এ প্রথার মাধ্যমে তিনি ব্যক্তির পদমর্যাদা ও বেতন নির্ধারণ করেন। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ওই ব্যক্তি তাঁর পদমর্যাদা অনুযায়ী সামরিক সাহায্য প্রদানে বাধ্য থাকতেন। এ প্রথার ২৭ অথবা ৩৩টি স্তর ছিল।
৩। সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সংঘটিত উত্তরাধিকার যুদ্ধের প্রধান কারণটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সম্রাট শাহজাহানের চার পুত্রই বিভিন্নভাবে ক্ষমতা পরিচালনা করার যোগ্য হলেও সম্রাট সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে স্বহস্তে রাজ্যভার গ্রহণ না করে আদুরে দুলাল দারাকে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মনস্থির করেন। অন্যদিকে সম্রাটের চার পুত্রই উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা গ্রহণের আশা করেন। কিন্তু তাঁদের কাউকে সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব না দেওয়ার কারণে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এ জন্য দারার প্রতি সম্রাটের অন্ধ স্নেহ ও পক্ষপাতিত্বকে উত্তরাধিকার যুদ্ধের প্রধান কারণ বলা হয়।
৪। ‘গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ কী? সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : আফগান শাসক শেরশাহের সময়ে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক মহাসড়কের নাম হলো গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড। শেরশাহ খুব সুন্দর ও প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর নির্মিত রাস্তাগুলোর মধ্যে প্রধান ছিল ‘সড়ক-ই-আযম’ বা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড। এটি ছিল প্রায় ১৫০০ মাইল দীর্ঘ। এই রাস্তাটি পূর্ববঙ্গের সোনারগাঁও থেকে সিন্ধু নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সাধারণ পথিককে সূর্যের উত্তাপ থেকে রক্ষার জন্য রাস্তার দুই ধারে ছায়াপ্রদ ও ফলদ গাছ লাগানো হয়েছিল। এ ছাড়া দুই ক্রোশ অন্তর মুসাফিরখানা ছিল।
৫। দস্তুরুল আমল কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শাসনব্যবস্থায় অনাচার রোধ এবং শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ১২টি বিধি জারি করেন, যা ‘দস্তুরুল আমল’ নামে পরিচিত।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় (শাসনকাল : ১৬০৫-১৬২৭ খ্রি.) সাম্রাজ্যে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দিয়েছিল, যা জনমতে ভীতি সৃষ্টি করেছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিনি কিছু আইনি বিধান চালু করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—বিভিন্ন ধরনের শুল্ক রহিতকরণ, মাদকদ্রব্য তৈরি ও বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নির্ণয়, চুরি ও ডাকাতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা, রবিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে পশু হত্যা নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি।
৬। কবুলিয়ত ও পাট্টা বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শেরশাহ প্রজাদের সঙ্গে সরকারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে জমিদারি প্রথা লোপ এবং রায়তওয়ারী প্রথা প্রবর্তন করেন। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ‘কবুলিয়ত’ ও ‘পাট্টা’ প্রথা প্রচলন তাঁর অনবদ্য উদ্ভাবন। পাট্টা ছিল জমির স্বত্ব দলিল। জমির ওপর কৃষকের অধিকার ও স্বত্ব স্বীকার করে সরকারের পক্ষ থেকে পাট্টা দেওয়া হতো। অন্যদিকে প্রদেয় করসহ ভূমিতে তাঁর দায় ও কর্তব্য বর্ণনা করে কৃষক রাষ্ট্রকে কবুলিয়ত নামক দলিল সম্পাদন করে দিতেন।
৭। বাবরনামা কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘বাবরনামা’ হচ্ছে সম্রাট বাবরের আত্মজীবনীমূলক ঐতিহাসিক একটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। তিনি গদ্য সাহিত্যে তুর্কি ভাষায় একটি রচনা করেন। এ গ্রন্থে বাবর তাঁর পূর্বপুরুষদের কথা, তাঁর জন্ম, শৈশব ও কৈশোরের কথা উল্লেখ করেছেন। এ গ্রন্থে বাবর তাঁর বোকামি ও ব্যর্থতাগুলো অকপটে তুলে ধরেছেন। এ আত্মজীবনীতে ভারতের আবহাওয়া, পরিবেশ, ফলমূল ও মানুষের বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণনা করেছেন।
৮। ‘ময়ূর সিংহাসন’ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পৃথিবীর বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন সম্রাট শাহজাহানের নির্মিত অনুপম শিল্পকীর্তির অন্যতম। শিল্পী বেবাদল খানের তত্ত্বাবধানে প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে সাত বছরে এ সিংহাসনটি নির্মিত হয়েছিল। সিংহাসনের স্বর্ণ নির্মিত চারটি স্তম্ভের ওপর একটি কারুকার্যমণ্ডিত চন্দ্রাতপ ছিল। প্রতিটি স্তম্ভের শীর্ষে মুখোমুখি বসানো এক জোড়া ময়ূর স্থাপন করা হয়েছিল। এদের মাঝখানে ছিল বহু মূল্যবান মণিমুক্তাখচিত ফলবান বৃক্ষ। সিংহাসনে ওঠার জন্য মণিমুক্তাখচিত তিন ধাপবিশিষ্ট একটি সিঁড়ি ছিল। এটি দৈর্ঘ্যে ৩.৫ গজ, প্রস্থে ২.৫ গজ এবং উচ্চতায় ছিল ৫ গজ। অনিন্দ্যসুন্দর ও মূল্যবান এ ময়ূর সিংহাসনটি সম্রাট শাহজাহানের সৌন্দর্যজ্ঞান ও ঐশ্বর্যের উজ্জ্বলতম নিদর্শন। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের নাদির শাহ ভারত আক্রমণকালে ময়ূর সিংহাসনটি নিয়ে যান।
৯। ‘দ্বীন-ই-ইলাহী’ বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সম্রাট আকবর ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর নতুন ধর্মমত দ্বীন-ই-ইলাহীর প্রবর্তন করেন। এ ধর্মমতের কালেমা ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আকবারু খলীফাতুল্লাহ।’ দ্বীন-ই-ইলাহীর ধর্মমতে দীক্ষিত হতে হলে একজনকে সম্রাটের নামে জীবন, ধর্ম, সম্মান ও সম্পত্তি উৎসর্গ করতে হতো এবং সম্রাটকে সেজদা করতে হতো। এ ছাড়া তাঁর প্রবর্তিত দ্বীন-ই-ইলাহীর সেজদা প্রথা, অগ্নিকে পবিত্র মনে করা, প্রাসাদে রাজপুত স্ত্রীদের পূজার অনুমতি প্রদান ইত্যাদি ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ ধর্মের অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতো।