<p><strong>[ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে হারমোনিয়ামের উল্লেখ আছে]</strong></p> <p>হারমোনিয়াম সংগীতসাধক সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয় একটি বাদ্যযন্ত্র। মূলত সংগীত শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক তালিমের সময় এই যন্ত্র ব্যবহার করে থাকে। ১৮৪২ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আলেকজান্ডার ডোরিয়ান এটি আবিষ্কার করেন। বিদেশি বাদ্যযন্ত্র হলেও হারমোনিয়াম কালক্রমে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের যন্ত্রতালিকায় বিশেষ স্থান করে নেয়। সাধারণত এই যন্ত্র কণ্ঠসংগীত বা যন্ত্রসংগীতের সঙ্গে সহযোগী যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এর একক বাদনও দেখা যায়।</p> <p>হারমোনিয়াম দেখতে একটি বাক্সের মতো। একটি আবদ্ধ বাক্সের উপরিভাগে কিছু রিড সাজানো থাকে। বেলো দ্বারা তাড়িত করে এর ভেতরে বাতাস প্রবেশ করিয়ে এই বাক্সের ভেতরে বাতাসের চাপ সৃষ্টি করা হয়। এই বাতাস রিডের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রিডের শব্দ উৎপাদক পাত কম্পিত হয়ে শব্দ তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে সব রিড যাতে একসঙ্গে বেজে না ওঠে তার জন্য প্রতিটি রিডের ওপর একধরনের প্রতিবন্ধক রাখা হয়। সুনির্দিষ্ট একটি রিড থেকে শব্দ উৎপাদনের জন্য এই প্রতিবন্ধক উন্মুক্ত করা হয়। ফলে রিডের ভেতর দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার সময় এর পাত কম্পিত হয়ে ধ্বনির সৃষ্টি করে। এই দণ্ডের ওপর একটি লম্বা স্প্রিং থাকে। প্রতিবন্ধকের ওপর থেকে আঙুলের চাপ সরিয়ে নিলে ওই স্প্রিং বাঁশির ওপর প্রতিবন্ধককে দৃঢ়ভাবে চেপে বাতাস প্রবেশকে বাধা দেয়। ফলে ওই বাঁশি থেকে কোনো শব্দ হয় না। এই প্রতিবন্ধক একটি লম্বা দণ্ডের এক প্রান্তে যুক্ত থাকে। এর অন্য প্রান্তটিতে থাকে আঙুলের চাপ দেওয়ার জায়গা। এর মাঝখানে থাকে একটি আবদ্ধ অংশ। সব মিলিয়ে দণ্ডটি ঢেঁকির মতো হয়। দণ্ডটির চাপ দেওয়ার অংশে চাপ দিলে প্রতিবন্ধক দণ্ডের অন্য প্রান্ত উন্মুক্ত হয়। রিডের ওপরে স্থাপিত প্রতিবন্ধককে চাবি বলা হয়। চাবির ওপর চাপ সৃষ্টির উপযোগী প্রান্ত একটি বোর্ডের ওপর মুক্তভাবে স্থাপিত থাকে। হারমোনিয়ামের এই অংশকে বলা হয় কি-বোর্ড।</p> <p>বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের হারমোনিয়াম ব্যবহৃত হয়। যেমন—কপলার হারমোনিয়াম, বক্স হারমোনিয়াম, স্কেল চেঞ্জ হারমোনিয়াম, সিঙ্গল বেলো হারমোনিয়াম, ডাবল বেলো হারমোনিয়াম, সাতপাট বা ইংলিশ বেলো হারমোনিয়াম প্রভৃতি। যত দূর জানা যায়, ভরতবর্ষে প্রথম হারমোনিয়াম ব্যবহৃত হয় কলকাতায়। উনিশ শতকের ষাটের দশকে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়াসাঁকোতে স্থাপিত শখের থিয়েটারে প্রথম হারমোনিয়াম বাজান। বাঙালিদের মধ্যে প্রথমে কৌতূহল এবং পরে আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় হারমোনিয়াম শিক্ষা ও তার ব্যবহার ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য উপযুক্ত গ্রন্থও রচিত হয়। শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের হারমোনিয়াম সূত্র (১৮৭৪) এবং কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হারমোনিয়াম শিক্ষা (১৮৯৯) এ বিষয়ে প্রথম ও প্রধান দুটি গ্রন্থ। গ্রন্থ দুটিতে হারমোনিয়াম বাদন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।</p> <p> </p> <p> </p>