<p>সরিষা (Mustard) Cruciferae গোত্রের তৈল উৎপাদক দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। একবর্ষজীবী সরিষার বৈজ্ঞানিক নাম Brassica napus. এ ছাড়া কালো ও রাই সরিষার বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে Brassica nigra ও B. campestris. সরিষার উৎপত্তিস্থল এশিয়ায়।</p> <p>ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন রবিশস্য হিসেবে সরিষার চাষ করা হয়। সরিষা গাছ দৈর্ঘ্যে এক মিটারের মতো হয়। তবে রাই সরিষা দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। আমাদের দেশে সরিষা সর্বত্র চাষ হলেও ঢাকা, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ফরিদপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী ও রংপুর জেলায় অধিক চাষ হয়। বর্তমানে সরিষা চাষাধীন জমি প্রায় দুই লাখ ৪২ হাজার হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় এক লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টন।</p> <p>বাংলাদেশে সরিষার চাষ করা হয় সাধারণত বীজ থেকে তেল উৎপাদনের জন্য, যা প্রধানত রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। আচার, চাটনি তৈরিতে এর ব্যবহার হয়। শরীরে বিশেষ করে ছোট শিশুদের গায়ে মাখার জন্য সরিষার তেল খুবই উপকারী। সরিষার কচি পাতা ও ডগা শাক হিসেবে এবং সরিষা বাটা ইলিশ মাছের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। এর শুকনা গাছ ও পাতা জ্বালানি এবং খৈল মাছের খাদ্য ও জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। খৈলে প্রায় ৪০ শতাংশ আমিষ থাকে। তাই খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য।</p> <p>কয়েক দশক আগেও সরিষার তেল ছিল বাংলাদেশে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত ভোজ্য তেল। কোনো কোনো এলাকায় এখনো দেশি তেলকল বা ঘানি দিয়ে বীজ থেকে তেল নিংড়ানো হয়। এই পেশার লোকদের কলু বলে। আজকাল ঘানির বদলে বৈদ্যুতিক কল চালু হয়েছে। সরিষার উৎপাদন দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয় বিধায় প্রচুর পরিমাণ সয়াবিন তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে সয়াবিন সরিষার তেলের তুলনায় সস্তা হওয়ায় দেশে সরিষা চাষ  হ্রাস পেয়েছে।</p>