ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ মহররম ১৪৪৭

হান্টারের একচেটিয়া বাণিজ্য আইনবিরোধী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হান্টারের একচেটিয়া বাণিজ্য আইনবিরোধী
বিশেষ কৌশলে অনুমোদন নিয়ে একচেটিয়া বাজার দখল করেছে যমুনা গ্রুপের তৈরি বিয়ার হান্টার। দেশে উৎপাদিত একমাত্র বিয়ারের স্লোগান নিয়ে অপকৌশলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে যমুনা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সঙ্গে আঁতাত করে আর কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিয়ার তৈরির অনুমোদন পেতেই দেয়নি তারা। অভিযোগ আছে, অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় বেশি অ্যালকোহল দিয়ে তৈরির পর শহর থেকে গ্রামের জনপদেও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এ হান্টার।
এখন ইয়াবা, হেরোইন ও ফেনসিডিলের মতো মাদকে পরিণত হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের এই হান্টার। বিয়ার ভেবে বেশি পরিমাণে সেবন করার কারণে হান্টারে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, সহজলভ্য হওয়ার কারণে ছাত্র, তরুণ, যুবকসহ সব বয়সের মানুষ ঝুঁকে পড়ছে। তবে এমন ত্রুটিপূর্ণ ও নিচু মানের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বেশি পরিমাণে পান করলে লিভার নষ্ট হওয়াসহ অনেক ধরনের জটিল রোগের আশঙ্কা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৌশলে লাইসেন্স নিয়ে হান্টারকে দেশের মাদকের বাজারে শীর্ষে নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে যমুনা গ্রুপ। অননুমোদিত বার ও রেস্টুরেন্টে হান্টার বিক্রি না করলে তাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রও করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মনোপলি বা একচেটিয়া বাজার তৈরি করে মাদক বাণিজ্য চালালেও হান্টারের এ আগ্রাসন দেখার যেন কেউ নেই। মাদকের উপাদান ধরা পড়ায় হান্টার ও যমুনার প্রতিষ্ঠান ক্রাউন বেভারেজের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও অপতৎপরতার কাছে তৎকালীন সরকার নতিস্বীকার করে।
হান্টারের বিপণনে একের পর এক অপকৌশল ব্যবহার করা হলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) হান্টারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। তাই ইতিমধ্যে বিভিন্ন অননুমোদিত বার, রেস্টুরেন্ট, হোটেলসহ গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারেও হান্টার বিয়ারে সয়লাব হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মোহাম্মদ আতোয়ার রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এখন আবেদন করেছে কি না আমার জানা নেই। খোলাবাজারে বিক্রি ও উপাদানের বিষয়টি আমাদের অপারেশন বিভাগ দেখে।
শর্ত ভঙ্গ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে সদ্য বিদায় নেওয়া মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘হান্টার খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে এবং এর মধ্যে বেশি অ্যালকোহল আছে- এমন অভিযোগ মাঝেমধ্যেই পাই। তবে আমরা হাতেনাতে পাইনি। বাইরে বিক্রি হচ্ছে, এমন কোনো হান্টারের সঙ্গে কারখানার সম্পর্ক না থাকলে আমরা কী করতে পারি! ৫ শতাংশের অতিরিক্ত অ্যালকোহল ব্যবহার হলে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া যাবে।’
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লেবেল তৈরির আগে মনিটরিং ছাড়া পরে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনসি কখনো হান্টার পরীক্ষা করে দেখেনি। হান্টারের নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট ডিএনসির কর্মকর্তাদের পকেটেও নিয়মিত টুপাইস (ঘুষ) ঢুকছে। এখন সাধারণ মুদি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রসাধনী বিক্রেতাও রাতারাতি পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। তাদের মাধ্যমেই হান্টার বিয়ার খোলাবাজারে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে। সহজলভ্য হওয়ার কারণে যুবসমাজ ছাড়াও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত ঝুঁকে পড়ছে মাদকে। একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি এনার্জি ড্রিংকস ক্রাউনে অধিক মাত্রায় অ্যালকোহল যুক্ত করে গোপনে বাজারে ছাড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। 
সূত্র জানায়, দেশে হান্টার বিক্রির পাশাপাশি এখন বিদেশে রপ্তানির অনুমতিও চাইছে যমুনা গ্রুপ। আর নিয়মিত মাসোয়ারায় ম্যানেজ ডিএনসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তাদের এ অনুমোদন দিতে প্রস্তুত। গত বছরের ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হান্টার রপ্তানির বিষয়ে অনুমতি চেয়েছে ডিএনসি।
ডিএনসি সূত্রে জানা গেছে, ক্রাউন বেভারেজ লিমিটেড কম্পানিকে বিয়ারের লাইসেন্স দেওয়ায় এখন অনেক কম্পানি বিয়ারের আদলে এমন মদের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে। নতুন কম্পানিগুলোর যুক্তি হলো, ক্রাউন বেভারেজকে তৈরির লাইসেন্স দিলে অন্য কম্পানিকে কেন দেওয়া হবে না।
বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে ভোক্তাদের জিম্মি করা রুখতে ২০১২ সালের ১৭ জুন সংসদে প্রতিযোগিতা আইন পাস করেছে সরকার। ওই আইনের কথা উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এ আইনে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাবিরোধী সব কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে সিন্ডিকেট, কার্টেল প্রতিরোধ করে বাজারে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির ফলে নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং শিল্পোদ্যোক্তা সহজেই বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। মাত্র কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের সুযোগ এতে বন্ধ হবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ফলে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। ওই আইন পাসের পরও যমুনার হান্টারের চেয়ে যাতে ভালোমানের বিয়ার উৎপাদন করতে না পারে, সে জন্য যমুনা গ্রুপ নানাভাবে অশুভ তৎপরতা চালিয়ে অন্য ব্যবসায়ীদের অনুমোদনের ফাইল আটকে দিচ্ছে। অথচ প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধের দায়ে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
সংসদে পাস হওয়া প্রতিযোগিতা আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিতরণ, গুদামজাতকরণ বা অধিগ্রহণসংক্রান্ত এমন কোনো চুক্তিতে বা ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আবদ্ধ হইতে পারিবে না, যাহা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে বা বিস্তারের কারণ ঘটায় কিংবা বাজারে মনোপলি অথবা ওলিগপলি (Oligopoly) অবস্থার সৃষ্টি করে।’
এই আইনের ১৬(১) কর্তৃত্বময় হিসাবে গণ্য কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইহার কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার করিতে পারিবে না। ধারা ১৬-এর অধীনে উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার বলিয়া গণ্য হইবে, যদি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (গ) ‘এমন কোন অনুশীলন অবলম্বন করে ও অব্যাহত রাখে, যাহা বাজারে অন্যদের প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে; কোন ব্যক্তি কোন পণ্য বা সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিতরণ, গুদামজাতকরণ বা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত এমন কোন চুক্তিতে বা ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশে (Collusion), প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আবদ্ধ হইতে পারিবে না, যাহা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে বা বিস্তারের কারণ ঘটায় কিংবা বাজারে মনোপলি অথবা ওলিগপলি অবস্থার সৃষ্টি করে।’
ডিএনসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, হান্টার বিয়ারের ক্যানে ৫ শতাংশ অ্যালকোহল থাকার কথা লেখা হলেও বাস্তবে ১২ শতাংশেরও বেশি অ্যালকোহল দেওয়া হচ্ছে। এতে সাধারণ মাদকসেবীরাও এতে আসক্ত হচ্ছে। হান্টারের বিভিন্ন চালান পর্যবেক্ষণ করে ক্যানগুলোর মধ্যে সরাসরি রেক্টিফায়েড স্পিরিট (আরএস) মেশানোর নজিরও পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও হান্টারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু প্রভাবশালী চক্রটির অব্যাহত হুমকি ও চাপের কারণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
হান্টারে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি :
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বিয়ারে সাধারণত দুটি উপাদান থাকে। এগুলো হলো- মল্ট ও হপস। মল্ট জব বা গমের দানা থেকে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি অ্যালকোহলের উপাদান। এ ধরনের উপাদান থেকে মিশ্রণে কী পরিমাণ অ্যালকোহল তৈরি হবে, তা নির্ভর করে উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর। একটু কারসাজির মাধ্যমে বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল তৈরি করা যায়। অভিযোগ সঠিক হলে ক্রাউন বেভারেজেরে হান্টারে এ অপকৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। অপর উপাদান হপস ভেষজ উপাদানের মিশ্রণে হয়। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ১৫ শতাংশের বেশি অ্যালকোহল থাকলে অন্য জীবাণু মরে যায়। তবে ১২-১৩ শতাংশ অ্যালকোহল থাকলে মাদকের পাশাপাশি জীবাণুও আক্রমণ করবে। এ ধরনের বিয়ার সেবনে লিভার নষ্ট হতে পারে। অতিমাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণের প্রবণতাও বাড়বে।
কৌশলে লাইসেন্স নিয়েছে হান্টার :
সূত্র জানায়, যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ক্রাউন বেভারেজ লিমিটেড ২০০২ সালে শুধু বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ক্রাউন নামে এনার্জি ড্রিংকস ও হান্টার নামে বিয়ার তৈরির প্লান্ট স্থাপন করে। পানীয় তৈরির জন্য ডিএনসির লাইসেন্স বাধ্যতামূলক থাকা সত্ত্বেও তারা নেয়নি। অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু হলে ডিএনসি বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। এর পর ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখে, হান্টার নামে যে পানীয় বাজারজাত করা হচ্ছিল তাতে ৪.৮ শতাংশ অ্যালকোহল ছিল। এনার্জি ড্রিকস ক্রাউনে ৩.৮ শতাংশ মাত্রায় অ্যালকোহল পাওয়া যায়। অথচ দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী দশমিক ৫ শতাংশের বেশি অ্যালকোহল থাকলে ওই উপাদান বিপণনে ডিএনসির লাইসেন্স নিয়ে শর্ত পূরণ করতে হবে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নতুন কৌশলে মাদকের বাণিজ্যের বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালের ৩ মার্চ ক্রাউন বেভারেজের কারখানাটি সিলগালা করে কালিয়াকৈর থানায় মামলা করে ডিএনসি। পরে মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। সূত্র জানায়, এরপর ডিএনসির কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কৌশলে লাইসেন্স পাওয়ার তৎপরতায় মেতে ওঠে যমুনা গ্রুপ। সুযোগ বুঝে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ক্রাউন বেভারেজের পক্ষ থেকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু দেশের আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় সে সময় ক্রাউন বেভারেজকে মদ উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। ওই সময় তারা কৌশলে হান্টারে অ্যালকোহলের পরিমাণ বাড়িয়ে (৫ শতাংশ) অনুমোদন চায়। ২০০৪ সালেই হাইকোর্টে রিট করে ক্রাউন বেভারেজ কম্পানি। ২০০৫ সালের ১৫ মার্চ হাইকোর্ট এ মামলায় রায় দিয়ে তাদের হান্টারের লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ডিএনসি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ২০০৮ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ৩ জানুয়ারি এ রায়ের ওপর রিভিউ পিটিশন করা হয়। এরই মধ্যে ২০০৯ সালের ৬ আগস্ট ডিএনসি ২৬টি শর্ত সাপেক্ষে হান্টার উৎপাদন ও বিপণনের লাইসেন্স দেয়। এ রিভিউ পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সংশোধনী এনে যমুনা গ্রুপ বিয়ার উৎপাদনের লাইসেন্স পায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদ (১) অনুযায়ী সরকার আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা রয়েছে। সংবিধানের এ ধারাটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেই সংযোজিত হয়েছে। কিন্তু যমুনা গ্রুপের ক্ষেত্রে সরকার সংবিধান অনুযায়ী মদের লাইসেন্স না দেওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় কোনো ভূমিকা নেয়নি।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানকালে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২৬টি শর্ত ভঙ্গ করে হান্টারের অবৈধ বাণিজ্য চালালেও ডিএনসি কর্তৃপক্ষ ক্রাউন বেভারেজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী প্রতিটি হান্টারে ব্যাচ নম্বর লাগানোর আগে ডিএনসির রাসায়নিক পরীক্ষাগারে অ্যালকোহলসহ অন্যান্য উপাদান পরীক্ষা করে অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদিত বার বা রেস্টুরেন্ট ছাড়া হান্টার বিক্রি করা যাবে না। অথচ কোনো প্রকার পরীক্ষা ছাড়া গোপনে অনেক হান্টার বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এসব হান্টারে ভুয়া ব্যাচ নম্বর লাগানো থাকলেও তা পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।

এ সময় সেখানে আরো অন্তত চারজনকে তাদের পরিবারের সদস্যদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলতে শোনা যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

বেশির ভাগ রোগীর শরীরে কাঁপুনি, গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, হাত-পায়ের গিরায় ব্যথা, ঠাণ্ডা, সর্দি ও নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।

সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।

উপসর্গে মিল থাকায় অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না যে আসলে কোনটিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। জ্বর, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে ডেঙ্গু ও কভিড পরীক্ষাও করাতে হবে। সময়মতো রোগ নির্ণয় হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র‌্যাশএসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।

 

জ্বর কেন হয়?

চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়াএসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।

ডা. লেলিন আরো বলেন, এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র‌্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মন্তব্য

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।

সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।

২০ থেকে ২৫ জন জুলাই যোদ্ধা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হামলাকারীদের অভিযোগ, দ্বিতীয় ধাপের টাকা দেওয়ার কথা বলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজনকে তিন-চারবার ঘোরানো হয়েছে। টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়েছিল গতকাল। 

তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।

ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।

ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।

গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?

সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।

জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।

তাঁদের রাগের একটা প্রেক্ষাপট আছে। তাঁদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তাঁরা ভেঙেছেন, তাঁরা উত্তেজিত, অবসাদগ্রস্ত। তাঁরা ভবিষ্যতে কী করবেন, সেটি নিয়ে হতাশার মধ্যে আছেন। সে কারণে তাঁরা হয়তো ভাঙচুর করেছেন।

এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মন্তব্য
প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।

এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।

এ ছাড়া গত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক গ্রহণযোগ্য বলে সাফাই গেয়েছিলেন, সেসব পক্ষপাতদুষ্ট পর্যবেক্ষককে এবার অনুমোদন দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহারও রোধ করতে চায়।

নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।

কারণ কানাডার গত বছরের নির্বাচনেও তাদের এটা মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা তাদের পরামর্শ চেয়েছি। এ বিষয়ে আমরাও বেশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আশা করি, বিভিন্ন দেশের মতো কানাডার পূর্ণ সহায়তা পাব।
আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কনফিডেন্ট।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।

সিইসি বলেন, কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।

নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি নাসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি নো। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।

পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।

বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।

সিইসি বলেন, ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়নএসবসহ।

গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেনভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়। আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মন্তব্য
মিডিয়াকে হুমকি

ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।

মিডিয়াকে হুমকি দেওয়া সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে সহায়ক নয়।

বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ