<p>মানবদেহের শ্বাসনালির সংক্রমণই হচ্ছে ব্রংকাইটিস (Bronchitis)। শ্বাসনালির ভেতরে আবৃত ঝিল্লিতে এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকেই ব্রংকাইটিস হয়। এটি শ্বাসনালির মিউকাস আবরণীর প্রদাহ। তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী— এই দুই ধরনের ব্রংকাইটিস হতে দেখা যায়। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে জমাট ভাব, মাঝে মাঝে বুকে ব্যথা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ প্রভৃতি এই রোগের প্রধান লক্ষণ।</p> <p>ব্রংকাইটিস দেহকে বিকল করে দেওয়ার মতো একটি রোগ। কখনো কখনো এ রোগে হৃৎপিণ্ড ও শ্বাসযন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া ব্রংকাইটিসকে বাড়িয়ে তোলে বলে শীতপ্রধান দেশগুলোতে এই রোগের প্রকোপ তুলনামূলক বেশি। বাংলাদেশে শীতকালে শিশুদের তীব্র ব্রংকাইটিসের আক্রমণ একটি সাধারণ ঘটনা। অনেক সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, টাইফয়েড বা জলবসন্তের পরে এ রোগ দেখা দেয়। ঘনবসতি, উচ্চ আর্দ্রতা, অত্যধিক বায়ুদূষণযুক্ত এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এ ছাড়া যাঁরা ধূমপান করেন বা তামাকপাতা খান, তাঁদেরও এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি।</p> <p>আক্রান্ত ব্যক্তি কমপক্ষে তিন মাস পর পর দুই বছর অনবরত কাশিতে ভোগেন। শ্বাসনালি থেকে সৃষ্ট কাশির সঙ্গে বের হওয়া কফ বা থুথু প্রাথমিক অবস্থায় অপর্যাপ্ত ও আঠালো। কখনো কখনো কফের সঙ্গে রক্ত মেশানো থাকতে পারে।</p> <p>প্রাথমিক অবস্থায় ব্রংকাইটিসকে একটি সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা থেকে আলাদা করা খুব কঠিন। তবে থুথুর পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে বা পালমোনারি ফাংশন টেস্ট করে এই রোগ চিহ্নিত করা যায়। ব্রংকাইটিস হলে ধূমপান ও সব ধরনের নেশাজাতীয় জিনিস পান করা বন্ধ করতে হবে। পুষ্টিকর গরম তরল ও নরম খাবার যেমন—দুধ, স্যুপ খাওয়ানো, রোগীকে শুষ্ক পরিবেশে রাখা, সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া প্রভৃতি কাজ করতে হয়। ব্রংকাইটিস তীব্র হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ও সময় উপযোগী প্রয়োগ। এই রোগে শ্বাসকষ্টের ধরনের ওপর ভিত্তি করে কখনো কখনো অক্সিজেন গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</strong></p>