ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার প্রাণ নেই। স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বুড়িগঙ্গা তিলে তিলে দখল ও দূষণের কবলে পড়ে একটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এ নদীর জায়গা দখল করে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গড়ে উঠছে স্থাপনা। কমছে নদীর প্রশস্ততা, কমছে প্রাণপ্রবাহ।
দখল আর দূষণে \'নিহত\' বুড়িগঙ্গা
বিপ্লব রহমান ও আরিফুজ্জামান তুহিন

পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, সরকার যদি বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয় তাহলে নদীটি আবার প্রাণ ফিরে পাবে। তেমনি ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের ভেতর যোগাযোগ বাড়বে। একাধিক সেতু ও বুড়িগঙ্গার উভয় পাশে বড় রাস্তা হলে রাজধানীর ওপর যেমন চাপ কমবে তেমনি কেরানীগঞ্জে বেড়ে উঠবে আধুনিক ঢাকা।
দখলে কমছে বুড়িগঙ্গা : সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বুড়িগঙ্গা দখলের নানা চিত্র। নদীর দক্ষিণ পারের আটি, খোলামোড়া থেকে শুরু করে জিনজিরা, কালীগঞ্জ হয়ে পারগেণ্ডারিয়া, হাসনাবাদ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার বুড়িগঙ্গা দখল করে ৫০০-এর ওপর পাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এভাবে দখলের পাশাপাশি আগানগর থেকে শুরু করে হাসনাবাদ পর্যন্ত একাধিক বালুমহাল দেখা গেছে। নদীর তীরে বালুমহাল হওয়ায় বাল্কহেড (বালুবাহী জাহাজ) থেকে বালু খালাস করার সময় নদী ভরাট হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা ফেরিঘাটসংলগ্ন বটতলা এলাকায় বেশ কিছু টংঘর নির্মাণের কাজ চলছে। বাবুবাজার ব্রিজের নিচের অংশের পুরোটাই দখলদারের কবলে চলে গেছে। তেলঘাট এলাকায় ওহাব নামের এক ব্যক্তি নদী দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। খেজুরবাগে বুড়িগঙ্গার দুই পাশের খাল দখল করে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। শ্যামপুরের পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে ইটের খোলা ও বালুর গদি করে অবাধে ব্যবসা করছেন ওয়াহিদ মেম্বার।
পানি, না বিষ! : বুড়িগঙ্গার নদীর পানির দূষণ সম্পর্কে বুঝতে হলে এ নদীর একজন মাঝির বক্তব্য বাস্তবের অনেক চিত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। কেরানীগঞ্জের থানাঘাটের খেয়ামাঝি সরদার মো. বদরুদ্দীন (৫৫) বলেন, 'বুড়িগঙ্গা অহন পুরাই কেমিকেল! এইটা আর নদী নাই! ১০ বছর বয়স থিকা এই নদীতে নৌকা বাইছি, মাছ ধরছি। শত শত জাওল্যা (জেলে) বাঁইচ্যা আছিল নদীর মাছের ওপর। তহন পানি আছে টলটইল্যা পরিষ্কার। পরে ট্যানারিওয়ালারা কেমিকেল ফালাইতে ফালাইতে পুরা নদীই বিষাক্ত বানাইছে। মাছ তো দূরের কথা, এই নদীতে অহন কোনো পোকামাকড়ও নাই। পানির দুর্গন্ধে মানুষজন নদীর ধারেকাছেও ভিড়ে না।'
প্রতি এক লিটার নদীর পানিতে ৫ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন না থাকলে সেখানে মাছসহ কোনো জলজ প্রাণীই বাঁচতে পারে না। অথচ বুড়িগঙ্গা নদীর কোথাও আদর্শ মাত্রার দ্রবীভূত অক্সিজেন তো নেই-ই, কোথাও কোথাও এর পরিমাণ শূন্যের কোঠায়। পরিবেশ আন্দোলনের (পবা) সর্বশেষ পরীক্ষায় দেখা গেছে, চাঁদনী ঘাট, সদরঘাট টার্মিনাল, সোয়ারীঘাট, ধোলাইখাল, পাগলা বাজারসহ ৯টি স্থানের বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ লিটারে এক মিলিগ্রামের নিচে। পবার পরীক্ষা থেকে জানা গেছে, সদরঘাট এলাকার পানিতে লিটারপ্রতি দশমিক ৪০ মিলিগ্রাম, ধোলাইখালে দশমিক ৩৮ মিলিগ্রাম, পোস্তগোলা-শ্মশানঘাটে দশমিক ৫৫ মিলিগ্রাম, শ্যামপুর খালের ভাটিতে দশমিক ৬২ মিলিগ্রাম, পাগলা ওয়াসা ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নির্গমন ড্রেনের ভাটিতে দশমিক ৩৩ মিলিগ্রাম, পাগলা বাজার এলাকায় মাত্র দশমিক ৩০ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) রয়েছে। অন্যদিকে নদীতে পড়া নালার পানিতে পিএইচের মাত্রা ১০ দশমিক ৩২ ও খালের মুখে ৯ দশমিক ৯৯ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ এই পানিতে এসিডের মাত্রা অত্যন্ত বেশি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্প থেকে দৈনিক ২১ হাজার কিউবিক মিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্যে ক্রোমিয়াম, সিসা, সালফিউরিক এসিড, পশুর পচা মাংসসহ ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে। ট্যানারি থেকে নির্গত এসব বিষাক্ত তরল ও কঠিন বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানি তো বটেই, নদীর তলদেশ, তীরের মাটি ও বাতাসকেও বিষিয়ে তুলেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় পয়ঃবর্জ্যের পরিমাণ প্রতিদিন প্রায় ১৩ লাখ ঘনমিটার। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় ওয়াসার শোধনাগারে মাত্র ৫০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য শোধন হচ্ছে। বাকি বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে।
জানা গেছে, সদরঘাট, কেরানীগঞ্জ, লালবাগ, সোয়ারীঘাট, কামরাঙ্গীরচর, শহীদনগর, আমলীপাড়া, চাঁদনীঘাট- এসব এলাকার পানি যেন 'তরল ছাই'। ওয়াসার বর্জ্য ও ট্যানারি বর্জ্য ছাড়াও তীরের শিল্প-কারখানার বর্জ্য, কাঁচাবাজারের প্রতিদিনের আবর্জনা, স্টিমার-লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযান থেকে নিঃসৃত বর্জ্য নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষণ করছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবহেলায় বুড়িগঙ্গার দুই পাশে অসংখ্য পাইপ দিয়ে স্যুয়ারেজের ময়লা সরাসরি নদীতে পড়ে। সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এ রকম দূষণের উৎসমুখ ১০৭টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গাবতলী গরুর হাট, আপেল এন্টারপ্রাইজ, বেসটেক লিমিটেড, এনডিএ, পূর্বাশা কাঁচাবাজার, ট্যানারি, ঢাকা ওয়াসা ও মিটফোর্ড হাসপাতাল। সদরঘাট থেকে ফতুল্লা বিজি মাউথ পর্যন্ত ৫৭টি উৎসমুখ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ২২টি উৎসমুখ থেকে পানি ও বর্জ্য ফেলছে। টেক্সটাইল, ডাইং, প্রিন্টিং ও ওয়াশিং কারখানাগুলো প্রতিদিন ৬০ হাজার লিটার তরল বর্জ্য নদীতে ফেলছে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বুড়িগঙ্গা দূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে কয়েক দশক ধরে প্রকাশ্যে শ দেড়েক ট্যানারি কারখানার সব রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা। এর বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীদের বহু বছরের রাজপথের আন্দোলন, জনসাধারণের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, আদালতের নির্দেশ- কোনোটিকেই মালিকপক্ষ আমলে নেয়নি। চামড়া শিল্প জাতীয় রাজস্ব আয়ের একটি বড় খাত হওয়ায় সরকারগুলোও তাদের বিরুদ্ধে রাতারাতি ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ অবস্থায় হাজারিবাগের ট্যানারি কারখানাগুলো সাভারের চামড়া শিল্প নগরে স্থানান্তর বিলম্বিত হওয়ায় পরিবেশ দূষণ অব্যাহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি-বিদেশি চাপের মুখে বহু দেন-দরবারের পর ট্যানারি মালিকরা ২০১৫ সালের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে অধিকাংশ বড় কারখানাগুলো সাভারে স্থানান্তরে উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হলে রাজস্ব আয়ের একটি বড় শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পাকা চামড়া, চামড়া পণ্য ও জুতা রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি আবু তাহের কালের কণ্ঠকে জানান, পরিবেশসম্মতভাবে চামড়া, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য তৈরি করতে তাদের ওপর বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ নানা দেশের ক্রেতা গোষ্ঠীর চাপ রয়েছে। এরই মধ্যে তারা হুমকি দিয়ে বলেছে, অন্যথায় ২০১৫ সাল থেকে তারা বাংলাদেশের কোনো চামড়া, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য কিনবে না।
বুড়িগঙ্গা বাঁচলে বদলে যাবে ঢাকা : দেশের পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠনগুলো বলছে, বুড়িগঙ্গা বাঁচিয়ে এ নদীকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করলে ঢাকা বদলে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ত শহর নিউ ইয়র্কের ওপর চাপ কমাতে ম্যানহাটন ও লং আইল্যান্ডের মধ্যে যাতায়াতের জন্য ইস্ট রিভারের ওপর সেতু নির্মাণ করেছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। এ কারণে নিউ ইয়র্কের পাশাপাশি ম্যানহাটন ও লং আইল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে। এর আদলে বুড়িগঙ্গার ওপর সেতু করা গেলে গোটা ঢাকার চেহারা বদলে যাবে।
এ বিষয়ে নাগরিক সংগঠন দুর্নিবার বাংলাদেশের সভাপতি মাসুদ পারভেজ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে উন্নত দেশের মতো করে হাতিরঝিল যদি করা যায় তাহলে বুড়িগঙ্গাকে ঘিরেও এ রকম প্রকল্প করা সম্ভব। সরকার যদি বুড়িগঙ্গার দুই তীরে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করে, নদীর ওপর একাধিক সেতু করে তাহলে বদলে যাবে ঢাকা ও কেরানীগঞ্জ। ঢাকা তখন বর্ধিত হবে। এটা করা গেলে শুধু ঢাকার ওপর চাপ কমবে তাই-ই নয়, কেরানীগঞ্জকে কেন্দ্র করে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হবে তা দেশের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।