<p>অর্থোপ্টেরা বর্গের অন্তর্গত সিলিফেরা উপবর্গের একদল কীট হচ্ছে ঘাসফড়িং। এদের দেহ তিন খণ্ডে; যেমন—মস্তক, বক্ষ ও উদরে বিভক্ত। মস্তক খণ্ডে জটিল পুঞ্জাক্ষী, তিনটি সরলাক্ষী, এক জোড়া অ্যান্টেনা (শূঙ্গ) এবং মুখোপাঙ্গ থাকে। বক্ষ খণ্ডে ডানা এবং তিন জোড়া সন্ধিযুক্ত পা থাকে আর উদর খণ্ডে থাকে টিমপেনাম, শ্বাসরন্ধ্র, পায়ু ও বহিঃজননাঙ্গ।</p> <p>এদের দেহ সরু, লম্বাটে, বেলনাকার, খণ্ডায়িত এবং দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম। এরা তুলনামূলক বৃহদাকৃতির পতঙ্গ এবং লম্বায় ৮-৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। দেহের রং অনেকটা হলদে-সবুজ ধরনের, কিছু প্রজাতি বাদামি রঙের, মাঝে নানা ধরনের ফোঁটা আবার কিছু প্রজাতির ডোরাকাটা দাগ থাকে। এদের অনেক প্রজাতির দেহের বর্ণ বাসস্থানের সঙ্গে মিলে যায়, যা ক্যামোফ্লাজ নামে পরিচিত। এটা তাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া কিছু ঘাসফড়িং আছে উজ্জ্বল নীল-হলুদ রঙের; যেমন—<u>Poekilocerus pictus. </u>সারা বিশ্বে ঘাসফড়িংয়ের প্রায় ২০ হাজার প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির ঘাসফড়িং দেখা গেলেও <u>Schistocerca americana, Romalea microptera </u>ও<u> Poekilocerus pictus</u>—এই তিন প্রজাতির ঘাসফড়িং বেশি দেখা যায়।</p> <p>ঘাসফড়িং তৃণভোজী প্রাণী। ডিম থেকে ফোটার পরপরই নিম্ফ অবস্থায় ঘাসফড়িং চারপাশের যেকোনো ছোট ছোট সহজপাচ্য গাছ, ঘাস বা নতুন কোমল শাখা-প্রশাখা খেতে শুরু করে। একটু বড় হলে এরা কিছুটা শক্ত উদ্ভিজ খাবারও খেয়ে থাকে। পূর্ণাঙ্গ বয়সে এরা ঘাস, পাতা ও শস্য প্রধান খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। বেশির ভাগ ঘাসফড়িং অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে খাবার সংগ্রহ করে, তবে দু-একটি প্রজাতির ঘাসফড়িং আছে, এরা সুনির্দিষ্ট উদ্ভিদ থেকে খাবার গ্রহণ করে।</p> <p>ঘাসফড়িং সব ধরনের পরিবেশে জীবনধারণ করতে পারলেও কচি ঘাস, পাতা, শস্য আছে এমন পরিবেশ এদের বেশি পছন্দ। স্বাদু পানি ও ম্যানগ্রোভ জলাশয়ে পানির ওঠানামা বেশি হয় এবং এদের ডিম পাড়ার স্থান প্লাবিত হয়ে যায় বলে এসব বসতিতে ঘাসফড়িং কম বাস করে। এরা দিনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত লাফিয়ে যেতে পারে।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</strong></p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে পত্রপত্রিকায় ঘাসফড়িং সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো]</p> <p> </p>