<p>সাগর, নদী, খাল বা পুকুরে যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের সাধারণত জেলে বলা হয়। জল থেকে জাল, আর জাল থেকে সম্ভবত জেলে শব্দের উদ্ভব। মাছ ধরাই জেলেদের প্রধান কাজ হিসেবে বিবেচিত।</p> <p>সুপ্রাচীন কাল থেকে এ দেশে জেলে সম্প্রদায় মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। দেশে প্রায় ১৪ লাখ জেলে রয়েছে। জেলেরা যেখানে বসবাস করে, সে জায়গাকে বলা হয় ‘জেলেপল্লী’ বা ‘জেলেপাড়া’। যেহেতু নদীর ওপরই জেলেদের নির্ভরশীলতা, তাই জেলেপাড়াগুলো নদীর পার ঘেঁষেই তৈরি হতে দেখা যায়। নদীর বারবার পার ভাঙা-গড়ার ব্যাপার থাকায় জেলেপাড়ার ঘরবাড়িগুলো হতো সাধারণত অস্থায়ী কাঠামোর। আর উঠানের উপস্থিতি থাকত না বললেই চলে। সাধারণত নদীর বালিয়াড়িতেই জাল শুকিয়ে নিত তারা। বেশির ভাগ জেলে পরিবারগুলো নিম্নমানের জীবনধারায় অভ্যস্ত।</p> <p>একটা সময় ছিল যখন মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত জালও এই জেলেরাই বুনত। মাছ শিকারে জেলেদের অতিপ্রয়োজনীয় নৌকা তৈরি হতো জেলেপাড়ার ভেতরেই। বাংলাদেশের জেলেদের দেখা যেত নানা ধরনের নৌকা ব্যবহার করতে। এই নৌকা তৈরির ব্যাপারটা নির্ভর করত নিকটবর্তী নদীর আকার, পানিপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, নৌকা ব্যবহারের উদ্দেশ্য, গাছের প্রাপ্যতা ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর। জেলেরা অতীতে তাদের পল্লীতে নানা ধরনের উৎসব করত, গঙ্গাপূজা দিত। এখন সেগুলোও কমে গেছে। তবে শীতের শেষে কোনো কোনো অঞ্চলে মাছ ধরার ‘বইদ উৎসব’ এখনো রয়ে গেছে।</p> <p>বাংলাদেশের জেলেরা মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। ১৮৭২ সালে লিখিত ডাব্লিউ হান্টারের বর্ণনাতে সেকালে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান সম্প্রদায়ের জেলেদের উপস্থিতিও দেখা যায়। সেকালে হিন্দু জেলেদের মধ্যে ২৩টি গোত্রের অস্তিত্ব ছিল। মুসলিম সমাজে জেলেরা নিকারি, ধাওয়া, আবদাল ইত্যাদি বলে পরিচিত। তারা মাছ ব্যবসায়ের সঙ্গেই বেশি জড়িত। তবে এখন অনেক মুসলমানও মাছ ধরার কাজে জড়িত।</p> <p>অতীতে উৎপাদিত মাছের বেশির ভাগই প্রাকৃতিকভাবে খাল-বিল, নদী-নালায় বিপুল পরিমাণে পাওয়া যেত। মাছের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলেদের কাজের পরিধিও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। বর্তমানে জেলে শব্দের ব্যবহার কমে গিয়ে ‘মাছ চাষি’ বা ‘মৎস্য চাষি’র ব্যবহারই বেশি হচ্ছে।</p> <p>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে বাংলাপিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় জেলে সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো]</p>