের পাঠদান করতেন। পরে ১৯৪২ সালে এটি বীণাপাণি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পাশেই আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। দোতলা পুরনো ভবনের নিচতলায় বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ভাঙা চেয়ার-বেঞ্চ রাখা হয়। এক সময় নেত্রকোনা মৎস্যজীবী সমিতি নামের একটি সংগঠনের কার্যালয় স্থাপন হয় ভবনের দ্বিতীয় তলায়। এর পরই ভবনটি দখলদারদের হাতে চলে যেতে শুরু করে। মহাজোট সরকারের গত মেয়াদে এখানে পুরনো ভবন ভেঙে নতুন চারতলা ভবন নির্মাণ শুরু করেন উপমন্ত্রী জয়ের ভাই মিঠু।
মিঠুর ভবনের জায়গাটি উত্তরাধিকার সূত্রে নিজেদের বলে দাবি করেন খ্যাতিমান কবি অসীম সাহা। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই জায়গাটির মালিক ছিলেন ভুবন মোহন রায়। পরে উত্তরাধিকার সূত্রে তা যতীন্দ্র মোহন রায় পান। এরপর জমিটি পান গুপন কুমার রায়। তাঁর উত্তরাধিকার হিসেবে জায়গাটির মালিক এখন আমি ও আমার দুই ভাই।’
অসীম সাহা বলেন, ‘ক্ষমতার জোরে মিঠু ভবনটি নির্মাণ করেছেন। এর বিরুদ্ধে আমরা আদালতে গেছি। পক্ষে রায়ও পেয়েছি। এখন জায়গাটি উদ্ধারের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসব।’
এদিকে নেত্রকোনা পৌরসভা সূত্র জানায়, মিঠুর চারতলা ওই ভবনটির নকশারও অনুমোদন নেই। গত বছরের ২০ জুলাই নেত্রকোনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিধি মোতাবেক নকশা অনুমোদন গ্রহণের জন্য একটি চিঠি দেন। এ চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া হয়।
নেত্রকোনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুন্নবী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওনাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এরপর যত দূর মনে পড়ে উনি আর কোনো অনুমোদন নেননি।’
মিঠুর ভবনের সামনেই জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের অংশ দখল করে একতলা ভবন বানিয়েছেন সাইফ খান বিপ্লব। বীণাপাণি বিদ্যালয়ের পাশে এ ভবনটি বিপ্লবের চেম্বার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপমন্ত্রী জয়ের ভাই হওয়ায় পুকুর দখল করলেও বিপ্লবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
জয় ও ভাইদের বক্তব্য
নেত্রকোনা জেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয়ে প্রতিনিধি মনোনয়নের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক সময় সরকারি কর্মকর্তারা ঠিকভাবে কাজ করেন না। কোনো অফিসকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনার জন্য এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে ওই অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার জন্য একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া দোষের কিছু নয়। এতে ওই অফিসে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা জানতে পারি। সরকারের অর্জন ম্লান হয় এমন কোনো কাজ যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে পারি।’
বিএনপিকর্মী রেজ্জাককে চাকরি পেতে সুপারিশ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘ওই পদে চাকরির জন্য আমার সামনে ছাত্রলীগের দৃশ্যমান কেউ ছিল না। যে ছেলেটিকে চাকরির জন্য সুপারিশ করেছি, তার বাবা ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন; সেটিই ছিল তাকে বিবেচনায় নেওয়ার কারণ।’
হেফাজত নেতার সঙ্গে ইসলামী মহাসম্মেলনে একই মঞ্চে অতিথি হওয়ার বিষয়ে জয় বলেন, ‘ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার জন্য আমার অনুমতি নেওয়া হয়নি। আমি মৌখিকভাবেও কোনো সম্মতি দিইনি। তারা কেন পোস্টারে লিখেছে, আমি বলতে পারব না।’
ভাই মিঠুর বিরুদ্ধে কবি অসীম সাহার জমি দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘জমির প্রকৃত মালিক যদি তিনি হয়ে থাকেন তবে অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসতে পারতেন। তিনি যদি আদালতের রায় পেয়ে থাকেন তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জায়গার দখল নিতে পারেন।’
ভাইদের ক্ষমতার অপব্যবহার প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘আমার সব ভাই-ই যে যার যোগ্যতায় নিজের অবস্থান গড়েছেন। এখানে আমার মন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আমি মন্ত্রী হওয়ার অনেক আগেই আমার কোনো কোনো ভাই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন।’
একটি বিশেষ মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গণমাধ্যমে এসব অভিযোগ আনছে মন্তব্য করে জয় আরো বলেন, ‘আমি একজন খেলোয়াড় ছিলাম; আমি মানুষের কষ্ট বুঝি। মানুষের জন্য সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমার সম্মান, উত্থানে হিংসাকাতর হয়ে কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যারা আমার বিরুদ্ধে এসব বানোয়াট, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে ম্লান করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি স্বার্থান্বেষী মহল মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খাটো করতে চায়।’
উপমন্ত্রী জয় বলেন, ‘এমনটা চলতে থাকলে এদের বিরুদ্ধে আমাকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম খান টিটু বলেন, ‘আমি ফুটবলার ছিলাম। ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। নেত্রকোনায় ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমি ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি হয়েছি। এর সঙ্গে ভাইয়ের মন্ত্রিত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।’
টিটু বলেন পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে আমাদের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। এতে আমার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের দেশে ছোটখাটো কাজে তদবির একটি সংস্কৃতি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় মানুষের উপকারের জন্য পল্লী বিদ্যুতের জিএমকে ফোন করে থাকি। এটাকেই কেউ কেউ বাঁকা চোখে দেখছে।’
অমিত খান শুভ্র কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাইয়ের নির্বাচনের সময় আমি আমতলা ইউনিয়নে নির্বাচন সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করি। ফলে ওই এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। এ জন্য এলাকার লোকেরা আমাকে অনুরোধ করে দুগিয়া আব্বাসিয়া মাদ্রাসার সভাপতি করে।’
মাদ্রাসায় জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়োগ প্রসঙ্গে শুভ্র বলেন, ‘মাদ্রাসা লাইনে আওয়ামী লীগের লোক কম। মাদ্রাসা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে গেলে দল দেখলে চলে না। যাদের যোগ্যতা আছে, যাদের দিয়ে মাদ্রাসা ভালো চলবে, আমি তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি। এটাকেই অনেকে ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করছে।’
উপমন্ত্রী জয়ের অন্য ভাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানার জন্য তাঁদের মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন করলেও তাঁরা ধরেননি। তাঁদের প্রত্যেকের ফোনে কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে একাধিক এসএমএস পাঠালেও তাঁরা সাড়া দেননি।