<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের গ্রামীণ শিল্পজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত মাটির পুতুল। শুধু মাটি আর হাতের স্পর্শে রূপ পাওয়া এসব পুতুল আমাদের লোকশিল্পেও অত্যন্ত সমাদৃত। প্রাচীনকাল থেকে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলগুলোতে মাটির পুতুল শুধু শিশুদের খেলনা হিসেবে নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিফলন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই শিল্পকর্ম বাংলার শিল্পীদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। ল্যাটিন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Pupa</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> থেকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Puppet</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শব্দের উৎপত্তি। এর প্রকৃত অর্থ পুতুল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ল্যাটিন ভাষা থেকে পুতুল শব্দটির উৎপত্তি হলেও পুতুলের জন্ম আদিম গুহা মানুষের হাতে। গুহা মানুষের ধারণা ছিল, পুতুল দেখিয়ে তারা শত্রুকে তাড়াতে ও বুনো জন্তুকে পোষ মানিয়ে আপন করে নিতে পারবে। গুহা মানব থেকে ক্রমান্বয়ে পুতুল ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে বেলুচিস্তান এবং মহেঞ্জোদারো অঞ্চলের মাটির নিচে পাওয়া গেছে অসংখ্য পুতুল। বাংলাদেশে মাটির পুতুল তৈরির ইতিহাসও খুব প্রাচীন। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন খননকার্যে পাওয়া নথিপত্র ও দলিল থেকে বোঝা যায়, হাজার বছর আগেও  বাংলাদেশে মাটির পুতুল তৈরি হতো।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাচীনকালে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও লৌকিক উৎসবে বেশি ব্যবহৃত হতো মাটির পুতুল। কালের বিবর্তনে পুতুলগুলোর রূপ ও ব্যবহার কিছুটা পরিবর্তিত হলেও এর জনপ্রিয়তা কমেনি। মাটির পুতুল তৈরির পদ্ধতি সহজ হলেও পরিশ্রমসাধ্য। প্রথমে কুমাররা নদীর তীর থেকে উচ্চমানের মাটি সংগ্রহ করে। এরপর সেই মাটিতে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে নরম করে নেওয়া হয়। হাতের স্পর্শে বিভিন্ন আকার ও চেহারার পুতুল তৈরি করে তারা। দেওয়া হয় চোখ, নাক ও মুখের গঠন। সব শেষে পুতুলগুলো রোদে শুকিয়ে ও চুলায় পুড়িয়ে শক্ত করা হয়। অতি তাপে না পুড়িয়ে কম আগুনে দীর্ঘক্ষণ রেখে পোড়ালে পুতুলের গুণগত মান ভালো থাকে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুকিয়ে যাওয়া প্রতিটি পুতুলে রং করার পালা এবার। একজন শিল্পীর নিজস্ব সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই রঙের মাধ্যমে। মাঝেমধ্যে আঙুলে টিপে পুতুলের আকৃতি দেয় কুমাররা। এসব পুতুল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টেপা পুতুল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামে খ্যাত। মাটির পুতুল তৈরি শিল্পীরা বেশির ভাগই পাল, মালাকার বংশভুক্ত। ঢাকা, রাজশাহী, ফরিদপুর, খুলনা, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, জামালপুর, রংপুর ও বরিশাল অঞ্চলে এসব মাটির পুতুলের দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি। এখনো বছরান্তে বিভিন্ন মেলা, পূজা-পার্বণ, উৎসব-অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকম পুতুলের পসরা সাজিয়ে বসে কারিগররা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>