<p>পুঠিয়া রাজবাড়ি বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ি হচ্ছে মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবীর বাসভবন। বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি অন্যতম। ১৮৯৫ সালে মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবী আকর্ষণীয় ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য, মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবী ১২৭৬ বাংলা সনে মানিকগঞ্জ জেলার ধুল্লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে পুঠিয়া জমিদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। রাজশাহী শহরের উন্নয়নের সঙ্গে তিনি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। জনকল্যাণকর কাজের জন্য হেমন্ত কুমারী মহারাণী খেতাব পেয়েছেন।<br /> রাজবাড়িটি রাজশাহী জেলা সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে বাঘা-পুঠিয়া জেলা সড়কের পাশে অবস্থিত। অপরূপ এ প্রাসাদটি মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারাণী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে নির্মাণ করান। ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলংকরণ, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়াল ও দরজার ওপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণশৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ির ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বিম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল।<br /> পুঠিয়া রাজবাড়ির আশপাশে ছয়টি রাজদিঘি আছে। প্রতিটি দিঘির আয়তন ছয় একর করে। মন্দিরও আছে ছয়টি। সবচেয়ে বড় শিবমন্দির। এ ছাড়া আছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ। এ ছাড়া রাণীর স্নানের ঘাট, অন্দরমহল মিলিয়ে বিশাল রাজবাড়ি প্রাঙ্গণ।<br /> সপ্তদশ শতকে মোগল আমলে তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পুঠিয়া জমিদারি ছিল প্রাচীনতম। কথিত আছে, জনৈক নীলাম্বর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করার পর সেটি পুঠিয়া রাজবাড়িরূপে পরিচিতি লাভ করে।  ১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা ছিল। প্রথা বিলুপ্ত হলে পুঠিয়া রাজবাড়ির জমিদারিও বিলুপ্ত হয়। কিন্তু জমিদারি বিলুপ্ত হলেও সে আমলে নির্মিত তাদের প্রাসাদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা ঠিকই এখনো টিকে রয়েছে। পুঠিয়ার প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে ১৪টি স্থাপনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে।<br /> ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল<br /> [আরো জানতে পত্রপত্রিকায় পুঠিয়া রাজবাড়ি সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>