<p>বাণিজ্যিক মোড়কে নাড়ুর দেখা সেভাবে না মিললেও আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে নাড়ুর আলাদা একটি আবেদন আছে। বছরের অন্যান্য দিনসহ গ্রামীণ মেলা, পৌষসংক্রান্তি উৎসব, বৈশাখী মেলা, দুর্গোৎসবে দেখা মেলে হাতে বানানো নাড়ুর।  সাধারণত তিল, গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি হলেও চিনি, গাজর, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদির সাহায্যেও বানানো নাড়ুর দেখা মেলে হরহামেশাই। লোকখাদ্য হিসেবে পরিচিত এই মিষ্টান্নের স্বাদ ও গন্ধ আমাদের সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয়।</p> <p>নাড়ুর জন্ম প্রাচীন বঙ্গ অঞ্চলে হলেও এলাকাভেদে লাড্ডু নামেও পরিচিতি পেয়েছে মিষ্টান্নটি। ভোজনপটু বাঙালির বর্ষাকাল এবং শীতকালের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলোর প্রধান অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় নাড়ুকে। কনের বাড়িতে উপহার হিসেবে, বছরান্তে আত্মীয়দের বাড়ি বেড়াতে গেলে ও পূজার সময় নাড়ু, সন্দেশ, ঢেঁকিছাঁটা চিড়া ও হাতে ভাজা মুড়ি পাঠানো হতো। এখন সেই রীতিতে ভাটা পড়লেও বাড়িতে আত্মীয় এলে বা মাঠে কাজ করতে যাওয়া কৃষকের জন্য জলখাবার হিসেবে নাড়ু-মুড়ি দেওয়ার ঐতিহ্য সময়ের পরিক্রমায় এখনো দেখা মেলে গ্রামে।</p> <p>বাঙালির কাছে নাড়ু বলতে প্রথমেই আখ বা খেজুরের গুড়ের নাড়ুর কথা মনে আসে। গুড়ের নাড়ুর স্বাদ একেবারেই আলাদা। পূজায় নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হয় গুড়ের নাড়ু। গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি এই নাড়ুতে আরো লাগে এলাচগুঁড়া, তেজপাতা, সামান্য লবণ ও কয়েক টুকরা দারচিনি। নাড়ু বানাতে প্রথমে গুড় হালকা আঁচে গরম করতে হয়। একটু গরম হয়ে এলে তাতে কুরিয়ে রাখা নারকেল চূর্ণ ঢেলে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হয়। এরপর দিতে হয় দারচিনি, তেজপাতা, এলাচগুঁড়া ও সামান্য লবণ। অত্যন্ত ধীরে ও সতর্কতার সঙ্গে মিশ্রণটি নাড়তে হয়, যেন তলায় লেগে না যায়। মিশ্রণ নরম ও আঠালো হয়ে এলে চুলা থেকে কড়াই নামিয়ে কিছুটা ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। একটু ঠাণ্ডা হয়ে এলে মিশ্রণ হাতের তালুতে অল্প অল্প নিয়ে সুনিপুণ দক্ষতায় গোল গোল নাড়ুর আকৃতি দেওয়া হয়। পুরোপুরি ঠাণ্ডা হয়ে এলে গোলাকার এই নাড়ুগুলো হয়ে ওঠে শক্ত। গুড়ের জায়গায় চিনি দিয়েও নাড়ু বানানো যায়। তিলের নাড়ুতে নারকেলের বদলে ব্যবহার হবে তিল।</p> <p>হাতে বানানো এই নাড়ু খেতে অত্যন্ত মুখরোচক এবং এর পুষ্টিগুণও অনেক বেশি। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মজাদার ও সুস্বাদু নাড়ু বায়ুরোধী বক্সে সংরক্ষণ করা যায় দীর্ঘদিন।</p> <p>♦ আল সানি</p> <p> </p> <p> </p>