অনেক প্রতিবন্ধকতা জয় করেই এগিয়ে চলেছে এ দেশের নারীরা। আকাশে বিমান ওড়াচ্ছে নারী। হিমালয়ের চূড়ায় উঠছে নারী; বন্দুক কাঁধে যুদ্ধেও যাচ্ছে। নারীর নিয়োগ বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ
বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে চলেছে নারী
ফারজানা লাবনী

তবে এ দেশে নারীর এই অগ্রযাত্রা মসৃণ নয়; অনেক বাধার পাহাড় ডিঙোতে হচ্ছে তাদের; চালাতে হচ্ছে কঠিন যুদ্ধ। ভয়কে জয় করে, বাধাকে ডিঙিয়ে, সব প্রতিবন্ধকতাকে 'না' বলেই নারীর পথ চলতে হচ্ছে। কেউ তার আসার বা এগোনোর পথ তৈরি করে দেয়নি।
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এবার 'নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবতার উন্নয়ন' প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দিবসটি পালিত হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম কালের কণ্ঠকে বলেন, নারী নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনে শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। গত দুই দশকে এ দেশের নারীর ঈর্ষণীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি হয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ বছরে শিক্ষার সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। প্রাথমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের শিক্ষার হার সমান হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা মাত্র ৩ শতাংশ পিছিয়ে। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ৬ শতাংশ এগিয়ে মাধ্যমিক স্তরে। পেশাগত এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে। পেশাগত শিক্ষায় নারী ৩৮ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ৩৩ শতাংশ।
একসময় বাংলাদেশে শিক্ষিত নারীর চাকরি মানে ছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষিকা বা হালকা পরিশ্রমের কিছু। স্বামী-সন্তান-সংসার সামলিয়ে যদি সময় মেলে তবেই পরিবার থেকে তা করার অনুমতি জুটত। সরকারি চাকরিতে দু-চারজনকে দেখা গেলেও বেসরকারি চাকরিতে নারীর উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। অন্যদিকে নিজস্ব উদ্যোগে ব্যবসা করছে এমন নারীর দেখা মিলত কালেভদ্রে।
দিন বদলেছে। করপোরেট হাউস, মোবাইল কম্পানি, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন হাউস, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল- কোথায় নেই নারী!
বার্জার পেইন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগেও অনেক করপোরেট হাউসে নারী কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া যেত না। আর এখন নিয়োগ পরীক্ষায় অনেক সময় নারীদের আবেদনপত্র পুরুষদের তুলনায় বেশি থাকে। নারীরা নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারছে বলেই করপোরেট হাউসের ছোট বড় পদে তাদের দেখা যাচ্ছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে নারীর এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধকতা কমবে।
সরকারি চাকরিতেও নারীদের অংশগ্রহণ ধীরে হলেও বাড়ছে। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তথ্যানুসারে, বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া সুপারিশকৃতদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২৯তম বিসিএসে ২৮.৪৬ শতাংশ, ৩০তমতে ৩১.৪৩ শতাংশ এবং ৩৩তমতে ৩৮.২২ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ আছে, অর্থনীতিতে অতিদ্রুত বিশেষ করে চাকরি, ব্যবসায় নারীর সংখ্যা বাড়ছে। মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে ১৫.৮ শতাংশ, ২০০২-০৩ সালে ২৬.১ শতাংশ, ২০০৫-০৬ সালে ২৯.২ শতাংশ এবং ২০১১-১২ সালে ৩৯.১ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সদস্য শামসুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০০৫ সালে সরকারি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ২৯ শতাংশ। ২০১০ সালে এ হার বেড়ে হয়েছে ৩৬ শতাংশ। এ হার বাড়লেও আশানুরূপ নয়। উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে কর্মক্ষেত্রেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণ প্রায় সমান। কারণ এসব দেশে উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেশি। উচ্চশিক্ষায় পুরুষ ও নারীর অংশগ্রহণ ভারতে ১০০ঃ৭৩, শ্রীলঙ্কায় ১০০ঃ১৯২। অথচ বাংলাদেশে এ হার এখনো ১০০ঃ৬৬। তবে প্রতিবেশী দেশ দুটির তুলনায় কম থাকলেও গত ১৫ বছরে উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে এ দেশে, জানান এ কর্মকর্তা।
পর্যাপ্ত না হলেও নারী উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বেড়েছে। নির্যাতিত নারীদের সেবা দিতে পুলিশ আলাদা বিভাগ খুলেছে। যেখানে সব কর্মকর্তা নারী। আবার ২৮টি মন্ত্রণালয়ে নারীদের জন্য আলাদা বাজেট দেওয়া হচ্ছে। নারী উন্নয়নে সরকারি সহায়তা বাড়লেও তা আশানুরূপ নয় জানিয়ে শামসুল আলম বলেন, নারীর এগিয়ে নেওয়ার কথা বিবেচনায় রেখেই এখন উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়। তবে এসব পরিকল্পনায়ও কিছু সমস্যা আছে। নারীদের নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প আরো বাড়াতে হবে, যুগোপযোগী করতে হবে। উদাহরণ দিয়ে কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১৯৫টি খাতে টাকা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তার মাত্র ১৩টির সরাসরি উপকার ভোগী নারী।
নারীর উপার্জনে পরিবারে সচ্ছলতা এলেও এখনো নারী বৈষম্যের শিকার। কর্মক্ষেত্রে মজুরি কম পাচ্ছে নারী। নানা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এখনো এ দেশে সংসার এবং পরিবারের জন্য নারীর কাজ শ্রম হিসেবে বিবেচিত হয় না। কর্মক্ষেত্রে একই কাজ করেও একজন পুরুষের তুলনায় অনেক সময় কম মজুরি পায় নারী।
সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষণায় পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর কাজে মনোযোগিতা বেশি। অথচ একজন নারী শ্রমিক যেখানে ২৭৪ টাকা পায়, সেখানে একজন পুরুষ শ্রমিক পাচ্ছে ৩৬১ টাকা।
আয়শা মেমোরিয়াম হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন যেসব নারী প্রতিষ্ঠানের-রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আছেন, তাঁরা অনেক কষ্ট করে সেখানে পৌঁছেছেন। এসব সফল নারীদের এমন ভূমিকা রাখা উচিত যাতে অন্য নারীদের এগিয়ে চলার পথ সহজ হয়। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে। নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নারীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারকে নজর দিতে হবে।
নানা রকম ব্যবসায় নারীর অংশগ্রহণ এখন চোখে পড়ার মতো। স্বাবলম্বী হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়, সংসারে সচ্ছলতার জন্য নিজের জমানো অল্প কিছু অর্থর্ নিয়েই গ্রামের অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত একজন নারী ব্যবসা শুরু করার সাহস দেখাচ্ছে।
তুলশি চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান 'পল্লীবধূ'র চেয়ারম্যান মনোয়ারা তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গাইবান্ধার খামার পীরগাছা গ্রামের একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলাম। প্রথমে জমানো কিছু টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। আজকে আমার প্রতিষ্ঠানের চা অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমি যখন ব্যবসা শুরু করি, তখন ব্যবসার লাইসেন্স জোগাড় থেকে ব্যাংক ঋণ পেতে যে হয়রানির শিকার হয়েছি তা এখনকার নারীদের হতে হয় না। তবে প্রতিবন্ধকতা এখনো দূর হয়নি। এখনো অনেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে নারীর কর্মদক্ষতার চেয়ে স্বামীর আয়কে গুরুত্ব দেয় বেশি।'
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, এসএমই থেকে বড় মাপের সব ব্যবসায় নারীরা সফলতা পাচ্ছে। তবে এখনো নারীদের প্রতিষ্ঠিত হতে পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে। এখনো অনেক পরিবার মনে করে, মেয়েরা উপার্জন করলে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যাবে। স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের প্রতি মনোযোগী থাকবে না। এসব ধারণা-বৈষম্য দূর হলে মেয়েরা আরো এগিয়ে যাবে।
দুই দশক আগেও নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে পরিবারের সহায়তা পাওয়া ছিল ভাগ্যদেবীর করুণা। এখন অনেক পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। পরিবারের সদস্যরাও নারীকে আত্মনির্ভশীল হতে সাহস জুগিয়ে থাকে। একজন নারী স্বাবলম্বী হলে সংসারে সচ্ছলতা আসে।
তবে নানা ক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন হলেও ক্ষমতায়নে এখনো পিছিয়ে, যদিও সমাজের বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।
শহরের তুলনায় গ্রামের নারীরা সুবিধাবঞ্চিত বেশি। শিক্ষায়ও গ্রামের নারীরা পিছিয়ে। তবে এগিয়ে যাওয়ার যুদ্ধে সেখানকার নারীদের জীবনযাত্রায় এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
কর্মবৈচিত্র্যে গ্রামের মেয়েরা অনেক এগিয়েছে, এমন মত জানিয়ে মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, গ্রামের নারীদের মধ্যে কর্মবৈচিত্র্য এসেছে। গ্রামের একজন নারী স্বামীর বা পরিবারের পুরুষ সদস্যের সহযোগিতা ছাড়াই তরকারি বিক্রি করছে, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালছে, ডিম বিক্রি করছে। ছোট ব্যবসা থেকে বড় বড় ব্যবসায় অংশ নিচ্ছে। বেশির ভাগ সময় গ্রামের একাধিক নারী একসঙ্গে কাজ করে। এতে একসঙ্গে অনেক পরিবারে সচ্ছলতা আসে। পরিবারের পুরুষ সদস্যের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমায় নারীদের এসব কাজে তারা আপত্তি করছে না। এসব নারীকে নিয়ে কাজ করতে সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে গ্রামের অর্থনীতিতে অতিদ্রুত বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানায় ৮০ শতাংশের বেশি নারী কাজ করছে। তারা এখানে শুধু শ্রমিক হিসেবে নয়, কর্মকর্তা হিসেবেও সফলতা পাচ্ছে।
নারীরা এখন শুধু ছোট পরিসরে কাজ না করে কর্মসংস্থানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী হিসেবেও যাচ্ছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিএমইটি সূত্র মতে, ২০১১ সালে ৩০ হাজার ৫৭৯ জন, ২০১২ সালে ৩৭ হাজার ৩০৪ জন, ২০১৩ সালে ৫৬ হাজার ৪০০ জন নারীকর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে ছয় হাজার ২২৬ এবং ফেব্রুয়ারিতে সাত হাজার ৫৩৬ জনের।
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, নারীরা এখন পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে আসছে। বিদেশে গিয়ে কাজ করার প্রতি নারীদের আগ্রহ বেড়েছে। সরকার এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আশা করছি, এবারে নারীকর্মীর বিদেশ গমনের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে, যা এ দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে।
সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।
এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।
যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।
ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ভারতীয় জেনারেলের দাবি
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।
জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।
চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।
জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।
অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।
ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।
গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি
- দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।
সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।’
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।
সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ।
সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে।
এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ‘ব্যর্থতা’ এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।
খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।